শনিবার, ২০ জুন, ২০২০

শহিদ রাজেশ ওরাং


নিজের জমিতেই সমাধিস্থ শহিদ রাজেশ ওরাং

 



রামকুমার আচার্য, মহম্মদবাজার: নিজেদের জমিতেই সমাধিস্থ হলেন বীর শহিদ রাজেশ ওরাং। লাদাখ সীমান্তে লাল ফৌজের হামলায় শহিদ রাজেশের নিথর দেহ শুক্রবার গ্রামের বাড়িতে আসে। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। তারপর তাঁর দেহ সমাধিস্থ করা হয়।
মহম্মদবাজারের প্রত্যন্ত গ্রাম বেলগড়িয়া। উন্নয়নের আঁচ এখনও লাগেনি গ্রামে। রাস্তা এখনও কাঁচা। ২৭-২৮টি বাড়ির মধ্যে প্রায় সবই মাটির। টালি অথবা টিনের ছাউনি। বছর পাঁচেক আগে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে রাজেশের সংসারটি সবে একটু সুখের মুখ দেখতে পেয়েছিল। বিয়েও করবেন ঠিক করেছিলন। গ্রামেই একতলা দালান বাড়ি তৈরি করেছিলেন রাজেশ। সেই বাড়িতেই জাতীয় পতাকায় কফিনবন্দি হয়ে ফিরলেন তিনি। এদিন সন্ধ্যায় মাটির সঙ্গে মিশে গেল তাঁর সমস্ত স্বপ্ন।
দেশের জন্য প্রাণ দেওয়া রাজেশের স্মৃতি আঁকড়েই এখন বেঁচে থাকবেন বাবা-মা। অগণিত জনতার কাছেও সেই স্মৃতিই সম্বল। যাঁরা বেলগড়িয়া চেনেন না, তাঁরা কখনও গ্রামে এলে প্রথমেই দেখতে পাবেন রাজেশের সমাধি।
রাজেশের বাবা দিনমজুর। নিজেদের সামান্য জমি রয়েছে। ছেলের পড়াশোনার জন্য সুভাষ ওরাং হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেছিলেন। বাবার পরিশ্রম জলে যেতে দেননি রাজেশ। পড়াশোনার পর যোগ দিয়েছিলেন সেনাবাহিনীতে। সেই রাজেশই চলে গেলেন চোখের জলে ভাসিয়ে। কিন্তু, রাজেশকে অমর করে রাখতে চায় তাঁর পরিবার। তাঁর গ্রামবাসীরা। তাই অন্য কোথাও নয়, তাঁকে নিজেদের জমিতেই সমাধিস্থ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিন রাজেশকে দেখার পর পরিবারের কেউ আর সমাধিস্থলে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় ছিলেন না। দেহ গ্রামে ঢোকার সময় শুধুই কান্নার রোল। শুধু পরিবার নয়, গোটা গ্রাম কাঁদছে। হাজার হাজার মানুষের চোখের কোণে জল। বাবা, মা বোন এতটাই ভেঙে পড়েছেন যে, কেউই আর সমাধিস্থল পর্যন্ত যেতে পারেননি। বারে বারে সংজ্ঞা হারাচ্ছিলেন বাবা সুভাষবাবু। কোনওভাবে ছেলের কফিন পর্যন্ত গিয়েই মূর্ছা গেলেন। তা দেখে দীর্ঘক্ষণ যাঁরা অনেক কষ্টে চোখের জল আটকে রেখেছিলেন, তাঁরাও কান্নায় ভেঙে পড়লেন। রাজেশের সম্পর্কিত ভাই সুরজিৎ ওরাং বলেন, আমাদের জমি নেই বললেই চলে। সবাই খেটেই খায়। কিন্তু, আমরা চাই, আমাদের গর্বের রাজেশদা অমর হয়ে থাক। তাই যেটুকু জমি আছে, তাতেই দাদাকে সমাধিস্থ করা হল।
অমর শহিদকে চিরনিদ্রায় শায়িত করার জন্য খোঁড়া হয় গর্ত। চারদিকে সিমেন্ট আর ইটের গাঁথনি। এদিন সেখানেই রাজেশের কফিনবন্দি দেহ রাখা হয়। মা চাননি, ছেলের শরীরে ধুলোবালি লাগুক। তাই মায়ের ইচ্ছাতেই কফিনের উপরেই চাপা দেওয়া হল মাটি। রাজেশ চলে গেলেন চোখের অন্তরালে। কিন্তু, থেকে গেলেন লাখো মানুষের হৃদয়ে। কান্নার আওয়াজকে ছাপিয়ে গেল অমরত্বের স্লোগান। হাজার হাজার মানুষের মুখে একটাই স্লোগান, ভারত মাতার বীর সন্তান রাজেশ ওরাং অমর রহে।

বর্তমান, ২০/৬/২০২০।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন