সোমবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৮

মুহম্মদ শহীদুল্লাহ


    মুহম্মদ শহীদুল্লাহ


     ফেসবুক থেকে    শেয়ার করেছেন      প্রণব কুমার কুণ্ডু

সাহিত্যিক, ভাষাবিদ, গবেষক এবং দার্শনিক
মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (জন্মঃ- ১০ জুলাই, ১৮৮৫ - মৃত্যুঃ- ১৩ জুলাই, ১৯৬৯)(সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান অনুযায়ী)
এন্ট্রান্স পাশের সময় থেকেই তিনি বিভিন্ন ভাষার প্রতি অতি উৎসাহী ও আগ্রহী হয়ে উঠেন এবং একাধিক ভাষা শিক্ষা শুরু করেন। বাংলা ভাষার আদর্শ অভিধান প্রকল্পের সম্পাদক হিসেবে বাংলা একাডেমিতে যোগ দেন। ১৯৬১-৬৪ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমির বিশ্বকোষ প্রকল্পের অস্থায়ী সম্পাদক পদে নিযুক্ত হন। ১৯৬৩ সালে বাংলা একাডেমি কর্তৃক গঠিত বাংলা একাডেমির পঞ্জিকার তারিখ বিন্যাস কমিটির সভাপতি নিযুক্ত হন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলা পঞ্জিকা একটি আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত রূপ পায়। ১৯১৯ থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত ডক্টর দীনেশ চন্দ্র সেনের সহকর্মী হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক হিসেবে কাজ করেন। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত ও বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। পাশাপাশি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯২২ থেকে ১৯২৪ সালে পর্যন্ত আইন বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। ফ্রান্সের সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৮ সালে পি.এইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৩৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও রিডার হিসেবে নিযুক্ত হন। সেখান থেকে ১৯৪৪ সালে অবসর গ্রহণ করেন। অবসরের পর তিনি বগুড়ার সরকারী আজিজুল হক কলেজে প্রিন্সিপাল হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫৩ - ১৯৫৫ সালে তিনি পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ফরাসি ভাষার খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসাবে কাজ করেন। ১৯৫৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত ও পালি বিভাগে যোগদান করে ১৯৫৮ সালে অবসর গ্রহণ করেন।
জন্ম
তিনি পশ্চিমবঙ্গের অবিভক্ত চব্বিশ পরগণা জেলার পেয়ারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯০৪ সালে হাওড়া জেলা স্কুল থেকে এন্ট্রান্স এবং ১৯০৬ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফ.এ (বর্তমান এইচএসসি’র সমমান) পাশ করেন। ১৯১০ সালে সিটি কলেজ, কলকাতা থেকে সংস্কৃতে সম্মান-সহ বি.এ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক দর্শনতত্ত্বে এম.এ (১৯১২) ডিগ্রী অর্জন। এছাড়াও, ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সরবন বিশ্ববিদ্যালয়, প্যারিস থেকে পি.এইচডি ডিগ্রী (১৯২৫) লাভ করেন। পড়াশোনা শেষ করার পূর্বেই কিছুকাল তিনি যশোর জেলা স্কুলে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। ১৯১৫ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত চব্বিশ পরগণার বশিরহাটে আইন ব্যবসা করেন। তিনি সবসময়ই সাহিত্য কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন। এম.এ পাশ করার পরই তিনি বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির সম্পাদক হন। ১৯৪৮ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনের সভাপতি ছিলেন।
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ অনেক বই লিখেছেন।
তাঁর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো -
ভাষা ও সাহিত্য
বাংলা ভাষার ইতিবৃত্ত
দীওয়ানে হাফিজ
রুবাইয়াত-ই-ওমর খৈয়াম
বিদ্যাপতি শতক
বাংলা সাহিত্যের কথা (২ খণ্ড)
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান
ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরই দেশের রাষ্ট্রভাষা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলে বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার পক্ষে যে ক’জন ব্যক্তি জোরালো বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তাঁর এই ভূমিকার ফলে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পথ অনেকখানিই প্রশস্ত হয়।
পুরস্কার
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এমেরিটাস অধ্যাপক পদ লাভ করেন। একই বছর ফ্রান্স সরকার তাকে সম্মানজনক পদক নাইট অফ দি অর্ডারস অফ আর্টস অ্যান্ড লেটার্স দেয়।
মৃত্যু
১৯৬৯ সালের ১৩ জুলাই ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের পাশে সমাহিত করা হয়। ভাষাক্ষেত্রে তাঁর অমর অবদানকে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাতে ঐ বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ঢাকা হলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় শহীদুল্লাহ হল। এছাড়াও তাঁর নামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কলা ভবনের নামকরন করা হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন