মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৩

নন্দলাল বসু

 নন্দলাল বসু

এক যে ছিলো নেতা একটি নতুন ফটো যোগ করেছে।

আপনার জন্য প্রস্তাবিত 19 ঘণ্টা 
তাঁকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ–অবনঠাকুর এর বিরোধ। গোপনে স্বদেশী হওয়া। শেষ







জীবনে স্ত্রীর সঙ্গে দূরত্ব। নন্দলাল বসু সম্পর্কে এমনই নানা অজানা কাহিনির খোঁজে..💫🌻
© এক যে ছিলো নেতা
🗓️ জোড়াসাঁকো, ১৯০৬ 🗓️
‘‘না হে, তোমার দ্বারা আঁকাজোকা হবে না! তুমি বরং...’’
ধমক খেয়ে কালোপানা ছেলেটির চারপাশে যেন আঁধার নেমে এল। মুখ নিচু। মাটির দিকে চোখ।
ছবির কিছুই হয়নি!
ছেলেটি আকাশপাতাল ভাবছে। ভেবেই চলেছে। সব ভুল?
রঙের মেদুরতা-রেখার বাঁক, উত্তর কলকাতার এ দোকান- সে দোকান ঘুরে ঘুরে সচিত্র দেশি-বিদেশি পত্রিকার পাতায় রাফায়েল, বিলাসী রেমব্রান্টের মতো ধ্রুপদী চিত্রকরদের ছবি দেখা... সব, সব বৃথা? হবে না! কলকাতা শিল্প বিদ্যালয়ের চৌহদ্দিতে হেভেল সাহেব, অবনঠাকুরের পায়ের কাছে বসে নেওয়া হবে না শিল্পের দীক্ষা?
‘‘কাল বরং একটি সিদ্ধিদাতা গণেশের ছবি এঁকে এনো।’’
শিল্পের পাঠ নিতে আসা লাজুক, স্বল্পবাক ছেলেটিকে ফিরিয়ে দিলেন ঠাকুরবাড়ির অবনঠাকুর!
এই ছেলেটিরই নাম নন্দলাল...! 🌿
অবনঠাকুরের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ফিরতি পথে শিল্প-বিদ্যালয়ের ‎চৌকাঠ পেরিয়েও নন্দলাল চুপটি করে ভেবেছে। কেবলই তাঁর মনে পড়ে গিয়েছে, ‘প্রবাসী’-র পাতায় রবি বর্মা, অন্নদা বাগচিদের ছবির সঙ্গে অবনীন্দ্রনাথের ছাপা ‘বুদ্ধ ও সুজাতা’, ‘নল-দময়ন্তী’, ‘শাহজাহাঁ’, ‘বজ্রমুকুট’ ছবির কথা। সেই সব দেখেই তো অবনঠাকুরের কাছে শিল্পের পাঠ নেওয়ার কথা ভেবে ছিল সে।
কিন্তু...! পরদিন গণেশ এঁকে নিয়েই এসেছিলেন নন্দলাল। তাঁর ‘সিদ্ধিদাতা’ দেখে খুব কৌতুক হয়েছিল অভিজাত ঠাকুর পরিবারের মেজাজি শিল্পী অবনীন্দ্রনাথের। চশমার ফাঁক দিয়ে ছবির দিকে অপলক চেয়েছিলেন বহুক্ষণ। স্মৃতির অতল থেকে তিনি লিখেওছিলেন পরে, ‘‘একটি কাঠিতে ন্যাকড়া জড়ানো, সেই ন্যাকড়ার উপরে সিদ্ধিদাতা গণেশের ছবি। বেশ এঁকেছিল প্রভাতভানুর বর্ণনা দিয়ে। বললুম, ‘সাবাস’!’’💛
সেবার হেভেল সাহেবের প্রণোদনায় ও ভগিনী নিবেদিতার আগ্রহে ১৯০৯-এ তিন বিদেশিনী শিল্পীর সঙ্গে তিনি বেরিয়ে পড়লেন অজন্তার পথে। অজন্তার ভিত্তিচিত্রের অনুকৃতি করতে। তিন বিদেশিনী চিত্রকরের একজন হলেন হেভেল সাহেবের বন্ধু সি জি হেরিংহোমের স্ত্রী ক্রিশ্চিয়ানা। এ দেশে আসার সময় তিনিই সঙ্গে করে আরও দুই শিল্পী— কুমারী ডরোথি লারচার ও কুমারী লুককে এনেছিলেন।
অজন্তা তখনও এদেশে এত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। নন্দলালরা থাকতেন অজন্তার বিজনে। শহর থেকে দূরে। নিভৃত গুহার অন্ধকারে থামের পর থাম, দেওয়ালের পর দেওয়ালে সুডৌল শিল্প ঐশ্বর্য দেখে নির্বাক নন্দলাল। পাঁচ শিল্পীর অজন্তায় দিন গড়াত গুহা-গহ্বরে, রাত-তাঁবুতে!
কলকাতায় ফিরে অজন্তায় আঁকা স্কেচের সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল। একদিন ডেকে পাঠালেন রবীন্দ্রনাথ। দায়িত্ব দিলেন তাঁর নতুন কবিতার বই ‘চয়নিকা’-র ছবি আঁকার। কিন্তু সঙ্কোচে-লজ্জায় পড়লেন চিত্রকর। কবিকে বললেন, ‘‘সত্যি কথা কি, আমি আপনার বই পড়িনি বললেই হয়!’’
সঙ্কোচ কাটিয়ে দিলেন কবি।— ‘‘তাতে কী, তুমি পারবে ঠিক।’’
নতজানু নন্দলাল বললেন, ‘‘আসলে, পড়লেও মানে কিছু বুঝিনি।’’ এবার কবি একটু অবাক হলেন। পাণ্ডুলিপি খুলে বললেন, ‘‘এই আমি পড়ছি, তুমি শোনো।’’
রবীন্দ্রনাথ পড়ে শোনালেন সাতটি কবিতা। চয়নিকা ছাপা হল, নন্দলালের ছবি নিয়েই। কিন্তু মুদ্রণ এতই খারাপ যে, দেখে মনখারাপ হয়ে গেল কবির!
‘চয়নিকা’-র ইলাসস্ট্রেশন করার সময় থেকেই রবিঠাকুরের সঙ্গে নন্দলালের আলাপ। শান্তিনিকেতনে আসার পর প্রথমে গুরুপল্লিতে থাকতেন, পরে নতুন বাড়িতে উঠে এলেন উনি।
নন্দলালের অলঙ্করণে প্রথম বইটি সফল না হলেও, রবীন্দ্রনাথ তাঁকে শান্তিনিকেতনে আহ্বান জানিয়ে সংবর্ধনা দিলেন। সেই প্রথম নন্দলালের শান্তিনিকেতন যাওয়া..❤️
© এক যে ছিলো নেতা
একটু একটু করে, কবির সঙ্গে চিত্রকরের সখ্য নিবিড় হল। এই আলাপেরই বিস্তার তারও দু’বছর পর। কবির সঙ্গী হয়ে যেবার শিলাইদহে গেলেন নন্দলাল। শাজাদপুরে পদ্মার অপার্থিব সৌন্দর্যকে রেখায় রেখায় স্কেচখাতায় ধরলেন তিনি। নিপুণ রেখায় আঁকলেন ‘শীতের সন্ধ্যার পদ্মা’, ‘জলকে চল’, ‘পোকন মাঝি’।
কিন্তু শিল্প বিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে কিছুটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল নন্দলালের জীবন। মাসিক বৃত্তিতে অবনীন্দ্রনাথের স্টুডিয়োতে শিল্পের কাজে যোগ দিয়েও স্বস্তি মিলছিল না! নন্দলাল আটকে পড়তে চাননি চার দেওয়ালের ক্লাস ঘরে। শেষ পর্যন্ত অবনঠাকুরের স্টুডিয়োও ছাড়তে হল..🌼
এর কিছুদিন পর, রবীন্দ্রনাথ জোড়াসাঁকো বাড়িতে বিচিত্রা স্টুডিয়ো খুললেন। সেখানেই যোগ দিলেন।সেও একদিন বন্ধ হল টাকার জন্যই। নন্দলালের অভাব যেন বেড়েই চলল। টাকার জন্য হাজার আপত্তি সত্ত্বেও যোগ দিয়েছিলেন গগনঠাকুরের শিল্প সমিতিতে। কিন্তু সে-ও বেশি দিন গেল না। ফের বেকার।
গগনেন্দ্রনাথ তাঁকে একটি চিঠি দিয়ে জানালেন, বাংলার লাটসাহেব যে দিন সমিতি পরিদর্শনে ‎এসেছিলেন, সে দিন সবাই উঠে দাঁড়ালেও নন্দলাল নিজের কাজ নিয়ে বসে ছিলেন, সেই তাঁর অপরাধ! ভরা সংসারে হামলে পড়ল বেকারির জ্বালা।
আর নয়! এ বার শান্তিনিকেতন। ১৯১৯-এর জুলাই মাসে আশ্রমে যোগ দিলেন নন্দ চিত্রকর।
তবে নন্দলাল আসার আগের বছরই ছেলেমেয়েদের নিয়ে ওঁর স্ত্রী শান্তিনিকেতন চলে এসেছিলেন। ওঁরা উঠেছিলেন শান্তিনিকেতনে নতুন বাড়িতে।
বিচিত্রা ও শিল্প সমিতি উঠে যাওয়ার পরও নিরুপায় নন্দলালের শান্তিনিকেতন চলে আসা সহজ ছিল না। কেন না, অবনীন্দ্রনাথ কোনও দিনই নিজের প্রিয় ছাত্রকে ছাড়তে চাননি। চিঠি লিখে নিষেধও করেছিলেন নন্দলালকে! গুরু অবনঠাকুরের কথা ফেলতে না পেরে কলকাতায় সমিতির কাজে গেলেন নন্দলাল। তবে, কয়েক মাস পরেই শান্তিনিকেতনে ফিরে আসেন।
কবি আর চিত্রকর ভুবনডাঙার মাঠেই স্বপ্ন দেখলেন নতুন এক শিল্প বিদ্যালয়ের। গড়ে উঠল নতুন এক কলাভবন।
তিন দশকে প্রচার বিমুখ নন্দলাল শান্তিনিকেতনে একে একে ছাত্র হিসাবে পেয়েছিলেন বিনোদবিহারী, রামকিঙ্করের মতো শিল্পীকে..💚
তিন দশক কলাভবনের কাজে ডুবে থাকার পর ’৫১-তে নন্দলাল অবসর নেন। শেষের দিকে অসুস্থও হয়ে পড়েছিলেন। একা থাকতে পচ্ছন্দ করতেন।
স্ত্রী সুধীরা বুঝেছিলেন, নন্দলাল সব কিছু থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিতে চান। সুধীরা তাই রইলেন অন্তরালে! ৬৬-র এপ্রিলে একদিন, হঠাৎ করেই চির ঘুমে ঘুমিয়ে পড়লেন নন্দলাল!
শেষ জীবনে স্বামী-স্ত্রী আলাদা থাকতেন। শোনা যায়, স্বামীর মৃত্যুর সময় সুধীরাদেবীকে ডাকতে গেলে তিনি নাকি বলেছিলেন, তাঁকে যেন একটু ‘একা’ থাকতে দেওয়া হয়। হয়তো শোকের আগুনে ভিতরে ভিতরে পুড়ছিলেন। শববাহকেরা ওঁর বাড়ির সামনে একটু অপেক্ষা করে চলে গেল। একটু পরে নন্দলালকে নিয়ে দূরে, পথের বাঁকে হারিয়ে গেল ওরা..🌷
গতকাল ছিলো তাঁর প্রয়াণ দিবস আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধার্ঘ..🙏
♦️তথ্যসূত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা
| #এক_যে_ছিলো_নেতা |
📌 Facebook এর পাশাপাশি আমরা পথচলা শুরু করেছি YouTube এও.. আমাদের কাজ ভালো লাগলে আমাদের channel টি Subscribe করে পাশে থাকবেন.. এই রইলো link 👇 https://appopener.com/yt/19zgtp0em
৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳
1 জন এবং যে টেক্সটে 'SPORTS DIVERSITY S서 SAHARA INDIA OJaH " টেন্ডুলকার নয়, কোহলি নয়, বীরেন্দ্র শেবাগই আমার আসল দুঃস্বপ্ন ছিল। ডেল স্টেইন' লেখা আছে-এর একটি ছবি হতে পারে


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন