মাদাম কুরি
শেয়ার করেছেন প্রণব কুমার কুণ্ডু
Pratap Mondal
মাদাম কুরির (পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক আলোচিত মহিলা বৈজ্ঞানিক ও দু’বার নোবেল পুরষ্কার দ্বারা ভূষিত ) গল্প...।
পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক, এককালে শীত নিবারণের জন্য এবং শরীর গরম রাখার জন্য, রাত্রে শরীরের ওপর পুস্তকের স্তুপ চাপিয়ে দিতেন। ইতিহাসের পাতায় যেসব মহিয়সী মহিলার নাম চিরস্মরণীয় হয়ে আছে মাদাম কুরী তাঁদের মধ্যে অন্যতম।
পোল্যান্ডের বাসিন্দা এই মহিয়সী মহিলা অত্যন্ত দৃঢ়চেতা ও লজ্জাশীলা ছিলেন। তিনি এমন দুটি জিনিস আবিস্কার করেন যা বড় বৈজ্ঞানিকও অসম্ভব বলে মনে করতেন। বৈজ্ঞানিকগণ যে সমস্ত পদার্থের বিষয় অবগত ছিলেন, এদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের একটি নতুন পদার্থ মাদাম কুরী আবিষ্কার করেন। এটা এমন এক পদার্থ যা শক্তি জগতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। তিনি এই পদার্থটির নাম দেন রেডিয়াম।
ক্যানসার চিকিৎসায় রেডিয়াম সবচেয়ে ফলপ্রদ প্রতিষেধক বলে প্রমাণিত হয়েছে। রেডিয়ামের সাহায্যে চিকিৎসার ফলে ক্যানসারের লক্ষ লক্ষ রুগী হয় চিরতরে আরোগ্য লাভ করেছে অথবা তাদের রোগের উপসর্গ হ্রাস পেয়েছে এবং তারা আরো কিছুকাল দুনিয়ার আলো বাতাসে বিচরণে সক্ষম হয়েছে।
এক সময় মাদাম কুরী প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞান ও অষ্কশাস্ত্র অধ্যয়ন কালে, দারিদ্রের নিষ্পেষণে দারুণ ভাবে বিপর্যস্ত হয়েছিলেন। ক্ষুধার জ্বালায় প্রায়ই তিনি বেহুশ হয় পড়তেন। তিনি যদি তখন জানতে পারতেন যে, পঞ্চাশ বৎসর পর, তার জীবন কাহিনী অবলম্বনে, এক ফিল্ম কোম্পানী দুই লক্ষ পাউন্ড ব্যয়ে একটি ফিল্ম তৈরি করবে, তাহলে কি কথাটা তার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হতো? তিনি যদি পূর্বাহ্নিই জানতে পারতেন যে তিনি এমন এক ব্যক্তিত্ব হবেন, যাঁকে বিজ্ঞান সাধনা ও সেবার প্রতিদান স্বরুপ দু’বার নোবেল পুরষ্কার দ্বারা ভূষিত করা হবে। তাহলে তার বিস্ময়ের সীমা থাকতো না।
পদার্থ বিজ্ঞানে বিশিষ্ট অবদান রাখার জন্য ১৯০৩ খৃষ্টাব্দে সর্বপ্রথম তিনি নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। অতঃপর ১৯১১ খৃষ্টাব্দে রসায়ন শাস্ত্রে বিশিষ্ট অবদান রাখার জন্যে তাকে পুনরায় নোবেল পুরষ্কার ভূষিত করা হয়। তবে একথা বললে সত্যের অত্যুক্তি হবে না যে, যৌবনকালে তিনি যদি পোল্যান্ডের এক ধনী পরিবারের হাতে অপদস্থ না হতেন, তাহলে তার পক্ষে বৈজ্ঞানিকও হওয়া সম্ভব হতো না, এবং রেডিয়ামও আবিষ্কার করতে পারতেন না। ব্যাপারটা ঘটেছিল এভাবে --- মাদাম কুরী তখন ১৯ বৎসরের এক লাবণ্যময়ী যুবতী। বাড়ীর অবস্থা স্বচ্ছল নয়। তাই পোল্যান্ডের এক ধনীর গৃহে গৃহশিক্ষয়িত্রী হিসেবে চাকুরী নেন। ১০ বৎসরের একটি মেয়েকে পড়াতে হতো সেখানে। বড়দিনের ছুটিতে গৃহ কর্তার বড় ছেলে বাড়ী এলো। কুরীর স্বভাব-চরিত্র. আচার ব্যবহার ও কবিত্বভাব ছেলেটিকে খুবই মগ্ধ করল। প্রায়ই সে কুরীর সহিত নাচত। এভাবে তার পরস্পরে প্রেমের বাঁধনে জড়িযে পড়ে। অবশেষে ছেলেটি তাকে জীবন সঙ্গীনী করার প্রস্তাব দেয়। কথাটা গৃহকর্ত্রীর কানে যেতেই, রাগে তার দম বন্ধ হওয়ায় পালা। এই মেয়েকে বিয়ে করবে। ভদ্রমাজে যার ঠাই নেই এবং যাকে পরের ঘরে খেটে খেতে হয়।
এই অপমানকর কথার জবাবে তিনি রাগে ক্ষোভে একেবারে দিশেহারা। এমন তিনি দিশেহারা যে, বিয়ের কল্পনাও সম্পূর্ণ রূপে মাথা থেকে ছেটে ফেলে দিলেন। অতঃপর তিনি প্যারিস গিয়ে বিজ্ঞান অধ্যায়ন করে, জীবনটাকে বিজ্ঞানের সেবায় নিয়োজিত করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হলেন।
মাদাম কুরীর প্রকৃত নাম মানীয়া ইসক্লোড দোসকা। স্বীয় উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে তিনি ১৯৯১ খৃষ্টাব্দে প্যারিস ভ্রমণ করেন এবং প্যারিসের বিখ্যাত, ইউনিভার্সিটি অব প্যারিসে বিজ্ঞান শাখায় অধ্যয়ন আরম্ভ করেন। তিনি এত লাজুক ছিলেন যে, ছাত্র জীবনে কোন বন্ধুই জোটাতে পারেননি। আসল ব্যাপার এই যে, তিনি লেখাপড়া নিয়ে সর্বক্ষণ এমন গভীর ভাবে নিমগ্ন থাকতেন যে, বন্ধু জুটবার মত বাড়তি সময় তার হাতে থাকতো না। অধিকন্তু পড়ালেখা ছাড়া অন্যকাজে সামান্যতম সময় ব্যয় করাও সময়ের অপচয় বলেই মনে করতেন তিনি।
প্যারিসে অধ্যয়ন কালের চারটি বৎসর তাকে তার চাকুরী কালীন জমানো টাকার ওপর নির্ভর করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। তার মা মাঝে সাঝে সামান্য কিছু টাকা পাঠাতেন বটে, তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা ছিল নিতান্তই অল্প। তাই তাকে খুব হিসেব করে পয়সা ব্যয় করতে হতো। দৈনিক দু’তিন শিলিং-এর বেশি ব্যয় করা কিছুতেই সম্ভবপর হতো না। বিস্ময়ের বিষয় এই যে, এই তিন শিলিং-এর মধ্যে ঘর ভাড়া, আহার পোষাক, বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচপত্র ইত্যাদি যাবতীয় ব্যয় অন্তর্ভূক্ত ছিল।
বোডিং এর চতুর্থ তলার একটি কক্ষে তার থাকার স্থান নির্ধারিত ছিল। মধ্যে একটি বৈ জানালা ছিল না। ইহার অভ্যন্তরে গ্যাসের চুল্লী, বৈদ্যুতিক আলো বা শীতের দিনে কক্ষ উত্তপ্ত রাখার কোন ব্যবস্থাদি ছিল না। সমগ্রশীত মৌসুমে দু’ভুর কয়লার বেশি তা পক্ষে ক্রয় করা সম্ভব হতো না। কয়লার ষ্টক যাতে সহজে না ফুরোয় সেজন্য প্রচন্ড শীতের দিনেও কক্ষে অগ্নিকুন্ড প্রজ্জ্বলিত করতেন না। ফলে ঠান্ডায় আঙ্গুলগুলো বরফের মত জমে যেতো। ঠক ঠক করে হাত পাগুলো কাঁপতো। কিন্তু এসব তিনি মোটে আমলেই আনতেন না --- একমনে এক ধ্যানে অষ্কের প্রশ্ন সমাধানে নিমগ্ন হয়ে থাকতেন। শোয়ার আগে শীতের প্রকোপ হতে বাঁচার জন্যে পেটরা হতে কাপড়গুলো বের করে কিছু খাটিয়ার ওপর বিছাতেন আর বাকীগুলো গায়ে চড়াতেন। এতেও যদি শীত নিবারণ না হতো বই সমেত টেবিল চেয়ার টেনে শরীরের ওপর চাপিয়ে দিতেন যাতে এসবের ভারে শীতের প্রকোপ ততটা অনুভূত না হয়।
তিনি যৎসামান্য যা খেতেন তাও তাঁকেই রান্না করতে হতো, কিন্তু রান্না-বান্নার কাজে তাঁর যে সময় ব্যয় হতো তাও তার কাছে সময়ের অপচয় বলেই গণ্য হতো। ফলে প্রায়ই একাধারে শুধু মাখন ও ডবল রুটি খেয়ে কয়েক দিন চালিয়ে দিতেন। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে প্রায়ই তাঁর মাথা ঘুরাতো এবং বিছানায় পড়ে তিনি বেহুশ হয়ে যেতেন। জ্ঞান ফিরলে নিজেকে প্রশ্ন করতেন, আমি কেন সংজ্ঞা হারিযেছিলাম ? উপোশ থাকার দরুন যে তাঁর এ রোগ হয়েছে তা তিনি স্বীকার করতে প্রস্তুত ছিলেন না। একদিন তিনি ক্লাসে সংজ্ঞা হারিয়ে পড়ে যান, সংজ্ঞা ফিরে এলে ডাক্তারদের প্রশ্নের জবাবে তিনি স্বীকার করেন যে, গত কিছুদিন থেকে তিনি শুকনো রুটি খেয়ে আসছিলেন।
কিন্তু আমাদের তাঁর দুরবস্থার এরূপ কাহিনী নিয়ে আফসোস করার দরকার নেই। কারণ যিনি দশ বৎসর পর পৃথিবীর প্রখ্যাত মহিলা হওয়ার গৌরব অর্জন করতে যাচ্ছেন, তাঁর সাময়িক দুরবস্থার জন্য আফসোস করে কোন ফায়দা নেই। তিনি লেখাপড়া নিয়ে এত তন্ময় হয়ে থাকতেন যে, ক্ষুধার কথা তাঁর মনেও হতো না। কেননা তাঁর পেটের ক্ষুধা নিবারণ দ্বারা মনের অদম্য ক্ষুধা ও ভিতরের দাহ জ্বালা ঠান্ডা হবার ছিল না।
বছর তিনেক পর এক বিজ্ঞান পাগলের সাথে তিনি বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হন। ভদ্রলোকের সাথে তাঁর মানসিক সুখের জন্যই তিনি তাঁকে বিয়ে করেন। তার নাম ছিল প্যাট্টি কুরী। মানীয়ার মত তিনিও ছিলেন বিজ্ঞান পাগল। তখন প্যাট্রিক কুরীর বয়স ছিল মাত্র পঁয়ত্রিশ বৎসর কিন্তু এরই মধ্যে তিনি ফ্রান্সের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী বলে খ্যাতি লাভ করেন।
বিয়ের সময় প্যাট্রির সম্পদ বলতে দুটি সাইকেল ছাড়া আর কিছুই ছিল না। সাইকেল দুটিতে চড়ে তাঁরা দুজনে হানিমুন করতে ফ্রান্সের পাড়া গাঁয়ে বেরিয়ে পড়লেন। ডবল রুটি, পনির ও ফলমূল খেয়ে ক্ষু্ন্নিবৃত্তি নিবৃত্তি করতেন আর এমন সব জরাজীর্ণ পান্থশালায় রাত কাটাতেন যে, দেয়ালগুলোর ওপর প্রদীপের আলো পড়লে অদ্ধুত অদ্ভুত ছায়া লুকোচুরী খেলত।
তিন বছর পর তিনি ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করার জন্য প্রস্তুতি আরম্ভ করেন। ইউরেনিয়াম ধাতু থেকে কেন আলো বিচ্ছুরিত হয় এ সংশ্লিষ্ট গবেষণা লব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে থিসিস লিখতে মনস্থ করেন। অন্যান্য ধাতু থেকেও আলোক রশ্মি বিচ্ছুরিত হয় কিনা তা জানার জন্যে তিনি অসংখ্য ধাতু নিয়ে পরীক্ষা নীরিক্ষা চালান। এই পরীক্ষা নীরিক্ষার ফলে তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনিত হন যে, এই আলোকে রশ্মিগুলো শূন্যমন্ডলে এক অজ্ঞাত পরিচয় পদার্থ বিচ্ছুরিত করে। এই নবাবিস্কৃত রহস্যময় পদার্থগুলো কি তা জানার জন্যে মাদাম কুরীর সাথে তাঁর স্বামী একযোগে গবেষণা চালান।
কয়েক মাস গবেষণার পর এই দম্পতি বিজ্ঞান জগতে এক অভিনব আলোড়ন সৃষ্টি করেন। তাঁরা ঘোষনা করেন যে, তাঁদের ধারণা অনুসারে তাঁরা এমন একটি পদার্থ আবিস্কার করতে সক্ষম হয়েছেন যার আলো ইউরেনিয়ামের আলো অপেক্ষা বিশগুণ বেশি শক্তিশালী। আর এর রশ্মি কাঠ, পাথর, লোহা, তামা প্রভৃতির মধ্যে দিয়েও প্রতিফলিত হতে পারে। এই বিষ্ময়কর ধাতু যার আলোর প্রতিফলনকে একমাত্র মুদ্রাই শুধু বাধা প্রদান করতে পারে। তাঁদের এই বিষ্ময়কর আবিস্কারের ফলে এ পদার্থ বিজ্ঞান জগতে প্রচলিত পূর্বেকার সব দর্শন, মতবাদ ও ধ্যান ধারণার মুলে এরকম প্রচন্ড কুঠারাঘাত হল। তাঁরা নাবাবিস্কৃত জিনিসটির নাম রাখেন রেডিয়াম।
এরুপ কোন বস্তুর অস্তিত্ব সম্বন্ধে পূর্বেকার কোন তথ্য জানা ছিল না। কেননা ইহা অন্যান্য সব ধাতু থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। এই কারণে বড় বড় বিজ্ঞানীর মনেও এর অস্তিত্ব সম্পর্কে সন্দেহের উদ্রেক হয় তাঁরা এর প্রমাণ চান এবং বলেন যে, খাটি রেডিয়াম না দেখা পর্যন্ত তারা বিশ্বাস করতে প্রস্তুত নন।
সুতরাং স্বামী-স্ত্রী উভয়ে পরবর্তী চার বৎসর রেডিয়ামের অস্তিত্ব সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে দিবারাত্র কাজে মেতে থাকেন। মটরের দানার সমান রেডিয়াম লাভ করার জন্যে পূর্ণ চারটি বৎসর তাঁদেরকে অমানুষিক পরিশ্রম করতে হয়।
পরিশেষে তাঁরা রেডিয়াম লাভে সক্ষম হন। আট টন লোহা গলিয়ে বিচূর্ণ করণ প্রক্রিয়ায় তাঁরা ব্যবহারের অযোগ্য একটি পুরাতন গৃহে কাজ করতে আরম্ভ করেন। পূর্বে ঘরটা মেডিক্যাল ছাত্রদের অঙ্গ ব্যবচ্ছেদ করার কাজে ব্যবহৃত হতো। ব্যবহারের অযোগ্য হওয়ায় তারা সে ঘরটি ছেড়ে দেয়। ঘরটার মেঝে ধ্বসে গিয়েছিল। ছাদ ভেঙ্গে চুড়ে গিয়েছিল। আলোর কোন ব্যবস্থাই ছিল না তাতে। এরূপ ঘরে কাজ করেই দম্পতি যুগল মানব কল্যানের শ্রেষ্ঠ সম্পদ উপহার দিলেন। ঘরটা এত ঠান্ডা ছিল যে, শীতকালে তাঁরা বরফের মত জমে যেতেন। চুঙ্গী দিয়ে নির্গত ধূয়া মাদাম কুরীর চক্ষু ও কণ্টনালীর জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়। দীর্ঘ চার বৎসর পর্যন্ত অমানুষিক পরিশ্রমের পর মিঃ কুরী হাঁপিয়ে ওঠেন এবং স্ত্রী কে পরামর্শ দেন যে, চল কোন সুদিনের জন্য এই গবেষণা বর্তমানে মূলতবি রাখি। কিন্তু মাদাম কুরী সম্মত হলেন না। অগত্যা তাঁরা গবেষনা চালিয়ে যেতে লাগলেন এবং পরিশেষে রেডিয়ামের সন্ধান লাভ করলেন।
এই আবিস্কারের ফলে মাদাম কুরী পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক আলোচিত মহিলা রুপে গণ্য হলেন। খ্যাতি ও শ্রেষ্ঠত্বের এ সময় ও সুযোগ কি তাঁর জন্যে কোন আনন্দ বয়ে এনেছিল ? মোটেও না। তিনি প্রায়ই বলতেন। দরিদ্র অবস্থায় যখন তাঁরা সেই জরাজীর্ণ বাড়ীতে স্বামী স্ত্রীতে মিলে কাজ করতেন, সেগুলোই ছিল তাঁদের জীবনের মধুরতম দিন। সে দিনগুলোতে শীত নিবারণের জন্যে তাঁদের কাছে কাপড় থাকতো না। ক্ষুধার জ্বালায় তাঁরা প্রায়ই সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলতেন। সে দিনগুলোতে কেবলই কাজ করে যেতেন।
১৯০২ সালে যখন এই দম্পতি যুগল সাফল্য ও খ্যাতির সর্বোচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত তখন তাঁদের জীবনে এক কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিন উপস্থিত হলো তাঁরা কি প্রচুর অর্থসম্পদের অধিকারী হয়ে বিলাস জীবন যাপন করবেন, না বিজ্ঞানের সেবায় নিজেদের জীবন বিলিয়ে দেবেন ? রেডিয়াম যে ক্যানসার চিকিৎসার শক্তিশালী প্রতিষেধক তা তখন সাধারণ্যে জানাজানি হয়ে গিয়েছিল। সুতরাং দিন দিনই রেডিয়ামের চাহিদা বাড়ছিল। কিন্তু ইহার প্রস্তুত প্রণালী কুরী দম্পতী ছাড়া আর কারুরা জানা ছিল না। তাঁরা ইচ্ছা করলে লক্ষ লক্ষ পাউন্ডের বিনিময়ে তাঁদের আবিস্কারের কোন কোম্পানীর নিকট বেচে দিতে পারতেন।
রেডিয়াম যেহেতু এক লাভজনক ব্যবসায়ে পরিণত হচ্ছিল তাই তারা যদি ওটার প্রস্তুত প্রণালী কোন ব্যবসায়ী কোম্পানীর নিকট বিক্রি করে দিতেনতাতে বলার কিছু ছিল না। এর লব্ধ অর্থ দ্বারা তাদের সন্তান সন্তুতিরা অর্থণৈতিক নিশ্চয়তা বিধানে সক্ষম হতেন তারা এবং নিজেদের জন্য ও মনমত একটি গবেষণাগার নির্মাণ করতে পারতেন। কিন্তু মাদাম কুরী এর বিনিময়ে একপাই পয়সা পর্যন্ত গ্রহণ করতে সম্মত হলেন না। তিনি বললেন, তা যদি করা হয় তবে তা হবে বিজ্ঞানের প্রেরণার বরখেলাপ। উপরুন্ত রেডিয়ামকে একটি মারাত্মক ক্ষতিকর রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সুতরাং এ অবস্থায় এর থেকে অর্থ লাভকে আমি সম্পূর্ণ রুপে অবৈধ বলে মনে করি।
এভাবে তিনি অসাধারন ত্যাগ স্বীকার করে মানব সেবার পথ বেছে নেন।
( সংগৃহীত )
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন