শনিবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১৮

রাহুল দেববর্মণ


   রাহুল দেববর্মণ

   শেয়ার করেছেন                   প্রণব কুমার কুণ্ডু
সঙ্গীত পরিচালক এবং সুরকার
রাহুল দেববর্মণ (জন্মঃ- জুন ২৭, ১৯৩৯ -মৃত্যুঃ- জানুয়ারি ৪, ১৯৯৪)
জানুয়ারি ৩, ১৯৯৪। নতুন একটা ছবির ক্লাইম্যাক্স নিয়ে উত্তেজনায় সন্ধেটা ভরপুর। প্রোডিউসার ডিরেক্টরের সঙ্গে আড়াই ঘণ্টা ধরে মিটিং। এ বার বেরোতে হবে, সান্তাক্রুজে শক্তি সামন্তের বাড়িতে ডিনারের নেমন্তন্ন। সাড়ে ন’টা নাগাদ প্রোডিউসার বেরিয়ে গেলেন। এ বার বাড়ির মানুষটিও বেরোনর পালা। ক্যালেণ্ডারের পাতায় দিন বদলে হল ৪ জানুয়ারি। রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ বাড়ি ফিরলেন মানুষটি। দারোয়ানকে পঞ্চাশ টাকা বকশিস দিলেন গাড়িটা একটু পার্ক করে দেওয়ার জন্যে, বোধ হয় শরীরটা ঠিক লাগছিল না। রোজকার মতো ঘরের ৪০ ইঞ্চি টিভিটায় বিবিসি দেখতে বসলেন। কিন্তু শরীরটা কেমন করছে। কাউকে ডাকা দরকার। রাত আড়াইটায় ঘরের বেলটা বেজে উঠল। ছুটে এল কাজের লোকেরা। তিনি শুয়ে আছেন, জিভ বেরিয়ে গিয়েছে। কাজের লোক, কাছের লোক সুদাম চটপট মুখে সরবিট্রেট স্প্রে করে দিলেন। ড্রাইভার রমেশ অ্যাম্বুল্যান্স ডাকলেন। সেক্রেটারি ভারত এক জন ডাক্তার নিয়ে এলেন, তিনি সঙ্গে সঙ্গে কার্ডিয়াক ম্যাসাজ করলেন। অ্যাম্বুল্যান্স এসে গেল তিনটে চল্লিশে।
শচীন দেববর্মন আর মীরা দেববর্মনের ঘরে জন্ম হয়েছিল এক ছেলের। তখন তার ডাক নাম ঠিক হল টুবলু। পঞ্চম নামটা তার হবে আরও কিছু দিন পরে। সে নাকি সব সময়েই কাঁদত পঞ্চম স্বরে। আর একটা গল্পও আছে। বাবা ‘সা’ গাইলেই ছেলে নাকি ‘পা’ গাইত। তাই অশোককুমার তার এই নামটা দিয়েছিলেন। পঞ্চমের কেরিয়ারের প্রথম দিকে পাঁচ সংখ্যাটা কিন্তু সত্যি লাকিও হয়েছিল। ‘তিসরি মঞ্জিল’ (১৯৬৬) ছিল তাঁর সুর করা পঞ্চম ছবি।
ছবি হবে ‘তিসরি মঞ্জিল’। শাম্মি কপূরের পছন্দের সুরকার শঙ্কর জয়কিষাণ এবং ও পি নায়ার। শাম্মি এলেন শুনে দেখতে ‘আর ডি’ ব্যাপারটা কী। প্রথম বলটাই ওয়াইড। পঞ্চম সবে একটা নেপালি সুর গেয়েছেন, (যে সুর থেকে পরে তৈরি হবে ‘দিওয়ানা মুঝসে নহী’)
শাম্মি বললেন, ‘স্টপ স্টপ’। এটা আমি জয়কিষাণকে দিয়ে করিয়ে নেব, আর একটা কুছ সুনাও। নার্ভাস পঞ্চম বাইরে গিয়ে সিগারেটে দুটো টান দিয়ে এলেন। এসে গাইলেন পর পর তিনটে সুর, ‘ও মেরে সোনা...’, ‘আ যা আ যা...’ এবং ‘ও হাসিনা জুলফোঁ ওয়ালি...’-র গান তিনটের জন্যে। আবার শাম্মি দুম করে থামিয়ে দিলেন তাঁকে। বললেন, আরে তুম পাস হো গয়ে হো। আহা কী গান ‘ও হাসিনা জুলফোঁ ওয়ালি...’! আর এই সব গান তৈরিই তো পঞ্চমের জীবন।
আর ডি’র গানের পেছনে বিরাট ভূমিকা পালন করেছেন তাঁর দলের সঙ্গীরা, যেমন কারসি লর্ড, মনোহারি সিংহ, ভানু গুপ্তা আর আরও অনেকে। আর ডি’র সঙ্গীতের মূল ব্যাপারটাই ছিল নিয়ম ভাঙা এক প্রাণের স্পন্দন। ‘ও হাসিনা...’র কথা ধরুন, ৮০ জন শিল্পীকে ব্যবহার করা হয়েছিল, তার মধ্যে ৪০ জন বাজিয়েছিলেন বেহালা। আজকের দিনের মতো ট্র্যাকের কারিগরি ছিল না। একসঙ্গে এতগুলো বাদককে ব্যবহার করা, কী কাণ্ড! শুধু কী বাদ্যযন্ত্র। মোটর গাড়ির ইঞ্জিন, পেডেস্টাল পাখা, কী না চলবে তাঁর গানে। তৈরি হবে জাদু।
বীর সাংভি একটি লেখায় বলেছিলেন যে, দুনিয়া জুড়ে ষাটের দশককে যৌবনের দশক বলে বাড়াবাড়ি করা হয়। ভারতে কিন্তু যৌবনের দশক বলতে সত্তরের দশক। আর সত্তরের দশক মানেই পঞ্চমের দশক।
ফিয়াট গাড়িতে বসে থাকা তিন জন পুরুষই মহিলাটিকে লক্ষ করল। হাল্কা নীল শাড়ি, সানগ্লাস, খোঁপায় ফুল আর হাতে সাদা ব্যাগ। মুম্বইয়ের কোলাবা কজওয়ের রিগ্যাল সিনেমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। ফোনে তো সেই রকমই কথা হয়েছিল। দু’জন পুরুষ টুক করে গাড়ি থেকে নেমে হাওয়া। তৃতীয় জন গাড়িটা বেসমেন্টে পার্ক করে এগিয়ে গেলেন মহিলার দিকে। কিছু কথা হল, তার পর দু’জনে ঢুকে গেলেন হলে। হলে যে ছবিটা চলছিল তার নাম ‘গোল্ড ফিঙ্গার’। জেমস বণ্ডের ছবি। ছবির আগে বিজ্ঞাপন চলছিল। তখনই মহিলা হঠাৎ হল থেকে উঠে বেরিয়ে গেলেন আর ফিরে এলেন না।
গল্পটা এ বার খুলে বলা দরকার। পুরুষ তিন হলেন, পঞ্চম, শচীন ভৌমিক আর মনোহারি সিংহ। ক’দিন আগেই পঞ্চম লক্ষ্মীকান্ত আর প্যারেলালের সঙ্গে দার্জিলিং বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখানে বম্বের কিছু কলেজ ছাত্রীরাও ছুটি কাটাতে গিয়েছিল। তাদের এক জন এসে পঞ্চমের অটোগ্রাফ চায় ও পায়। বম্বেতে ফিরে সে পঞ্চমকে ফোন করে বলে সে-ই সেই অটোগ্রাফ শিকারি, পঞ্চম কি তার সঙ্গে ‘গোল্ড ফিঙ্গার’ দেখতে যাবেন? হলের বাইরে মেয়েটি নিজের নাম বলেছিল রীতা পটেল। তার পর এই কাণ্ড!
ছবির বণ্ডের মতোই পঞ্চম ও তাঁর বন্ধুরা লেগে পড়লেন রীতার সন্ধানে। মেয়েটি অ্যাম্বাসাডার চালিয়ে এসেছিল। তখন বম্বেতে ফিয়াটের রাজত্ব। এ ছাড়াও সে বলেছিল, সে নির্মলা নিকেতন নামে চার্চ গেটের একটা হোম সায়েন্স কলেজে আসে। জায়গাটা পঞ্চমের ভালই চেনা, কারণ তাঁর ফেভারিট ‘গে লর্ড’ রেস্তোরাঁটা ওর কাছেই।
ধরা পড়লেন রীতা। জানা গেল, রাহুল দেববর্মনকে সিনেমা হলে টেনে আনবেন, এই বেট জিতে যাওয়ার পর (হলের আনাচেকানাচে বন্ধুরা ছিল) তিনি চলে যান। কিন্তু চলে গেলেই তো হবে না। আবার ধরা পড়তে কতক্ষণ! জমে উঠল প্রেম। আর কয়েক মাস পরে মালাবার হিলস-এ এক বন্ধুর বাড়িতে গোপনে বিয়েও হয়ে গেল দু’জনের। বিয়েটা সুখের হয়নি। শচীনকর্তা বউমাকে মেনে নিলেও শোনা যায় শাশুড়ির সঙ্গে জমেনি রীতার।
কিন্তু এর খুঁটিনাটি তো আর পাঁচটা জীবনের মতো। এই জীবনের কান্না হাসিগুলোকে ‘হাম বেওয়াফা হরগিজ ন থে’ করে তুলতে পারেন ক’জন? ক’জন আমাদের বুকের মধ্যে বাজাতে পারেন ‘এ কেয়া হুয়া ক্যায়সে হুয়া, কব হুয়া’? আবার অ্যারেঞ্জমেন্টে পুরে দিতে পারেন আনন্দের সুর— সব ছক ভেঙে। জীবনে সুখ আর দুঃখ মেশামেশি— তাকে ও ভাবে আলাদা করা যায় না— এই আশ্চর্য বোধকে ফুটিয়ে তুলতে পারেন প্রাণভাসি বানভাসি সুরের কাঠামোয়?
সত্তর জুড়ে শুধুই যেন পঞ্চম। সেই সময়টা যে কী দারুণ সময় তাঁর সুরের সঙ্গীদের। এই সময় কোনও এক জ্যোতিষী রাহুলকে বলেছিলেন, গান না গুনতে, কাজ না গুনতে। তাই তিনি শুধু গুনগুনই করে গিয়েছেন, যোগ-বিয়োগ-ভাগ করেননি কখনও। তাঁর এই সময়কার সুরের এক সঙ্গী এই সময়টার কথা মনে করতে গিয়ে বলেন, তখন আমরা দিন নেই, রাত নেই শুধু সুর নিয়ে আছি। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলতে পারব না ক’টা গান রেকডিং হল, ক’টা বাকি। শুধু একটা পাগলামো থেকে আর একটাতে ছুটে চলা। একটা চ্যালেঞ্জ পার করে আর একটা। সে যে কী সময় গিয়েছে! অনেক দিন পরে, ১৯৮৫-র পর যখন শুকিয়ে আসবে কাজের ধারা, কাছের বন্ধুরাও ছেড়ে চলে যাবেন তাঁকে, তখন অনেক দুঃখে একটা হিসেব করবেন রাহুল। বলবেন, পর পর ২৯টা ফ্লপ গেছে আমার। একটা সময় ছিল, যখন আমার সন্ধ্যা শুরু হত মধ্য রাতে। শেষ হত সকালে গিয়ে। বাইরে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত প্রোডিউসারদের গাড়ি। এখন সন্ধ্যা শুরু হয় সূর্য ডুবতে ডুবতেই, শেষও হয়ে যায় তখনই। বাড়ির বাইরে আর গাড়ির ভিড় থাকে না। কিন্তু সে কথা তো তিনি আগেই জানতেন, নইলে কী করে সুর দিয়েছিলেন সেই গানে, ‘জিন্দেগি কি সফর মে গুজর যাতে হ্যায় জো মকান ও ফির নাহি আতে...’। প্রোডিউসারদের গাড়ি না থাক, আমরা তো থেকে গিয়েছি তাঁর সঙ্গে। এখনও তো ভালবাসায় ‘করবটে বদলতে রহে সারে রাত হম। আপ কী কসম। আপ কী কসম।’
১৯৬৫। পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ। নতুন দুটো দেশই ১৮ বছরের হল। ঘরের ছেলেরা যুদ্ধে গেছে, ও দিকে কাশ ফুটছে, চালচিত্রে ফুটে উঠছে ছবি। রথের দিনে মাটি পড়ছে খড়ে। পুজোর তিন সপ্তাহ আগে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হল, সৈনিকরা ফিরল ঘরে। বাংলায় সে বার পুজোর গানে এলেন আর ডি বর্মন। কিন্তু তেমন কিছু হল না। এর পর ১৯৬৭-তে এল ‘এক দিন পাখি উড়ে’, ‘আকাশ কেন ডাকে’ আর তার পর ‘মনে পড়ে রুবি রায়’। মনে রাখতে হবে, এই সময়ের কলকাতা খাদ্য আন্দোলনের কলকাতা, নকশাল আন্দোলনের কলকাতা, কংগ্রেসের বদলে প্রথম যুক্তফ্রন্ট আসার কলকাতা। এই কলকাতার মুড ছিল আলাদা। আর তখনও আর ডি’কে খোলাখুলি গ্রহণ করতে পারেনি বাঙালি। শান্তিনিকেতন, ডোভার লেন আর বামপন্থীদের সংস্কৃতি ও অপসংস্কৃতির নানান অনুশাসনের ফাঁকে রাহুলের গান ছিল আর এক ব্রাত্যজনের রুদ্ধসঙ্গীত। সে নাকি বড় চটুল, বড় পশ্চিমি, বড় অনৈতিক! ভারতীয়দের অনেকের ভারতীয় হয়ে বেড়ে ওঠার আনন্দে যে সামিল হতে পারিনি আমরা বাঙালিরা, যার ফল সব সময় আমাদের পক্ষে ভাল হয়নি, তার একটা লক্ষণ বোধ হয় এই সময় আমাদের রাহুলকে গ্রহণ করার ব্যর্থতার মধ্যে ফুটে উঠেছিল। আমরা যৌবনকে ‘রাজনৈতিক’ করতে গিয়ে বোধ হয় তাঁর বহুমুখী সহজাত দিকগুলোকে অস্বীকার করেছিলাম। যাক গে, সে বিষাদের গল্প আজ থাক। বরং দুটো মজার তথ্য জানা যাক। ‘মনে পড়ে রুবি রায়’ গানটা লিখেছিলেন শচীন ভৌমিক, তিনি নিজের জীবনে ছবি রায় বলে একটি মেয়ের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন, কাজেই রুবির আসল নাম ছবি। রেকর্ডটার উল্টো পিঠে ছিল ‘ফিরে এসো অনুরাধা’ গানটি। অনেকেই ভেবেছিলেন দাগ দিয়ে চলে গেল কে এই অনুরাধা? শচীন বলেছেন, অনুরাধা কোনও মেয়ের নাম নয়, তাঁর লেখা প্রথম চিত্রনাট্যটি ছিল ‘অনুরাধা’ নামের ছবিটির জন্য লেখা। তাই এই নামটা বসিয়েছিলেন!
‘কাটি পতঙ্গ’ ছবিতে ‘আকাশ কেন ডাকে’ ফিরে এল ‘ইয়ে শাম মস্তানি’ হয়ে। তার পাশে থাকল ‘ইয়ে জো মহব্বত হ্যায়...’। জানি, আপনারা অনেকেই কাগজ থেকে চোখ তুলে একটু লক্ষ্যহীন ভাবে তাকাচ্ছেন, যেটা আসলে নিজের ভেতর তাকানো, আর সুরগুলো গুনগুন করে নিচ্ছেন এক বার। এটা তো বার বার হতেই থাকে।
বনফুলের ভাই পরিচালক অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় বনফুলের ‘হিংয়ের কচুরি’ গল্প নিয়ে ছবি বানালেন, ‘নিশিপদ্ম’। সুর দিলেন নচিকেতা ঘোষ। ‘যা খুশি ওরা বলে বলুক’ গানের জন্য মান্না দে জিতলেন তাঁর দ্বিতীয় জাতীয় পুরস্কার। শক্তি সামন্ত ছবিটি হিন্দিতে বানাতে চাইলেন— ‘অমর প্রেম’। সুরকার কে? রাহুল দেববর্মন। শক্তি সামন্ত বলেছেন, ছবির কাজ করার সময় পঞ্চম মিউজিক রুমে ঢুকত সকাল ন’টায়, বেরোত রাত ন’টায়। বাবার গলায় শোনা ‘বেলা বয়ে যায়’ গানটি অনুপ্রেরণা জোগালো, ‘রায়না বিত জায়ে’ গানটির। গান শুনে মদনমোহন ফোন করে অভিনন্দন জানালেন শচীন দেবকে। বাবা সবিনয়ে জানালেন, এই গানটির সুর তাঁর নয়, তাঁর ছেলের। মদনমোহনের ঠিক বিশ্বাস হল বলে মনে হল না। তোড়ি আর খামাজ— এই দুই সুরের মিশাল গানটিতে। খামাজ পঞ্চমের প্রিয় সুর। বার বার তিনি ফিরে ফিরে আসেন এই সুরে। ‘রায়না বিত জায়ে’ মুগ্ধ করল অনেককেই। আরতি মুখোপাধ্যায় শুনলেন, মাল্লিকার্জুন মনসুর এই সুরটি গুনগুন করছেন। বিস্মিত আরতিকে এই পণ্ডিত জানালেন, কী অনায়াসে নোটগুলোকে মিলিয়েছে বলো তো? আম জনতার কাছে চিঙ্গারি হয়ে উঠল জীবনের সেই মুহূর্তগুলোর গান, যেগুলোকে আমরা বয়ে বেড়াই। এই গান আমাদের একলা ছাদে বা জানলায় দাঁড় করিয়ে সেই বোধগুলোকে একটা ভাষা দেয়, এক ধরনের তর্পনের শক্তি দেয়, যা নইলে এ জীবনভার অসহ হয়ে উঠত।
গল্পটা টুকরো টুকরোই বলা যায়। জীবনটাই তো টুকরো টুকরো। পঞ্চমের, তাঁর সুরের যাত্রার, আমাদের। আশা আর পঞ্চম। গান বেঁধে দিয়েছিল বন্ধনহীন গ্রন্থি। একটি সাক্ষাৎকারে আশা বলেন, ৭ মার্চ ১৯৭৯ সালে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছিল, সেখানে সাক্ষী ছিলেন লতা, কিশোর, ভারতী মঙ্গেশকর (হৃদয়নাথের স্ত্রী) ও বন্ধু বাবুভাই দেশাই। গোপনীয়তা রক্ষার জন্য কিশোর নাকি সপন চক্রবর্তীর ক্যামেরা থেকে ফিল্মটা খুলে নেন। শচীন ভৌমিক আবার অন্য কথা বলেন। তিনি বলেন, বিয়ে কোনও দিন হয়নি। আশা পঞ্চমকে দার্জিলিঙের এক মন্দিরে নিয়ে গিয়ে মালা বদল করেছিলেন। কোনও রেজিষ্ট্রি না, ছবি নেই। যাক গে, তাঁদের গানে গানে উচ্ছ্বসিত, আনন্দে উদ্ভাসিত মিলনের বাইরে অন্য প্রমাণ আমাদের কী দরকার? তাঁদের গানগুলোর উত্তরাধিকার পেতে তো আমাদের উইলের প্রবেট নিতে হয়নি। আর কী চাই।
পঞ্চমের খুব খারাপ সময়ে আর ডি পাগল বিধু বিনোদ চোপড়া, পঞ্চমকে দেবেন ‘পারিন্দা’ ছবির সুরের ভার। আমরা আবার পাব অসাধারণ কিছু সুর। বিধু লিখছেন, এক দিন ‘পেয়ারকে মোড়পে’ গানটার রেকর্ডিংয়ের পর রেনু সালুজা, বিনোদ প্রধান আর আমি রাস্তায় বেরিয়ে এসে গানটা গুনগুন করে গাইছি। হঠাৎ দেখি পঞ্চমদা ওঁর সেই ফিয়েট গাড়িটা করে বেরোচ্ছেন। আমাদের দেখে উনি নামলেন, গান ধরলেন। একটু লোক জন জড়ো হল। তখন পঞ্চমদা বললেন, না রে চল, লোকগুলো ভাববে আমার এমন অবস্থা একেবারে রাস্তায় গাইছি।
পঞ্চমের জীবন আর গানের মেশামেশি দিনলিপি, যা আবার একটা দেশের জীবনগান হয়ে ওঠে, লেখা সহজ নয়। সেই কাজটা অসাধারণ ভাবে করেছেন, অনিরুদ্ধ ভট্টাচার্য আর বালাজি ভিত্তল। গানগুলোর বিশ্লেষণ পড়লেই বোঝা যায় এই দু’জনও এই গানের ভেতর ডুব দিয়ে তার মুক্তোগুলোকে চেনার চেষ্টা করেন। তাঁদের ধন্যবাদ, রাহুলের জীবন আর তার সঙ্গে আমাদের নিজেদের জীবনের তীব্র অনুভূতিগুলোকে আর এক বার ফিরিয়ে আনার জন্যে। রাহুলের মতো মানুষরা ফুরান না, বেঁচে থাকেন নিজেদের সুরলোকে। সেই সুরলোকে বিশ্বাস রাখার জন্য পরলোকে বিশ্বাস করার দরকার নেই।
সৌজন্যেঃ আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৭ বৈশাখ ১৪১৮ রবিবার ১ মে ২০১১
...........


আরও প্রতিক্রিor Ba

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন