বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

যেভাবে_থেমে_গেল_মোঙ্গলবাহিনীর_জয়রথ


যেভাবে_থেমে_গেল_মোঙ্গলবাহিনীর_জয়রথ



ফেসবুক থেকে শেয়ার করেছেন                 প্রণব কুমার কুণ্ডু


প্রণব কুমার কুণ্ডু






Tanmoy Ganguly

#যেভাবে_থেমে_গেল_মোঙ্গলবাহিনীর_জয়রথ
🏇🏇🏇🏇🏇🏇🏇🏇🏇🏇🏇🏇
বলতে দ্বিধা নেই মানব সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর সেনাবাহিনী হল মধ্যযুগের মোঙ্গল বাহিনী যার সূচনা হয়েছিল চেঙ্গিস খানের হাতে। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে তাতার বাহিনী নামে পরিচিত ছিল মোঙ্গল বাহিনী। ১২০৬ সালে চেঙ্গিস খানকে মঙ্গোলিয়ার স্তেপের একচ্ছত্র অধিপতি বা গ্রেট খান হিসাবে ঘোষণা করার পর মোঙ্গল বাহিনী একে একে জয় করে নিয়েছিল এশিয়া ও ইউরোপ বিস্তীর্ণ অঞ্চল।

ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্যের মালিক ছিল মোঙ্গলরা। চেঙ্গিসখানের সময় থেকে শুরু হওয়া মোঙ্গলদের জয়যাত্রা অব্যাহত ছিল পরবর্তী গ্রেট খানদের সময়ও। ভাবতে অবাক লাগে ১২০৬ সাল থেকে ১২৬০ সাল এই অর্ধশত বছরে তাঁরা একটি যুদ্ধেও হারেন নি। বাগদাদ, সমরখন্দ, বেইজিং, বুখারা, আলেপ্পোর মত বড় বড় শহর তাতারি হামলায় মাটির সাথে মিশে গিয়েছিল। কি পূর্ব কি পশ্চিম এমন একটিও রাজ্য ছিলনা যারা মোঙ্গলদের গতি পথে বিন্দুমাত্র বাধা সৃষ্টি করতে পেরেছিল। বিশ্বজয়ের যে আকাঙ্খা অপূর্ণ রেখে মারা গিয়েছিলেন চেঙ্গিস খান, তার পুত্র ও পৌত্ররা সেইটার যেন সত্য করতে যাচ্ছিলেন। তাঁদের বর্বরতায় ইউরোপ ও এশিয়ার কোটি কোটি নিরীহ মানুষ প্রাণ দিয়েছ অনেকটা বিনা প্রতিরোধে। তাই সারা দুনিয়ার মানুষ ভাবতে শুরু করেছিল মোঙ্গলদের থামানো বোধ হয় অসম্ভব। কিন্তু ১২৬০ সালে হঠাৎই থেমে গেল অপ্রতিরোধ্য মোঙ্গলদের জয়রথ। এক অসাধ্য সাধন হল ফিলিস্তিনের গাজার অদূরে আইন জালুত প্রান্তরে। মোঙ্গল প্রথম পরাজয়ে সেই অবিশ্বাস্য কাহিনী নিয়ে লেখা হয়েছে এই প্রতিবেদনটি।

#পটভূমি
মোঙ্গলদের উত্থানের যুগে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো বেশ কয়েকটি ছোট ছোট বিচ্ছিন্ন রাজ্যে বিভক্ত ছিল যেটা ইসলামের উত্থানের শুরু থেকে তখন পর্যন্ত ৬০০ বছরের ইতিহাসে কখনও ঘটেনি। ইসলামী খিলাফত তখন আব্বাসীয়দের হাতে। নাম মাত্র আব্বাসীয় খলিফাদের রাজধানী ছিল বাগদাদে। খলিফা হারুন উর রশিদ, খলিফা মুহতাসিম বিল্লাহ কিংবা খলিফা মামুন, মনসুর ও মুন্তাসিরদের পরাক্রম তখন কেবলই কিংবন্তি। বাস্তবের আব্বাসীয় শাসকরা আধ্যাত্নিক কিংবা সামরিক কোন ক্ষেত্রেই পূর্বসুরীদের ধারের কাছেও ছিলেন না। আব্বাসীয় খিলাফত তখন অন্তর কোন্দল এবং ভোগবিলাসে মত্ত। এরকম অবস্থায় মোঙ্গলদের গ্রেট খান ছিলেন মঙ্গে খান। তাঁরই ভাই হালাকু তখন মধ্যপ্রাচ্যে মোঙ্গল বাহিনীর দায়িত্বে। বৌদ্ধধর্মে দিক্ষিত হালাকু খান ধর্মীয় কারণে সুনজরে দেখতেন না বাগদাদের আব্বাসীয় খিলাফতকে। তার উপর আব্বাসীয় খিলাফিতের সঞ্চিত রাশি রাশি ধন ভান্ডার হালাকু খানকে প্ররোচিত করেছিল বাগদাদ আক্রমণে। হালাকু খানের আক্রমণে মাটির সাথে মিশে যায় বাগদাদ। ইতিহাসের নজিরবিহীন বর্বরতায় বাগদাদে প্রাণ হারান প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ।

শুধু বাগদাদ ধ্বংস করেই হালাকু খানের বাহিনী থেমে থাকেনি। ইরাক থেকে সিরিয়া হয়ে তাঁরা এগিয়ে চলছিলেন মিশরের দিকে। পথে সিরিয়ার দামেস্ক ও আলেপ্পোর পতন হয় তাঁদের হাতে। সেই শহরের মানুষগুলোকেও বরণ করতে হয়েছিল বাগদাদবাসীর মত ভয়াবহ পরিণতি। মোঙ্গলদের ভয়ে সিরিয়া থেকে পালিয়ে তখন দলে দলে মানুষ আশ্রয় নিচ্ছিল মিশরে। এদিকে হালাকুর পরবর্তী পরিকল্পনা ছিল মিশর দখল করা। কেননা তখনকার সময়ে মিশর জয় করার অর্থ সমগ্র উত্তর আফ্রিকা জয় করে ফেলা। আর উত্তর আফ্রিকা থেকে জিব্রাল্টার হয়ে একবার স্পেনে ঢোকার মানে হল নিমিষেই ইউরোপকে পদানত করা। সেটি করতে পারলেই পূর্ণ হবে পিতামহ চেঙ্গিসের বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন। তাই মোঙ্গলদের বিশ্ব জয়ের স্বপ্নে একমাত্র বাঁধা তখন মিশরের তরুণ মামলুক সুলতান সাইফউদ্দিন কুতুজ।

#মিশর_আক্রমণ
সিরিয়া থেকে মিশর আক্রমণের পূর্বে হালাকু খান মোঙ্গলদের স্বভাব সুলভ “হয় আত্মসমর্পণ নয় ভয়াবহ মৃত্যু” এই হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠালেন মিশরের সুলতানের কাছে। সেই চিঠির ভাষা এতটাই ভয়ঙ্কর যে চিঠিটি প্রিয় পাঠকদের জন্য অনুবাদ করে দেওয়া হল যাতে বোঝা যায় মোঙ্গলদের হুমকি আসলে কতটা পিলে চমকানো।

আমাদের তরবারির ভয়ে পালিয়ে যাওয়া মিশরের মামলুক সুলতান কুতুজের প্রতি পূর্ব ও পশ্চিমের সকল রাজার রাজাধিরাজ বিশ্বধিপতি খানের ফরমান–

“অন্যদেশগুলোর ভাগ্যে কী ঘটেছিল তোমার সেটা চিন্তা করে আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করা উচিত। তুমি শুনেছ কীভাবে আমরা বিশাল বিশাল সাম্রাজ্য জয় করেছি এবং বিশৃখলাময় দূষিত পৃথিবীকে পরিশুদ্ধ করেছি। আমরা বিস্তীর্ণ ভূখণ্ড জয় করে সেখানকার সব মানুষকে হত্যা করেছি। তাই আমাদের আতংকের হাত থেকে তুমিও পালিয়ে বাঁচতে পারবে না।

তুমি কোথায় লুকাবে? কোন রাস্তায় দিয়ে পালিয়ে যাবে? আমাদের ঘোড়াগুলো যেমন তেজী, আমাদের শরগুলোও তেমন তীক্ষ্ণ। আমাদের তরবারিগুলো বজ্রের মত আর আমাদের হৃদয় পর্বতের মত শক্ত। মরুবালুকার মত আমাদের সৈন্যসংখ্যাও গুণে শেষ করা যাবে না। না কোন দুর্গ আমাদের আটকাতে পারবে, না কোন সৈন্যদল পারবে আমাদের রুখতে। তোমার আল্লাহর কাছে তোমাদের ফরিয়াদ আমাদের বিরুদ্ধে কোন কাজেই আসবে না। কোন শোকের মাতম আমাদের হৃদয়কে স্পর্শ করতে পারবেনা, না অশ্রু গলাতে পারবে আমাদের মন। শুধু যারা প্রাণ ভিক্ষা চাইবে তারাই আমাদের হাত থেকে বাঁচতে পারবে।

যুদ্ধের দাবানল ছড়িয়ে পড়ার আগেই তোমার উত্তর পাঠিয়ে দিও। কোন প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করলে তার ফল হবে ভয়ঙ্করতম। আমরা তোমাদের মসজিদগুলো ভেঙ্গে চুরমার করে ফেলব আর তোমাদের রবের দুর্বলতা সবার সমানে প্রকাশ করব তারপর তোমাদের শিশু-বৃদ্ধ নির্বিশেষে সবাইকে হত্যা করব। মনে রেখ এই মুহুর্তে তোমরা আমদের একমাত্র শত্রু”।

সাইফউদ্দিন কুতুজ ভালভাবেই জানতেন ইতিপূর্বে যারা বিনা যুদ্ধে মোঙ্গলদের ভয়ে আত্মসমর্পণ করেছিল তাঁদের কী করুণ পরিণতি হয়েছিল। তাই কাপুরুষের মত বিনা যুদ্ধে অপমানের সাথে মারা পড়ার চেয়ে তিনি চাইলেন এই বর্বর বাহিনীকে মোকাবেলা করতে। উপরে উল্লেখ করা চিঠির উত্তরটা সুলতান কুতুজ দিয়েছিলেন মোঙ্গল দূতের শিরশ্ছেদ করে। এর ফলাফলটা সকলের কাছেই নিশ্চয়ই অনুমেয়।

অবধারিতভাবে বেধে গেল যুদ্ধ। সুলতান কুতুজ প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মোঙ্গলদের মোকাবেলা করার। ঠিক সেই সময়ে মিশরে মস্ত বড় ইসলামিক স্কলার ছিলেন শেখ ইজ্জউদ্দিন আব্দুস সালাম । তিনি তার বক্তব্যে সুপষ্টভাবে সুলতান কুতুজের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানালেন এবং জনগণকে দলে দলে কুতুজের বাহিনীতে যোগ দেওয়ার আহ্বান করলেন। এছাড়া সিরিয়া থেকে আরেক কিংবদন্তী কমান্ডার জহির উদ্দিন বাইবার্স কুতুজের সাথে যোগ দিলেন। এদিকে যাত্রা পথে হালাকু খবর পেলেন তাঁর ভাই গ্রেট খান মঙ্গে মারা গেছেন। তাই ৬ লক্ষ সৈন্যের প্রায় সাড়ে ৫ লক্ষ নিজের সাথে নিয়ে তিনি মংগোলিয়া ফিরে গেলেন গ্রেট খানের শেষকৃত্যে যোগ দিতে। বাকিদের তিনি রেখে গেলেন তাঁর বিশ্বস্ত ও দক্ষ সেনাপতি কিতবুকার অধীনে মিশর আক্রমণের জন্য।

#যুদ্ধের_অসাধারণ_কৌশল
দুর্ধর্ষ মোঙ্গল বাহিনীর মূল শক্তি ছিল তাঁদের ক্ষিপ্রতা এবং দ্রুতগামী ঘোড়াগুলো। এছাড়া ঘোড়ার উপর থেকে তীর ছুড়ে মারার বিশেষ দক্ষতা ছিল তাঁদের যা ইউরোপ ও এশিয়ার সেনাবাহিনীগুলোর ছিলনা। মোঙ্গল ধনুকগুলো ছিল হালকা কিন্তু অসম্ভব শক্তিশালী। হালকা কিন্তু পাল্লা বেশী হওয়ায় ঘোড়ার উপর চড়েও ব্যবহার যেত ধনুকগুলো।
মোঙ্গলরাদের আরেকটি স্ট্র্যাটেজি ছিল পর পর অনেকগুলো সারিতে বিন্যস্ত না হয়েই যতটা সম্ভব পাশাপাশি দাড়িয়ে হামলা চালানো যাতে সুযোগ বুঝে শত্রু বাহিনীকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা যায়। সুলতান কুতুজ বুঝতে পারলেন চওড়া প্রান্তরে মোঙ্গলদের মুখোমুখি হওয়া মানে সাক্ষাৎ ধ্বংস ঢেকে আনা। তিনি মোঙ্গলদের আগে যুদ্ধ ক্ষেত্র পছন্দ করার সুযোগই দিতে চাইলেন না বরং নিজেই সৈন্য নিয়ে এগিয়ে গেলেন তাঁদের মোকাবেলা করার জন্য এবং বেছে নিলেন ফিলিস্তিনের তাবারিয়ার আইনজালুত প্রান্তর।
আইন জালুত প্রান্তরটি এর আগে থেকেই ঐতিহাসিকভাবে বিখ্যাত। কারণ ওল্ড টেস্টামেন্টে ডেভিড ও গোলিয়াথের যে যুদ্ধের কথা বলা আছে সেটাও অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই প্রান্তরেই।
কুতুজ শুরুতেই তার সব সৈন্যদের দিয়ে আক্রমণ করালেন না বরং প্রথমে ছোট একটি দল পাঠিয়ে মোঙ্গল প্ররোচিত করলেন আগে হামলা করার। শুধু তাই নয় তিনি জানতেন তাঁর সিরীয় সৈন্যরা আগেও একবার মোঙ্গলদের কাছে হেরে পালিয়ে এসেছে তাই বিপদে পড়লে এরা আবারও পালাবে। যাতে পালাতে না পারে সেজন্য তিনি এদের রাখলেন সবার সামনে।

#যুদ্ধের_বর্ণনা
শুরুতে মোঙ্গলদের প্রবল আক্রমণের মুখে কুতুজের সৈন্যদের অবস্থা ছিল টালমাটাল। তখন সুলতান নিজে শিরস্ত্রাণ খুলে উঁচু জায়গা থেকে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে সৈন্যদের সাহস যোগালেন আর নিজেই ঝাঁপিয়ে পড়লেন সাধারণ সৈন্যদের মাঝে দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য। যেহেতু প্রান্তরটি সরু তাই মোঙ্গলরা তাঁদের পুরনো সেই ট্যাক্টিক্স ব্যবহার করতে পারলনা। উপরন্তু সিরীয় সৈন্যদের ভেদকরে কুতুজের ব্যূহের ভেতরে প্রবেশ করার পর তারা মুখোমুখি হল কুতুজের এলিট বাহিনীর। এদিকে সামনের সারির সিরীয় সৈন্যদের জন্য তাঁরা পিছিয়েও আসতে পারছিলনা। সাথে সাথে দুই পাশ থেকে মোঙ্গলদের উপর নেমে আসল তীর বৃষ্টি। এক পর্যায়ে তাঁদের সেনাপতি কিতবুকা মারা যান। তারপরই ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে মোঙ্গল সেনাবাহিনী। পালিয়ে যেতে থাকে দিগ্বিদিক বিক্ষিপ্ত মোঙ্গলরা। কুতুজের সৈন্যরা প্রায় ৬০০ কিলোমিটার তাড়িয়ে শেষ হানাদার সৈন্যটিকেও হত্যা করে। এভাবেই মামলুক সৈন্যদের কাছে পরাজয় ঘটে অহংকারী, বর্বর ও জালিম হালাকু বাহিনীর। নিমিষেই চূর্ণ হয়ে যায় তাঁদের আকাশছোঁয়া দম্ভ।

#কেন_আইন_জালুতের_যুদ্ধ_এত_গুরুত্বপূর্ণ
আইনজালুতের ঐতিহাসিক প্রান্তরে অবসান হয় মোঙ্গলদের অপরাজেয় মিথের। তাঁদের ভয়ে স্বদেশ থেকে পালিয়ে যেতে থাকা হাজার হাজার মানুষ একে একে আবার ফিরে আসতে শুরু করল। এই পরাজয়ের পরও মোঙ্গলরা যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল কিন্তু আর কখনই আগের মত সেই মনোবল ফিরে পায়নি তারা। শুধু মধ্যপ্রাচ্যের নয় পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধগুলোর মধ্যে একটি হল আইন জালুতের যুদ্ধ কেননা এই যুদ্ধে সুলতান কুতুজ হেরে গেলে,  উত্তর আফ্রিকা, স্পেন ও ইউরোপ পরিণত হত বাগদাদ, সমরখন্দ ও বেইজিং এর মত বধ্যভুমিতে। আদৌ মানব সভ্যতার ঐ ক্ষত সেরে উঠত কিনা সেই প্রশ্নের উত্তর কারও জানা নেই। তবে বর্বর মোঙ্গল বাহিনীকে রুখে দেওয়ার অনন্য কীর্তির প্রতিদান হিসাবে যে বিশ্ববাসী চিরকাল সুলতান সাইফউদ্দিন কুতুজকে মনে রাখবে সেটা বলে দেওয়া যায় নিঃসন্দেহে।

তথ্যসূত্রঃ রোর বাংলা ডিজিটাল মিডিয়া
References:

১) http://wol.jw.org/en/wol/d/r1/lp-e/10201208

২) historyofislam.com

৩) https://www.strategypage.com/articles/?target=mongol.htm

৪) https://global.britannica.com/event/Battle-of-Ayn-Jalut

#TG_সংগৃহীত•

মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

২৯২ বছরের প্রাচীন শ্রীশ্রী শ্যামচাঁদ জিউ মন্দির, বড়বাজার, শান্তিপুর, নদিয়া জেলা।



২৯২ বছরের প্রাচীন শ্রীশ্রী শ্যামচাঁদ জিউ মন্দির, বড়বাজার, শান্তিপুর, নদিয়া জেলা।



রানা চক্রবর্তী একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন


৩- শান্তিপুর-পরিচয়, প্রথম ভাগ: কালীকৃষ্ণ ভট্টাচার্য।)


ফেসবুক থেকে শেয়ার করেছেন          প্রণব কুমার কুণ্ডু


প্রণব কুমার কুণ্ডু

 রানা চক্রবর্তী 


২৯২ বছরের প্রাচীন শ্রীশ্রী শ্যামচাঁদ জিউ মন্দির, বড়বাজার, শান্তিপুর, নদিয়া জেলা।
শান্তিপুরের বড়বাজারের শ্যামচাঁদ পাড়ায় অবস্থিত পাঁচ খিলানবিশিষ্ট, অলিন্দযুক্ত, দক্ষিণমুখী, বাংলার নিজস্ব আটচালা স্থাপত্যশৈলীর শ্যামচাঁদ মন্দিরটি পশ্চিমবঙ্গের এই শ্রেণীর বৃহত্তম মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম। উঁচু ভিত্তিবেদির উপর নির্মিত এই মন্দিরের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, ও উচ্চতা যথাক্রমে প্রায় ৫২ ফুট (১৫.৮ মিটার), ৩৬ ফুট (১১ মিটার) ও আনুমানিক ৭০ ফুট (২১.৩ মিটার)।
শান্তিপুর কুঠিরপাড়া নিবাসী তন্তুবায় বংশীয় গোবিন্দ দাস খাঁ অদ্বৈত প্রভুর সঙ্গে শ্রীহট্ট থেকে শান্তিপুরে এসে বসতি স্থাপন করেছিলেন। এই বংশের রামগোপাল খাঁ চৌধুরী ১৬৪৮ শকাব্দে শ্যামচাঁদ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। আসলে খাঁ চৌধুরীরা চার ভাই ছিলেন। রামগোপাল, রামজীবন, রামচরণ ও রামভদ্র এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। রামগোপাল বড় বলে তাঁর নাম বলা হয়। বিগ্রহের পাদ-পদ্মাসনে উক্ত চার জনেরই নাম খোদিত আছে। মন্দিরের সামনের পশ্চিম প্রান্তীয় খিলানের নিচে খোদিত পাথরের প্রতিষ্ঠা-ফলকের পাঠ নিম্নরূপ:
"শ্রীমতঃ শ্যামচন্দ্রস্য মন্দিরং পূর্ণতামিয়াত্।
বসুবেদার্ত্তুশুভ্রাংশু সংখ্যয়া গণিতে শকে।। ১৬৪৮ "
অর্থাৎ, ১৬৪৮ শকে (১৭২৬ খ্রীষ্টাব্দে) শ্যামচাঁদের মন্দির সম্পূর্ণ হল। বসু = ৮, বেদ = ৪, ঋতু = ৬, শুভ্রাংশু = ১ ধরে অঙ্কের বামা গতি নিয়মানুসারে মন্দিরের প্রতিষ্ঠাকাল ১৬৪৮ শকাব্দ। এই মন্দিরটির পাঁচটি 'চূড়া'। 'চূড়া' অর্থে এখানে 'রত্ন' বা 'শিখর' নয়। কলস, আমলক (আমলকি ফলের মত চারিদিকে শলাকার মত খাঁজকাটা পাথরের বলয়) ও চক্রের দ্বারা চূড়া নির্ধারিত হয়েছে।
মন্দিরটি তে টেরাকোটার কারুকার্য্য যৎসামান্য রয়েছে। খিলানগুলির উপরের চারিদিকে বাংলা আটচালা শ্রেণীর প্রতীক শিবালয় এবং তার মধ্যে রয়েছে শিবলিঙ্গ। উপরের কার্নিসের নিচে দুই প্রস্থে পোড়ামাটির ফুল এবং দুই পাশের উপরে-নিচেও একই রকমের ফুল মন্দিরটির অঙ্গ সজ্জারূপে বিন্যস্ত হয়েছে। খিলানগুলির উপরের প্রস্থে পঙ্খের কাজ ছাড়া আর কোনও পোড়ামাটির কাজ নেই। শ্যামচাঁদের এই মন্দিরটির সঙ্গে নদিয়া জেলার কাঞ্চনপল্লীতে অবস্থিত কৃষ্ণরায়ের আটচালা মন্দিরটির আকার ও আয়তনের দিক থেকে অনেক সাদৃশ্য আছে। শ্যামচাঁদের এই মন্দিরটির অবস্থা এখনও বেশ ভাল। মন্দিরের গর্ভগৃহের দরজার কাঠের কাজও খুব সুন্দর। যদিও অযত্নে ও রঙের প্রলেপে তা অনেকটাই ম্লান।
মন্দির প্রতিষ্ঠা উপলক্ষে খাঁ'রা এখানে এক বিরাট অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। মন্দির প্রতিষ্ঠার সময় যে বিরাট মহাযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়েছিল তাতে কাশী-কাঞ্চী-দ্রাবিড়-মথুরা, অঙ্গ-বঙ্গ-কলিঙ্গ প্রভৃতি স্থান থেকে পণ্ডিতমণ্ডলী আহূত হন এবং এর জন্য তৎকালীন হিসাবে প্রায় ৮ থেকে ৯ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়। মন্দির নির্মাণে, তৎকালীন হিসাবে ব্যয় হয়েছিল প্রায় দুই লক্ষ টাকা এবং এক লক্ষ মুদ্রা নজরানা নিয়ে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের পিতা নদিয়ারাজ রঘুরাম রায় (রাজত্বকাল ১৭১৫-২৮ খ্রীষ্টাব্দ) সভাগৃহের প্রধানতম স্থানে উপবেসন করেন।
শ্যামচাঁদের মূর্তিটি কষ্টিপাথরে নির্মিত। আদি রাধিকা মূর্তিটি ছিল স্বর্ণ নির্মিত। এখানে উল্লেখ্য, সেই সময়ের সমাজ রানি রাসমণির মত রামগোপালকেও নিজের নামে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করতে দেয় নি। শ্রীশ্রী শ্যামচাঁদ বিগ্রহ নদিয়ারাজের নামে এবং রাধিকা বিগ্রহ গুরু রাধাবল্লভ গোস্বামীর (উড়িয়া গোস্বামী বাড়ির আদি পুরুষ) নামে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। বিগ্রহ প্রতিষ্ঠার সময় যে সমস্ত ব্রাহ্মণ পণ্ডিতগণ আগমণ করেন তারমধ্যে গুপ্তিপাড়ার শ্রীশ্রী বৃন্দাবন চন্দ্র মঠের শ্রীপাদ সমকানন্দ পণ্ডিতমণ্ডলীসহ উপস্থিত ছিলেন।
শ্রীশ্রী শ্যামচাঁদ বিগ্রহ প্রতিদিন পূজিত হন। খাঁচৌধুরীদের পারিবারিক বিগ্রহ রাধাকান্তও এখানে উপাসিত। মন্দির প্রাঙ্গণে ঢুকতে বাঁ দিকে একটি ছোট মন্দিরে একটি শিবলিঙ্গ এবং অপর একটি ছোট মন্দিরে শ্রীগৌরাঙ্গ, শ্রীনিত্যানন্দ ও শ্রীঅদ্বৈতের মূর্তি আছে। মন্দিরের ডান দিকে একটি ছোট্ট ঘরে মাধবেন্দ্রপুরীর মূর্তি আছে। মন্দিরের সামনে একটি বড় নাটমন্দির আছে। সমগ্র মন্দির প্রাঙ্গণ পাঁচিল দিয়ে ঘেরা।
১৩৫৭ বঙ্গাব্দে শান্তিপুরের সাহেব পাড়ার শ্রীমতী হরিমতি দাসী শ্যামচাঁদের সাবেক সিংহাসনটির সংস্কার ও ধাতুমণ্ডিত করে দেন। রামগোপাল খাঁর পুত্র রাজকৃষ্ণ খাঁর পত্নী গোবিন্দমণি দাসী বাল্যবিধবা হওয়ায় নিঃসন্তান ছিলেন। তিনি তাঁর ভাইপো হরিদাস প্রামাণিককে উইল করে শ্যামচাঁদ মন্দিরের সেবায়ত নিযুক্ত করে যান। বর্তমানে 'শ্রীশ্রী রাধাশ্যামচাঁদ মন্দির পরিচালন কমিটি' কর্তৃক বিগ্রহের সেবাকার্য পরিচালনা করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক মন্দিরটি সংরক্ষিত। মন্দিরটি সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে খোলে এবং রাত্রি ৮টা ৩০ মিনিটে বন্ধ হয়। নিত্যভোগের সময় দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট। দক্ষিণার বিনিময়ে অন্নভোগের রসিদ সংগ্রহের সময় ৮টা ৩০ মিনিট থেকে ৯টা ৩০ মিনিট।
রাস পূর্ণিমা উপলক্ষে এই মন্দিরে চার দিন ব্যাপী ভক্তবৃন্দ দ্বারা হরিনাম সংকীর্তন হয় কিন্তু ভাঙ্গারাসের শোভাযাত্রায় এই বিগ্রহ অংশ নেয় না। দোল পূর্ণিমা উপলক্ষে শ্যামচাঁদ জিউ নগর ভ্রমণে বেরিয়ে গুরু-গৃহ উড়িয়া গোস্বামী বাড়ি যান এবং 'ডালিধরা' অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
🌿🌹🌿🌹🌿🌹🌿🌹🌿🌹🌿🌹
সুপ্রভাত বন্ধুরা। সকলের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ সপ্তাহান্তের শুভেচ্ছা রইলো।।

সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

রূপক রায়-এর কলাম ( আঠারো )


রূপক রায়-এর কলাম ( আঠারো )

ফেসবুক থেকে       শেয়ার করেছেন     প্রণব কুমার কুণ্ডু


প্রণব কুমার কুণ্ডু



মুসলমানরা যে রাধা প্রসঙ্গ টেনে কৃষ্ণ চরিত্রকে কলুষিত ক’রে এবং হিন্দুদেরকে হেয় করার চেষ্টা করে, সেই সুযোগ কিন্তু তাদেরকে তৈরি করে দিয়েছি আমরাই; এজন্যই আমার অনুরোধ-
হরিবাসর বা হরিসভার নামে পদাবলী কীর্তন বন্ধ করুন; কারণ, এটা হিন্দু ধর্মকে ধ্বংস করার একটি চলমান প্রসেস :
পদকীর্তন বা পদাবলী কীর্তন মানেই রাধা-কৃষ্ণের প্রেম, আর সেখানেই- নৌকা বিলাস, রাধার মান ভঞ্জন, রাসলীলা ইত্যাদি ইত্যাদি পালার নামে কৃষ্ণের লাম্পট্য ও রাধার পরকীয়া প্রেমের বর্ণনা। এর মাধ্যমে আমরা সমাজকে কী শিক্ষা দিচ্ছি ? পুরুষদেরকে এই শিক্ষা দিচ্ছি যে, তোমরা পরকীয়া প্রেম শুরু করো, যেহেতু তোমাদের ভগবান পরকীয়া প্রেম করে গেছে; আর মহিলাদেরকে এই শিক্ষা দিচ্ছি যে, তোমরা তোমাদের স্বামীর পরকীয়া প্রেমকে মেনে নাও। এ্ থেকে সমাজের কী মঙ্গল হতে পারে ? অথচ এই সব হরিবাসরের পেছনে, দেশে, প্রতি বছর হিন্দুদের খরচ হচ্ছে কোটি কোটি টাকা; যার পুরোটাই শুধু অপচয় নয়, সমাজ ধ্বংসের একটা অনুঘটক।
যারা আমার পুরোনো পাঠক, তারা জানেন যে, হিন্দু ধর্মে রাধা কৃষ্ণের প্রেম বলে কিছু নেই। তাই হরিবাসরের নামে এই পদাবলী কীর্তনের আমি ঘোর বিরোধী, আমি চাই এই মূহুর্ত থেকে সারা দেশে এটা বন্ধ হোক এবং এর বিপরীতে নামকীর্তন চলুক। কিন্তু নামকীর্তনেরও একটি পদ্ধতিগত সমস্যা আমাদের ধর্মগুরুরা সৃষ্টি করে রেখে গেছেন; সমস্যাটি হলো-এই নামকীর্তন নাকি একবার শুরু হলে অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ করা যায় না বা যাবে না। জানি না, এই নির্দেশ তারা কোথা থেকে পেয়েছে ? কিন্তু আমার গবেষণায়, এই রকম নির্দেশ আমি আজ পর্যন্ত কোথাও পাই নি, পেলেও তা ভেঙ্গে ফেলবো; কারণ, যা সামাজিক বাস্তবতাকে স্বীকার করে না এবং যার মাধ্যমে সমাজের মঙ্গল না হয়ে অনিষ্ট হয় তা কোনো ধর্ম নয়, তাই সেগুলো আমি মানি না।
অনুষ্ঠান হয় মানুষের জন্য এবং অনুষ্ঠানগুলো সেভাবেই সাজানো উচিত যাতে মানুষ সেগুলোকে পূর্ণরূপে নিতে পারে বা তার সবটুকু বিষয় ঠিক মতো বুঝতে পারে। যেহেতু নামকীর্তন একবার শুরু হলে আর বন্ধ করা যায় না, সেহেতু দেখা যায়, শেষ রাতে, শ্রোতা-দর্শক ঘুমে ঢুলু ঢুলু করছে, কেউ বা নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে না পেরে ঘুমিয়েই পরেছে, কিন্তু তবুও চলছে নাম কীর্তন; এই ধরণের অনুষ্ঠানের মানে কী ?
এরপর যা ঘটে- সারারাত জেগে অনুষ্ঠান দেখার ফলে, পরদিন কেউ আর কোনো কাজে যেতে পারে না, গেলেও ঘুমে ঢুলতে থাকে, ফলে স্বাভাবিক শ্রম ঘণ্টা নষ্ট হয় এবং ব্যবসা বাণিজ্য ও অফিসের কাজে মারাত্মক ক্ষতি হয়, আর যারা সেই ক্ষতি করতে চায় না, তাদেরকে বাধ্য হয়ে সেই সব অনুষ্ঠান মিস করতে হয়। এভাবে যে এলাকাতেই এই ধরণের হোল নাইট অনুষ্ঠান হোক না কেনো, সেই এলাকাতেই একটা বাজে প্রভাব পড়ে বা পড়তে বাধ্য। এছাড়াও নানা কারণে যারা রাতে ঘুমাতে চায়, তারা এলাকার অনুষ্ঠানের মাইকের সাউন্ডসহ নানা কারণে রাতে ঠিক মতো ঘুমাতেও পারে না, ফলে এটা তখন কারো কারো কাছে ধর্মীয় অনুষ্ঠান না হয়ে ধর্মীয় যন্ত্রণায় পরিণত হয়। কিন্তু ধর্মীয় অনুষ্ঠান হওয়ার ফলে কেউ মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারে না; কিন্তু এই ধরণের অনুষ্ঠান নিয়ে ভেতরে ভেতরে অসন্তোষ কাজ করে, যে অসন্তোষ সমাজের জন্য ক্ষতিকর।
আমার মত হচ্ছে, এই ধরণের কর্মবিনাশী অনুষ্ঠান বন্ধ করে তাকে কর্মবান্ধব করে সাজাতে হবে। যেকোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানই হোক না কেনো, তা কোনোভাবেই সারারাত ধরে চালানো যাবে না; অনুষ্ঠান শুরু হবে সন্ধ্যায় এবং শেষ হবে, খুব বেশি হলে রাত ১২ টার মধ্যে। তারপর লোকজন গিয়ে ঘুমাবে, পরদিন যে যার মতো কর্ম করবে এবং কর্ম শেষ করে সন্ধ্যায় আবার অনুষ্ঠান স্থলে হাজির হয়ে অনুষ্ঠান আস্বাদন করবে। এভাবে- একদিন, দুইদিন বা টাকার সামর্থ্য অনুযায়ী তিন চার দিনের অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করতে হবে। আগেই বলেছি, কোনোভাবেই পদাবলী কীর্তন করা যাবে না এবং নামকীর্তনও একবার শুরু হলে তা আব বন্ধ করা যাবে না, এই ধরণের অবাস্তব থিয়োরি বাদ দিয়ে, কিছু সময় ধরে কীর্তন করতে হবে এবং কিছু সময় ধরে চালাতে হবে আলোচনা অনুষ্ঠান, তাহলেই শুধু হবে হিন্দু সমাজের মঙ্গল।
কারণ, শুধু নামকীর্তনে মানুষের পারলৌকিক কল্যান হতে পারে, কিন্তু ইহলৌকিক কল্যান কিছুই হয় না। এর কারণ, নামকীর্তনে জ্ঞানমূলক কোনো কিছু থাকে না, তাই সমাজে জ্ঞানের চর্চা হয় না, কিন্তু জ্ঞানের চর্চা ছাড়া কোনো সমাজ টিকে থাকতে পারে না। একারণেই মুসলমানরা প্রতিটি পাড়ায় বা মসজিদ মাদ্রাসায় বছরে একবার করে হলেও ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করে, উদ্দেশ্য আর কিছুই নয়, মুসলমানদের মধ্যে এবং ক্ষেত্র বিশেষ হিন্দুদের মধ্যেও ইসলামিক জ্ঞানের সঞ্চার করা। এসব কারণেই অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো কোনো হিন্দু, হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে যতটুকু জানে, তার চেয়ে বেশি জানে ইসলাম সম্পর্কে। ওয়াজ মাহফিলের মঞ্চের সামনে মুসলমানদের উপস্থিতি খুব বেশি না হলেও, মুসলমানদের এই ধরণের ওয়াজ মাহফিল যে একেবারে বৃথা যায়, তা নয়; বছরের পর বছর ধরে মিথ্যা শুনতে শুনতে কোনো কোনো হিন্দু বিভ্রান্ত হয় এবং কেউ কেউ ইসলাম গ্রহনও করে ফেলে, এরকম কয়েকটি ঘটনা আমি জানি।
মুসলমানদের এই ধরণের জ্ঞান চর্চা মূলক ওয়াজ মাহফিল মূলত হিন্দু সমাজের উপর এক ধরণের সূক্ষ্ম ইসলামিক আগ্রাসন। এই আগ্রাসনের পাল্টা হিসেবে আমাদেরকেও ধর্মীয় সভা করতে হবে এবং হিন্দু ধর্মীয় জ্ঞান সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে, তাহলেই বন্ধ হবে সমাজের ক্ষয়। কিন্তু শুধু মাত্র ধর্মীয় সভা করে হিন্দুদেরকে সেখানে পাইকারী দরে আকৃষ্ট করা যাবে বলে মনে হয় না, কারণ আত্মগর্বী হিন্দুরা প্রায় প্রত্যেকেই নিজেকে খুব বড় ব’লে ভাবে; তাই নিজে কিছু না জানলেও অন্যের কাছে জ্ঞানের কথা শোনাকে তারা নিজেদের জন্য অপমানজনক বলে মনে করে!
সবাই যে এমন- তা নয়, কিন্তু কোনো অনুষ্ঠান করতে হলে তাতে সব ধরণের লোককেই আনার চিন্তাভাবনা করে অনুষ্ঠান সাজাতে হবে। এজন্যই রাখতে হবে নামকীর্তন ও আলোচনা সভা। কিছু সময় ‘হরে কৃ্ষ্ণ’ গান হবে, তারপর কিছু সময় ধরে হবে আলোচনা সভা; এভাবে অনুষ্ঠানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। হরে কৃষ্ণ গান এক্ষেত্রে কাজ করবে বিজ্ঞাপন হিসেবে, আর আলোচনা সভার জ্ঞান হবে মূল প্রোডাক্ট, যা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া ই হবে ঐ অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য। মাঝে মাঝে আমি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করি। একবার এক অনুষ্ঠান শেষে একজন আমাকে বললো, লাখ লাখ টাকা খরচ করে হরিবাসর করে যে জ্ঞান লাভ হয় না, আজকে, আপনার দেড় ঘণ্টার বক্তৃতায় তার চেয়ে অনেক বেশি জ্ঞান লাভ হলো, আপনাকে ধন্যবাদ।
কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে সমাজে যে ধারা চলে আসছে, তা একদিনে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, এই পরিবর্তন ঘটাতে হবে আস্তে আস্তে। প্রথমে সবাই পদাবলী বা লীলা কীর্তনের বিরুদ্ধে একটা শক্ত অবস্থান নেন। নিজের এলাকায় পদাবলী বা লীলা কীর্তনের হরিবাসর বন্ধ করে নামকীর্তন চালু করুন এবং অন্য এলাকা থেকে পদাবলী কীর্তনের উদ্দেশ্যে হরিবাসরের জন্য চাঁদা নিতে এলেও তা দেওয়া বন্ধ করুন এবং নামকীর্তন চালু করতে বলুন। এভাবে হিন্দু সমাজের অবক্ষয়টা প্রথমে বন্ধ হবে। তারপর নামকীর্তন একবার চালু হয়ে গেলে একে সংস্কার ক’রে উপরে আমি যেভাবে বললাম, সেভাবে নাম কীর্তন ও আলোচনা সভার সিস্টেম চালু করুন, যাতে লোকজন দুচারটা জ্ঞানের কথা বলতে পারে এবং শুনতে পারে।
আমি অনেক ভেবে দেখেছি, এভাবেই হবে হিন্দু সমাজের মঙ্গল এবং এটাই সমাজ রক্ষার একমাত্র পথ।
বর্তমানে যারা হিন্দু ধর্ম নিয়ে কাজ করে, তারা শাস্ত্র সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করার চেয়ে গুরুত্ব দেয় গান-বাজনা-কীর্তন এবং খোল-করতাল-হারমোনিয়াম বাজানো শেখার দিকে এবং যখনই এতে কিছু দখল এসে যায়, তখনই ধুতি-ফতুয়া প’রে কপালে লম্বা করে তিলক লাগিয়ে নিজেকে মহাগুরু হিসেবে তুলে ধ’রে অনুষ্ঠানের মধ্য গিয়ে গানের সাথ শুরু করে কান্নাকাটি বা নাচানাচি। মনে রাখবেন, এটা কোন ধর্ম নয়, এটাযাত্রাপালার মতো বিনোদন এবং এই একইরকম বিনোদন হচ্ছে যেকোনো ধরণের বারোয়ারি পূজা, যাতে পুরোহিত তার মতো ক’রে পূজা ক’রে চলে যায়, আর আমরা সাউন্ডবক্সে গান বাজানো এবং প্রসাদ ও খিচুড়ির আয়োজন এবং তা বিলি বন্টন ও খাওয়া-দাওয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এগুলো কোনো ধর্ম নয়, ধর্ম হচ্ছে- শাস্ত্র জ্ঞান অর্জন, সেই জ্ঞান অন্যদেরকে প্রদান এবং একনিষ্ঠ মনে একা বা সম্মিলিতভাবে পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা।
যতদিন এই ফরম্যাটে হিন্দু সমাজ রূপান্তরিত না হচ্ছে বা না হবে, ততদিন হিন্দু সমাজের ক্ষয় কেউ রোধ করতে পারবে না। এভাবে চলতে থাকলে- লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকার মন্দির আর আশ্রম, বর্তমানের দর্শনীয় স্থান আর ভবিষ্যতের মসজিদ মাদ্রাসা হবে। কারণ, সঠিক জ্ঞানের অভাবে, হিন্দু ধর্মীয় কালচার যদি আপনার সন্তান বা আগামী প্রজন্ম পালন না করে তাহলে হিন্দু সমাজ টিকে থাকবে কিভাবে ? আর ঐ মন্দির বা আশ্রম কী কাজে লাগবে, আর কে তার তত্ত্বাবধান করবে ? কিন্তু ইসলাম তো আর বিলুপ্ত হবে না, তাই তখন মুসলমানরা সেগুলো দখল করে মসজিদ আর মাদ্রসায় রূপান্তরিত করবে, আর সেগুলোতে হয়তো- আমাদেরই আগামী প্রজন্ম নামাজ পড়বে বা আরবি শিখবে। তাই হিন্দু ধর্ম ও কালচারকে বাঁচাতে হলে আমাদের সন্তান অর্থাৎ আগামী প্রজন্মকেকে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে এবং এমন একটা ব্যবস্থা চালু করতে হবে যাতে, অটোমেটিক্যালি সেই শিক্ষা পরবর্তী প্রজন্মতে ট্রান্সফার হতে পারে, তাহলে আমরা না থাকলেও আমাদের শিক্ষা থাকবে এবং তা আগামী সকল প্রজন্মকে পথ দেখিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবে, যাতে টিকে থাকবে হিন্দু ধর্ম ও হিন্দু সমাজ।
জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।
💜 জয় হোক সনাতনের 💜

রূপক রায়-এর কলাম ( সতেরো )


রূপক রায়-এর কলাম ( সতেরো )


ফেসবুক থেকে শেয়ার করেছেন : প্রণব কুমার কুণ্ডু



প্রণব কুমার কুণ্ডু




কোরান রিসার্চ করেই নাকি বিজ্ঞানীরা সব আবিষ্কার করে ! ?
ছোটবেলা থেকেই এই কথাটা শুনতে শুনতে কান পচে গেছে যে, কোরান রিসার্চ করেই বিজ্ঞানীরা সব কিছু আবিষ্কার করেছে! স্কুলের স্যার থেকে শুরু করে বড় বড় মুসলমানদের মুখে এই কথা শুনি, কম বুদ্ধি নিয়ে তো সেগুলো আর অবিশ্বাস করতে পারি না। ভাবতাম, হলে হতেও পারে। এই বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলা নিয়ে বড় হওয়ার পর যখন জ্ঞান-বুদ্ধি একটু বাড়লো, তখন বিজ্ঞানীদের আবিষ্কারের পেছনে কোরানের ভূমিকা রিসার্চ করে দেখলাম যে, এর চেয়ে বড় মিথ্যা মনে হয় পৃথিবীতে আর একটাও নেই। এই মিথ্যাটাকে ধরার পর, মনে নতুন প্রশ্ন জগলো যে, তাহলে কেনো মুসলমানরা তাদের একটি সম্মানিত ধর্ম গ্রন্থ নিয়ে এমন মিথ্যাচার করে থাকে, এর কী ই বা প্রয়োজন ?
এর সমাধান হিসেবে যেসব বিষয় সামনে এলো, তা হলো- ২০০১ সালে লাদেনের টুইন টাওয়ার হামলার আগে পৃথিবীর ৯৯.৯৯% অমুসলিম কোনো দিন কোরান পড়া দূরে থাক, ছুয়েঁও দেখে নি; আর ৯৫% অনারবীয় মুসলমান কোনোদিন মাতৃ ভাষাতে কোরান পড়ে তা বোঝার চেষ্টা করে নি আসলে কোরানে কী লেখা আছে। মুসলমানরা যাতে মাতৃভাষায় কোরান পড়ে বোঝার চেষ্টা না করে, সেজন্য কিছু ধান্ধাবাজ সিনিয়র মুসলমান, ইসলামকে টিকিয়ে রাখার জন্য মুসলিম সমাজে এই প্রোপাগান্ডা চালিয়েছে এবং এখনও চালায় যে, বাংলায় (বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে) কোরান পড়লে কোনো ছোয়াব হবে না, কোরান পড়লে পড়তে হবে আররীতে; কারণ, এক একটা আরবী অক্ষরে ৭০টা করে নেকি। তখন মুসলমানরা চিন্তা করে ছোয়াবের জন্যই তো কোরান পড়া, হুজুররা যে বলছে, বাংলায় কোরান পড়লে ছোয়াব হবে না, তাহলে বাংলায় কোরান পড়ে লাভ কী ? এর চেয়ে আরবীতে পড়াই ভালো।
এভাবে বাংলার মুসলমানরা ১২০০খ্রিষ্টাব্দ থেকে ৮০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তোতা পাখির মতো কোরান প’ড়ে আসছে, কিন্তু ৯৫% বাঙ্গালি মুসলমান ১১৪ টা সূরার মধ্যে একটা সূরারও পরিপূর্ণ অর্থ জানে না । এমনকি প্রতিদিনের ৫ ওয়াক্ত নামাজে তারা যে ছোট ছোট ৫/৬ টি সূরা আবৃত্তি করে, তার মধ্যে যে ‘সূরা লাহাব’ এ, লাহাব নামে এক ব্যক্তিকে গালাগাল করা ও অভিশাপ প্রদান করা হয়, সেটাও জানে না প্রায় ৯০% মুসলমান। এই বিষয়টি জানতে পেরেই এক মুসলমান ইসলাম ত্যাগ করেছে, নিচে দেখুন তার কমেন্ট-
Hani Kafir: আমি প্রাক্তন মুছলিম, কারণ ভাবতেই হাসি পায় যে, আল্যা আস্ত একটা সুরা জুড়ে শুধু আবু লাহাবকে অভিশাপ দিয়েছে।
এই বিষয়টি উপলব্ধি করলেই বোঝা যায়, ইসলামকে টিকিয়ে রাখার জন্য কেনো মুসলামানদেরকে মাতৃভাষায় কোরান পড়তে নিরুৎসাহিত করার প্রয়োজন হয় বা হয়ে পড়েছিলো। আজকে, যেসব মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া ব্লগাররা ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলছে, যেমন- আবুল কাশেম, এম.এ খান, সানিউর রহমানসহ আরো অনেকে, তারা কিন্তু কোরান হাদিস বুঝে পড়েই ইসলাম ত্যাগ করেছে এবং এই ঘটনাটা ঘটেছে লাদেনের টুইন টাওয়ার হামলার পর, এই কৌতূহল থেকে যে আসলে কোরানে কী লেখা আছে, কিসের জন্য জিহাদীরা নিজের জীবনকে উড়িয়ে দিচ্ছে।
বেশির ভাগ মুসলমান এবং প্রায় সব অমুসলিমদের কোরান সম্পর্কে এই অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে ধান্ধাবাজ মুসলমানরা শত শত বছর ধরে এই প্রচারণা চালিয়ে এসেছে যে, ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলাম কখনো সন্ত্রাসকে সমর্থন করে না, কোরান রিসার্চ করেই বিজ্ঞানীরা সব কিছু আবিষ্কার করেছে, মুহম্মদ ছিলো এক মহান দয়ালু ব্যক্তি যার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েই সবাই ইসলাম গ্রহণ করেছে, ইসলামে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা ইসলামে নিষেধ, নবী বলেছে- তোমার ধর্ম তোমার, আমার ধর্ম আমার- ইত্যাদি ইত্যাদি সব মন ভুলানো আগাগোড়া মিথ্যা কথা; উদ্দেশ্য একটাই, এসব শুনে শুনে যেন অমুসলিমরা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং আস্তে আস্তে ব্রেইন ওয়াশের মাধ্যমে জীবনের কোনো এক পর্যায়ে গিয়ে ইসলাম গ্রহন করে মুসলমান হয়ে যায়।
উপরে যেসব বললাম তার মধ্যে-“ইসলামে কোনো জোর জবরদস্তি নেই, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা ইসলামে নিষেধ, নবী বলেছে, তোমার ধর্ম তোমার, আমার ধর্ম আমার” এই কথাগুলো যে কোরানে নেই, তা কিন্তু নয়, এই কথাগুলো কোরানে আছে; কিন্তু মুহম্মদ এই কথাগুলো বলতে বাধ্য হয়েছিলো মক্কায় থাকতে, যখন তার শক্তি কম ছিলো, কিন্তু যখন মুহম্মদ মদীনায় গিয়ে শক্তিশালী হয়েছে তখনই সে আগের কথাগুলোকে বাতিল করে বলেছে,
“ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম চাইলে কখনো তা গ্রহণ করা হবে না”- (কোরান, ৩/৮৫)
“তোমরা তাদের সাথে লড়াই করতে থাকো, যতক্ষণ না ফেতনা চুড়ান্তভাবে শেষ হয়ে যায় ও দ্বীন কেবলমাত্র আল্লার জন্য নির্দিষ্ট না হয়”- (কোরান, ২/১৯৩)
“তিনি সেই আল্লাহ যিনি তার রসূলকে হেদায়াত ও সত্য দ্বীন সহ পাঠিয়েছেন, যেন তাকে সমগ্র দ্বীনের উপর জয়ী করতে পারেন”- (কোরান, ৪৮/২৮)
“নামায কায়েম কর, যাকাত দাও এবং রসূলের আনুগত্য কর। আশা আছে যে তোমাদের প্রতি রহম করা হবে”- (কোরান, ২৪/৫৬)
এখন আপনিই চিন্তা করুন যে কোরানে বলা হচ্ছে,
“ধর্মের ব্যাপারে কোনো জোর জবরদস্তি নাই”- (কোরান, ২/২৫৬)
“তোমার ধর্ম তোমার, আমার ধর্ম আমার”- (কোরান, ১০৯/৬)
“নিজেদের দ্বীনের ব্যাপারে কোনো বাড়াবাড়ি করো না”-(কোরান, ৪/১৭১)
সেই কোরানে কিভাবে বলা হয় যে, ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম চাইলে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না; তাদের সাথে ততক্ষণ লড়াই করতে থাকো যতক্ষণ না তারা ইসলাম গ্রহণ করে; আল্লা, রাসূলকে পাঠিয়েছে সকল ধর্মের উপর তাকে জয়ী করার জন্যই এবং মুসলমান হও তাহলে তোমাদের প্রতি রহম করা হবে- এই কথাগুলো উপরের ঐ কথাগুলোর পক্ষে যায়, না বিপক্ষে যায় ?
মূলত ইসলাম যেমন সন্ত্রাসের খনি, তেমনি মুসলমানরা হলো মিথ্যার পাহাড়; এই মিথ্যা দিয়ে তারা ইসলামের জিহাদী সন্ত্রাস আড়াল করে অমুসলিমদেরকে ধোকা দেওয়ার জন্য তারা যেমন বলে ইসলাম শান্তির ধর্ম, তেমনি ইসলামের মূল গ্রন্থ কোরানকে মহান করে তোলার জন্য বলে, কোরান রিসার্চ করেই বিজ্ঞানীরা সব কিছু আবিষ্কার করেছে, যেন কোরান আসার আগে পৃথিবীতে বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানী ব’লে কিছুই ছিলো না!
কোরান রিসার্চ করেই বিজ্ঞানীরা সব কিছু আবিষ্কার করেছে বা করে, মুসলমানদের এটা বিশ্বাস করা ও বলার পেছনে কাজ করে এক গভীর মনস্তাত্ত্বিক কারণ; কারণটা হলো- শুরু থেকেই মুসলমানরা কোরান হাদিসের বাইরে কিছু পড়ে নি। আর যারা আরবের বাইরের মুসলমান, তারা ইসলাম গ্রহণের পর, শুধু আরবীতে কোরান হাদিস পড়েছে এবং সেসবের মানে যে কী, তা বিশ্বাস করেছে মাদ্রাসার হুজুররা যা বলেছে, তা। এই মুসলমানরা যখন ইউরোপীয় সভ্যতার সংস্পর্শে আসে এবং স্কুল, কলেজে পড়াশুনা শুরু করে, তখন তারা দেখতে পায় জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য-সস্কৃতিতে কোথাও মুসলমানদের কোনো অবদান দূরে থাক, নাম নিশানা নেই। একটা জাতির জন্য এটা একটা গভীর মনোবেদনা, হতাশা ও অতৃপ্তির কারণ যে, সভ্যতার আলোয় তারা একটা মোমবাতিও জ্বালাতে পারে নি।
চতুর এবং ধান্ধাবাজ মুসলিমরা যখন এটা বুঝতে পারলো, তখন তারা এটাও উপলব্ধি করতে পারলো যে, অদূর ভবিষ্যতে সমগ্র মুসলিম জাতি এটা নিয়ে নিদারুন অতৃপ্তি এবং হতাশায় ভুগবে, যেটা ইসলামের টিকে থাকার জন্য একটা বিপদজনক টার্ন হয়ে দাঁড়াবে। সেই সাথে চতুর ও ধান্ধাবাজ মুসলমানরা এটাও বুঝতে পেরেছিলো যে, এই হতাশা কাটিয়ে উঠার জন্য যদি মুসলমানরা জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা শুরু করে, তাহলেও ইসলামের পতন অনিবার্য; কারণ, মৃত্যুর ভয়ে ঐসব জ্ঞানী মুসলমানরা ইসলাম ত্যাগ না করলেও, তারা হয়তো নামে মুসলমান থাকবে, কিন্তু ইসলামের তারা কিছুই মানবে না; বাস্তবে হয়েছেও তাই, যে সব মুসলমান, অমুসলিমদের দেখাদেখি পড়াশুনা করে জ্ঞান বিজ্ঞানে এগিয়ে গেছে, তারা কিন্তু ইসলামকে আর ---- দিয়েও মানে না। তাই জ্ঞান বিজ্ঞানের কবল থেকে ইসলামকে রক্ষা জন্য চতুর এবং ধান্ধাবাজ মুসলমানরা সাধারণ গবেট মুসলমানদেরকে এই ট্যাবলেটে খাওয়ায় যে,
“মুসলমানদের মধ্যে কোনো বিজ্ঞানী নেই তো কি হয়েছে, এটা নিয়ে মুসলিম জাতির অতৃপ্তিতে ভোগা এবং হতাশার কোনো কারণ নেই; কারণ, বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত যা কিছু আবিষ্কার করেছে, সব কিছু তারা করেছে- কোরান রিসার্চ করেই। কারণ, কোরান একটি মহাবিজ্ঞানময় গ্রন্থ।”
ব্যস, হয়ে গেলো; মুসলমানরা তো কোনোদিন পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর কিছু বিশ্বাস করে নি, তারা শুরু থেকেই সব কিছু শুনেই বিশ্বাস করে আসছে, এই বিশ্বাসের ট্যাবলেটও তারা ভালোই খেয়েছে, আর ৭ থেকে শুরু করে ৭০ বছরের বুড়ারা পর্যন্ত সুযোগ পেলেই রেকর্ড বাজিয়ে চলেছে, কোরান রিসার্চ করেই বিজ্ঞানীরা সব কিছু আবিস্কার করেছে, কোরান রিসার্চ করেই বিজ্ঞানীরা সব কিছু আবিস্কার করেছে; আর এটা অনবরত শুনতে শুনতে অনেক অমুসলিমও হয়তো বিশ্বাস করে ফেলেছে যে, হলে হতেও পারে, যেমন আমিও শিশুকালে বিশ্বাস করেছিলাম। কিন্তু মানুষ যে চিরদিন শিশু থাকবে না, একদিন তারা তথ্যজ্ঞানে বড় হবে, বড় হয়ে সব কিছুকে যাচাই করতে শিখবে এবং যাচাই করে বিশ্বাস করবে, এটা বালির উপর প্রাসাদ গড়া মুসলমানরা হয়তো বুঝতে পারে নি বা জানতো না, তাই জ্ঞান বিজ্ঞানের ধাক্কায় ইসলামের এখন যায় যায় অবস্থা।
মুসলমানরা যাতে জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা না করে সেজন্য মুহম্মদ শুরু থেকেই ছিলো খুব কেয়ার; কারণ, মুহম্মদও জানতো মুসলমানরা যখন অন্ধবিশ্বাস ছেড়ে সব কিছুকে যুক্তি দিয়ে বিচার করা শুরু করবে, তখন তার সব আজগুবি থিয়োরি এমনিই ধ্বসে পড়বে, তাই সে বলে গেছে,
“তোমরা নিজেদেরকে নব উদ্ভাবিত বিষয় সমূহে থেকে নিজেদেরকে দূরে রেখো, কেননা, প্রত্যেক নব উদ্ভাবিত বিষয়ই বিদআত, আর প্রত্যেক বিদআত হচ্ছে ভ্রান্তি বা ভুল পথ।”- তিরমিযি হাদিস
এখানে মুহম্মদ পরিষ্কার করে বলে দিলো যে, আমি যা বলে গেলাম, তার বাইরে নতুন কোনো বিষয় নিয়ে কেউ কোনোদিন চিন্তা-ভাবনা করবে না, নতুন কোনো বিষয় নিয়ে ভেবেছো তো বেহেশতের সেভেনটি টু হুর এবং তাদের সাথে ইটিশ ফিটিশ মিস।
আমার প্রত্যেকটা পোস্টেই দুচারটা বেওয়ারিশ কুকুর এসে ঘেউ ঘেউ করে, এখানেও তারা বলবে, না, নবী একথা বলতেই পারে না, বরং নবী নির্দেশ দিয়েছে,
“জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজন হলে সুদূর চীন দেশে যাও।”
যারা এটা বলে কমেন্টে মল মূত্র ত্যাগ করার চিন্তা করছে, তাদেরকে বলছি, শোন, আমি হলাম ইসলামকে ভেজে খাওয়া লোক, সেই ভাজতে গিয়ে দেখেছি এটা একটা জাল হাদিস, আর এটাকে, কে কে জাল প্রমান করেছে, সেটাও বলে দিতে পারি, শুনবি, শুনে রাখ- একজন নয়, তিন জন- ইবনে জাওযি, ইবনে হিব্বান এবং নাসিরুদ্দিন আলবানি।
মূর্খ মুসলমানদেরকে প্রাথমিকভাবে, কোরান রিসার্চ করেই বিজ্ঞানীরা সবকিছু আবিষ্কার করেছে, এটা গেলানোর পর, চতুর এবং ধান্ধাবাজ মুসলমানদের মনে হলো, শুধু এটা বলে থেমে থাকলেই হবে না, এর পেছনে কিছু তথ্য প্রমানও হাজির করতে হবে; ব্যস, শুরু হয়ে গেলো কোরানে বিজ্ঞান খোঁজার অভিযান। সৌদি বাদশা, তার পারিবারিক চিকিৎসক, ফ্রান্সের মরিস বুকাইলিকে দিয়ে লিখালো, ‘কোরান বিজ্ঞান বাইবেল’ নামে একটি বই। এই বই প্রকাশ হওয়ার পর বাংলাদেশর এর কি কদর ! যেন এমন একটি মিথ্যা বই লিখলেই ‘যৌন ও সন্ত্রাসময় কোরান’ বিজ্ঞানে হাবুডুবু খাবে ? এরপর লেখা হলো ‘নেয়ামুল কোরান’, যাতে দেখানো হলো কোরানের কোন আয়াত থেকে বিজ্ঞানীরা কোন সূত্র নিয়ে কোন আবিষ্কার করেছে! কিন্তু এসব করে কিছুসময় অমুসলিমদেরকে ধোকা দেওয়া ছাড়া মুসলমানদের আর কোনো লাভ হয় নি। মুসলমানরা যে অন্ধকারে ছিলো সেই অন্ধকারেই আছে, আর মাঝখান থেকে এসব মিথ্যাচার করার জন্য তারা এখন ভীষণ সমালোচনার সম্মুখীন।
একসময় আমি একটি স্কুলে পড়াতাম, সেই স্কুলের এক ক্লাস থেকে অন্য ক্লাসের টিচারের কথা বার্তা শোন যেতো। তো শুনলাম এম.এ পাশ এক টিচার, স্টুডেন্টদের উদ্দেশ্যে বলছে, সেই বিখ্যাত বাণী, ‘কোরান রিসার্চ করেই বিজ্ঞানীরা সব কিছু আবিষ্কার করেছে।’ শুনে আমার মনে হলো, বাহ, মুসলমানদের জন্য বিজ্ঞানী হওয়া তো খুব সহজ! একটা মাত্র বই পড়েই তো তারা বিজ্ঞানী হতে পারে। অমুসলিম বিজ্ঞানীদের জন্য কোরান রিসার্চ করা তো খুবই সময়ের ও কষ্টসাধ্য ব্যাপার; কারণ, তাকে কোরান রিসার্চ করতে হলে আলিফ, বা, তা, সা শিখতে হবে, আরবি ব্যাকরণ শিখতে হবে, তারপর সে আরবিতে কোরান পড়ে তাকে রিসার্চ করতে পারবে, সেই দিক থেকে মুসলমানরা তো অনেক এগিয়ে, কোনো আরবি শব্দের অর্থ তারা না জানলেও- আলিফ, বা, তা, সা তারা জানেই। মনে হয়েছিলো ক্লাস শেষ হলে তাকে বলবো, বিজ্ঞানী হওয়ার এমন চান্স মিস করছেন কেনো ? কোরান রিসার্চ করেই যদি বিজ্ঞানীরা সব কিছু আবিষ্কার করে, তাহলে আপনি বসে আছেন কেনো, এখনই কোরান রিসার্চ শুরু করে দিন আর কিছু দিনের মধ্যেই বিজ্ঞানী হয়ে যান। পরে মনে হলো, দূর, এসব মূর্খের সাথে তর্কে গিয়ে লাভ নেই। হতে পারে এরা বি.এ / এম.এ ডিগ্রীধারী তথাকথিত শিক্ষিত, কিন্তু এরা তো এক একজন আল্টিমেট মূর্খ; কারণ, পাশ করার খাতিরে এরা পরীক্ষায় খাতায় লেখে, “পৃথিবী গোলাকার”, কিন্তু এটা কোরান বিরোধী হওয়ায় মনে মনে বলে, আল্লা মাফ করো, আমি বিশ্বাস করি, পৃথিবী সমতল। এই তথ্যে যদি ধাক্কা খান, তাহলে দেখে নিন নিচের দুটি আয়াত,
“ভূপৃষ্ঠকে আমিই বিস্তিীর্ণ করে বিছিয়েছি। আর আমি উত্তম সমতল রচনাকারী”- (কোরান, ৫১/৪৮)
“বস্তুত আল্লা ভূতলকে তোমাদের জন্য শয্যার ন্যায় সমতল করে বিছিয়ে দিয়েছেন”- (কোরান, ৭১/১৯)
ঘেউ ঘেউকারীরা হয়তো এ প্রসঙ্গে বলবে, না, এটা কোরানের সঠিক ব্যাখ্যা নয়, এই আয়াতের পূর্বাপর উল্লেখ করা হয় নি, তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, হিম্মত থাকলে এই আয়াতের সঠিক ব্যাখ্যা উল্লেখ কর, না হলে দূরে গিয়া মর।
শুরুতেই বলেছি, ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি- কোরান রিসার্চ করেই বিজ্ঞানীরা সব কিছু আবিষ্কার করেছে, যদিও কয়েক বছর পর থেকেই এই কথা আর বিশ্বাস হতো না, কিন্তু কোনো মুসলমান এই কথা বললে কী উত্তর দেবো সেটাও খুঁজে পেতাম না বা বুঝতে পারতাম না। অবশেষে একদিন হুমায়ূন আজাদের এক বইয়ে পেলাম এর সমাধান। হুমায়ূন আজাদ মুসলমানদের এইসব মিথ্যাচার নিয়ে ছিলেন খুবই বিরক্ত। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, বিজ্ঞানীরা কষ্ট করে যখন কোনো কিছু আবিষ্কার করে ঠিক তারপরই জ্ঞান বিরোধী মুসলমানরা প্যাঁচানো আরবি লেখার মধ্যে দেখতে পায় ১৪০০ বছর আগেই আ্ল্লা কোরানের মধ্যে সেই কথা লিখে রেখেছে, কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলার আগে তারা কেউ সেটা দেখতে পায় না। এরপর থেকে এই প্রসঙ্গে কথা উঠলেই বলতাম, বিজ্ঞানীরা বলার পর, সেটা কোরানে লিখা আছে, এই কথা না বলে ক্ষমতা থাকলে বিজ্ঞানীদের আগেই বল, তাহলে বুঝবো তোর কোরান বিজ্ঞানময়, না হলে কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করিস না। দেখতাম কোরানিক বিজ্ঞান নিয়ে চুলকানি বন্ধ হয়ে গেছে।
এতক্ষণ যা পড়লেন, সেটা লিখেছি সম্প্রতি, ২০১৬ সালে, কিন্তু এই কোরান, বিজ্ঞান, রিসার্চ ও আবিষ্কার নিয়ে ২০০৮ সালে একটা লেখা লিখেছিলাম, সেটাও দেখে নিন নিচে, জানতে পারবেন অনেক কিছু, শিখতে পারবেন আরো অনেক কথা-
অধিকাংশ মুসলমানরাই বলে থাকেন যে, কোরান রিসার্চ করেই নাকি বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর যাবতীয়বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার করেছেন এবং এখনও করে চলেছেন, ভবিষ্যতেও নাকি করবেন।কারণ কোরানের মধ্যে নাকি সবই দেওয়া আছে, এখন শুধু গবেষণা করে বের করা !নিজেদের অজ্ঞতা ও মূর্খতাকে আড়াল করার কী হাস্যকর অপপ্রয়াস ? যেসব মুসলমান এসব কথা বলে, তারাও বড়দের কাছে শুনে শুনে এসব কথা মুখস্থ করে বলে, যুক্তি দিয়ে বিচার করে বলে না। যুক্তি দিয়ে বিচার করলে তারা প্রথমেযে জিনিসটি উপলব্ধি করতে পারতো, তাহলো কোরান রিসার্চ করেই যদি বিজ্ঞানীরা সব আবিষ্কার করতো তাহলে পৃথিবীর সব না হলেও অধিকাংশ বিজ্ঞানীই জাতিতে বা ধর্মে মুসলমান হতো। কিন্তু বাস্তব অবস্থা কী ? জ্ঞান বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবস্থান কোথায় ?
মুসলমানরা উল্লেখযোগ্য কিছু করলে পত্রিকার পাতায় এরকম শিরোনাম হয় 'পৃথিবীর প্রথম মুসলিম মহিলা' বা "প্রথম মুসলমান‌" ইত্যাদি ইত্যাদি। আর এটা নিয়ে মুসলমানদের গর্বেরও সীমা থাকে না; যেন মুসলমানরা বিশাল কিছু করে ফেলেছে! কিন্তু তারা এটা ভেবে দেখে না যে, যেক্ষেত্রে তারা হয়তো প্রথম পদক্ষেপ ফেলছে, সেই একই সেক্টরে পৃথিবীর অন্যান্য জাতির লোকজন হয়তো পা ফেলেছে সেই দুই, তিনশ বা হাজার বছর আগেই। কিন্তু তাতে তাদের কোনো আত্মতৃপ্তি নেই। কারণ, তারা জানে তাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে আরো অনেক দূর।তাদেরকে উদ্ভাবন করতে হবে আরো বিস্ময়কর জিনিস; যেগুলো তৃতীয় বিশ্বের অজ্ঞ ধর্মান্ধ মুসলমানরা কিনবে, ব্যবহার করবে; আবার উল্টো তাদের গালিও দেবে নাসারা, ইহুদি, কাফের, বিধর্মী ব‌'লে ! এসব তারা জানে, শোনে, কিন্তু কিছু মনে করে না। কারণ, বৃহৎ যারা, তারা জানে যে ক্ষুদ্রদের আত্মতৃপ্তির ধরণটাই এরকম। ওরা যার পরিশ্রমের ফল ভোগ করে উল্টো তাকেই গালি দেয়। নিজেরা যে কিছু করতে পারে না তাতে ওদের আত্মগ্লানি নেই ! কী আজব ব্যাপার ?
"পৃথিবীর প্রথম মুসলিম মহিলা"র একটি ঘটনা এ প্রসঙ্গে ব‌'লে রাখি, কয়েক বছর আগে ইরানের 'শিরিন এবাদি' শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার লাভ করে। এই বিষয়টি নিয়ে মুসলিম দেশগুলোর পত্র-পত্রিকা বাড়াবাড়ি দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। ঘটনা এমন যে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার এর আগে আর কেউ পায় নি। নারী হিসেবে একমাত্র শিরিন এবাদিই পেয়েছে। তাই পুরষ্কার পাওয়ার পর প্রথমে প্রায় প্রতিদিন এবং পরে মাঝে মাঝেই পত্রিকার তার নামে নানা রকমের বানী আসতে লাগলো, যার প্রায় অধিকাংশই অন্তঃসারশূন্য। খালি কলসি যেমন জোরে জোরে বেশি দিন বাজানো যায় না তেমনি শিরিন এবাদিকেওবেশিদিন বাজানো গেলো না। তাই বছর খানেক পরথেকেই শিরিন এবাদির আর কোনো বানীচোখেই পড়লো না। কী অবাক ব্যাপার, পৃথিবীর প্রথম মুসলিম মহিলা নোবেল পুরস্কার পেয়েছে তাও আবার শান্তিতে (!), রসায়ণে নয়, পদার্থ বিজ্ঞানে নয়, চিকিৎসায় নয়, এমন কি অর্থনীতিতেও নয়, পেয়েছে শান্তিতে, তার সব বাণী এক বছরেই শেষ!
আমার বিচারে শান্তিতে নোবেল, নোবেলের মধ্যে সবচেয়ে নিম্নমানের পুরস্কার। কারণ এটা পাওয়ার জন্য দিনের পর দিন গবেষণাগারে পড়ে থাকতে হয় না, মাসের পর মাস গোসল না করায়গায়ে দুর্গন্ধ ও চুলে জট পাকিয়ে যায় না, রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটাতে হয় না, কাটাতে হয় না বছরের পর বছর ক্ষুধা কামবিহীন জীবন। এই পুরস্কার পাওয়ার জন্য মানবাধিকার নিয়ে কিছু কথা বললেই হয় (শিরিন এবাদী) অথবা দেশের স্বাধীনতার জন্য রক্তপাতহীন সংগ্রাম না করে পঁচিশ তিরিশ বছর জেলে থাকলেও হয়(নেলসন ম্যাণ্ডেলা) বা গণতন্ত্রের জন্য দশ পনেরো বছর জেলে কাটালেও হয়(অং সান সুকী) বা পরিবেশ রক্ষার জন্য দুই তিন লাখ গাছ লাগালেও হয় (এক আফ্রিকান); সেই শান্তির নোবেল পাওয়া নিয়ে কী মাতামাতি ! অব্‌শ্য শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার জন্য যে কাজটি অবশ্যই করতে হয় তাহলো দাতাগোষ্ঠিরস্বার্থ রক্ষা (ইউনুস)। এই শর্ত পুরণ না হলে আপনি যা ই করেন না কেনো শান্তিতে নোবেল আপনিকখনোই পাবেন না।
মুসলমানগেদর মধ্যে অধিকাংশ না হোক, অর্ধেকেরও কিছু কম লোক যদি যুক্তিবাদী থাকতো তাহলে কোরানকে নিয়ে এই যে মিথ্যাচার তার অবসান হয়তো হতে পারতো।কিন্তু মুসলমানদের মধ্যে যুক্তিবাদী লোকের সংখ্যা এতই কম যে, তাদের সন্ধান পেতে হলে অনুবীক্ষণ যন্ত্রের দরকার, তাও সবখানে পাওয়া যাবে একথা বলা মুশকিল। মুসলমানদের মধ্যে যে যুক্তিবাদী মানুষের অভাব এর মুল কারণও কোরান। কারণ, ইসলামের মূল কথাই হচ্ছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পন; এখানে কোনো প্রশ্ন চলে না (কোরান, ৫/১০২)। তো যেখানে প্রশ্ন চলে না সেখানে যুক্তিবাদীর জন্ম হবে কোত্থেকে ? আবার, মনে সংশয় দেখা দিলেই তবে প্রশ্নের জন্ম হয়। কিন্তু ইসলামের, বিশেষতঃ কোরানের কোনো বিষয় নিয়ে মনে সংশয় দেখা দেওয়াও ইসলামের দৃষ্টিতে ঘোরতর অন্যায় কাজ। এমন হলে সে নাকি কাফেরএ পরিণত হবে। আর ইসলামে কাফের মানেই ভয়াবহ একটা ব্যাপার। যারা কোনো দিন বেহেশ্‌ত পাবে না, ভোগ করতে পারবে না বেহেশতের হুর, গেলমানদের। এই অমুলক ভয় এবং লোভই মুসলমানদের যুক্তিবাদী হয়ে উঠার পথে প্রধান বাধা। এই গ্যাঁড়াকলে যেখানে যুক্তিবাদীর জন্মই হচ্ছে না সেখানে বিজ্ঞানীর জন্ম হবে কিভাবে? কারণ মানুষ প্রথমে যুক্তিবাদী হয়, তারপর বিজ্ঞানী হয়ে উঠে।
কোরান রিসার্চ করেই বিজ্ঞানীরা সব আবিষ্কার করেছেন- এর জবাবে আমি একজনকে বলেছিলাম, তাহলে তো পৃথিবীর সব বিজ্ঞানীই মুসলমান হতো; কারণ, মুসলমানরাই তো কোরান পড়ে সবচেয়ে বেশি। তখন সে বলেছিলো, গবেষণার একটা ব্যাপার আছে না ? আমি তখন বললাম, তাহলে তোরা গবেষণা করিস না শুধু শুধু আরবি মুখস্থ করিস ? আরওরাই যদি গবেষণা করে তো ভালো কথা, গবেষণা করেযা বলে সেটাও তো বিশ্বাস করিস না। যেমন ওরা, মানে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে বললো, পৃথিবী সূর্যের চারেদিকে ঘোরে, তোরা অস্বীকার করলি, কারণ কোরানে লেখাআছে 'সুর্যই পৃথিবীর চারেদিকে ঘোরে'। এর পক্ষে "পৃথিবী নয় সূর্য ঘোরে" নামে অবৈজ্ঞানিক বই লিখে বিজ্ঞানের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করলি, তাতে কীহয়েছে ? কোন মত প্রতিষ্ঠা পেয়েছে ? পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘোরেনা সুর্য পৃথিবীর চারেদিকে ঘোরে ?
যদিও বর্তমানে কোনো কোনো মৌলবাদী কোরানের এই ভুলকে আড়াল করার জন্য বিজ্ঞানের আবিষ্কার থেকে ধার করে সূর্যও যে ঘোরে- একথা বলছে। সূর্যও ঘোরে, এটা সত্য। কিন্তু যারা কোরানের ভাষ্যমতে "পৃথিবী নয় সূর্য ঘোরে" মতবাদে বিশ্বাসী তাদের পক্ষে কোরানের জ্ঞানে জ্ঞানী হয়ে সুর্য কিভাবে ঘোরে এটাব্যাখ্যা করাই সম্ভব নয়। এটা বোঝার জন্য টলেমীর মতবাদে বিশ্বাসী মন নিয়ে জ্যোর্তির্বিজ্ঞান পড়লে চলবে না। কোপার্নিকাসের মতবাদে বিশ্বাসীদের বইগুলো যুক্তি দিয়ে বিচার করার ক্ষমতা থাকতে হবে। এখানে বলে রাখি, যারা এখনও বিশ্বাস করে যে, "পৃথিবী নয় সূর্যই ঘোরে" তাদের কাছে ধর্মীয় মতবাদের সাপোর্ট হিসেবে টলেমীর মতবাদ একটি বড় অস্ত্র। এরা এতটাই মূর্খ ও অজ্ঞ যে, টলেমী যা বলে গেছে সেটাকেই মনে করে ধ্রুব সত্য। টলেমীর পরে আরও কত বিজ্ঞানী যে এ ব্যাপারে কত কী বলে গেলোসেদিকেকোনো নজর নেই; যেমন তাদের কাছে কোরানই সবকিছু, কোরানের বাইরে কোনোজ্ঞানই নেই ! ?
এখানে বলে রাখি, খ্রিষ্টজন্মের কয়েকশ বছর পূর্বে - পৃথিবীর প্রথম বিজ্ঞানী হিসেবে যাকে বলা হয় সেই 'থেলিস‌' এর জন্ম। সঙ্গত কারণেই আমরা ধরে নিতে পারি, তারও অনেক আগে থেকেই পৃথিবীতে অগণিত বিজ্ঞানীর আবির্ভাব ঘটেছিলো। যাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অবদান গড়ে উঠতে সাহায্য করেছে আজকের এই সভ্যতাকে। যেমন- আগুন কে আবিষ্কার করেছে তা আমরা জানি না। কত বছর আগে আগুন আবিষ্কারহয়েছে তাও মানুষের জ্ঞানাতীত। কিন্তু সভ্যতা নির্মানে ঐ নামনা জানা বিজ্ঞানীর আবিষ্কারকে কি খাটো করে দেখার অবকাশ আছে ? আমরা সবাই জানি এবং মানি যে তাকে খাটো করে দেখার কোনো অবকাশ নাই। তাহলে তিনি কি কোরান পড়ে আগুন আবিষ্কার করেছেন ? পৃথিবীতে কোরানের বয়স কত আর আগুনের বয়স কত ? কোরান নিয়ে বাড়াবাড়ি আর মিথ্যাচারের কারণেই বোধহয় হরহামেশাই আগুনে কোরান পুড়ছে।
তেমনি আদিম পৃথিবীর কোনো এক মহান বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার করেছিলো লোহা, এবং তাকে কাজে লাগিয়েপ্রভূত উন্নত করেছিলো তার সেই সময়কার সমাজের এবং উন্নতির পথ প্রশস্ত করে দিয়ে গিয়েছে আজকের সভ্যতার। কিন্তুকোরানের সুরা হাদীদে বলা হচ্ছে, "আমি অবতীর্ণ করেছি প্রচুর লৌহ যাতে রয়েছে প্রচুর শক্তি ও মানুষের কল্যান।" ( কোরান, ৫৭/২৫) তাই যদি হয় তাহলে সৃষ্টি কর্তার কাছে আমার প্রশ্ন হচ্ছে, তুমি তো সর্বজ্ঞ, লৌহ যদি তুমি অবতীর্ণ করে থাকো তাহলে তো অন্যশ‌’ খানেক মৌলিক পদার্থও অবতীর্ণ করেছো। কোরানে তাদেরকথা বললে না কেনো ? আর তাদের ব্যবহার ও ধর্ম যদি একটু বলে দিতে তাহলে তো বিজ্ঞানীদের এত হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে সেসব বিষয়ে জানতে হতো না। নাকি হযরত মুহম্মদের সময় লৌহ সম্বন্ধেই লোকজন বেশি জানতো এবং অন্যান্যমৌলিক পদার্থ সম্পর্কে জানতো না। তাই বোধহয়হযরত মুহম্মদ এই সূরার মাধ্যমে লৌহের কথাই বলেছেন, অন্য মৌলিক পদার্থের কথা বলতে পারে নি। আর মুহম্মদ লোহার মধ্যেই কেবল প্রচুর শক্তি ও কল্যান দেখতে পেয়েছিলো বোধ হয় এজন্য যে, লোহা দিয়ে তলোয়ার তৈরি করা যেতো, যা দিয়েঅমুসলিমদেরকে হত্যা করা যেতো আর তাদের ধন-সম্পত্তি লুঠ করা যেতো।
এটাই সত্য ও স্বাভাবিক যে মানুষ যা জানে তার পক্ষে তাই বলা সম্ভব।যা জানে না তা সে বলবে কিভাবে ? অন্য মৌলিক পদার্থগুলোর কথা সেই সময়ের আরবের লোকজন যেমন জানতো না তেমনি জানতো না হযরত মুহম্মদও, সেই সাথে আল্লাও! আবার মুসলমানরা বলে আল্লা নাকি সর্বজ্ঞ!আপনাদের কী অবস্থা জানি না, এসব শুনে তো আমার বেদম হাসি পায়।
জয় হিন্দ।
----------------------------------------------------------------------------------------
উপরে উল্লেখ করা একটি রেফারেন্স :
কোরান, ৫/১০২ = তোমাদের পূর্বে একদল এই ধরণের প্রশ্নাবলী জিজ্ঞেস করেছিলো, পরে তারাএসব কারণেই কুফরিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।
💜 জয় হোক সনাতনের 💜

রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

ডঃ আম্বেদকর ব্রিটিশ সরকারের ভাইসরয়ের (Viceroy) অধীন মন্ত্রীসভায় শ্রমমন্ত্রী (Labour Member) নিযুক্ত হয়েছিলেন .....


 ডঃ আম্বেদকর ব্রিটিশ সরকারের ভাইসরয়ের (Viceroy) অধীন মন্ত্রীসভায় শ্রমমন্ত্রী (Labour Member) নিযুক্ত হয়েছিলেন .....

ফেসবুক থেকে শেয়ার করেছেন : প্রণব কুমার কুণ্ডু


প্রণব কুমার কুণ্ডু





















Binod Saradar একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন৷ 


বৌদ্ধ মহামিলন সংঘ
🔵 ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ২০ জুলাই ডঃ আম্বেদকর ব্রিটিশ সরকারের ভাইসরয়ের (Viceroy) অধীন মন্ত্রীসভায় শ্রমমন্ত্রী (Labour Member) নিযুক্ত হন। ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত তিনি ওই পদে বহাল ছিলেন। ব্রিটিশ সরকারের অধীন মন্ত্রীসভার শ্রমমন্ত্রী হিসাবে তিনি যেসব কাজ করেছিলেন তার কিন্তু কোনোটাই শুধু মাত্র তপশিলি জাতি/উপজাতির মানুষের জন্য করেননি। সমস্ত জাতিবর্ণের সাধারণ খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের সামাজিক সুরক্ষার জন্য তিনি লড়াই করেছেন।
তার মধ্যে কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলোঃ-
🔹(1) Joint Labour Management Committee :- সরকার, মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণ আলোচনার জন্য আগেই আম্বেদকরের পূর্বসূরি স্যার ফিরোজ খাঁ নুনের সময়ে Tripartite Labour Conference-এ একটি Standing Labour Committee গঠন করা হয়েছিল। বম্বে সেক্রেটারিয়েটে ১৯৪৩ সালের ৭ মে আম্বেদকরের সভাপতিত্বে ওই কমিটির তৃতীয় সভায় এই কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়। এই কমিটিতে কারখানা পরিচালনায় শ্রমিকদের প্রতিনিধি রাখার সংস্থান রাখা হয়।
🔹(2) Employment Exchange :- ওই একই সভায় ভারতে প্রথম শ্রমিক-কর্মচারী নিয়োগ করার জন্য Emploment Exchange গঠন করার প্রস্তাব গৃহীত হয়। এর ফলে ইচ্ছামতো মামা-কাকার জোরে শ্রমিক-কর্মচারী নিয়োগ প্রথা বন্ধ হয়; প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ এবং আধা-দক্ষ শ্রমিক-কর্মচারী যারা Employment Exchange-এ নাম লিখিয়েছেন তাঁদের ভেতর থেকেই নিয়োগ করা বাধ্যতামূলক করা হয়।
🔹(3) Trade Union- ভারতের সর্বত্র বিভিন্ন অফিস, কলকারখানা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানে শ্রমিক ইউনিয়ন থাকলেও আইনগতভাবে সেগুলির কোনো সরকারি স্বীকৃতি ছিল না। ডঃ আম্বেদকরের প্রচেষ্টায়ই সর্বপ্রথম সেগুলিকে স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্দেশ্যে ‘ভারতীয় শ্রমিক সমিতি (সংশোধনী) বিল’ পাশ হয়। এর ফলে শ্রমিক-কর্মচারীদের Trade Union করার অধিকার আইনসঙ্গত হয়।
🔹(4) কাজের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া- আগে শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজের সময়ের কোনো সময়সীমা ছিল না। ১০ থেকে ১৪/১৬ ঘন্টা পর্যন্ত কাজ করতে হত। এজন্য তাঁদের কোনো বাড়তি মজুরি দেওয়া হত না। ডঃ আম্বেদকরই এই সময়সীমা ৮ ঘন্টায় বেঁধে দেন। এর অতিরিক্ত কাজ করালে তার জন্য Over-time Salary দেবার আইন পাশ করেন।
🔹(5) Labour Investigation Committee :- শ্রমিক শ্রেণির বেতন, খাদ্য, পোশাক, বাসস্থান, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, চিকিৎসা ইত্যাদি বিষয় পর্যালোচনা করা এবং তার সুষ্ঠু ব্যবস্থা করার জন্য এই কমিটি গঠন করেন এবং এ বিষয়ে বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করেন। সেগুলির মধ্যে শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সরকারি খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য E.S.I Hospital সৃষ্টি করা। এ ছাড়া শ্রমিকদের সরকারি খরচে প্রশিক্ষণ দেওয়ার আইনও তিনি করে যান।
🔹(6) Coal Mine Labour Welfare Fund Ordinance :- শ্রমমন্ত্রী ডঃ আম্বেদকর কয়লাখনির শ্রমিকদের আর্থিক উন্নয়ন করার উদ্দেশ্যে এই আইন পাশ করেন।
🔹(7) The Factories Amendment Bill :- আগে শিল্প-কলকারখানায় কর্মচারীদের সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া আর কোনো সবেতন ছুটির ব্যবস্থা ছিল না। কেউ অনুপস্থিত থাকলে তার বেতন কাটা যেত। শ্রমমন্ত্রী ডঃ আম্বেদকর এই আইন পাশ করে কলকারখানার প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিক কর্মচারীদের বছরে ১০ দিন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিক-কর্মচারীদের ১৪ দিন সবেতন ছুটির ব্যবস্থা করেন।
🔹(8) নারী-পুরুষের সমহারে বেতন :- আগে পুরুষ শ্রমিকদের তুলনায় মহিলা শ্রমিকদের বেতন কম ছিল। ডঃ আম্বেদকর আইন করে এই বৈষম্য দূর করেন। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে একই কাজের জন্য একই বেতনের আইন তিনি পাশ করেন।
🔹(9) মাতৃত্বকালীন ছুটি :- আগে সন্তান জন্ম দেওয়া ও তার প্রতিপালনের জন্য নারী শ্রমিকদের বেতন ছাড়া ছুটি নিতে হত। ডঃ আম্বেদকর সন্তান প্রসবের আগে ১০ সপ্তাহ এবং প্রসবের পরে ৬ সপ্তাহের সবেতন ছুটির আইন পাশ করেন।
🔹(10) Protection of Minimum Wage Bill :- ডঃ আম্বেদকরের মন্ত্রীত্বের শেষের দিকে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিল এনেছিলেন। কিন্তু সেই বিলটি তিনি পাশ করিয়ে যেতে পারেননি। বিলটি ছিল ‘সর্বনিম্ন বেতনের নিরাপত্তা বিল’। এতে বলা হয়েছিল শ্রমিকদের বেতন নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটি অ্যাডভাইসরি বোর্ড ও একটি অ্যাডভাইসরি কমিটি থাকবে। এতে থাকবে মালিক ও শ্রমিকপক্ষের সমসংখ্যক সদস্য। তাদের সুপারিশে শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন ধার্য হবে। এই বিলটি দু’বছর পরে স্বাধীনোত্তরকালে জগজীবন রাম শ্রমমন্ত্রী থাকার সময় পাশ হয়।
এখানে উল্লেখিত যে আইনগুলি শ্রমমন্ত্রী থাকাকালে ডঃ আম্বেদকর বিধিবদ্ধ করে গেছেন, তার কোন আইনটি শুধুমাত্র তপশিলি জাতি/উপজাতির জন্য করেছেন? সবগুলিই জাতিধর্মবর্ণনির্বিশেষে সমস্ত দেশবাসীর কল্যাণের জন্য করেননি কি?
(Collected )