যিশুর কিছু কথা
শেয়ার করছেন : প্রণব কুমার কুণ্ডু
Niloy Chowdhury, Badhon Dhar এবং আরও 20 জনের সাথে আছেন।
মহাত্মা যীশুর ভারত আগমনঃ এক বিস্মরণীয় অধ্যায়
প্রবন্ধের শুরুতেই মহাত্মা যীশুর সাধনাকে স্মরণ করি। যদিও যুগটা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যে যীশুর জন্মদিন কেবল কেক কাটা আর গাছ কাটার মধ্যেই সীমাবদ্ধ! আমরা তো ভুলেই গেছি এই মহাসাধকের সাধনার কথা! যেখানে শেখানো উচিত ছিলো তোমরা যীশু হয়ে ওঠো, যীশুর ন্যায় সাধক হও, ত্যাগ করতে শেখো,, সেখানে আজ শেখানো হয়, বড়দিনে কেট আর উপহার নিয়ে উচ্ছৃঙ্খলা করা!
বয়সের দোষে মূল প্রসঙ্গ হতে দূরে সরে গেছি। তাই এবার প্রসঙ্গে ফিরে আসা যাক। দুবছর আগে "ভারতে বিবেকানন্দ" গ্রন্থটি আমার হাতে আসে। গ্রন্থটি পড়তে গিয়ে এক জায়গায় এসে আমার কৌতূহলের বিস্ফোরণ ঘটে।
যুগনায়ক স্বামী বিবেকানন্দ মাদ্রাজে বক্তব্য উপস্থাপন করতে গিয়ে বলেছেন,,
"দু-এক বৎসর পূর্বে একজন রুশীয় সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি একখানি পুস্তক প্রকাশ করেন; তাহাতে তিনি যিশুখ্রীষ্টের একখানি অদ্ভুত জীবনচরিত পাইয়াছেন বলিয়া দাবি করিয়াছেন। তিনি সেই পুস্তকখানির একস্থলে বলিতেছেন, খ্রীষ্ট ব্রাহ্মণদের নিকট ধর্মশিক্ষার্থে জগন্নাথের মন্দিরে গমন করেন.....তথা হইতে তিব্বতের লামাদের নিকট ধর্মশিক্ষার্থ গমন করেন এবং তাঁহাদের উপদেশে সিদ্ধ হইয়া স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন।"
- "ভারতে বিবেকানন্দ" (পৃঃ ২১৪-২১৫)
খুব বিস্মিত হলাম যে একজন খ্রিষ্টান রুশ প্রত্নতাত্ত্বিক এই কথা বলছেন! কৌতূহল চরম পর্যায়ে গেলেও উক্ত লেখকের নাম উল্লেখ না থাকায় ঐ বিষয়ে তেমন আর আগ্রহ দেখালাম না। কিন্তু হঠাৎ করে কিছুদিন আগে কলকাতার বামপন্থীদের আদর্শ নারী সম্মানীয়া গৌরী ধর্মপালের একটা বই কিনলাম। বইটির নাম ছিলো "বেদ ও বিবেকানন্দ"।
আমি ভাবতেই পারিনি যে সেই বইয়ে আমার জন্য আরও একটি চমক অপেক্ষা করছিলো! গৌরী ধর্মপাল লিখেছেন,,
"কাশ্মীরের গুহায় অভেদানন্দ কর্তৃক যিশুখ্রিস্টের সমাধি আবিষ্কার থেকে শুরু করে নিরপেক্ষ-খ্রীস্টধর্ম-নিরীক্ষা বা higher criticism- এর নানান তথ্য, যথা বৌদ্ধ মিশনারীদের স্থাপিত এসেন-সম্প্রদায়ের সাধু জনের কাছে যীশুর দীক্ষা, সম্প্রতি সাইবেরিয়া গুহা-গীর্জায় আবিষ্কৃত মুণ্ডিতমস্তক বৌদ্ধ ভিক্ষু যীশুর ছবি ইত্যাদি প্রমাণ-পরমপরা এ-সিদ্ধান্তের সমর্থক।"
- গ্রন্থঃ ("বেদ ও বিবেকানন্দ"- গৌরী ধর্মপাল, পৃঃ ৩৭)
বলা বাহুল্য, স্বামী অভেদানন্দ হলেন যুগাচার্য বিবেকানন্দেরই সতীর্থ।
ব্যাস! আমার স্তিমিয়ে পড়া কৌতুহল পুনরায় গর্জে ওঠে। এই বিষয়ে আরও গবেষণা শুরু করলাম। পরিচিত হলাম নিউ ট্যাস্টামেন্টের নূতন নিয়মের সাথে। যেখানে মহাত্মার তেরো হতে ত্রিশ এই সতেরো বছরের কোনো ইতিহাস নেই! কি হয়েছিলো এই সতেরো বছরে!
এই বিষয়ে বহু পাশ্চাত্য গুণীজন বিভিন্ন প্রমান দ্বারা একমত হয়েছেন যে এই সময় যীশু ভারতে আগমন করেছিলেন। যদিওবা আর্থারিয়ান কিংবদন্তি অনুসারে এই সময় যীশু ব্রিটেনে গিয়েছিলন!
লেখক লুই জাকোলিথ খ্রিষ্টধর্মে ভারতীয় প্রভাব বিষয়ে "লা বাইবেল দ্যঁ ল্যাঁদ" বা "দ্য বাইবেল ইন দ্য ইন্ডিয়া" নামে এক গ্রন্থ রচনা করেন। যদিও সেখানে তিনি যীশুর ভারত আগমন নিয়ে কিছু লিখেননি কিন্তু যীশুর ধর্মে ভারতের প্রভাব নিয়ে তিনি যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, তাতে তো এটাই প্রমানিত হয় যে তিনি কোনোভাবে ভারতে এসেছিলেন বা ভারতের সাথে তাঁর যোগসাদৃশ ছিলো!
সম্প্রতি ভারতের Zee Tv এর "Did Christ come to India to study Vedas?" শিরোনামে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ আর্টিকেল আরও কিছু চমৎকার তথ্য উঠে এলো। পূর্বে যে স্বামী অভেদানন্দের কথা বলেছিলাম, সেই অভেদানন্দই কাশ্মীরের হেমিস মঠে যীশু বিষয়ক তিব্বতি পাণ্ডুলিপি দেখে অবাক হন এবং "কাশ্মীর ও তিব্বতি" গ্রন্থে যীশু বিষয়ক তথ্যাদি ২২৪ পঙক্তিতে লিখে প্রকাশ করেন।
১৮৮৭ সালে যখন রাশিয়ান যুদ্ধ সাংবাদিক নিকোলাস নটোভিচ লাদাখের হেমিস মঠে গমন করেন, তখন বৌদ্ধ ভিক্ষুরা তাঁকে প্রাচীন তিব্বতীয় পাণ্ডুলিপির কথা বলেন (যেটা পূর্বে অভেদানন্দ কর্তৃক গবেষিত হয়েছিলো) যেখানে ইসা নামে এক পশ্চিমদেশীয় সাধক পুরুষের কথা আছে।। তিনি সেই পাণ্ডুলিপির অনুবাদ করে রাশিয়া নিয়ে যান এবং পরে "The unknown life of Jesus Christ" গ্রন্থ লিখে দাবি করেন যে বাইবেলে উল্লিখিত সেই অজানা সময়ে যীশু ভারতে আসেন এবং ধর্মশিক্ষা করেন। তিনি লিখেছেন,,
"The lad arrives in a region of the Sindh (along the river Indus) in the company of merchants. He settled among the Aryans with the intention of perfecting himself and learning from the laws of the great Buddha. He travelled extensively through the land of the five rivers (Punjab), stayed briefly with the Jains before proceeding to Jagannath,"
আমি শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারছি না কিন্তু মনে হচ্ছে স্বামী বিবেকানন্দ এই রুশ লেখকের কথায় বলেছিলেন!
ব্রিটিশ চলচ্চিত্র নির্মাতা Kent Walwin (He receive the Dayawati Modi Award for arts, culture and education in 2009) তাঁর নতুন প্রজেক্ট "Young Jesus: The Missing Years" চলচ্চিত্রে ইতিহাসে হারিয়ে যাওয়া যীশুর অজানা অধ্যায় নিয়ে আলোকপাত করেছেন। তিনি বলেছেন,, তাঁর এই চলচ্চিত্রের ভিত্তি হলো "on the Apostolic Gospels, which says Jesus was last seen in West Asia when he was 13-14 years old".
অর্থাৎ মহাত্মার জীবনের অদেখা অধ্যায় লোকসম্মুখে আসতে চলেছে!
১৯২১ সালে হেমিস মঠে সেই তিব্বতিয় পান্ডুলিপিটি নজর কাড়ে "In the World’s Attic" গ্রন্থের লেখিকা হেনরিয়েটা মেররিকের। তিনি লিখেছেন, "In Leh is the legend of Jesus who is called Issa, and the Monastery at Himis holds precious documents fifteen hundred years old which tell of the days that he passed in Leh where he was joyously received and where he preached.”
উল্লেখ্য যে Leh হলো লাদাখের রাজধানী। সুতরাং উক্ত লেখিকাও যীশুর ভারত আগমনকে স্বীকৃতি দিয়েছেন!
আরেক রুশ প্রত্নতাত্ত্বিক Nicholas Roerich হেমিস মঠ ভ্রমণ করেন এবং রসদ সংগ্রহ করেন। তিনি লিখেছেন,,
"Jesus passed his time in several ancient cities of India such as Benares or Varanasi".
তিনি আরও লিখেছেন,
"Everyone loved him because Issa dwelt in peace with the Vaishyas and Shudras whom he instructed and helped"
১১৪৮ খ্রীস্ঠাব্দে রচিত কাশ্মীরের ইতিহাসের ‘রাজতরঙ্গিনী' গ্রন্থটিতে বলা হয়েছে, “ইসানা নামক একজন মহৎ সন্ত ডাল হ্রদের তীরে ইসাবারে বসবাস করিতেন। তাঁহার অসংখ্য ভক্ত ছিল।”
কিছুদিন পূর্বে আমি ভবিষ্যপুরাণ অধ্যয়ণ করছিলাম। অবশ্য কেবল শাস্ত্র হিসেবেই অধ্যয়ণ করছিলাম। হঠাৎ একটি শ্লোক চোখে পড়লো,,
" একদা তু শকাধীশো হিমতুংগং সমাযযৌ
হূনদেশস্য মধ্যে বৈ গিরিস্থং পুরুষং শুভম।।
দদর্শ বলবান্নাজা গৌরাংগং শ্বেতবস্ত্রকম্
কো ভবানিতি তং প্রাহু স হোবাচ মুদান্বিতাঃ
ইশা পুত্রং চ মাং বিদ্ধি কুমারী গর্ভসংভবম্।।"
- ভবিষ্য পুরাণ (প্রতিসর্গপর্ব - ভরতখন্ডস্থাষ্টাদশরাজ্যস্থান- ২১-২৩)
- সেই মহাত্মাগণ সিন্ধুর ওপারে স্লেচ্ছদের (বহির্ভারতীয়) স্থান দিয়েছিলেন। একবার শকাধীশ হিমতুঙ্গ এলেন হিম দেশের মধ্যে গিরিতে তিনি শুভ্র পুরুষকে দেখলেন যিনি বলবান গৌরাঙ্গ ও শ্বেতবস্ত্র পরিহিত ছিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন - আপনি কে? উত্তরে সেই পুরুষ বললেন- কুমারীর গর্ভজাত আমাকে ইশপুত্র বলে জানবেন।
অর্থাৎ এই পুরাণে সরাসরি কুমারী গর্ভে জন্মলাভ করা ইসা বা যীশুকে নির্দেশ করে বলা হচ্ছে তিনি বর্তমান কাশ্মীরে গিয়ে সেখানকার রাজার সাথে সাক্ষাৎও করলেন!
ইতিহাসবিদগণ এই বিষয়েও একমত যে তৎকালীন শকাধিশ, যাঁর কথা ভবিষ্য পুরাণে বলা হয়েছে, তিনি যীশুর সমসাময়িক!
(আমি এটাও স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, আমি কখনোই দাবি করবো না যে হিন্দুশাস্ত্রে ভিন্ন ধর্মের প্রবক্তার ভবিষ্যৎবাণী আছে। আমি ভবিষ্য পুরাণের উদ্ধৃতি এইজন্য দিয়েছি, কারন ইতিহাসবিদগণ মত দিয়েছেন যে ভবিষ্য পুরাণ অনেক পূর্ব হতেই যুগে যুগে সংস্কৃত হয়ে আসছে। যুগে যুগে এখানে সমসাময়িক ইতিহাস প্রবেশ করেছে। এমনকি ইংরেজ শাসন চলাকালে এই পুরাণে ইংরেজ শাসনের ইতিহাসও ঢোকানো হয়েছে। তাই পন্ডিতবর্গের মতে এই পুরাণকে শাস্ত্র হিসেবে মানার চেয়ে ইতিহাস হিসেবে মানাই ভালো।)
জার্মান লেখক Holger Kersten তাঁর "Jesus lived in India" গ্রন্থে দাবি করেছেন,, যীশু ক্রুশবিদ্ধ হলেও মৃত্যুবরণ করেননি এবং ভারতে চলে এসেছিলেন। তিনি এটাও দাবি করেছেন যে ভারতের কাশ্মীরে যীশুর সমাধি রয়েছে। তিনি ঐ গ্রন্থে লিখেছেন,,
"The lad arrives in a region of the Sindh (along the river Indus) in the company of merchants. He settled among the Aryans with the intention of perfecting himself and learning from the laws of the great Buddha. He travelled extensively through the land of the five rivers (Punjab), stayed briefly with the Jains before proceeding to Jagannath,"
যেহেতু পূর্বে আমি দাবি করেছি যে যীশুর তেরো হতে ত্রিশ বছরের ইতিহাস জানা যায় না এবং অনেক ইতিহাসবিদের মতে এইসময় তিনি ভারত ভ্রমন করেন, কিন্তু আপত্তি হলো এই সময় তো যীশু ক্রুশবিদ্ধ হননি, তাহলে Holger Kersten কিকরে দাবি করলেন যে যীশু ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার পর ভারতে আসেন?
এর উত্তরে আমি বলব, ইতিহাসবিদগণের মতে, যীশু একবার নয়,, দুবার ভারতে এসেছিলেন। প্রথম বার মিশর থেকে ভারতে এসেছিলেন আর দ্বিতীয়বার এসেছিলেন ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার পর।
১৮১২ খ্রিস্টাব্দে মীর ইজ্জুৎউল্লাহ নামে একজন পারস্যবাসী লাদাফ সফর করতে যান এবং একটি "Travels in Central Asia" নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন যেখানে উনি দাবি করেন,,
“They keep sculptured representations of departed saints, prophets and lamas in their temples for contemplation. Some of these figures are said to represent a certain prophet who is living in the heavens, which would appear to point to Jesus Christ.”
যীশু যে ভারতে এসে সাধনা করেন, তার স্বপক্ষে বড় প্রমান হলো তাঁর বাণীর সাথে গীতা এবং উপনিষদের বাণীর হুবুহু মিল পাওয়া! বাইবেলের সাথে গীতার এরূপ শতাধিক মিল দেখিয়ে গীতার প্রথম জার্মান অনুবাদক ড. লরিনসন দাবি করেন যে গীতাকার বাইবেল হতেই এইসব গ্রহণ করেছেন। কিন্তু গীতার বিখ্যাত অনুবাদ জগদীশ ঘোষ এই দাবি খন্ডান এবং লিখেন,,
" অনেক স্থলে গীতা ও বাইবেলের উপদেশ প্রায় শব্দসঃ একরূপ। যেমন-
বাইবেল। "সেইদিন তোমরা জানিতে পারিবে, আমি আমার পিতার মধ্যে এবং তোমাদের মধ্যে আছি।"
গীতা। "যো মাং পশ্যতি সর্বত্র" ইত্যাদি ৬/৩০। "যেন ভূতান্যশেষাণি দ্রক্ষসাত্মন্যথো ময়ি" ৪/৩৫; "ময়ি তে তেষু চাপ্যহং" ৯/২৯।
বাইবেল। "তোমরা যাহা আহার করো, যাহা পান করো বা যাহা কিছু করো, ঈশ্বরের জন্য করিবে।" - পলের উক্তি (I. Corin.10,31)।
গীতা। "যৎ করোষি যদশ্নাসি" ইত্যাদি ৯/২৭।
বাইবেল। "যে আমার ধর্ম পালন করে ও আমাকে প্রীত করে, আমিও তাহাকে প্রীত করি।" (জন ১৫/২১)
গীতা। "প্রিয়ো হি জ্ঞানিনোহত্যর্থমহং স চ মম প্রিয়ঃ" (৭/১৭) অথবা "শ্রদ্দধানা মৎপরমা ভক্তাস্তেহতীব মে প্রিয়াঃ" (১২/২০)
জার্মান ভাষায় গীতার অনুবাদক ড. লরিনসর গীতা ও বাইবেলের মধ্যে শতাধিক স্থলে এইরূপ শব্দসাদৃশ্য দেখাইয়াছেন এবং উহা হইতে সিদ্ধান্ত করিয়াছেন যে, গীতা বাইবেলের পরে রচিত হইয়াছে, গীতাকার বাইবেলের সহিত পরিচিত ছিলেন এবং বাইবেল হইতেই তিনি সকল কথা গ্রহণ করিয়াছেন। কিন্তু এক্ষণে ইহা অবিসংবাদিতরূপে প্রমাণীকৃত হইয়াছে যে গীতা রচনাকালে যিশুখ্রিস্টের আবির্ভাব হয় নাই। অবশ্য উভয়ের একই তত্ত্ব প্রায় একই ভাষায় স্বতন্ত্রভাবে উপদেশ দেওয়া বিচিত্র কিছু নহে। কিন্তু একের নিকট হইতে অপরে গ্রহণ করিয়াছেন, ইহাই যদি সাদৃশ্যের কারন অনুমিত হয়, তাহা হইলে শ্রীকৃষ্ণের নিকট হইতেই যিশুখ্রিস্ট গ্রহণ করিয়াছেন, এইকথা না বলিয়া উপায় নাই; এবং অনেক পাশ্চাত্য পুরাতত্ত্বজ্ঞ পন্ডিতও সেইরূপ সিদ্ধান্তই স্থির করিয়াছেন। ঐ সকল ঐতিহাসিক তত্ত্বের বিস্তৃত আলোচনা এখানে নিষ্প্রয়োজন। (Robertson's Christianity and Mythology, Lillie's Buddha Buddhism ইত্যাদি গ্রন্থ দ্রষ্টব্য) "
- "গীতা" - জগদীশ ঘোষ (প্রবেশিকা ভূমিকা, পৃঃ ৩)
অর্থাৎ গীতাবাক্যের সাথে যীশুর উপলব্ধি মিলে যায় এই কারনেই যে যীশু ভারতের সাধনভূমিতেই এই উপলব্ধি লাভ করেন।
সম্প্রতি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেল দ্বারা প্রস্তুত "সিক্রেট বাইবেল সিরিজ" এ দেখানো হয়েছে "দি গসপেল অব জুডাস" নামে একটি প্রাচীন গ্রন্থ আবিষ্কৃত হয়েছে। আবিষ্কারের পিছনের গল্পটি হলো ১৯৭৮ সাল, ইজিপ্টের নাইল নদীর পাড়ে একটি গুহার মধ্যে এক কৃষক একটি পাথরের বাক্স দেখতে পায়। ভেতরে ছিল চামড়ায় বাঁধানো একটি বই, যাকে কোডেক্স (দলিল) বলে, যে বইটীকে ১৮০০ বছর আগে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল। এর ২২ বছর পর অর্থাৎ ২০০০ সালে নিউ ইয়র্কে অ্যান্টিক ডিলার ফ্রিডা নুসবার্গার চাকোস একটি ইজিপশিয়ান অ্যান্টিক দোকান থেকে একটি প্রাচীন পুঁথি কেনেন আর সেটিকে আমেরিকার ইয়েল ইউনিভার্সিটি তে পাঠিয়ে দেন সেটি খাঁটি কিনা জানবার জন্য। সেখানকার বিশেষজ্ঞরা বুঝতে পারলেন এটি 'গস্পেল অফ জুডাস'। ঐ গ্রন্থে যীশু তাঁর শিষ্য জুডাসকে এমন সব উপদেশ দিয়েছিলেন, যা হুবুহু উপনিষদের উপদেশ!
যেমন যিশু বলেছেন,
"মানুষের শরীর মরে যাবে কিন্তু তাদের আত্মা বেঁচে থাকবে এবং তাকে গ্রহণ করা হবে"।
এটা হুবুহু কঠোপনিষদ এর মন্ত্র "অজো নিত্যঃ শাশ্বতোয়ং পুরাণো ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে" এর সাথে মিলে!
"এসো তোমাকে সেই রহস্যের কথা বলি যা কেউ কখনো দেখেনি। কারণ এমন একটি অন্তহীন জগত আছে যা কোন দেবদূতও দেখতে পায় নি। যেখানে এক বিশাল আত্মা বিরাজ করছেন, যাকে কোন দেবদূতের চোখ দেখতে পায় নি, মন যাকে কখনো বুঝতে পারেনি, যাকে কোনও নামে ডাকা যায়নি। "
এটি কেন উপনিষদের মন্ত্র, "ন তত্র চক্ষুর্গচ্ছতি ন বাক গচ্ছতি নো মনঃ"। " যদ্ বাচা অনভ্যুদিতং" এর সাথে তুলনীয়।
আরেক জায়গায় যিশু বলছেন
"প্রত্যেকের অন্তরে আছে সেই দিব্য স্ফুলিঙ্গ। ভিতরের স্ফুলিঙ্গ আর বাইরের যিনি ঈশ্বর দুইই এক। আর এইটি জানাই যথার্থ জ্ঞান। এই জ্ঞান লাভ হলে পর মানুষের মধ্যেকার যে দিব্য তত্ত্ব সেটি তার অতীন্দ্রিয় আধ্যাত্মিক জগতে আপন আবাসে ফিরে যায়, আর আসে না"।
এটি চমৎকাভাবেই মান্ডুক্য উপনিষদের মন্ত্র "সর্বং হ্যেতদ্ ব্রহ্ম স আত্মা। স বিজ্ঞেয়ঃ।" তৈত্তিরীয় উপনিষদ এর মন্ত্র "স যশ্চায়ং পুরুষে যশ্চাসাবাদিত্যে স একঃ। স য এবম্ বিত্। অস্মাল্লোকাত্ প্রেত্য"। এবং ছান্দোগ্য উপনিষদ এর মন্ত্র "ব্রহ্মলোকমভিসম্পদ্যতে ন চ পুনরাবর্ততে,
ন চ পুনরাবর্ততে" এর সাথে মিলে যায়!
বলার অপেক্ষা রাখেনা, যীশু ভারতে এসেই এই অতুল ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করেন এবং স্বদেশ ফিরে গিয়ে তা বিশেষ শিষ্যের মধ্যে বিলিয়ে দেন!
যুগাচার্য স্বামী বিবেকানন্দও "বেদান্তের আলোকে যীশুর শৈলোপদেশ" গ্রন্থে যীশুর বাণীর সাথে বেদান্তের মিল তুলে ধরেছেন।
সাধকদের মধ্যে মতবিরোধ নেই। আধ্যাত্মিক ভাবনায় তাঁরা সকলেই এক। তাই যীশুর উপলব্ধি উপনিষদ বা বেদান্তের সাথে এতো গভীরভাবে মিলে গেছে!
যীশুর সেই বিখ্যাত বাণী "I and my father are one" বেদান্তের "অহম্ ব্রহ্মাস্মি" (আমিই ব্রহ্ম) বাক্যের প্রতিধ্বনি ব্যাতীত আর কিছুই নয়। অর্থাৎ যীশু যে শুধু ভারতে এসে সাধনা করেছিলেন তাই নয়, তিনি অদ্বৈতবাদও উপলব্ধি করেছেন। উচ্চকোটির সাধকদের উপলব্ধি ভিন্ন হয়না, মহাত্মা যীশুই তাঁর উৎকৃষ্ট প্রমান।
এবার যদি প্রশ্ন করা হয় যে ঐতিহাসিকদের মতে যীশু বৌদ্ধমঠে শিক্ষালাভ করেন। তাহলে তাঁর বাণীতে বেদান্ত বা অদ্বৈতবাদ ফুঁটে ওঠে কেন?
উত্তরে বলবো বুদ্ধও অদ্বৈতবাদী সাধক ছিলেন। এইজন্য প্রাচীন কোষে তাঁকে "অদ্বয় বুদ্ধ" বলা হয়েছে।
বুদ্ধদেবের বেদমান্যতা নিয়েও আমার প্রবন্ধ আছে। চাইলে পড়ে দেখতে পারেন।
ধন্য ভারতভূমি! যেই মহাত্মা এই ভারত ভূমিতে পদার্পন করেছেন, সেই সিদ্ধ হয়েছেন৷ উপরোক্ত আমার গবেষণালদ্ধ প্রমান উপস্থাপনের পর হয়তো বা পাঠকের আর সংশয় থাকবে না যে মহাত্মা যীশু ভারতেরই সাধক! পুণ্যভূমি ভারতই তাঁর সাধনভূমি।
এই মহাসাধকের জন্মবার্ষিকীতে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা জানাই
#জয়তু_গুরু_বিবেকানন্দম্
#অগ্নিপুত্র
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন