মহাভারতের যুগে ত্রিপুরা
মহাভারতের যুগে ত্রিপুরা
(ত্রিপুরা রাজ্য ও ত্রিপুরা জাতির প্রাচীনত্ব)
বৈদিক ঋষিগণ জ্যোতিষ বিদ্যাবলে পৃথিবীতে সাতটি দ্বীপ ও সাতটি মহাসাগরের অনুসন্ধান লাভ করেছিলেন।
তাঁদের আবিষ্কৃত সাতটি দ্বীপের নাম ছিল জম্বু, কূশ, প্লঙ্গ, শালূনী, ক্রৌঞ্চ, শক ও পুষ্কর।
বলাবাহুল্য,ভারতবর্ষকে বলা হতো জম্বুদ্বীপ। ভারত বর্ষের ভৌগলিক ইতিহাস রচনা করার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিকগণের একটি প্রবাদ প্রচলিত ছিল যে,যাহ্য নাই মহাভারতে,তাহ্য নাই ভারতে।
মহাভারত গ্রন্থটি রচিত হয়েছিল দ্বাপর যুগের ভারত বর্ষের মাটি ও মানুষের নন্দিত সংস্কৃতি ও সামাজিক বিষয়আশয় নিয়ে।
বলাবাহুল্য,ত্রিপুরা জাতির জন্য এ কথা গৌরবের বিষয় যে,এ মহাভারত গ্রন্থে ত্রিপুরা রাজ্য ও ত্রিপুরা জাতি সমন্ধে বিস্তর উল্লেখ রয়েছে। শুধু তাই নয়"মহাভারত"এর চেয়েও প্রাচীনগ্রন্থ "পীঠমালাতম্বে"ত্রিপুরা রাজ্যের অস্তিত্ব,রাজ্যের ভৌগলিক অবস্থান ও অন্যান্য তথ্যাদি উল্লিখিত রয়েছে। মহাভারত ও পীঠমালা তন্ত্র রচিত হয়েছিল সংস্কৃতি ভাষায়। একবার দক্ষ প্রজাপতি এক যজ্ঞানুষ্ঠান করেছিলেন। উক্ত যজ্ঞে শিব ব্যতীত ত্রিভূবনের সকল দেবদেবীগণকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। দাক্ষায়নী যজ্ঞের খবর পেয়ে পিতৃভবনে যাবার জন্যে স্বামী শিবের কাছে অনুমতি প্রার্থনা করেছিলেন। শিব স্ত্রীর প্রার্থনা মঞ্জুর করলে দাক্ষায়নী সতী পিত্রালয়ে গিয়ে উপস্থিত হন। মেয়ের আগমণে প্রজাপতি দক্ষ ক্রোধে অধীর হয়ে জামাতা শিবকে কঠোর ভাষায় নিন্দা করেছিলেন। এতে দাক্ষায়নী সতী ত্রিভূবনের দেবদেবীদের সম্মুখে পিতা কর্তৃক শিব নিন্দা সহ্য করতে না পেরে জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন। স্ত্রী সতী জীবন বিসর্জন দিয়েছেন জেনে শিব প্রজাপতির দক্ষের যজ্ঞ স্থলে উপস্থিত হয়ে সতীর মৃতদেহ স্কন্ধে ধারণ করে ক্রোধতরে তাণ্ডব নৃত্য শুরু করেন। শিবের তান্তব নৃত্যের প্রকম্পিত হয়ে উঠলে,ধংস অনিবার্য দেখে এর প্রতিকার করার জন্য স্বর্গরাজ ইন্দ্র বিঞ্চুর শরণাপন্ন হন। বিঞ্চুদেব তাঁর সুদর্শন চক্র দিয়ে শিবের স্কন্ধ থেকে সতী দেবীর অঙ্গ ছেদন করেন। সতী দেবীর এই খণ্ডিত অঙ্গ ছড়িয়ে ছিটিয়ে যে সব স্থানে পরেছিল,সেই সব স্থানে তীর্থভূমি মহাপীঠে পরিণত হয়েছিল। বিঞ্চুদেব সতীর দেহকে ৫১টি খণ্ডে খণ্ডিত করেছিলেন। এ ৫১টি খণ্ড ভারত বর্ষের যে সব স্থানে পড়েছিল সে সব স্থানে পীঠ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই ৫১ পীঠের একটি ত্রিপুরা রাজ্যে অধিষ্ঠিত। পীঠমালাতন্ত্রে হরপার্বতী সংবাদে বলা হয়েছে,ত্রিপুরায়াং দক্ষপাদো দেবী ত্রিপুরা সুন্দরী। তৈরব ত্রিপুরেশশ্চ সর্বভীষ্ট ফলপ্রদঃ।
মমার্থঃ ত্রিপুরা রাজ্যে সতীর দক্ষিন পদ পড়েছিল। তাই পীঠ দেবী এখানে ত্রিপুরা সুন্দরী নামে এবং মহাদেব ত্রিপুরেশ ভৈরব নামে অবতীর্ণ হয়েছেন।
এই পীঠস্থান ত্রিপুরা রাজ্যের প্রাচীন রাজধানী উদয়পুরে প্রতিষ্ঠিত আছেন বলে ত্রিপুরা রাজ্যের প্রাচীনত্ব সম্বন্ধে সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। এই পবিত্র তীর্থ ক্ষেত্রটির জন্য ত্রিপুরা রাজ্য বিশেষত উদয়পুর ভারত বিখ্যাত এবং ত্রিপুরা জাতি ভারত উপমহাদেশে বিশেষ গৌরবান্বিত হয়েছিলেন। বলা হয়ে থাকে যে,একমাত্র পীঠদেবী ত্রিপুরা সুন্দরীর কৃপায় ত্রিপুরা রাজ্য ও ত্রিপুরা জাতি অনন্ত ঘাত প্রতিঘাত কাটিয়ে স্মরণাতীত কাল থেকে আপন অস্তিত রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছিল। মহাভারত গ্রন্থে ত্রিপুরাধিপতি ত্রিলোচনকে ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরের সমসাময়িক বলে উল্লিখিত করা হয়েছে। ত্রিপুরা মহারাজা ত্রিলোচন কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন। এ বিষয়ে মহাভারত গ্রন্থের ভীষ্ম পর্বঃ ৮৭ অধ্যায় এর ৮-৯ শ্লোকে উদ্ধৃত আছে:-
দ্রোণাদনন্তরং যত্তো ভগদত্ত প্রতাপবান
মগধৈশ্চ কলিঙ্গৈশ্চ পিশাচৈশ্চ বিশাম্পতেঃ
প্রাগ জ্যোতিষাদনুনৃপঃ কৌশল্যোহথ বৃহম্বল
মেকলৈ কুরুবিন্দৈশ্চ ত্রিপুরৈশ্চ সমম্বিতঃ।
মমার্থঃ দ্রোণাশ্চার্যের মত প্রক্রামশালী ব্যক্তিবর্গ,মগদের রাজা,কলিঙ্গের রাজা,পিশাশ্চের রাজা,বিশাম্পতের রাজা,প্রাগ জ্যোতিষপুরের রাজা,কৌশল্যোহথ রাজা,বৃহম্ভল রাজা,মেকলের রাজা, কুরুসেনাপতি ও ত্রিপুরা রাজ্য সমন্বিত সহকারে মহাবীর ভীষ্ম যুদ্ধে অবর্তীণ হয়েছেন।
ত্রিপুরা মহারাজা ত্রিলোচনের কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে উপস্থিতি বিষয়ে মহাভারত গ্রন্থকার ব্যাসদেবকে অন্ধরাজা ধৃতরাষ্ট্র জিঙ্গেসা করেছিলেন,''আজ ভীষ্ম রণে কুরুদিগের বিপক্ষে এবং পান্ডবদিগের পক্ষে কোন কোন রাজা অবর্তীণ হয়েছেন"। উত্তরে ব্যাসদেব বলেছিলেন:-
ভীষ্ম পর্বে অষ্টম দিবস ভীষ্ম রণে,বহ্যরচনের মধ্যে সব রাজাগণেঃ
প্রাগজ্যোতিষদনু আর কৌশলহথ নৃপগণ
মেখল ত্রিপুরেশ্বর বর্বর রাজাতে বেষ্টনঃ
ভীষ্মপর্বঃ মহাভারত।
ভারতের উল্লেখিত উদ্ধৃতি থেকে বোঝা যায়,মহাভারত গ্রন্থকার ব্যাস মুনি চন্দ্র বংশীয় ক্ষত্রীয় কুলজাত ত্রিপুরেশ্বরকে অনার্য জ্ঞীনে বর্বর রাজা বলে আখ্যায়ীত করার প্রয়াস পেয়েছেন। যা হোক কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে ত্রিপুরা মহারাজার উপস্থিতি ছিল অনার্য মানব জাতির জন্য ঐতিহাসিক গৌরবময় অধ্যায়। আর্য রাজন্যবর্গের এমন অহংবোধ ছিল যে,আর্যরাই কেবল শৌর্যবীর্জের অদ্বিতীয় কিন্ত ত্রিপুরা মহারাজা কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে অবর্তীণ হয়ে আর্য রাজন্যদের লালিত অহংবোধ খর্ব করে দিয়েছিলেন। মহাভারত পাঠে জানা যায়,ত্রিপুরা মহারাজা ত্রিলোচনের বীরত্ব দেখে ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির অতিশয় প্রীতিলাভ হয়েছিলেন এবং" রাজ কূলতিলক"সম্বোধন পূর্বক বহুমূল্যবান রত্ন খচিত একটি সিংহাসন বন্ধুত্বের নিদর্শন স্বরূপ উপহার প্রদান করেছিলেন। এই সিংহাসনটিই ত্রিপুরা রাজ্যের ঐতিহাসিক সিংহাসন,যা ত্রিপুরা রাজন্যবর্গ বংশ পরম্পরা উপবেশন করে রাজ্য শাসন ও প্রজা পালন করেছিলেন বলে কথিত। ত্রিপুরা মহারাজা ত্রিলোচন যদি কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে অবতীর্ণ না হতেন,এবং মহাভারত গ্রন্থে যদি উদ্ধৃত না হতো,তাহলে ত্রিপুরা রাজ্য,ত্রিপুরা জাতি ও স্বার্বভৌমত্বের প্রাচীনত্ব সম্বন্ধে ঐতিহাসিকগণের অজ্ঞাত থেকে যেতো। মহাভারতের কাহিনী তথা কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল খ্রীষ্টজন্মের প্রায় তিন হাজার বছর আগে। ত্রিপুরা মহারাজা ত্রিলোচনের বীরত্ব সম্পর্কে ধৃতরাষ্ট্র সম্যক ধারণা পেয়েছিলেন ব্যাস মুনির কাছ থেকে। তাই যুদ্ধে যাবার আগে পুত্র দুযোর্ধনকে সাবধান করে দিয়েছিলেন। পিতার সতর্ক বাণী শুনে দুযোর্ধন অতিশয় ক্রোধান্বিত হয়ে পিতাকে দম্ভসহকারে বলেছিলেন,"বাহুবলে ত্রিপুরেশ্বরে জিনিব নিশ্চয়।" এ সম্বন্ধে "শ্রীশ্রী রাজমালায় " বর্ণিত আছে,,
এই মতে ত্রিলোচন রাজা,অগ্নিকোণে
রাজা যুধিষ্ঠির দেখা করায়ে ভীমসেনেঃ
ত্রিলোচন দেখিয়া বিস্তর কৈল মান
রাখিলেক মহাযত্নে দিয়া দিব্যস্থানঃ
তৃণময় ঘরে থাকে ত্রিলোচন রাজা
অগ্নিকোণ হৈতে আইছে লৈয়া নিজ প্রজাঃ
মেখলীয় রাজা আইছে তাহান সহিত
যুধিষ্ঠির দ্বারে রাজা দেখিছে বিহিতঃ
তাহ্য দেখি দুঃখিত যে,রাজা দুযোর্ধনে
ধৃতরাষ্ট্র স্থানে কহে অতি ক্রোধ মনে।
ত্রিলোচন খণ্ড,দিগ্বিজয়।
ত্রিপুরা মহারাজা ত্রিলোচন কেবল কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি। তৎকালীন ভারত বর্ষের অন্যান্য রাজন্যবর্গের সাথেও যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। মহাভারতে ঘোষযাত্রার বর্ণনায় দাতা কর্ণরাজের সাথে ত্রিপুরা মহারাজা ত্রিলোচনের যুদ্ধ সংঘটিত হবার বর্ণনা পাওয়া যায়।
"বৎস ভূমিং বিনির্জিত্য কেরলাং মৃত্তিকাবতীমঃ
মোহনং পত্তনং চৈব ত্রিপুরীং কোশলাং তথা।
কর্ণ পর্বঃ ২৫৩ অধ্যায়ঃ ১০শ্লোক।
অধিকন্তুঃ ত্রিপুরা মহারাজা ত্রিলোচন কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে অবতীর্ণ হবার আগে মহাবীর ভীম ও সহদেব সাথে যুদ্ধে অবর্তীণ হয়েছিলেন। ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরের রাজস্যূয় যজ্ঞে ত্রিপুরাশ্বরের উপস্থিতিও ত্রিপুরা জাতির জন্য ঐতিহাসিক তাৎর্পয মণ্ডিত ছিল। ভারত বিখ্যাত ঐতিহাসিক কালীপ্রসন্ন সিংহ মহাশয় ত্রিপুরা রাজ্য ও ত্রিপুরা জাতির সম্বন্ধে " রাজমালা" গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে,অতি প্রাচীনকালে ব্রক্ষদেশের উত্তরভাগে শান বংশীয় রাজাগণ প্রবল বিক্রমে রাজদণ্ড পরিচালিনা করিতে ছিলেন। এই রাজ্য পোয়াং আখ্যায় আখ্যায়ীত হতো। এই রাজ্যের রাজধানী ছিল মোগুয়াং নগরীতে। এই রাজবংশেরর একটি শাখা কামরূপের (আসাম) পূর্বাংশে একটি স্বতন্ত্র রাজ্য স্থাপন করিয়াছিল। এই রাজ্যের অধিপগিগণ"ফা"উপাধি ধারণ করিতেন।,,,,, পরবর্তীতে এই জনগোষ্ঠী রাজ্য বিস্তার করতে অগ্রসর হইয়া নাগা পর্বতে রাজপট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ইহাই প্রাচীন কাছাড় বা হেরম্ভ রাজ্য। দিমাপুর ছিল ইহার রাজধানী। অতঃপর তাহা হইতে উত্তরাংশে ধাবিত হইয়া দ্বিতীয় রাজ্য স্থাপন করেন। ইহাই প্রাচীন"ত্রিপুরা"ত্রৈপুরা রাজ্য। এ "ত্রিপুরা"বা"ত্রৈপুরা"হইতে আধুনিক ত্রিপুরা নামের উৎপত্তি হইয়াছিল। কালক্রমে এই ত্রিপুরা রাজ্য প্রবল পরাক্রমশালী হইয়া উঠিয়াছিল। গুপ্ত সম্রাটদিগের ভারত শাসনকালে ত্রিপুরা গণনীয় রাজ্য শ্রেণীতে স্থান প্রাপ্ত হইয়াছিল। সম্রাট সমুদ্র গুপ্তের লাট প্রন্তর লিপির দ্বাবিংশ পংক্তিতে লিখিত আছে যে,সমতট (বঙ্গ) কামরূপ,এবং ত্রিপুরা প্রভৃতি রাজ্যের অধিপতিগণ সম্রাট সমুদ্র গুপ্তের প্রতিনিধিত্ব ছিলেন। সমতট (বঙ্গ) ও কামরূপের নিকটবর্তী প্রত্যন্ত রাজ্য "তৃপুরা"রাজ্যটিই ত্রিপুরা নামে পরিচিত লাভ করিয়াছে। সম্রাট সমুদ্র গুপ্ত সকাব্দের চতুর্থ শতাব্দির পূর্বতী নরপতি। সুতরাং ত্রিপুরা রাজ্য ও ত্রিপুরা জাতি তদপেক্ষা প্রাচীন নির্গত হইতেছে। ভারতে এ ক্ষণে যে সকল রাজ্য বর্তমানে রহিয়াছে ত্রিপুরা সর্বাপেক্ষা প্রাচীন। মিবার রাজ্যও ত্রিপুরা রাজ্যের ন্যায় প্রাচীন নহে। সমুদ্রগুপ্তের পৌত্র কুমার গুপ্তের সেনাপতি কণক সেনকে মিবার রাজবংশের আদি পিতা বলে স্বীকার করা হইয়াছে। অথচ এই ভট্টাক সেনাপতির পিতামহের সময়ে ত্রিপুরা রাজ্য বর্তমান ছিল। লাট প্রন্তর লিপিই তাহার প্রমাণ। ত্রিপুরা জাতির ১১৮ তম মহারাজা যুঝারূফা বীররাজ ৫৯০ খ্রীষ্টাব্দে বঙ্গ জয় পূর্বক গঙ্গা নদীর পশ্চিম তীর পযর্ন্ত হনুমান রঞ্জিত বিজয় পতাকা উড্ডীন করিয়াছিল। সেই বিজয় ঘটনাকে চিরস্মরনীয় করিবার জন্য একটি অব্দ্য প্রবর্ত্তীত করিয়াছিলেন। ইহাই ভারতবর্ষে "ত্রিপুরাব্দ" বর্ষ পঞ্জিকা নামে পরিচিত। ৬৯৯ সকাব্দে অর্থাৎ ৭৭৭ খ্রীষ্টাব্দে শান রাজা তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতা শ্যামলংকে ম্যাগুয়াং নগরী থেকে রাষ্ট্রদূত হিসাবে ত্রিপুরা রাজ্যে প্রেরণ করেছিলেন। ত্রিপুরা রাজ্য থেকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন কালে তিনি মিতাই ( বর্তামান মনিপুর) রাজ্যের মধ্য দিয়ে গমণ করেছিলেন। তখন তিনি মিতাই রাজ্যের অধীবাসিগণকে কুকি জাতির ন্যায় স্বল্প বসন ভূষণে ও হীন অবস্থাপন্ন অবস্থায় দেখে গিয়েছিলেন। " ত্রিপুরা বংশীয় রাজাগণ ক্রমে ক্রমে দক্ষিণ দিকে রাজ্য বিস্তার করতে যত্নবান হয়েছিলেন। উত্তর কাছাড় হতে মধ্য কাছাড় এবং দক্ষিণ কাছাড়ে,তার পর সেখান থেকে আধুনিক কৈলাশহরে রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। "শ্রীহট্ট" (বর্তমান সিলেট) প্রদেশের পূর্ব প্রান্ত-স্থিত বিবিধ স্থানে ত্রিপুরা রাজাদের রাজধানী ও রাজ প্রাসাদের ভগ্নাবশেষ আজও কালের সাক্ষী হিসেবে বিদ্যমান রয়েছে। ত্রিপুরা বংশীয় রাজাগণ ১৭১ সকাব্দে অর্থাৎ ২৪১ খ্রিস্টাব্দে, যে অব্দ (বর্ষ পঞ্জিকা ) পরির্বতন করেছিলেন তা তাম্র শাসনে ও খোদিত লিপিতে উৎকীর্ণ হয়েছে। পেম্বার্টনের মানচিত্রই এর উৎকৃষ্ট প্রমাণ। কালের পরিক্রমান্তে ত্রিপুরা রাজ্যের সীমানা কখনও সুদূর প্রসারিত আবার কখনও বা সংকুচিত হয়েছিল। ফলে ভারত উপমহাদেশে প্রাচীন ভৌগলিক ইতিহাসে ত্রিপুরা রাজ্যকে নানা নামে অভিহিত করা হয়েছিল। মহাভারত যুগের প্রথম অধ্যায়ে ত্রিপুরা রাজ্যকে ত্রিবেগ রাজ্য,প্রতিষ্ঠান নগর ও কিরাত রাজ্য নামে অভিহিত করা হয়েছিল। মহাভারতের দ্বিতীয় অধ্যায়ে বিশেষ করে মহারাজ ত্রিপুরের রাজত্বকাল থেকে ত্রিপুরা রাজ্য সমধিক পরিচিত লাভ করেছিল ত্রিপুরা নামে। আরাকান রাজ্যের প্রাচীন ইতিহাস "রাজোয়াং" গ্রন্থে ত্রিপুরা রাজ্যকে "খুরতন"ও"পাতিকারা" নামে অভিহিত করা হয়েছে। মণিপুর রাজ্যের ইতিহাস গ্রন্থে ত্রিপুরা রাজ্যকে "তকলেঙ" নামে অভিহিত করা হয়েছে। ভারতের প্রাচীন ইতিহাস লেখকগণ ত্রিপুরা রাজ্যকে "জাজ নগর বা জাজি নগর" নামে অভিহিত করতে প্রয়াস পেয়েছিলেন। ইংরেজগণ ত্রিপুরা রাজ্যকে tiperah নামে অভিহিত করতে প্রয়াস পেয়েছিলেন। পুর্তগীজগণ তাদের ইতিহাসে ত্রিপুরা রাজ্যকে তাদের ভাষায় নাম দিয়েছিলেন Tipora।ত্রিপুরা জাতি নিজেদের রাজ্যকে স্বীয় মাতৃভাষায় (ত্রিপুরা কক) টিপারা রাজ্য বা তৈপ্রা নামে অভিহিত করে থাকে ।
তথ্যসূত্র : কালী প্রসন্ন সেন রচিত "শ্রীশ্রী রাজমালা" গ্রন্থ ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন