বুধবার, ২৩ মে, ২০১৮

ব্রহ্মগুপ্ত







Facebook     29/4/2018



ব্রহ্মগুপ্ত

শেয়ার করেছেন            Pranab Kumar Kundu.


Facebook © 2018


Bijan Banerjee

মাধ‍্যাকর্ষণ শক্তির কথা ভারতের জ‍্যোতির্বিজ্ঞানি ও গণিতবিদ হাজার বছর আগেই বলে গেছেন।

মহান বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটনের প্রায় এক হাজার বছর আগে ভারতের রাজস্থানের ভিনমাল নামের এক গ্রামে বসে দ্রাবিড় বংশদ্ভুদ এক গণিতবিদ বলেছিলেন, সকল বস্তুই ভূমিতে পতিত হয় কারন এই গ্রহের বৈশিষ্ঠ্যই এই যে সকল ভারী বস্তুসমুহকে ইহা কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে। কি অসম্ভব কথা ! এই অসামান্য গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানীর নাম ছিল ব্রহ্মগুপ্ত। জন্ম ৫৯৮ সালে রাজস্থানের ভিনমাল গ্রামে। ব্রহ্মগুপ্ত হর্ষবর্ধনের রাজত্বকালে আদি ভারতের উজ্জ্বয়িনী নামের এক জায়গায় স্থাপিত এক মানমন্দিরের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এই সময়েই তিনি গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে লিখে ফেলেন তার চারটি গ্রন্থ যাদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হল "ব্রহ্মস্ফুট সিদ্ধান্ত" বা "Correctly Established Doctrine of Brahma"(রচনাকাল আনুমানিক ৬২৮ খ্রিষ্টাব্দ)। আল-বিরুণী তার রচিত বই তারিক আল-হিন্দ’এ উল্লেখ করেছেন যে আরব দুনিয়া ভারতের জ্যোতির্বিজ্ঞানের সঙ্গে প্রথম পরিচিত হয় “ব্রহ্মস্ফুট সিদ্ধান্তের” মাধ্যমে। আনুমানিক ৭৭২ খ্রিষ্টাব্দে কঙ্ক নামে উজ্জ্বয়িনীর এক পণ্ডিত বাগদাদে খালিফা আল-মনসুরের দরবারে "ব্রহ্মস্ফুট সিদ্ধান্ত" নিয়ে যান। খালিফার অনুরোধে আল-ফাজারি কঙ্কের সাহায্যে তর্জমা করে আরবি ভাষায় অনুবাদ করেন বইটিকে এবং নাম দেন “জিজ আল সিন্ধিন্দ” (সিন্ধিন্দ = সিদ্ধান্ত)। পরে আল-খোয়ারিজমি যখন তার “আল-কিতাব আল-মুখতাসার ফি হিসাব আল-জাবর ওয়া আল-মুকাবালা” লিখেন, তখন এই বইটিকেই (জিজ আল সিন্ধিন্দ) ব্যবহার করেছিলেন। হ্যাঁ, ব্রহ্মস্ফুট সিদ্ধান্তেই উল্লেখ করা হলো শূণ্য নামের এক ধারণা। প্রথম স্বীকৃতি দেয়া হলো শূণ্যকে একটি সংখ্যা হিসেবে। ব্যবিলনিয়ানরা যেই শূণ্যকে শুধুই দেখত অন্য সংখ্যার বিকল্প হিসেবে অথবা রোমানরা যেই শূণ্যকে দেখত কোনো পরিমাপের ঘাটতি বোঝাতে। ব্রহ্মস্ফুট সিদ্ধান্ত’র ১৮তম অধ্যায়ে ব্রহ্মগুপ্ত বলছেন, ১৮.৩০ দুটি ধণাত্নক সংখ্যার সমষ্টি ধণাত্নক, দুটি ঋণাত্নক সংখ্যার সমষ্টি ঋণাত্নক; একটি ধণাত্নক ও একটি ঋণাত্নক সংখ্যার সমষ্টি সংখ্যাদুটির বিয়োগফল; যদি সংখ্যাদুটি একই হয় তখন সেটা হবে শূণ্য। ঋণাত্নক সংখ্যা এবং শূণ্যের সমষ্টি ঋণাত্নক এবং ধণাত্নক সংখ্যা এবং শূণ্যের সমষ্টি ধণাত্নক; এবং দুটি শূণ্যের সমষ্টি শূণ্য। এইরকম আরও কথা ! বীজগণিতে ব্রহ্মগুপ্ত সমাধান করেছেন linear equation, quadratic equation’এর দুটি সমমূল্যের সমাধান, পথ দেখিয়েছেন indeterminate equation সমাধানের। চতুর্ভুজের ক্ষেত্রফল, অ্যারিথমাটিক সিরিজ এবং কিছু বিশেষ ধরণের ডায়োফ্যান্টাইন সমীকরণের সমাধানও তিনি করেছেন। পাই (π) এর গুরুত্বপূর্ণ মানের অনেক কাছাকাছি গিয়েছেন। প্রচুর কাজ করেছেন জ্যামিতিক আকার-আকৃতি নিয়ে। ভারতীয় গণিতশাস্ত্রে পাটি-গণিতা (“mathematics of procedures,” or algorithms) এবং বীজা-গণিতা (“mathematics of seeds,” or equations) এর ভিত্তি তো তার হাত ধরেই। । তিনি প্রথম ও দ্বিতীয় মাত্রার নির্ণেয় ও অনির্ণেয় সমীকরণ সমাধানের পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। বৃত্তস্থ চতুর্ভূজের নানা ধর্ম সম্বন্ধে তিনি যেসব প্রতিজ্ঞা আবিষ্কার করেছিলেন তা তাঁকে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে দেয়। বর্তমানে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের ফ্রাস্টামের আয়তন নির্ণয়ের পদ্ধতি শেখানো হয়। পিরামিডের ফ্রাস্টামের আয়তন নির্ণয়ে যে সূত্রটি ব্রহ্মগুপ্ত আবিষ্কার করেছিলেন সেটা হল,

v = 1/3 h (S21 + S22 + S1S2), যেখানে

S1 , S2 = ফ্রাস্টামের বাহুদ্বয়ের দৈর্ঘ্য এবং h = উচ্চতা। পাটীগণিত ও বীজগণিতেও ব্রহ্মগুপ্ত তাঁর পান্ডিত্যের স্বাক্ষর রেখে গেছেন। তিনি বীজগণিতের নাম দিয়েছিলেন ‘কুট্টক গণিত’ সংক্ষেপে ‘কুট্টক’। ‘বীজগণিত’ নামটা অবশ্য প্রথম ব্যবহার করেছিলেন পৃথূদকস্বামী (৮৬০ খ্রিস্টাব্দে)।

ব্রহ্মগুপ্ত ‘শূন্য’ কে সংখ্যা হিসেবে গণ্য করতেন। 0 – এর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন a – a = 0, আর 0 – এর ধর্ম হিসাবে তিনি বলেন, 0 + 0 = 0, 0 – 0 = 0, a x 0 = 0 এবং 0/0 = 0 । যদিও তাঁর শেষ সিদ্ধান্তটি (0/0 = 0) ভুল ছিল।

জ্যামিতিতে ব্রহ্মগুপ্তের শ্রেষ্ঠ অবদান বৃত্তস্থ চতুর্ভুজের কর্ণের দৈর্ঘ্য নির্ণয়। এই দৈর্ঘ্য নির্ণয় করতে গিয়ে তিনি চতুর্ভূজের বাহু সমূহের দৈর্ঘ্যের যে সম্পর্ক নির্ণয় করেছিলেন তা হল :

বৃত্তস্থ চতুর্ভূজের বাহু চারটি যদি a, b, c, d হয় এবং কর্ণদ্বয়ের দৈর্ঘ্য m ও n হলে, ব্রহ্মগুপ্ত সূত্র অনুযায়ী আমরা পাব,

m2 = (ab+cd) (ac+bd)/ (ad+bc)

এবং n2 = (ac+bd) (ad+bc)/ (ab+cd)

বৃত্তস্থ চতুর্ভূজের ক্ষেত্রফল নির্ণয়েও তিনি একটি সূত্র দেন :

a, b, c, d বৃত্তস্থ চতুর্ভূজের বাহু এবং 2S চতুর্ভূজটির পরিসীমা অর্থাৎ,

(2S = a+b+c+d) হলে, চতুর্ভূজটির ক্ষেত্রফল

= √(S-a) (S-b) (S-c) (S-d) বর্গ একক।

শেষ বয়সে ব্রহ্মগুপ্ত আরও একখানি বই লেখেন। বইটির নাম খন্ডখাদ্যক। এছাড়াও একখানি বইয়ের কথা জানা যায়, নাম বিল্লমালাচার্য।৬৬৫ সালে এই মহান গনিতবিদ ব্রহ্মগুপ্ত পরোলোক গমন করেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন