ছড়ানো মুক্তো
শেয়ার করেছেন :- প্রণব কুমার কুণ্ডু
প্রণব কুমার কুণ্ডু
বৃন্দাবন-লীলাতে দেখ, গোপীরা শ্রীকৃষ্ণকে
এঁটো খাওয়াচ্ছেন, ক্রীড়া করতে গিয়ে তাঁর গায়ে পা ঠেকিয়ে ফেলছেন, একটা যেন
সমতার ভাব এসে গিয়েছে শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে গভীর একাত্মতায়। উদ্ধবকে তাঁদের
পদধূলি দিতে দ্বিধা হয়নি তাতে যদি শ্রীকৃষ্ণের শিরঃপীড়া কমে। গোপীদের খেলার
সময় কৃষ্ণের গায়ে পা ঠেকেছে, কিন্তু তাই ব’লে চলতে গিয়ে তাঁরা কি
অবজ্ঞাভরে শ্রীকৃষ্ণের গায়ে পা ঠেকিয়ে চলে যাবেন? তা কখনও করা চলে না।
সেখানে অপরাধ হবে। মহাপ্রভুর একজন সেবক গোবিন্দ। মহাপ্রভু শুয়েছিলেন আর উনি
সেবা করছিলেন। অন্যপাশে পদসেবার জন্য তিনি নিদ্রিত মহাপ্রভুকে লঙ্ঘন ক’রে
গেলেন। কিন্তু ফিরে আর এলেন না। এদিকে খাওয়ার সময় পেরিয়ে গেল। মহাপ্রভু শয়ন
থেকে উঠেই বললেন—তুমি ভোজন করতে যাওনি? সেবক গোবিন্দ বললেন—প্রভু, আপনাকে
লঙ্ঘন ক’রে কি করে যাই? তাই যাইনি। মহাপ্রভু বললেন—তবে এদিকে এলে কি করে?
তিনি বললেন—সেটা তো আপনার প্রয়োজনে প্রভু! প্রভুর প্রয়োজনে প্রভুকে লঙ্ঘন
করেছি, কিন্তু নিজের প্রয়োজনে কেমন করে প্রভুকে লঙ্ঘন করি?
কিন্তু সেবা করতে করতে যখন অহংকার আসে, অশ্রদ্ধা আসে তখনই সাবধান হওয়া দরকার। কোনও একটি মঠে একজন পূজারী-সেবক একদিন তার প্রভুকে জানালো... “মহারাজ, আমি কিছুদিন দূরে গিয়ে তপস্যা করে আসতে চাই। আমার অহংকার এসে যাচ্ছে। এখন দেখছি আগেকার সেই সমীহ শ্রদ্ধার ভাবটা নেই আমার সেবার মধ্যে। জলে পা ঠেকে গেছে। দায় সেরে সেই জলই ঠাকুরকে ভোগ দিচ্ছি।” এই সেবকটির বিবেক জেগেছিল, তাই সে নিজের ভুল নিজে বুঝতে পেরে তপস্যা করতে চলে গেল।
সারদা মা-ও বলেছেনঃ “সেবা করতে করতে সেবাটা একসময় পুতুলখেলার মতো হয়ে যায়।” সে তখন পূজার বিগ্রহ-দেবতাকে মনে করে পুতুল মাত্র। একটা carelessness, একটা অশ্রদ্ধা এসে পড়ে। তাই মনটাকে আগে বুঝতে হবে। সেবার অহং না প্রেমের অহং, একটু যাচাই করলেই মন ঠিক বুঝতে পারবে সে-কথা। তবে বিবেকটা জাগা চাই।
সাধারণ মানুষ যেমন রান্না করে, স্নান করে, খায়, নিত্যকর্ম করে, তেমনি দু’বেলা হয়তো ভগবানকেও ডাকে। সব নিত্যকর্মের মতো এটাও যেন একটা routine মাত্র। কিন্তু তারা ভাবতে পারে না যে, ভগবানের সঙ্গে সম্বন্ধ ওইটুকুই শুধু নয়, তাঁকে আরও নিবিড় করে পাওয়ার আছে।
ভেবে দেখ, স্ত্রী বিবাহ-আসরে স্বামীর পাশে বসল, পুরুত মন্ত্র পড়িয়ে দিল। তারা বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হল। অমনি স্ত্রীটি স্বামীর সঙ্গে চলে গেল ঘর করতে। তাদের মধ্যে একটা নিবিড় সম্বন্ধ গড়ে উঠল, যদিও তার আগে পর্যন্ত হয়তো একে অন্যকে চিনত না জানত না। তেমনি দেখ, ছেলে মা’র পেটে এল। আর-জন্মে সে কোথায় ছিল, কি ছিল, কেউ জানে না। জন্ম নিতেই মা’র সঙ্গে তার নিবিড় সম্বন্ধ হয়ে গেল। মা তাকে বুকের স্নেহ দিয়ে দিনরাত এক ক’রে মানুষ করতে লাগল।
ঠিক সেইভাবেই ভগবানের সঙ্গে একটা যোগসূত্র গ’ড়ে তাঁকে নিবিড় ক’রে কি পাওয়া যায় না? গুরুর কাছে মন্ত্র নিয়ে সেই মন্ত্রের মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে একটা সম্বন্ধ স্থাপন ক’রে তাঁকে কি নিবিড় ক’রে পাওয়া যায় না? এ কথাটা যেন মানুষের ধারণার মধ্যেই আসে না। ভগবানকেও যে একটা গভীর মধুর সম্বন্ধ গ’ড়ে ভালবাসা যায়, সে কথাটা সাধারণ মানুষ ধারণাই করতে পারে না।
অর্চনাপুরী মায়ের ‘ছড়ানো মুক্তো’ থেকে
কিন্তু সেবা করতে করতে যখন অহংকার আসে, অশ্রদ্ধা আসে তখনই সাবধান হওয়া দরকার। কোনও একটি মঠে একজন পূজারী-সেবক একদিন তার প্রভুকে জানালো... “মহারাজ, আমি কিছুদিন দূরে গিয়ে তপস্যা করে আসতে চাই। আমার অহংকার এসে যাচ্ছে। এখন দেখছি আগেকার সেই সমীহ শ্রদ্ধার ভাবটা নেই আমার সেবার মধ্যে। জলে পা ঠেকে গেছে। দায় সেরে সেই জলই ঠাকুরকে ভোগ দিচ্ছি।” এই সেবকটির বিবেক জেগেছিল, তাই সে নিজের ভুল নিজে বুঝতে পেরে তপস্যা করতে চলে গেল।
সারদা মা-ও বলেছেনঃ “সেবা করতে করতে সেবাটা একসময় পুতুলখেলার মতো হয়ে যায়।” সে তখন পূজার বিগ্রহ-দেবতাকে মনে করে পুতুল মাত্র। একটা carelessness, একটা অশ্রদ্ধা এসে পড়ে। তাই মনটাকে আগে বুঝতে হবে। সেবার অহং না প্রেমের অহং, একটু যাচাই করলেই মন ঠিক বুঝতে পারবে সে-কথা। তবে বিবেকটা জাগা চাই।
সাধারণ মানুষ যেমন রান্না করে, স্নান করে, খায়, নিত্যকর্ম করে, তেমনি দু’বেলা হয়তো ভগবানকেও ডাকে। সব নিত্যকর্মের মতো এটাও যেন একটা routine মাত্র। কিন্তু তারা ভাবতে পারে না যে, ভগবানের সঙ্গে সম্বন্ধ ওইটুকুই শুধু নয়, তাঁকে আরও নিবিড় করে পাওয়ার আছে।
ভেবে দেখ, স্ত্রী বিবাহ-আসরে স্বামীর পাশে বসল, পুরুত মন্ত্র পড়িয়ে দিল। তারা বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হল। অমনি স্ত্রীটি স্বামীর সঙ্গে চলে গেল ঘর করতে। তাদের মধ্যে একটা নিবিড় সম্বন্ধ গড়ে উঠল, যদিও তার আগে পর্যন্ত হয়তো একে অন্যকে চিনত না জানত না। তেমনি দেখ, ছেলে মা’র পেটে এল। আর-জন্মে সে কোথায় ছিল, কি ছিল, কেউ জানে না। জন্ম নিতেই মা’র সঙ্গে তার নিবিড় সম্বন্ধ হয়ে গেল। মা তাকে বুকের স্নেহ দিয়ে দিনরাত এক ক’রে মানুষ করতে লাগল।
ঠিক সেইভাবেই ভগবানের সঙ্গে একটা যোগসূত্র গ’ড়ে তাঁকে নিবিড় ক’রে কি পাওয়া যায় না? গুরুর কাছে মন্ত্র নিয়ে সেই মন্ত্রের মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে একটা সম্বন্ধ স্থাপন ক’রে তাঁকে কি নিবিড় ক’রে পাওয়া যায় না? এ কথাটা যেন মানুষের ধারণার মধ্যেই আসে না। ভগবানকেও যে একটা গভীর মধুর সম্বন্ধ গ’ড়ে ভালবাসা যায়, সে কথাটা সাধারণ মানুষ ধারণাই করতে পারে না।
অর্চনাপুরী মায়ের ‘ছড়ানো মুক্তো’ থেকে
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন