শেয়ার করেছেন :- প্রণব কুমার কুণ্ডু
রামমোহন রায় ম্যানচেষ্টার, লন্ডন ও প্যারিস ভ্রমণ শেষে ব্রিস্টল পৌঁছন ১৮৩৩ সালে সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে।
সেখানে মাত্র আটদিনের জ্বরে ২৭ সেপ্টেম্বর, ১৮৩৩ সালে, ৬২ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়।
শেষ কয়েকটি দিনের চিকিৎসক ছিলেন ডাক্তার এসলিন। ডাক্তার এসলিন রোগের মুহূর্তগুলোর বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছিলেন।
তাতেই জানা যায় রোগের শেষ অবস্থায় তিনি বারবার অচেতন হওয়ার পর কোমায় চলে যাচ্ছিলেন।
ডাক্তার এসলিন লিখেছেন---" শীঘ্রই তিনি সংজ্ঞা ও বাক্শক্তি হারাইতে লাগিলেন; তথাচ সময়ে সময়ে জ্ঞানলাভ করিয়া চতুষ্পার্শবর্তী বন্ধুগণকে তাঁহাদের সেবার জন্য সকৃতজ্ঞ হৃদয়ে ধন্যবাদ প্রদান করিতেছিলেন।" ( অনুবাদ: নগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়)
নানান সমীক্ষা থেকে জানা যায় যে সেইসময় ইংল্যান্ডের স্বাস্থ্য পরিষেবা, চিকিৎসকদের গুণগত মান অত্যন্ত নিম্ন মানের ছিল এবং তখনও পর্যন্ত সেখানে নাপিতরাই সার্জেনের কাজ করত। "রয়াল কলেজ অব ফিজিসিয়ানস" থেকে যারা পাস করত তাদের কোনো রাজকীয় সনদ ছিল না, যেটা নাপিতদের সংগঠনের ছিল। ফলে পাস করা শল্যচিকিৎসকেরা নাপিতদের সংগঠনে যোগ দিয়ে ক্ষৌরকার শল্যচিকিৎসক হিসেবে পরিচিতি লাভ করতেন।
অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে। এক্স-রে আবিষ্কার হয়নি। তাছাড়া রোগ ও তার কারণ যে জীবাণু সেই সম্পর্কে কোনো ধারণা সেই সময় চিকিৎসা জগতে ছিল না।
ডাক্তারের বিবরণে জ্বরের পরিমাণ ডিগ্রিতে লেখা নেই। উল্লেখ আছে "জ্বর" আর "অল্প জ্বর" বলে। তাই থার্মোমিটার তাঁর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছিল কিনা জানা যায় না, যদিও সেসময় থার্মোমিটারের ব্যবহার প্রচলিত ছিল।
অত্যধিক মাথার যন্ত্রণা, খিঁচুনি, অচেতন হওয়া এসবের জন্য খ্যাতনামা দুইজন চিকিৎসক ডাক্তার প্রিচার্ড ও ডাক্তার ক্যারিকের পরামর্শে মস্তিষ্কে জোঁক বসানো হয়েছিল রক্তমোক্ষণের জন্য। প্রাচীনকাল থেকেই এই চিকিৎসা পদ্ধতি সারা পৃথিবীতে প্রচলিত ছিল।
মৃত্যুর পর তাঁর শরীরব্যবচ্ছেদ হয়েছিল। সেই রিপোর্টে মস্তিষ্কের প্রদাহের কথা লেখা আছে। মস্তিষ্কের মধ্যে জল এবং পুঁজ জমেছিল, খুলির সঙ্গে মস্তিষ্ক সংলগ্ন হয়েছিল। যেটা হতে পারে অতীতের কোন গুরুতর ধরণের মাথার আঘাতে।শৈশব বা কৈশোরে কোনও মাথায় আঘাতের কথা জানা যায় না। তবে ষোলো বছর বয়সে তিনি একা তিব্বত ভ্রমণে গিয়েছিলেন। সেসময় তাঁর ওপর কোনো আক্রমণ হয়েছিল কিনা তা' জানা যায়নি। তিব্বত ভ্রমণের কাহিনী তিনি কিছু লিখে যাননি। শুধু লিখেছেন--- তিব্বতবাসিনী রমণীগণের সস্নেহ ব্যবহারের জন্য তিনি নারীজাতির প্রতি চিরদিন শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা অনুভব করেন।
এছাড়াও যক্ষ্মা হলে মস্তিষ্কের এই লক্ষণ হতে পারে। কিন্তু রামমোহনের অত্যন্ত ভালো স্বাস্থ্যের কারণে পরবর্তীকালে চিকিৎসকরা সেই সম্ভাবনা বাদ দিয়েছেন।
তাঁর মৃত্যুর ১০২ বছর পরে ১৯৩৫ সালে আবিষ্কৃত হয়েছে সালফোনামাইড এবং ১০৮ বছর পর পেনিসিলিন।
ফলে যথাযথ চিকিৎসা তাঁর হয়নি সেটা সহজেই অনুমেয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন