বানাই নদীর তীরে হাতিয়াগড়
নিউজ ফিডের পোস্ট
★★★বানাই নদীর তীরে হাতিয়াগড় ★★★
-:বিনোদ সরদার:-
মজে যাওয়া বানাই নদী
বইছে বাদাবনে।
দুই ধারে তার গরু ছাগল
চরে আপনমনে।।
শুনতে যদি চাও তোমরা
এসো বানাই তীরে।
অতীত কথা সব বলবে
মনের ব্যাথা ভুলে।।
বানাই একটি নদীর নাম। যৌবন সে পে্রিয়েছে। এখন সে বুড়ো হয়েছে। নিজস্ব সম্পদ তেমন নেই। কেবল সে বেচেঁ আছে তার মনের কথা বলবে বলে। আমি কান পেতে শুনলাম সেই মর্মকথা। লোমহর্ষক সেই কাহিনী। খুঁজে পেলাম হাতিয়াগড়ের মধ্যযুগের ইতিহাস। খুঁজে পেলাম রাজা মাহিদানন্দের রাজপ্রাসাদ। খুঁজে পেলাম প্রাচিন বঙ্গ লিপি। খুঁজে পেলাম বন্য মহিষের দাঁত ।খুঁজে পেলাম প্রাচীন শিব সাধনার ভূমি ও শিব মূর্তি। যেটা পূজা করতেন রাজা মাহিদানন্দ ও তার প্রজাগণ।
মধ্যযুগে রচিত /13 শতক তে মুসলমানি কেচ্ছাতে রয়েছে পীর গোরাচাঁদ /হযরত সৈয়দ আব্বাস আলি মক্কা থেকে আরো 31 জন পীর কে নিয়ে আসেন বঙ্গ দেশে ধর্ম প্রচারের জন্য। পীর গোরাচাঁদ এর বৈশিষ্ট্য হলো রাজা কে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করা ।এর জন্য তিঁনি নানান অলৌকিক ব্যাপার প্রজাদের কে দেখাতেন। শেষে রাজা না রাজি হলে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেন। এইভাবে নবাবী শাসনে তিনি ইসলামধর্ম প্রচার করতেন। সেই সময় বাংলার নবাব ছিলেন সামসুদ্দিন ফিরোজ শাহ। সুন্দরবনের স্বাধীন রাজা ছিল হাতিয়া গড়ের রাজা। তাকে ইসলাম গ্রহণের জন্য পির গোরাচাঁদ প্রস্তাব দেন। রাজা মেনে নেননি কারণ তিনি শিব সাধনা করতেন। শেষে বানাই তীরে যুদ্ধ হয় । যুদ্ধে বাঁকানন্দ নিহত হন তিনি ছিলেন রাজার বড়ো ছেলে। ছোটো ছেলে আঁকা নন্দের সাথে ঘোর যুদ্ধে পীর গোরাচাঁদ এর মুন্ডকছেদ হয়। মৃত্যুর আগে সেনা নিয়ে পালাতে থাকে বানাই নদী ধরে । বানাই নদীর জাত অভিমান জেগে ওঠে । প্রচন্ড বানে সমস্ত নৌকা ও সেনা ডুবে যায়। কেবল গোরাচাঁদ বেঁচে থাকে। শেষে তিনি নৌকার কাট কুমিরের পিঠে লাগিয়ে বানাই ছেড়ে বিদ্যধরী নদী হয়ে বেড়া চম্পা তে ওঠেন । সেখানে তার মৃত দেহ কবরস্থ করা হয়। তার হাড় সেখানে আছে বলে সেই জায়গার নাম এখন হাড়োয়া। বানাই নদী ধরে পালানোর সময় বাঁচার জন্য গোরাচাঁদ পান ও সুপারি চেয়ে ছিলেন তা কেউ দিতে পারেনি। বানাই নদী যখন বান ডেকে তাদের সব ভাসিয়ে দেয় তখন তিনি এখানকার মানুষ ও নদীর জাত অভিমান দেখে ক্রুদ্ধ হন ও বানাই নদী কে অভিশাপ দেন । লোকশ্রুতি বলে এই কারণে বানাই নদী মজে গেছে। কিন্তু আমার মতে এটা ঠিক নয় কারণ সুন্দরবোনের অন্যান্য নদী গুলি এখন বানাই নদী র মতো অবস্থা।
বানাই তথা হাতিয়া গড় পুন্ড্রবর্ধন এর নিম্ন গাঙ্গেয় অঞ্চলের মধ্যযুগের গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস। যেখান থকে বাংলাভাষার লিপি বিবর্তন ভাষা বিবর্তন ধর্মীয় বিবর্তন ও সুন্দরবনের প্রাচীন জীব বৈচিত্র সম্পর্কে গুরুত্ব পূর্ণ দিক নির্দেশ করে।
ছবিতে একজন 93 বছরের অতি বৃদ্ধ কে দেখবেন উনি বর্তমান ভগ্ন রাজ প্রসাদ এর মলিক মনে বংশ ধর। ওনার মুখে যুদ্ধের কাহিনী শুনেছি।
1908 সালে প্রাবন্ধিক নিখিলনাথ রায় ঐতিহাসিক চিত্র তে লেখেন প্রতাপাদিত্যের বর্ণনা প্রসঙ্গে। সেখানে বলা হয়েছে বারো ভূঁইয়া রাজা প্রতাপাদিত্যের হাতির মোকাম থেকে হাতিয়া গড় নাম হয়েছে। অবশ্য তিনি বলছেন এটি সঠিক কারণ নয়। কারণ রাজা প্রতাপাদিত্যের সময় কাল পঞ্চদশ শতক। কিন্ত ত্রয়োদশ শতকে হাতিয়া গড় এর কথা মুসলমানি কেচ্ছায় পাওয়া যাচ্চে। সেখানে তৎকালীন হাতিয়া গড় এর রাজার সাথে মানে মহিদানন্দের সাথে পির গোরাচাঁদ এর যুদ্ধও বর্ণনা আছে । সুতরাং হাতিয়া গড় অনেক প্রাচীন নাম। আমার মনে হয় গঙ্গারীদে সভ্যতার যে হস্তিবাহিনী ছিল সেখান থেকে হাতিয়া গড় নামটি আস্তে পারে। কারণ হাতিয়া গড়ের সীমানা শুরু হচ্ছে ডায়মন্ড হারবার থেকে শুরু করে 24 পরগনার শেষ বঙ্গোপসাগরে তীর পর্যন্ত। যার মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে বানাই নদী । বর্তমান সমীক্ষায় প্রাপ্ত মহিদানন্দের রাজধানী একই দিক নির্দেশ করে।
বনাই নদী র নাম করন অনেক ভাবে হয়েছে। বান বা বন্যা থেকে বানাই নদী কারন মুসলমানি কেচ্ছা ও লোকশ্রুতি বলে বানাই নদী বান ডেকে পীর গোরাচাঁদ এর নৌকা গুলি ডুবিয়েছে।আবার এই নদীর তীরে অসংখ্য বাইন বানি উদ্ভিদ যেমন পেয়ারা বাইন,জাত বাইন ,কালা বাইন হয়। এই উদ্ভিদের নাম থেকে ও বানাই নাম আস্তে পারে। তবে বর্তমানে এই নদী 24 পরগনার মুরাগাছি ও হাতিয়া গর এর সীমান্তে র দিক নির্দেশ করে । হাতিয়া গড় সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ গবেষণা সংক্রান্ত প্রবন্ধ সংকলন 26 জানুয়ারি 2021প্রকাশ হচ্ছে। বই "গঙ্গারিডি থেকে হাতিয়াগড়" আগত বুদ্ধ-পূর্ণিমায় প্রকাশ হবে। —
Pijush Sarkar
এবং আরও 40
জনের সাথে।শেয়ার করেছেন :- প্রণব কুমার কুণ্ডু
প্রণব কুমার কুণ্ডু
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন