বৃহস্পতিবার, ৫ জুলাই, ২০১৮

ব্রাহ্মণ্য ধর্ম এবং...


      ব্রাহ্মণ্য ধর্ম এবং...

      শেয়ার করেছেন      প্রণব কুমার কুণ্ডু


Methun Barua Prethu এতে ইতিহাসের বিভিন্ন তথ্য  ফেসবুক থেকে

ব্রাহ্মণ্যধর্মের সীমাহীন শোষণ ও বঞ্চনার ফলশ্রুতি হিসাবে খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠশতকে আত্মপ্রকাশ করে প্রায় ৬৪টি প্রতিবাদী ধর্ম। এদের মধ্যে জৈন ও বৌদ্ধধর্ম, তাদের উন্নত দর্শন ও সংঘ শক্তির জোরে ভারতীয় জনমানসে গভীর প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়। মৌর্য যুগের প্রথম পর্যায়ে জৈন ধর্ম প্রসার লাভ করে, কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায়ে সারা ভারতবর্ষ ব্যাপী বৌদ্ধ ধর্মের অবাধ ব্যাপ্তি ও প্রসার ব্রাহ্মণ্যধর্মকে বিপন্ন ও প্রায় নিশ্চিহ্ন করে সর্ববৃহৎ ও প্রধান ধর্মীয় শক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ব্রাহ্মণ্যধর্ম ত্যাগ করে দলে দলে মানুষ বুদ্ধের শরণাগত হতে থাকে।

কিন্তু এই অবস্থা পরিবর্তিত হতে শুরু করে গুপ্ত যুগে। ব্রাহ্মণ্যধর্মীয় আগ্রাসন, হত্যা, রক্তপাত, অগ্নিসংযোগ প্রভৃতি নারকীয় অত্যাচার নামিয়ে এনে বৌদ্ধদের ক্রমাগত কোণঠাসা করা হয়। উপরন্তু ব্রাহ্মণ্যবাদীরা লাভ করে রাজ পৃষ্ঠপোষকতা। অবলুপ্ত প্রায় ব্রাহ্মণ্যধর্মকে পুণরুজ্জীবীত করার লক্ষ্যে শাস্ত্রকারেরা বুদ্ধকে ভগবান বানিয়ে বিষ্ণুর অবতার হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে বৌদ্ধধর্মকে একপ্রকার ব্রাহ্মণ্যধর্মের অঙ্গীভূত করে নিলো। সরল বিশ্বাসে মানুষ ভাবলো দুই ধর্মের যদি কোন তফাৎ নাই থাকে, বুদ্ধ যদি বিষ্ণুর অবতারই হন,তাহলে কি আর লাভ হবে ধর্ম ত্যাগ করে? ব্রাহ্মণদের এই কৌশলী প্রচেষ্টা স্বার্থক হলো। ব্রাহ্মণ্যধর্মের অনিবার্য ভাঙন রোধ করতে তারা সমর্থ হোল। বৌদ্ধধর্মের উত্থান প্রতিহত করতে ব্রাহ্মণেরা এভাবেই অস্ত্র,সস্ত্র ও শাস্ত্রকে ব্যবহার করেছিল নিপুণ কৌশলে। বহির্ভারতে বৌদ্ধধর্মের প্রসার ঘটলো ঠিকই, কিন্তু বুদ্ধ-ভূমি এভাবেই বধ্যভূমিতে পরিনত হোল।

উল্টো ঘটনা ঘটলো জৈনধর্মের ক্ষেত্রে। নানান পৌরাণিক দেবদেবীকে স্থান দিয়ে কোন ক্রমে তারা নিজেদের ধর্মীয় অস্তিত্ব রক্ষা করলো। অপরপক্ষে নবীনতম প্রতিবাদী ধর্ম হিসাবে যে মতুয়াধর্মের উদ্ভব হয়েছিল, ব্রাহ্মণ্যভাবধারায় মিলিত হয়ে তারাও একপ্রকার ব্রাহ্মণ্যবাদের ধ্বজা বহন করে চললো।

ধর্মীয় অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে স্বেচ্ছায় হোক, কিম্বা ধর্মীয় আগ্রাসন বা বলপ্রয়োগের কারণেই হোক, ব্রাহ্মণ্যধর্মের প্রতিবাদে যে সকল প্রাতিষ্ঠানিক বা লৌকিক ধর্মের উদ্ভব হয়েছিল,শেষপর্যন্ত নিজেদের স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করতে না পারার কারণে,যাবতীয় ধর্মীয়-সামাজিক আন্দোলন গুলি কার্যত ব্যর্থ হোলো। যেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হয়নি। সম্ভব হবে কি? উত্তরটা রয়েছে ভবিষ্যতের গর্ভে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন