জানার কথা
ফেসবুক থেকে শেয়ার করেছেন প্রণব কুমার কুণ্ডু
হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থে কি হিন্দু বা সনাতন শব্দের উল্লেখ আছে ?
ফটো হিসেবে যেটি পোস্ট করেছি, তার জবাব দেওয়ার আমার এই প্রবন্ধের লক্ষ্য। এখানে আসিফ ইকবাল নামে একজন প্রশ্ন করেছে, “মুসলিমদের ধর্ম গ্রন্থে যেমন উল্লেখ রয়েছে যে তাদের ধর্ম ইসলাম।” তার মানে সে বলেছে মুসলমানদের ধর্ম হলো ইসলাম। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে ইসলাম আবার ধর্ম হলো কবে ? ধর্মের মানে কী এই বাল সাহেব তা জানে ?
মানুষ প্রকৃতির সৃষ্টি, তাই প্রকৃতি নামের ঈশ্বরই সৃষ্টি করে দেয় বা দিয়েছে মানুষের ধর্ম। যেমন- প্রকৃতি সৃষ্টি করে দিয়েছে জল বা লোহার মতো পৃথিবীর সকল পদার্থের ধর্ম। এসব পদার্থের ধর্ম কি কোনো মানুষ সৃষ্টি করতে পারে, না পারবে ?
পারবে না।
পারবে না।
তাহলে প্রকৃতি নামক ঈশ্বরের সৃষ্টি, মানুষের ধর্ম, কোনো মানুষ সৃষ্টি করবে কিভাবে ?
মানুষ সৃষ্টি করতে পারে শুধু মত বা পথ, একে বলে ইজম। যেমন- কার্ল মার্কস যে মতবাদের জন্ম দিয়েছে, তাকে বলে মার্ক্সিজম= মার্ক্স +ইজম। এই সূত্রে বুদ্ধ যে মতবাদের জন্ম দিয়েছে, তাকে বলা যেতে পারে বুদ্ধিজম, যীশু খ্রিষ্ট যে মতবাদের জন্ম দিয়েছে, তাকে বলা যেতে পারে খ্রিষ্টিয়জম এবং মুহাম্মদের মতবাদকে বলা যেতে পারে মুহম্মদইজম বা মুহম্মদের মত। কোনোভাবেই মুহম্মদের মত বা পথকে ইসলাম নামের ধর্ম বলা যেতে পারে না।
এরপর সে প্রশ্ন করেছে, “এইরকম হিন্দু ভাইদের ধর্মো গ্রন্থে কি উল্লেখ আছে যে তাদের ধর্ম কি???”
ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে সে হিন্দুদেরকে হিন্দু ভাই হিসেবে উল্লেখ করতো না। কারণ, সে জানেই না যে, শুধু হিন্দুদেরকে নয়, সকল অমুসলিমকে ঘৃণা করাই ইসলামের মূল আদর্শ। কারণ, কোরানে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, যারা ইসলাম মানে না তারা নিকৃষ্ট সৃষ্টি, জন্তু জানোয়ারের চেয়েও খারাপ, তাদের সাথে আল্লা ও রসূলের কোনো সম্পর্ক নেই, যেখানে পাবে তাদেরকে হত্যা করো। নিচে দেখে নিন কোরানের এরকম কয়েটি হিংসাত্মক ও ঘৃণা বর্ষনকারী আয়াত-
"হে ঈমানদার লোকেরা, ইহুদি ও ঈসায়ীদের নিজেদের বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না। তারা নিজেরা পরস্পরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেউ যদি তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহন করে, তাহলে সে তাদের মধ্যেই গন্য হবে।"- ( কোরান, ৫/৫১)
"হে ঈমানদারগণ, ঈমানদার লোকদের ত্যাগ করে কাফেরদেরকে নিজেদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তোমরা কি আল্লাহর হাতে নিজেদের বিরুদ্ধে দলিল তুলে দিতে চাও।"- ( কোরান, ৪/১৪৪)
"আমি তোমাদের মধ্যে ও ইহুদিদের মধ্যে কেয়ামত পর্যন্ত শত্রুতা সৃষ্টি করে দিয়েছি।...এরা জমিনে বিপর্যয় সৃষ্টির চেষ্টা করে, কিন্তু আল্লা বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করেন না।" - ( কোরান, ৫/৬৪)
“আল্লাহ মুশরিকদের সাথে সম্পর্কহীন এবং তার রসূলও।” (কোরান, ৯/৩)
“এই কুরআন পরিপূর্ণ হেদায়েতের কিতাব। আর সেই লোকদের জন্য কঠিন যন্ত্রনাদায়ক আযাব রয়েছে, যারা আল্লাহর আয়াতগুলোকে মেনে নিতে অস্বীকার করেছে।” (কোরান, ৪৫/১১)
“একথা একান্তই সত্য যে, বহু সংখ্যক মানুষ ও জ্বীন এমন আছে ,যাদেরকে আমি জাহান্নামের জন্যই পয়দা করেছি।.....তারা আসলে জন্তু জানোয়ারের মতো বরং তা হতেও অধিক বিভ্রান্ত।” ( কোরান, ৭/ ১৭৯)
“তাদের মধ্যে থেকে কাউকে নিজের বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যতক্ষণ না সে আল্লাহর পথে হিজরত করে আসবে । আর সে যদি হিজরত না করে, তবে যেখানেই পাবে তাকে ধরবে, তাকে হত্যা করবে এবং তাদের মধ্যে কাউকে নিজের বন্ধু ও সাহায্যকারী রূপে গ্রহন করো না।” (কোরান, ৪/৮৯)
“আহলি কিতাব ও মুশরিকদের মধ্যে হতে যারা কুফরী করেছে, তারা নিকৃষ্টতম সৃষ্টি।”- (কোরান, ৯৮/৬)
সুতরাং যে ইসলাম বলছে, অমুসলিমদের ঘৃণা করো, তাদেরকে বন্ধু ও সহায্যকারী হিসেবে নিও না, ইসলামকে স্বীকার না করলে হত্যা করো, সেই ইসলামের অনুসারী এক মুসলমান, হিন্দুদেরকে উদ্দেশ্য করে বলছে, ভাই ! এরা যে ইসলামের কী বাল জানে বা বোঝে, সেটা এবার চিন্তা করুন। হিন্দুদেরকে ভাই হিসেবে ভাবতে হলে আগে ইসলাম ত্যাগ করে মানুষ হ; তারপর হিন্দুদেরকে ভাই হিসেবে মনে করিস।
যা হোক, এরপর সে লিখেছে, “যদি না থাকে তাহলে কিসের ভিত্তিতে নিজেকে হিন্দু অথবা সনাতনি দাবি করেন????”
তার মানে এই বলদ ধরেই নিয়েছে যে, হিন্দুদের কোনো ধর্মগ্রন্থে সনাতন বা হিন্দু শব্দের উল্লেখ নেই।
সিন্ধু শব্দটিকে সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে না পেরে সিন্ধু নদের তীরে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর নাম ‘হিন্দু’ রাখে পারসিক বা বর্তমানের ইরানের লোকজন; আর এই শব্দটিই পরে, বর্তমান মধ্য প্রা্চ্যের লোকজন গ্রহন করে এবং পরে যেহেতু ভারতের লোকজন মধ্যপ্রা্চ্যের মুসলমান শাসক দ্বারা প্রায় হাজার বছর ধরে শাসিত হয়েছে, তাই তারা ভারতের লোকজনকে হিন্দু বলে সম্বোধন করতে করতে সনাতনী আর্যরা এক সময় হিন্দু নামেই পরিচিত হয়ে যায়। এখানে আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আমার নাম যদি কেউ বিকৃতভাবে উচ্চারণ করে, তার জন্য আমি দায়ী, না ঐ মূর্খরা দায়ী, যারা একটা শব্দকে সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে পারে নি বা পারে না ?
নিশ্চয় ঐ মূর্খরাই দায়ী, যারা কোনো শব্দকে সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে পারে না। তাই যদি হয়, তাহলে সিন্ধু থেকে হিন্দু হওয়াতে বর্তমানের কোনো হিন্দুর দায় আছে, না দোষ আছে ?
নিশ্চয় ঐ মূর্খরাই দায়ী, যারা কোনো শব্দকে সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে পারে না। তাই যদি হয়, তাহলে সিন্ধু থেকে হিন্দু হওয়াতে বর্তমানের কোনো হিন্দুর দায় আছে, না দোষ আছে ?
যা হোক, এই শেষ প্রশ্নে ইকবাল সাহেব ধরেই নিয়েছে যে, হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থে হিন্দু বা সনাতন শব্দের উল্লেখ নেই। হিন্দু শব্দের উল্লেখ কোনো হিন্দুধর্মীয় গ্রন্থে থাকা সম্ভব নয়; কারণ, হিন্দু শব্দের আবিষ্কার ও প্রয়োগ, হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থগুলো লিখিত হওয়ার অনেক পরে, এবং পৃথিবীতে ইসলামের প্রাদুর্ভাবের কিছু আগে, যখন পারস্য সভ্যতা গড়ে উঠেছিলো। কিন্তু সনাতন শব্দের উল্লেখ হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থে আছে কি না, দ্যাখ তার প্রমান-
হিন্দুদের আদি ধর্মগ্রন্থ হলো বেদ, চার বেদের একটি হলো অথর্ব, অথর্ববেদের ১০ম অধ্যায়ের ৮ নং সূক্তের ২১ ও ২২ নং মন্ত্রে বলা হয়েছে,
"ভোগ্যো ভবদথো অন্নমদদ বহু।
যো দেবমুত্তরাবন্তমুপাসাতৈ সনাতনম।"
যো দেবমুত্তরাবন্তমুপাসাতৈ সনাতনম।"
"সনাতনমেনমাহুরুতাদ্য স্যাৎ পুনর্ণবঃ।
অহোরাত্রে প্র জায়েতে অন্যো অন্যস্য রূপয়ো"
অহোরাত্রে প্র জায়েতে অন্যো অন্যস্য রূপয়ো"
এছাড়াও গীতা হলো হিন্দুধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ, সেই গ্রন্থের ১১/১৮ নং শ্লোকে বলা আছে,
“ত্বমক্ষরং পরমং বেদিতব্যং ত্বমস্য বিশ্বস্য পরং নিধানম্।
ত্বমব্যয়ঃ শাশ্বতধর্মগোপ্তা সনাতনস্ত্বং পুরুষো মতো মে।।”
ত্বমব্যয়ঃ শাশ্বতধর্মগোপ্তা সনাতনস্ত্বং পুরুষো মতো মে।।”
এর অর্থ : তুমি পরম ব্রহ্ম এবং একমাত্র জ্ঞাতব্য। তুমি বিশ্বের পরম আশ্রয়। তুমি অব্যয়, সনাতন ধর্মের রক্ষক এবং সনাতন পরম পুরুষ। এই আমার অভিমত।
দেখ রে মূর্খ, হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থে তাদের ধর্ম যে সনাতন তা উল্লেখ আছে কি না ?
জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রী কৃষ্ণ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রী কৃষ্ণ।
From: Krishna kumar das
💜 জয় হোক সনাতনের 💜
💜 জয় হোক সনাতনের 💜
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন