অবাস্তব ইসলাম এবং মুসলমানদের প্রকৃত চরিত্র:
ফেসবুক থেকে শেয়ার করেছেন প্রণব কুমার কুণ্ডু
Rupok Roy
অবাস্তব ইসলাম এবং মুসলমানদের প্রকৃত চরিত্র:
লেখক - মুফতি আব্দুল্লাহ আল মাসুদ
( অনেক মুসলমান, হিন্দুদেরকে মুসলমান বানাতে মরিয়া, এদেরকে বলছি, জন্মসূত্রে মুসলমান এই মাসুদকে আগে থামান বা তার কথার জবাব দেন, তারপর হিন্দুদেরকে মুসলমান বানাইতে আইসেন।)
অামার বয়স তখন নয়, এর অাগে স্কুলে পড়েছি। স্কুলের সামনে থেকে বিকেলবেলা দলবেঁধে মাদরাসার ছাত্ররা হেঁটে কলেজমাঠে খেলতে যেত, তাদের সুশৃঙ্খল ও সারিবদ্ধভাবে হাঁটায় অামি মুগ্ধ হয়ে অাব্বাকে বললাম, “অামি মাদরাসায় পড়বো।”
অাব্বা অামাকে প্রতিদিন মাদরাসায় অানা-নেয়া করতেন।
মাদরাসা গমনের ক’দিন পরের ঘটনা- সকালে ফজরের পরপর দেখি বিরাট এক বিচারের অায়োজন, চারজন বড়ভাইকে পিঠমোড়া করে বাঁধা হয়েছে। গাজীপুরী হুজুর ও অন্যান্য হুজুররা মিলে চারজনকে ভয়াবহ রকম পেটালেন।
অামি একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, এরা মার খাচ্ছে কেন? বলা হলো, ওরা রাতে অন্যের মশারিতে গিয়েছে। নয় বছরের মন বোঝেনি, বিছানায় যাওয়া অপরাধ কিনা। ভয় পেয়ে গেলাম এত মার দেখে, অাব্বাকে বললাম, অাব্বা, অন্যের মশারিতে ঢুকলে কি হয়? এবং এজন্য হুজুররা পেটায় কেন? অাব্বা কি জবাব দিয়েছিলেন মনে নেই।
অাব্বা ছিলেন নবীপুর মসজিদের ইমাম।
বারো বছর বয়সে হাফেজ হলাম। কোরঅান অামার মাতৃভাষায় লেখা নয়, কিন্তু কোরঅানকে খুব ভালোবাসতাম। কোরঅান অাল্লাহর বাণী, প্রতিটি হরফে দশ নেকি। কোরঅানে কোন প্রাণীর ছবি নেই, কোরঅানে কোন প্রকৃতির ছবি নেই।
নয় বছরের শিশুমন ছবিওয়ালা বই দেখলে পড়তে চাইত, গল্পের বই দেখলে পড়তে চাইত, কবিতা দেখলে পড়তে চাইত। হুজুররা বলতেন, ছবি অাঁকা, ছবি তোলা, ছবি দেখা, নাটক দেখা, গান শোনা, বাঁশি বাজানো, প্যান্টশার্ট পরা হারাম। হারাম জানতাম, তবুও বারবার অাকর্ষিত হত স্কুলের পাঠ্যবইয়ের ছবিগুলোয় মন, গান শোনার জন্য উতলা হয়ে যেত প্রাণ।
লুকিয়ে লুকিয়ে করকরানির বাসায় গিয়ে নাটক দেখতাম, রাতে মাদরাসার বিছানায় কোলবালিশ কাঁথা দিয়ে ঢেকে মনুষ্যরূপ বানিয়ে রাসেলদের বাসায় গিয়ে হিন্দি ও বাংলা ছবি দেখতাম অামরা ক’জন। সীমাদের বাসায় গিয়ে শুক্রবার বিটিভিতে বাংলা সিনেমা দেখতাম। একপর্যায়ে সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে থাকলাম। অাব্বা ধরে ফেললেন, হুজুররা জেনে গেলেন, শুরু হলো শাস্তি। এ শাস্তি দোষের নয়, অাল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য শয়তান খেদানোর জন্য মার খেলে সোয়াব হয়, মার খাওয়া অঙ্গ দোজখে জ্বলে না।
অাব্বা অামাকে প্রচণ্ড ভালোবাসতেন। মনে পড়ে- প্রায়ই তিনি পকেটে করে অাস্ত কিংবা কাটা ফল নিয়ে অাসতেন, অামি জানতাম সেটা দাওয়াত খেয়ে পকেটে করে নিয়ে অাসা ফল। ভালো দাওয়াত থাকলে মাদরাসা থেকে ছুটি নিয়ে দাওয়াতে নিয়ে যেতেন। অামার শিক্ষক হাফেজ অাবুল কাসেম অাব্বার মসজিদে তারাবি পড়াতেন, তাই খুব সুসম্পর্ক ছিল দুজনের মাঝে। হিফজখানায় অামি সবক (পড়া) দিতাম পাঁচ/ছয় পৃষ্ঠা করে, সবাই অবাক হত তা দেখে, দুই/তিনঘন্টায় পাঁচ-ছয় পৃষ্ঠা মুখস্ত করা সাধারণ বিষয় নয়।
হুজুর চাপ দিতে লাগলেন- এতে চলবে না, দশপৃষ্ঠা সবক দিতে হবে, সাথে পিটুনির ভয়। কী অার করা, একদিন জেদ করে ১১ পৃষ্ঠা সবক দিয়ে ফেললাম! হুজুর অাব্বাকে খবর দিলেন, অাব্বা তো মিষ্টিসমেত হাজির। হাফেজী শেষ হলো, কিতাবখানায় ভর্তি হলাম, মাওলানা হতে হবে।
কিন্তু বাংলা বইয়ের প্রতি দুর্নিবার অাকর্ষণ থামলো না, কবিতা-গল্প-উপন্যাসের প্রতি দুর্দমনীয় টান কমলো না।
বড়বোনের স্কুলবইগুলি পড়ে সাবাড় করতাম,
প্রতিবেশীর স্কুলবইগুলি পড়ে সাবাড় করতাম,
ফেরিওয়ালার কাছ থেকে কবিতা-গল্পের বই কিনে গোগ্রাসে গিলতাম।
উপন্যাস পড়া হারাম, হিন্দু রবীন্দ্রনাথের বই পড়া হারাম, বেনামাজির লেখা বই পড়া হারাম, নজরুলের দাড়ি ছিল না বলে তাঁর বইও পড়া হারাম! ফতোয়া শুনতাম।
কিন্তু কিছুতেই ছাড়তে পারছিলাম না ‘হারামের নেশা।’
সুযোগ পেলেই দে ছুট সিনেমা হলে, রাসেলদের বাসায়। সুযোগ পেলেই দৌড়াতাম ভিডিও গেম-এর দোকানে। মাদরাসায় নিয়ে যেতাম নজরুল-রবীন্দ্রনাথের হারাম বই, লুকিয়ে লুকিয়ে পড়তাম। রাতের বেলা না ঘুমিয়ে মাদরাসার গোসলখানার অালোয় গিয়ে নজরুল রবীন্দ্র পড়তাম। এতে ডিস্টার্ব হতো নিশি দরবেশ ভাইদের। নিশি দরবেশ ভাইয়েরা প্রতিরাতে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে অন্যের বিছানায় যেত, শরীর ঠান্ডা করতে। সারাদিন জোব্বা, তসবিহ, পাগড়ি নিয়ে জিকির-অাজকার ও দোয়া-দুরূদ পাঠ করতো।
নিশি দরবেশরা অামার নামে অভিযোগ দাখিল করলো, সে রবীন্দ্রনাথের বই পড়ে। হুজুররা অামার ট্রাংক ঘেঁটে রবীন্দ্র, নজরুল, সমরেশ, হুমায়ুন উদ্ধার করলেন, সাথে বেতের বাড়ি।
অামার ঘুম ছিল খুব গাঢ়, সহজে ভাঙতো না। ফজরের নামাজের পূর্বে অামাদেরকে ঘুম থেকে জাগাতে লাঠিচার্জ করতেন হুজুররা, দশ পনেরোটা বেতের বাড়ি খাওয়ার পর অামার ঘুম ভাঙত!
হুজুররা দয়ালু ছিলেন, প্রথমে অাস্তে পেটাতেন এরপর ক্রমেই জোরে।
একদিন তো মাওলানা মাসুদ হুজুরের (অামার নামের মিতা) খাটের নিচেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম!
অারেকদিনি সবার বেডিংয়ের তলায় ঘুমিয়েছিলাম, ঘামে পুরো জবজবে অবস্থা!
ক্লাসমেটরা অামার মাথাকে বলত কম্পিউটার, সারাদিন ঘুমিয়েও প্রত্যেক পরীক্ষায় ফার্স্ট হতাম।
অাব্বার অাশা ছিল- তাঁর ছেলে জগদ্বিখ্যাত অালেম হবে। অাব্বা খুব পছন্দ করতেন ইমাম গাজ্জালি ও অাশরাফ অালি থানভীর বই। তিনি অাশা করতেন, তাঁর ছেলে যুগের গাজ্জালি হবে।
একদিন কলেজমাঠে গিয়ে শুনি একটি গাড়িতে বাজছে- “ওরে নিল দরিয়া…
” অামি মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনলাম। অামার ক্লাসমেট ও বন্ধুরা গান শুনতো, হুজুররা লুকিয়ে গান শুনতেন, কিন্তু ছাত্ররা গান শুনলে পেটাতেন!
অামি যখন কিতাবখানার দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি তখন হিফজখানার প্রধান শিক্ষক ছিলেন চট্টগ্রামের একজন মুজাহিদ হুজুর, তিনি সারাক্ষণ জেহাদি চেতনা প্রচার করতেন। লম্বা দাড়ি, পাগড়ি, জোব্বা সবসময় পরিধান করতেন। প্রত্যেক রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তেন।
তৃতীয় বর্ষের এক বড়ভাই হঠাৎ বোমা ফাটালেন- জেহাদি হুজুর নাকি তাহাজ্জুদ শেষে ছাত্রদের সাথে অাকাম করেন। বড়ভাইদের নেতৃত্বে তদন্ত হলো, হিফজখানার সুন্দর চেহারার ছাত্রদেরকে জেরা করে থলের বেড়াল টেনে অানা হলো।
বয়সে ছোট হওয়ার কারণে ফার্স্টবয় হওয়া সত্ত্বেও তদন্ত কমিশনে অামি অানফিট। কিন্তু খবর জানতাম। কমপক্ষে দশজন ছাত্রের কাছ থেকে সাক্ষ্য সংগ্রহ করা হলো। ছোট্ট এক ছাত্রের সাক্ষ্যদান ছিল বেশ চমকপ্রদ: তার ভাষ্য, হুজুর অামারে রাইতে ডাইক্কা নিয়া গেল। অামি রাজি না অইলে হুজুর অামারে অাল্লার গজবের ভয় দেহাইলো। কইলো, তুই কাম করতে না দিলে কালকে অাল্লার গজবে ধ্বংস অইয়া যাবি। তহন ভয়ে রাজি অইলাম। হুজুরের সোনা অামার … দিয়া ঢুকাইলো। অামি ব্যতায় কাইন্দা ফালাইলে হুজুর কইলো, কানলেও অাল্লার গজব পড়বো! কাম শ্যাষ অইলে হুজুরের … থিক্কা কষ বাইর অইলো।
মাদরাসায় তীব্র অান্দোলন হলো জেহাদি হুজুরের বিরুদ্ধে, সব ছাত্রকে ডেকে মুহতামিম (প্রিন্সিপাল) সাহেব বললেন- এই কথাগুলি বাইরে বললে ইসলামের ক্ষতি হবে, কমিটিকেও বলা যাবে না, ইসলামের ক্ষতি হবে।
জেহাদি হুজুরের পক্ষে মুহতামিম সাহেব, সবাই গজারির লাঠি যোগাড় করলাম। অামি অামার ক্লাসে বয়সে সবার ছোট হয়েও গজারির লাঠি হাতে পেলাম। অবশেষে রাতের অাঁধারে জেহাদিকে মাদরাসা থেকে বের করে দেয়া হলো।
অাবার টান, অাবার কবিতা, অাবার উপন্যাস ফিরে এলো জীবনে। হাতে এলেন জীবনানন্দ, যতই পড়ি ততই মুগ্ধ হই।
“অাবার অাসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়” পড়ার পর কেঁদে ফেলেছিলাম, এত সুন্দর হয় পৃথিবী! এত সুন্দর হয় বাংলা ভাষা!
মাদরাসার বন্দি জীবনেও যেন দেখছিলাম প্রকৃতিকে অাপন শোভায়। অার মাদরাসায় যে বন্দিজীবন যাপন করছি অামরা সবাই তা তো শুধুই অাল্লাহর রেজামন্দি লাভের অাশায়।
দুনিয়ার সুখ অাসল সুখ নয়। দুনিয়ার পাখি, নদী, পাহাড়, সাগর, ফুল, ফল কিছুই অাসল নয়। অাখেরাতের নদী, অাখেরাতের পাখি, অাখেরাতের ফুল হলো অাসল ফুল।
ততদিনে মনের রাজ্যে সর্বনাশ করে ফেলেছে জীবনানন্দ; জোনাকির ঝিকিমিকি, ঝিঁঝিপোকার ডাক, চাঁদের জ্যোৎস্না, তটিনীর কুলকুল রব, শটিবনের নান্দনিকতা, বাবুইয়ের সৃষ্টিশীলতা অামাকে নেশাগ্রস্ত করে ফেলেছে। জীবনানন্দ প্রকৃতিকে ভালবাসতে শিখিয়েছে।
না, না, এসব শয়তানের ওয়াসওয়াসা! শয়তান দুনিয়ার সৌন্দর্যে ভুলিয়ে অামাকে অাখেরাত বিমুখ করতে চায়। শয়তান হিন্দুদের কবিতা দিয়ে অামার ঈমান নষ্ট করতে চায়।
হিন্দুদের বই বয়কট করলাম, মুসলমানদের বই পড়তে লেগে গেলাম।
হুমায়ুন অাজাদ নামের অচেনা এক মুসলমান লেখকের প্রবন্ধ পড়লাম ‘অন্যদিন’-এ, “কবিতায় অামার প্রথম অনুভূতি” পড়ে অাবারও থ হয়ে গেলাম। কবিতা তাহলে এত ভাল! বাংলা ভাষা তাহলে এত মধুর !
কিন্তু হুজুররা যে বলেন, বাংলা হিন্দুদের ভাষা, অারবির চেয়ে বাংলাকে বেশি ভালবাসলে ঈমান নষ্ট হবে!
না, বাংলা পড়া যাবে না, অারবি পড়তে হবে, উর্দু পড়তে হবে।
মুসলমান হুমায়ুন অাজাদ এত সুন্দর লিখেছে, তাই তাঁর নামটা মুখস্ত মনে রেখেছি।
চারিদিকে শোরগোল, মিছিল, অান্দোলন। তসলিমা নাসরিনের ফাঁসি চাই। হুজুররা অামাদের বোঝালেন, ইহুদীদের টাকা খেয়ে তসলিমা মুসলমানদের ঈমান নষ্ট করার মিশনে নেমেছে। তসলিমা শুধু ‘খারাপ কাম’ করে।
শয়তান বসে নেই, অামাকে দাগা দিতে লাগলো- পড়েই দেখ, কি লিখেছে তসলিমা!
তাহাজ্জুদের নামাজ বাড়ালাম, জিকির-অাজকার বাড়ালাম, হুজুরের সাথে মোশাওয়ারা (কাউন্সেলিং) বাড়ালাম। হুজুর পরামর্শ দিতে লাগলেন, দোয়া ও অামল বাতলে দিলেন।
সব দোয়া ব্যর্থ করে দিল বিতাড়িত শয়তান। তসলিমার বই কিনলাম, মাদরাসায় রেখে গোপনে পড়লাম। যতই পড়ি ততই ‘অাস্তাগফিরুল্লাহ, নাউজুবিল্লাহ’ পড়ি, তবুও পড়তে ভাল লাগে, ভাষা ভাল লাগে।
একদিন নিশি দরবেশদের কারণে ফাঁস হয়ে গেল- তসলিমার বই অাছে মাসুদের কাছে। সারা মাদরাসা তোলপাড়, প্রচণ্ড পিটিয়ে বহিষ্কার করা হবে মাসুদকে, সিদ্ধান্ত পাকা। উত্তরা বাইতুসসালাম মাদরাসা। একজন শিক্ষক অামার পক্ষে কথা বললেন। ছেলেটা মেধাবি, সহজ সরল, ওকে এবারের মত ক্ষমা করা হোক। হুজুরদের পায়ে ধরে তওবা করলাম, ইহুদীর দালালদের বই পড়বো না।
অাল্লাহর কাছেও বেশ কিছুদিন কান্নাকাটি করলাম, শয়তান খান্নাছদের বই পড়েছি, অাল্লাহ ও রাসুলের দুশমনদের বই পড়েছি।
একদিন পত্রিকা পড়তে গিয়ে মহাত্মা গান্ধীর জীবনের কিছু অংশ পাঠ করলাম।
মহাত্মা গান্ধী হিন্দু, হিন্দু কখনোই ভাল হতে পারে না। হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, ইহুদী সবাই ‘ফি নারি জাহান্নামা খালিদীনা ফিহা।’
ছবিযুক্ত বাংলা বইয়ে তীব্র অাকর্ষণ, কবিতায় তীব্র অাকর্ষণ, মায়ের ভাষায় তীব্র অাকর্ষণ।
হুজুরের পরামর্শ নিলাম। হুজুর বললেন, “তুমি ইসলামি লেখকদের সাহিত্য পড়।”
হাতে এলো অাবুল অাসাদ, কাসেম বিন অাবুবকর, নসীম হিজাযীর বই।
অাবুল অাসাদের জিহাদি গল্পের চেয়ে মাসুদ রানা ভাল লাগল।
মাসুদ রানা শুরু হলো, সাথে গভীর অনুশোচনা ও তওবা। তসলিমা ফিরে এলো, সাথে অাবার তওবা।
ভাবতে লাগলাম, অামার ক্লাসমেটরা রাতে তাহাজ্জুদ পড়ে, এরপর অন্যের মশারিতে ঢোকে। সারাদিন তসবিহ জপে, সুযোগ পেলেই জুনিয়র ছাত্রদের সাথে চুমোচুমি করে। পুরুষ হয়ে অারেক ছেলেকে কিভাবে চুমোয় বুঝিনি, পুরুষ কিভাবে পুরুষের পায়ুপথে মুজামা’অাত (সহবাস, অারবি শব্দ) করে বুঝিনি।
অামিও ভাবা শুরু করলাম, তারা ‘অাকাম’ করে তওবা করে অাল্লাহর কাছে মাফ চায়, অামিও কাফের-মুরতাদের বই পড়ে অাল্লাহর কাছে মাফ চাইব।
বড়ভাই কামাল খুবই অামলদার ছিল। অামি জোরে হাসলে নিষেধ করতো, অাল্লাহর রাসুল জোরে হাসতে নিষেধ করেছেন, মুচকি হাসতে বলেছেন। কামাল ভাই খুবই অামলদার ছিল, প্রায় দিনই তাহাজ্জুদ শেষে “মুজামাঅাত” না হলে তার চলত না!
কাফেররা সারাদিন হাইওয়ানের (জন্তু) মত অাকামকুকাম করে, মুসলমান সামান্য কিছু করলেই দোষ!
পড়ানো হল ‘কুদুরি, হেদায়া, নূরুল অানওয়ার, উসুলুশ শাশী’ কিতাব সমূহ। জেহাদ, গনিমতের মাল বণ্টন, তালাক, নিকাহ, সংসার, সহবাস এর মাসঅালা পড়লাম। শয়তান ধোঁকা দিতে শুরু করলো- তোমার নবীর চেয়ে মহাত্মা গান্ধী ভালো, তোমার নবীর চেয়ে জীবনানন্দ ভাল, তোমার নবীর চেয়ে নজরুল ভাল।
নজরুল যদি ভালই হয় তাহলে নজরুল কেন নবীকে এত ভক্তি করেছে? গান্ধী যদি মহান হয় তাহলে গান্ধীর চেয়ে নবীজির অনুসারী এত বেশি কেন?
অাবারও শয়তান সাময়িক পরাজিত হলো।
অারবি সাহিত্য খুব পছন্দ করতাম, এখন দেখছি বাংলা সাহিত্যও ভাল লাগছে!
ইংরেজিও ভাল লাগছে। মাদরাসায় ইংরেজির কিচ্ছু শেখায়নি, কিন্তু দেখছি অামি ইংরেজি খুব সহজে বুঝি। ইংরেজি শিখতে লাগলাম উইদাউট হেল্প অব টিচার।
অামি অনেক কবিতা পারতাম বলে শরীয়তপুরী হুজুর (সাহিত্যিক হিসেবে সুনাম অাছে) অামাকে খুব স্নেহ করতেন। অন্যরা অবশ্য অামাকে ‘বিতর্কিত’ মনে করতেন।
এলো তালেবান অান্দোলন, চতুর্দিকে তালেবানের প্রশংসা, অাফগানিস্তানের শান্তি ও সাম্যের প্রশংসা শুনতাম হুজুরদের কাছে। হাতে পেলাম মাসিক ‘জাগো মুজাহিদ।’ জেহাদি চেতনা জেগে উঠল। বাংলাদেশকে ইসলামিক দেশ বানাতেই হবে, একমাত্র জেহাদের মাধ্যমেই কায়েম হবে ইসলাম।
ততদিনে একটু বড় হলাম, দাড়িমোচ গজালো।
“অামরা হব তালেবান, বাংলা হবে অাফগান” স্লোগানে মুখর করলাম পল্টন ময়দান।
অাবারো শয়তান, অাবারো ওয়াসওয়াসা।
জেহাদ কি মানবতার সমাধান? রক্তপাতে কি শান্তি?
শয়তান নিয়ে এলো মহাত্মা গান্ধীকে, “চোখের বদলে চোখ পৃথিবীকে অন্ধ করে দেবে।”
– ঈমানে ওয়াসওয়াসা হানা দিল।
অাবারো প্রবোধ-
মহাত্মা যত ভালই হোক, সে হিন্দু। হিন্দুরা ‘ফি নারি জাহান্নামা খালিদীনা ফিহা।’
অাবার তওবা, অাবার ইস্তিগফার…
– প্রিয়নবী, পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ অাপনাকে ভালবাসে। অামিও তাদের একজন ছিলাম। অাপনার মোটিভেশনাল পাওয়ার সত্যিই অসাধারণ! একটি বিশৃঙ্খল জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার কৃতিত্বও অাপনার।
অাপনাকে নিয়ে কত স্তুতিকাব্য রচিত হয়েছে, কত সঙ্গীত গাওয়া হয়েছে, কত মানুষ জীবন দিয়েছে অাপনার ভালবাসায়!
অাপনি কি সমর্থন করেন অাপনার উম্মতের বর্তমান কর্ম?
অাপনি নিজেও যা করেছেন তা কি অাপনি এখনও সমর্থন করছেন?
অামি কাফেরদের বই পড়ে তওবা করতাম। অাপনি দৈনিক একশোবার তওবা করতেন।
অাপনিও কি লুকিয়ে লুকিয়ে কাফেরদের বই পড়তেন?
লেখক: আব্দুল্লাহ আল মাসুদ। ১০ বছর টানা মসজিদে ইমামতি করেছেন মুফতি মাসুদ, দীর্ঘদিন একটি কওমী মাদ্রাসার প্রিন্সিপ্যালের দায়িত্ব পালন করেছেন।
From: Krishna kumar das
💜 জয় হোক সনাতনের 💜
Pranab Kumar Kundu
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন