সোমবার, ২ অক্টোবর, ২০২৩

নবপত্রিকা

 নবপত্রিকা

#পত্রিকে_নবদুর্গে....

★দুর্গাপূজার প্রধান স্থান জুড়ে আছে নবপত্রিকা। এই নবপত্রিকাকে গণেশের বৌ সাজিয়ে গণেশের বামদিকে রেখে পুজো করার ভ্রান্ত ও অশাস্ত্রীয় ধারণা অনেক মণ্ডপে প্রায়ই দেখা যায়। কিন্তু এই নবপত্রিকা হল নয়টি ওষধি বা প্রয়োজনীয় গাছের সমষ্টি যার প্রত্যেকটিতে অবস্থান করেন একেক জন দেবী। প্রত্যেকেই দেবী দুর্গার স্বরূপ হিসাবে পৃথক পৃথক পূজিত হন। উত্তর ভারতে দেবী মাহাত্ম্যম্-কে উপজীব্য করে যে নবদুর্গার পূজা নয়দিন ব্যাপী চলে, সেই রীতির ন্যায় আমাদের বাংলায় সপ্তমী থেকে নবমী ব্যাপী চলে নবপত্রিকাবাসিনী নবদুর্গার অর্চনা। এ বাঙালির এক অসাধারণ মনীষা। কথ্য ভাষায় একে আমরা কলা বৌ বলে থাকি। এর সুন্দর ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন ড. মহানামব্রত ব্রহ্মচারীজী। পড়লে অবশ্যই আপনাদের যথাযথ স্পষ্ট ধারণা হবে।★
নবপত্রিকায় অবস্থিত নয়টি গাছ হল—
★"রম্ভা কচ্চী হরিদ্রা চ জয়ন্তী বিল্বদাড়িমৌ।
অশোকা মানকশ্চৈব ধান্যঞ্চ নবপত্রিকা।।"★
কলা-বৌ এর শাস্ত্রীয় নাম নবপত্রিকা। নবপত্রিকা বলিতে নয়টি গাছের চারা বুঝায়। কদলী, কচু, হরিদ্রা, জয়ন্তী, বেল, দাড়িম, অশোক, মান ও ধান। এই নয়টি গাছের চারাকে শ্বেত অপরাজিতা লতা দ্বারা বেষ্টন করিয়া কলা-বৌ সাজান হয়। সমষ্টিগতভাবে মা দুর্গার প্রতিনিধিরূপে ইহাদের অর্চ্চনা হয়।
প্রত্যেকটি চারার একজন অধিষ্ঠাত্রী দেবী আছেন।
★"ব্রহ্মাণী কদলীকাণ্ডে দাড়িমে রক্তদন্তিকা।
ধান্যে লক্ষ্মী হরিদ্রায়াং দুর্গা মানপত্রকে
চামুণ্ডা, কালিকা কচ্চ্যাং শিবা বিল্বে প্রতিষ্ঠিতা।
অশোকে শোকরহিতা জয়ন্ত্যাং কার্ত্তিকী স্মৃতা।।"★
কদলীতে আছেন ব্রহ্মাণী। কচুতে কালিকা। হরিদ্রাতে দুর্গা। জয়ন্তীতে কার্ত্তিকী। বেলের অধিষ্ঠাত্রী শিবা, দাড়িম্বের রক্তদন্তিকা। অশোকে থাকেন দেবী শোকরহিতা। মানের চামুণ্ডা, ধানের লক্ষ্মী।★
★ইহাদের প্রত্যেকটির যুক্তিযুক্ত কারণ নির্ধারণ করা আমাদের পক্ষে কঠিন। দ্রষ্টা ঋষিরাই ইহার মর্ম্ম জানেন। দুই একটি দিগ্‌দর্শন করা চলে।
কদলীর অধিষ্ঠাত্রী ব্রহ্মাণী। ব্রহ্মাণী হইতেছেন সৃজনী শক্তি। কদলীবৃক্ষে সৃজনী শক্তি অফুরন্ত। একটি কদলী বৃক্ষের মধ্যস্থান কাটিয়া ফেল। পরের দিনই আবার সে মাথা তুলিবে। তার জীবন পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত যতবার কাটিবে ততবার সে বাড়িবে। এই আমরণ ধর্মের মধ্যেই অমৃতত্ব।
এই অমৃতত্বই সৃজনী ও পালনী শক্তির উৎস। সুতরাং কলা-বৌর মধ্যে কদলীবৃক্ষের উপস্থিতি একটি গভীর তত্ত্বের ইঙ্গিত। ইহাকে প্রণাম করিয়া বলিতে হয়.....তুমি কদলীরূপে সর্বত্র শান্তি বিধান কর। "রম্ভারূপেণ সর্বত্র শান্তিং কুরু নমোহস্তুতে"।
ধান্যাদিষ্ঠাত্রী দেবী লক্ষ্মীকে নমস্কার করিয়া বলিতে হয় ধান্যরূপা দেবী, জগতের মঙ্গলের জন্য তোমার সৃষ্টি (★জগতঃ প্রাণরক্ষার্থং ব্রহ্মণা নির্মিতা পুরা★)।
ওষধি জগতে মাতৃরূপে থাকিয়া দেবী আমাদিগের নিত্য জীবন- সংগ্রামে জয় লাভের সহায়ক হন। ওষধির গীতাতেও আছে—রসময় সোমরূপ ওষধিগণের পুষ্টি করিতে ★“পুষ্ণামি চৌষধীঃ সর্বাঃ সোমো ভূত্বা রসাত্মকঃ”★।
সমষ্টিগতভাবে নবপত্রিকা উদ্ভিদ জগতের প্রতিনিধি; মা দুর্গার প্রতীক। নিখিল বিশ্বের উদ্ভিদে মহামাতৃকারূপে স্থিতা জগন্মাতা দুর্গাকে কলা-বৌ এর মাধ্যমে প্রণাম জানাইয়া আমরা প্রার্থনা করি—মা নিখিল কলাবিদ্যা আমাদের চলার পথকে সুন্দর কর। বাঙ্গালীর জীবন আবার সুন্দর হউক।★★
—★শ্রীনিত্যানন্দ চতুষ্পাঠী নিবেদিত বিশেষ কলম। ★★
সব প্রতিক্রিয

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন