রাসবিহারী বসু ( দুই )
ফেসবুক থেকে শেয়ার করেছেন : প্রণব কুমার কুণ্ডু
(তৃতীয় পর্ব)
১৯১৫ সালের সেপ্টম্বর ও অক্টোবর এই দুই মাস ভারতের সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্ৰামের ইতিহাসে বড়োই দুর্ভাগ্যের। প্রথমত সেপ্টম্বর মাসের ৯ তারিখে বাঙলার দুই দামাল বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ ও চিত্তপ্রিয় হঠাৎই নিহত হলেন। যতীন্দ্রনাথের মতোন মহান সংগঠক কে আমরা এমন সময় হারালাম যখন বিদেশ থেকে জার্মান সাহায্য আসার সব ব্যবস্থা ঠিক হয়ে গিয়েছিল। অপর দিকে অক্টোবর মাসে রাসবিহারীর সাংহাইতে তৈরি করা দুটো প্রচেষ্টাই ব্রীটিশ গোয়ন্দাদের হাতে ধরা পরে যায়। প্রথমে নিলসেনের দ্বারা নিযুক্ত চীনা কে সাংহাই পুলিস গ্ৰেফতার করলো এবং তাকে জেরা করে সমস্থ নাম ঠিকানা জেনে নিল। এর পর আবার সিঙ্গাপুর পুলিসের হাতে অবনী মুখার্জী তাঁর সেই বিখ্যাত নোটবই সমেত ধরা পড়ল এবং সেই নোটবই থেকে তো ব্রিটিশ পুলিশ অনেক নাম ও বিভিন্য তথ্য পেয়ে গেল।
সিঙ্গাপুর জেলে কিছুদিন কাটানোর পরে অবনী মুখার্জী এক আইরিশ জেলারের সাহায্যে জেল থেকে পালিয়ে ইন্দোনেশিয়া চলে যান। সেখান থেকে এক ডাচ ব্যবসায়ীর মালয়েশিয় চাকর রুপে ইউরোপে পালিয়ে যান। কিন্তু এদিকে রাসবিহারী বসুর জার্মান অস্ত্র নিয়ে দেশে ফিরে ব্রীটিশের হাত থেকে ভারত মাতার মুক্তির সকল প্রচেষ্টা শেষ হয়ে গেল। তিনি আবার জাপানের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন।
জাপানে ফিরে গিয়েও তাঁর বিপ্লাবাত্মক প্রচেষ্ট চলতে থাকলো। ১৯১৫ সালের ২৭ শে নভেম্বর স্বাধীন ভারত গড়ার উদ্দেশ্যে তিনি আমেরিকা ফেরত হেরম্বলাল গুপ্ত এবং লালা লাজপত রায় একটি সভা করে তাদের করনীয় কার্যাবলী স্থির করেন।। জুনো পার্কের প্রসিদ্ধ ভোজনালয় সিওকিনে এই সভা হয়েছিল। ওই সভায় জাপানী ডাক্তার সুমেই ওহকাওয়া উপস্তিত ছিলেন। সভায় লালা লজপত রায় ওজস্বিনী ভাষায় যে বক্তিতা দেন তাতে জাপানী নিমন্ত্রিত ব্যক্তি মাত্রেই অভীভূত হয়ে যান। কিন্তু এই সভার কথা ব্রিটিশ প্রসাশনের কানে যায়। এই সভা ও সাংহাই থেকে অস্ত্র সংগ্ৰহে রাসবিহারীর প্রচেষ্টার কথা জেনে ব্রিটিশ প্রসাশন জাপানী বৈদেশিক বিভাগের মন্ত্রীকে অনুরোধ ( আদেশ ) করেন যে ভারতীয় বিপ্লবীদের অবিলম্বে জাপান থেকে নির্বাসন করার জন্য। এই অবস্থা থেকে পরিত্রানের কোন পথ খুজে না পেয়ে রাসবিহারী ও হেরম্বলাল জাপানী জনগনের কাছে আবেদন জানালেন যে তাদের বিরুদ্ধে যেন সেই কঠিন পদক্ষেপ না নেওয়া হয় কিন্তু জাপানী পুলিশের অধক্ষ্য নিসিকুরো ঘোষনা করলেন যে ভারতীয়দ্বয়কে ( লাজপত রায় তখন আমেরিকা চলে গেছেন) ২রা ডিসেম্বর ইয়াকোহামা বন্দর হতে যাত্রাকারি জাহাজে বলপূর্বক তুলে দেওয়া হবে।
ঠিক সেই সময় পরিত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন ব্ল্যাক ড্রাগন পার্টির এক প্রভাবশালী নেতা এবং বিখ্যাত বিপ্লবীকার মিৎসুই তোয়ামা। এই তোয়ামার পরামর্শেই এক বেকারী কোম্পানীর মালিক আজিও সোমা ও তাঁর স্ত্রী মাদাম কোকো সোমা রাসবিহারী ও হেরম্বলাল কে টোকিও শহরের বাইরে তাঁদের বাগান বাড়িতে লুকিয়ে রাখেন। সেই দিনটি ছিল ১৯১৫ সালের ১লা ডিসেম্বর। এখানে কিছুদিন থাকার পর গোপনে হিরম্বলাল আমেরিকায় পালিয়ে যান কিন্তু রাসবিহারী বসুর আর কোনদিন দেশে ফেরা হলোনা । তিনি ১৯১৮ সালে আজিও সোমার কন্যা তোশিকাকে বিবাহ করেন। ১৯২৩ শে তিনি জাপানী নাগরিকত্ব লাভ করেন। প্রায় সাত বছর তাঁকে জাপানী পুলিশের ভয়ে বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছিল। এতকিছুতেও ভারত মাতার মুক্তির জন্য তাঁর বৈপ্লবিক প্রচষ্টা বন্ধ করা যায়নি । আর সে ইতিহাস তো আমাদের অনেকেরই জানা।
(শেষ)
(শেষ)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন