শনিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৮

ড. রাধাবিনোদ পাল


      ড. রাধাবিনোদ পাল 



      ফেসবুক থেকে শেয়ার করেছেন          প্রণব কুমার কুণ্ডু 


উপেক্ষিত বাঙালী : বিশ্ববিখ্যাত বিচারপতি ড: রাধাবিনোদ পাল : জীবনী
@Post Courtesy : Dr Radhabinod Pal Family Archives

সংক্ষিপ্ত জীবনী
ডাক্তার রাধাবিনোদ পালের কর্মবহুল ও বৈচিত্র্যময় জীবনের শুরু বাংলার এক অখ্যাত গাঁয়ে । সেটা ইংরাজি ১৮৮৬ সালের ২৭ শে জানুয়ারি । গাঁয়ের নাম ছিল শালিমপুর , নদিয়া জেলায় (এখন পাকিস্তানের কুষ্টিয়া জেলায় পদ্মার পারে । পিতার নাম স্বর্গতঃ বিপিনবিহারী পাল , মাতার নাম স্বর্গতঃ মগ্নময়ী দেবী । তাঁর তিন বছর বয়সে পিতা হলেন দেশত্যাগী -- সন্ন্যাস হ'য়ে । ঘরে রইলেন অসহায়া জননী -- তিনটি শিশুসন্তানকে নিয়ে -- রাধাবিনোদ আর দুই বোন ।
পিতার স্নেহভালোবাসা বিশেষ পাননি ডাঃ পাল বড় হয়েছেন মায়ের বুকজোড়া আদর আর ঠাকুরদা স্বর্গতঃ ফ্যালান চন্দ্র পালের স্নেহছায়াতে । তিনি সাত বছর পেরিয়ে আটে পা দিতে পাঠশালায় ভর্তি হয়েছিলেন । তাঁর ঠাকুরদার প্রতিষ্ঠিত পাঠশালা । সেখানে অসাধারণ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই শেষ করলেন পাঠশালার পড়া ।
তারপর এল Lower Primary পরীক্ষা । সসম্মানে পাশ করলেন তিনি --সঙ্গে মাসিক ২ টাকার বৃত্তি । সেখান থেকে গেলেন তিনি মাসিমার আশ্রয়ে -- মোড়মাথা থেকে ২ মাইল দূরে বাঁশবেড়ে --সেইখানে । কিন্তু আশ্রয় যদিবা জুটল সেইসঙ্গে উপস্থিত হল আরেক বিড়ম্বনা ।
বোয়ালিয়াতে থাকতেন তাঁর মামা -- তাঁর দোকানে সাহায্য করতে ডাক পড়ল ডাঃ পালের । মামার দোকানের সমস্ত কাজ করে ১১ বছরের ছেলে আসতেন নদী পার হয় মাসীর বাড়ি -- সেখান থেকে বাঁশবেড়ে মাইনর স্কুল । ফলে রোজ বাঁধাধরা লেট হতেন তিনি । তখন 2nd class এ পড়েন তিনি । সংসারে অভাবের তাড়নায় মামা কাকারা জানালেন ডাঃ পালের পড়া আর বেশী দূর এগোন চলবে না -- বরং চাকরি করুক । বাধ্য হয়ে মুদীর দোকানের চাকরি নিলেন রাধাবিনোদ -- চার টাকা মাইনেতে -- মাত্র ১১ বছর বয়স তখন ।
মা কিন্তু এভাবে আশাভঙ্গ হতে কিছুতেই রাজি নন । অখ্যাত গাঁয়ের অশিক্ষিতা রমণী তিনি -- মনে কিন্তু অদম্য ইচ্ছা -- ছেলেকে মানুষ করতেই হবে -- জগৎজোড়া নাম হবে তাঁর ছেলের । ছেলেকে দিয়ে চিঠি লেখান দূরের স্কুলে -- যদি কোন সহৃদয় ভদ্রলোক এই অসহায় ছেলেটিকে পড়াশোনা করবার সাহায্য করেন ।
করুণাময় ভগবানের আশীর্বাদে সাহায্য আসে -- Kumdi M.E . School এর শিক্ষক স্বর্গতঃ কৃষ্ণলাল চৌধুরী আশ্রয় দেন তাঁর স্কুলে । সেখান থেকে মাইনর পরীক্ষায় সমগ্র প্রেসিডন্সি ডিভিশনে প্রথম স্থান পেয়ে পাশ করলেন ।
কুমরী ছেড়ে এলেন কুষ্টিয়াতে --Kusthia H.E. School এ । সেখানে আশ্রয় পেলেন কমলাপুর -- জিয়ারবির জমিদার স্বর্গতঃ রামচন্দ্র রায় চৌধুরীর বাড়ীতে । তখন নিয়ম ছিল মাইনর পাশ করে এসে 4th classএ ভর্তি হতে হত । কিন্তু কুষ্টিয়া স্কুলের হেড মাস্টার স্বর্গতঃ অম্বিকাচরণ মুখোপাধ্যায় তাঁহার মেধা দেখে তাঁকে 3rd classএই ভর্তি করে নিলেন এবং December মাসে Annual পরীক্ষায় বসতে দিলেন -- সে পরীক্ষাতেও প্রথম হলেন -- তাঁকে 2nd class এ তুলে দেওয়া হল ।
2nd classএ পড়তে পড়তেই তিনি কুষ্টিয়া ছেড়ে গেলেন দুবলহাটীতে রাজশাহী জেলায় -- সেখানকার জমিদার সমস্ত ভার নিলেন তাঁর । এখানে Dubolhati Raja Haranath High School থেকে ১৯০৩ সালে Entrance পাশ করলেন -- সঙ্গে সঙ্গে মাসিক আট টাকার বৃত্তি ।
Entrance পাশ করার পর পরই ডাঃ পাল গেলেন রাজশাহীতে । রাজশাহী কলেজ থেকে F.A. পাশ করেন ১৯০৫ সালে । এবারেও পেলেন বৃত্তি । কিন্তু রাজশাহী থাকার সময় তাঁর বৃত্তির পুরো টাকাই পাঠিয়ে দিতেন মায়ের কাছে -- সংসার খরচের জন্যে । নিজে থাকতেন Asst. Jailor -- স্বর্গতঃ দীনবন্ধু পালের বাড়িতে । কিন্তু দীনবন্ধুবাবু সেখান থেকে বদলী হয়ে গেলে ডাঃ পালকে আশ্রয় নিতে হল কলেজ হোস্টেলে -- 'হেমন্ত কুমারী বোর্ডিং এ । মাসিক ৬ টাকা খরচ --সেটা যোগাতেন কলেজের ইংরাজি প্রফেসর স্বর্গতঃ রাখালদাস ঘোষ ।
Final পরীক্ষার আগে হল মুস্কিল -- feeর টাকা হাতে নেই । এবারেও ভগবান জুগিয়ে দিলেন পাথেয় -- ডাঃ পালের বন্ধু স্বর্গতঃ তেজেন্দ্র সিংহসরকার তাঁকে সাহায্য করলেন টাকা দিয়ে । রাজশাহীতে দীনবন্ধুবাবুর বাড়ীতে থাকবার সময়েই ডাঃ পালের সঙ্গে পরিচয় হয় স্বর্গত পূর্ণচন্দ্র পালের । তিনি ছিলেন Inspector of Lightning Conductors. F.A. পাশ করে তাই যখন ডাঃ পাল এলেন কোলকাতায় -- এসে উঠলেন তিনি বেলেঘাটাতে -- স্বর্গতঃ পূর্ণচন্দ্র পালের বাড়ীতে । এখানে থেকেই ডাঃ পাল ১৯০৭ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে গণিতশাস্ত্রে অনার্স নিয়ে B.A. পাশ করলেন । তারপর ১৯০৮ সালে M.A. পাশ করলেন গণিতশাস্ত্রে ।
প্রেসিডেন্সি কলেজে যখন B.A. পড়ছেন সেই সময় তিনি স্বর্গতঃ পূর্ণচন্দ্র পালের জ্যেষ্ঠা কন্যা স্বর্গতাঃ নলিনীবালার সঙ্গে শুভ পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন ।
M.A. পরীক্ষা শেষ করেই ডাঃ পাল যান এলাহাবাদে জীবিকার সন্ধানে । সেখানে Allahabad Accountant General অফিসে বছর দুই ক্লার্ক এর চাকুরী করেন । এই চাকুরী করা কালেই তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সসম্মানে B.L. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ।
অবশেষে ময়মনসিংহে গণিতশাস্ত্রে প্রফেসারী পেয়ে সেখানে চলে গেলেন তিনি -- মাসিক ১৫০ টাকা মাইনে । এখানে থাকাকালে তিনি অসংখ্য ছাত্র , বন্ধু আত্মীয়দের , যথাসাধ্য সাহায্য করেছেন -- আশ্রয় দিয়ে , অর্থ দিয়ে আরও নানাভাবে ।
বস্তুতঃ এই সময় থেকে শুরু করে সুদীর্ঘ জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে গেছেন পরের মঙ্গলকামনায় । জীবনের কোনো অবস্থায় তার অন্যথা হতে দেননি ।
এরই মধ্যে সময় করে তিনি প্রস্তুত হচ্ছিলেন M.L. পরীক্ষার জন্য । তিনি ১৯২০ সালে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে M.L. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন ।
ইতিমধ্যে ১৯১৭ সালের ২রা মার্চ তিনি কলিকাতা হাইকোর্টের উকীল enrolled হন । তবে আইনজীবনে প্রবেশ করে ওকালতি শুরু করেন ১৯২১ সালে --- ময়মনসিংহ থেকে ফিরে আসার পর । ১৯২৩ সাল থেকে ১৯৩৬ সাল -- এই সুদীর্ঘ ১৩ বছর তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের Law College এর প্রফেসর পদে অতিবাহিত করেন ।
১৯২৪ সালে তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের D.L. উপাধি পান -- তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল -- " Hindu Philosophy of Law in the Vedic and Post-Vedic Times prior to the Institutes of Manu "
১৯২৫ সালে তিনি Tagore Professor of Law পদে বক্তৃতা দেন -- তাঁর বক্তৃতার বিষয় ছিল -- " The Law of Primogeniture with special reference to India , ancient and modern " ।
১৯২৭ সাল থেকে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত ডাঃ পাল Income Tax বিষয়ে ভারত সরকারের Legal Adviser ছিলেন । ১৯৩০ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার তিনি Tagore Professor of Law হন । এবার তাঁর বক্তৃতার বিষয়বস্তু ছিল -- " History of Hindu Law in the Vedic Age and in the Post-Vedic Times down to the Institutes of Manu " ।
১৯৩৭ সালে Hague এ Congress of Law এর যে দ্বিতীয় অধিবেশন হয় সেখানে International Academy of Comparative Law এর তিনি যুগ্ম সভাপতি নির্বাচিত হন । ১৯৩৮ সালের জন্য তিনি তৃতীয়বার কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের Tagore Professor of Law এর পদাভিষিক্ত হন । এবার তাঁর বক্তৃতার বিষয়বস্তু ছিল -- " Crimes in International Relations ." কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এই সম্মান অতি বিরল ।
১৯৪১ সনের ২৭শে জানুয়ারি তিনি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন এবং এই পদে তিনি ১৯৪২ সালের ২রা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকেন । এরপর ঐ বছরেই ১লা ডিসেম্বর আবার তিনি বিচারপতি আসনে অধিষ্ঠিত হন এবং ১৯৪৩ সালের ২৩শে জুন পর্যন্ত কার্যরত থাকেন ।
১৯৪৪ সালে তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের Vice-Chancellor পদ লাভ করেন । ১৯৪৬ সালে তিনি ঐ আসন থেকে অবসর নেন ।
১৯৪৬ এর এপ্রিল ! ডাঃ পালের জীবনে এক স্মরণীয় বৎসর । আমন্ত্রণ এল -- জজ হয়ে যেতে হবে জাপানে -- দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে পরাজিত জাপানী নেতাদের বিচারের ভার নিয়ে -- অন্যান্য দেশের সঙ্গে ভারত থেকে এ সম্মান পেলেন ডঃ রাধাবিনোদ পাল ।
বলা বাহুল্য এ বিচারের মুখ্য হোতা যুদ্ধজয়ী আমেরিকা । বিচারের প্রারম্ভেই ডাঃ পালকে যে শপথ গ্রহণ করতে বলা হল সেটা Military Tribunal এর জন্য বিশেষভাবে রচিত এবং বিচারকদের সাধারণ শপথ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তার বিশেষ আপত্তির বিষয়টি ছিল এই যে তাতে প্রত্যেকটি বিচারককে অঙ্গীকার করতে হত যে তিনি Tribunal এর কার্যাবলী সম্পূর্ণ গোপন রাখবেন । ডাঃ পাল জানালেন --- এরকম শপথ গ্রহণ করতে তিনি পারবেননা --এবং তার জন্য তিনি দুঃখিত । তবে যদি কোন চাপ দিয়ে শপথ গ্রহণের চেষ্টা করা হয় তবে তিনি তখনই দেশে ফিরে যেতে বাধ্য হবেন । ভারতীয় জজের এরকম দৃঢ় মনোভাবের পরিচয় পেয়ে অন্যান্য জজেরা বাধ্য হলেন ডাঃ পালকে সাধারণ শপথ নিয়ে বিচারপতির আসনে বসতে দিতে । এর পরের ঘটনা আরও চমকপ্রদ ।
পৃথিবীর সব দেশের জজেদের রায় যখন জাপানের বিরুদ্ধে -- জাপানকে যুদ্ধের অপরাধে জাপানকে যুদ্ধের অপরাধে অপরাধী বলে মেনে নিয়েছে তারা -- ঠিক সেই মুহূর্তে বিস্মিত , মুগ্ধ , হতবাক পৃথিবীর মানুষগুলো শুনল ভারতীয় বিচারপতির রায় -- এ বিচার নয়-- এ বিচারের প্রহসন -- জাপান সম্পূর্ণ নির্দোষ ! সুদীর্ঘ ৮০০ পাতার রায় বেরোল যেদিন -- বিরাট আলোড়ন সৃষ্টি হল ভারতীয় বিচারপতির অনমনীয় স্বাধীন চিন্তার পরিচয় পেয়ে । গৌরবের উচ্চশিখরে উঠে যশেরমালা গলায় পরে তিনি ফিরে এলেন দেশে ১৯৪৮ সালে নভেম্বর মাসে ।
কিন্তু এর ঠিক কিছুদিন পরেই ১৯৪৯ সালের এপ্রিল মাসে তিনি হারালেন তাঁর প্রিয় পত্নী স্বর্গতা নলিনীবালাকে । আনন্দের পরমমুহূর্তে মর্মান্তিক আঘাত পেলেন তিনি ।
এই ঘটনার পর তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ল দেশে বিদেশে । ১৯৫২ সালের আগস্ট মাসে United Nations এর International Law Commission এর সদস্য নির্বাচিত হলেন তিনি । ১৯৫৭ সালে তিনি Hague এ প্রতিষ্ঠিত Cour Permanente d' Arbitrage (Permanent Court of Arbitration) এর বিচারপতি নিযুক্ত হলেন । ১৯৫৮ সালে তিনি International Law Commission এর Chairman নির্বাচিত হন ।
১৯৫৯ সালে ভারত সরকার ডাঃ পালকে " পদ্মবিভূষণ " উপাধিতে সম্মানিত করেন । ঐ বৎসরই তিনি National Professor of Jurisprudence নিযুক্ত হন । এইভাবে একসঙ্গে দুটো ফুল স্থান পেল তাঁর যশের মালিকায় ।
১৯৬২ সাল্ব আবার Chairman হলেন International Law Commission এর -আজ পর্যন্ত এই বিরল গৌরবের অধিকারী একমাত্র তিনিই । ১৯৬৬ সালে এল তার শেষ সম্মান -- তার আদরের দেশ জাপান থেকে ।
অস্তগামী সূর্যের ছটায় যেমন পশ্চিম গগন রঙে রঙে রঞ্জিত হয়ে ওঠে --বার্ধক্যে উপস্থিত ডাঃ পাল আবার যেন প্রতিভার রস্মিবিচ্ছুরনে প্রাচ্যের আকাশ লালিমায় ভরিয়ে দিলেন । জাপানের Nihon University তাকে LLD. (Honoris Causa) উপাধিতে ভূষিত করলেন । জাপানের সম্রাট তাঁকে দিলেন First Order of Sacred Treasure Tokyo ও Kyotoর Metropolis Governorরা তাঁকে সম্মানিত করলেন Freedom of the City of Tokyo এবং Kyoto শত শত জাপানবাসীর অন্তরের গোপনতম কোণ থেকে ঝরে পড়ল শ্রদ্ধার্ঘের ঝরণাধারা ।
Land of the Rising Sun --Japan-- বরণ করে নিল এই বিরাট জ্যোতির্ময় মহাপুরুষকে । মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় সার্থকতা নিজেকে সৃষ্টির পরিপূর্ণতায় ।
ডাক্তার রাধাবিনোদ পাল এই সার্থকতার পূর্ণ আস্বাদ পেয়েছিলেন । নিজেকে তিনি গড়েছিলেন তিল তিল করে -- প্রতিটি মুহূর্তে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়েছিল । জীবনকে তিনি অনুভব করেছিলেন তার প্রতি পদক্ষেপে ।

@ Post Courtesy : Dr Radhabinod Pal Family Archives

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন