বুধবার, ২৭ জুন, ২০১৮

পাখি ( দুই )


  পাখি ( দুই )



  শেয়ার করেছেন                       প্রণব কুমার কুণ্ডু




Viraj Khorjuwekar এতে Indian Birds           ফেসবুক

Rufous-bellied woodpecker | Dendrocopos hyperythrus | Pangot | May 2017

ড. সুভাষ মুখোপাধ্যায় এবং অন্যেরা





      ড. সুভাষ মুখোপাধ্যায় এবং অন্যেরা


      শেয়ার করেছেন                       প্রণব কুমার কুণ্ডু





টিচার্স টট           ফেসবুক থেকে



শিশু বয়স থেকেই আমাদের শেখানো হয় যে, সত্য ভালো, কিন্তু অপ্রিয় সত্য ভালো নয়। এবারে প্রশ্ন হলো: কার অপ্রিয়? নিজের অপ্রিয়? আশপাশের মানুষের অপ্রিয়? না কি শক্তিমানের অপ্রিয়? যে ক্ষমতায় আছে তার অপ্রিয়? কোনো কোনো প্রাজ্ঞ বয়োঃজ্যেষ্ঠ উত্তরও দিয়ে দেন: "শক্তিমানের যা অপ্রিয় কখনোই বলবে না। জীবনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অপলক মিথ্যাভাষণ আর তোষণে রপ্ত হওয়াই তোমার আশু কর্তব্য। " আজ থেকে প্রায় বছর দুই আগে জয়ন্ত ঘোষাল মহাশয়ের একটি লেখা পড়েছিলাম, যার শিরোনাম: বাঙালির অধঃপতনের ইতিহাস চিরন্তন। সেখান থেকেই একটু quote করছি:

'রাজনারায়ণ বসুর কথা ভাবুন। তিনি ১৮৭৪ সালে সেকাল আর একাল বলে একটি বই লেখেন। তত্ত্ববোধিনী সভার কাজ চালাতে চালাতে শ্রীযুক্ত বাবু অক্ষয়কুমার দত্ত মহাশয়ের হঠাৎ মনে হয়, অতীতে ব্রিটিশ আগমনের সময়কার বাংলার সঙ্গে সে দিনের সময়ের একটা তুলনা হওয়া প্রয়োজন। রাজনারায়ণ বসু তখন অতীতের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের সঙ্গে সে দিনের শিক্ষিত বাঙালির সচেতনতার ফারাক সৃষ্টির চেষ্টা করছেন, অন্ধ ব্রিটিশ অনুকরণেরও সমালোচনা করেন। সে কালের সঙ্গে এ কালের তুলনামূলক আলোচনা শেষে গাঢ় কালিমায় আচ্ছন্ন সমকালীন বাঙালি সমাজের শোচনীয় অবস্থার দিকে শ্রোতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, যখন আমরা শারীরিক বলবীর্য হারাইতেছি-যখন দেশীয় সুমহৎ সংস্কৃত ভাষা ও শাস্ত্রের চর্চা হ্রাস হইতেছে-যখন দেশীয় সাহিত্য ইংরেজি অনুকরণে পরিপূর্ণ-যখন দেশের শিক্ষাপ্রণালী এত অপকৃষ্ট যে তদ্দারা বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ না হইয়া কেবল স্মৃতিশক্তির বিকাশ হইতেছে- যখন বিদ্যালয়ে নীতিশিক্ষা প্রদত্ত হইতেছে না-যখন স্ত্রী শিক্ষার অবস্থা অত্যন্ত অনুন্নত, যখন উপজীবিকা আহরণের বিশিষ্ট উপায় সকল অবলম্বিত হইতেছে না, যখন সমাজ সংস্কারে আমরা যথোচিত কৃতকার্য্য হইতে পারিতেছি না-যখন চতুর্দিকে পান দোষ, অসরলতা, স্বার্থপরতা ও সুখপ্রিয়তা প্রবল যখন আমাদিগে রাজ্য সম্বন্ধীয় অবস্থা শোচনয়ী-বিশেষত যখন ধর্মের অবস্থা অত্যন্ত হীন-তখন গড়ে আমাদিগের উন্নত কি অবনতি হইতেছে তাহা মহাশয়েরা বিবেচনা
উপরোক্ত লেখা প্রকাশিত হওয়ার বহু বছর পরেও যখন রক্তক্ষয়ী দাঙ্গায় হিন্দু মুসলমানের একে অন্যকে নিকেশ করে দেওয়ার বিনিময়ে পাওয়া গেলো স্বাধীনতা, তখনও গুমোট কাটলো কই? বজায় রইলো এক নিতান্ত প্রতিকূল নৈতিক সাংস্কৃতিক পরিবেশ , যার মধ্যে অনেকেই যাঁরা সত্যনিষ্ঠ , ঋজু ও বিবেকী থাকার চেষ্টা করলেন , সমাজ তাঁদের বললো বাস্তববোধহীন , গোঁয়ার। আজ এমনই একজন মানুষের মৃত্যুদিন, প্রিয় পাঠক , যাঁর মৃত্যুর জন্য আপাত-তার্কিক , জ্ঞানী , সাম্যবাদী , উদার বাঙালির সমবেত disinterestedness, negligence আর অসূয়া দায়ী। আজ জুন মাসের ১৯ তারিখ। আজকের দিনেই আত্মহত্যা করে অকৃতজ্ঞ বাঙালির থেকে মুখ ফিরিয়ে অভিমানে চলে গিয়েছিলেন ডাক্তার সুভাষ মুখোপাধ্যায়।
শ্রী রাজীব সরকার মহাশয় ওনার ফেইসবুক পাতায় ২০১৩ সালে সুভাষ মুখোপাধ্যায় সংক্রান্ত একটি অনবদ্য লেখা উপহার দিয়েছিলেন। সেটাই আপনাদের সাথে ভাগ করে নিলাম পাঠক:
"দুটি ঘটনার জন্য বাঙ্গালীকে চিরকাল ইতিহাসের সামনে মুখ নিচু করে পায়ের নখে মাটি খুটতে হবে । এক, মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতা । দুই, ডাক্তার সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের আত্ন্যহত্যা । কতটা গভীর ঐ অপরাধবোধ? এতটাই যে হুজুগে বাঙালি মুখ ঢেকেছে বিস্মৃতির চাদরে । সুভাষের সৃষ্টি ভারতের প্রথম টেস্ট টিউব বেবী কানুপ্রিয়া আগরবাল ওরফে দুর্গা প্রথম মিডিয়ার সামনে নিজেকে প্রকাশ করেছিল।। ক্যামেরার সামনে । ঝকঝকে মেধার এই মেয়ে দিল্লীতে এক আন্তর্জাতিক সংস্থার মার্কেটিং এগজিকিউটিভ । সে বলেছে -"electric বাল্ব সবাই চেনে কিন্তু টমাস আলভা এডিসনের নাম ক জন জানে ?তেমনি আমাকে আজ সবাই চিনছে কিন্তু আমার শ্রষ্ঠা সুভাষ মুখোপাধ্যায় কে কেউ চেনে না ।" বড় সত্যি কথা বলেছে কানুপ্রিয়া। তার প্রজন্মের ক-টি তরুণ তরুণী জানে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কথা ।
যারা সেসব দিনের প্রত্যক্ষদর্শী তারাই বা সত্যকে প্রকাশের কী উদ্যোগ নিচ্ছে? রমাপদ চৌধুরীর একটা উপন্যাস , তপন সিংহের একটা চলচিত্র , কিছু পুরোনো খবরের কাগজের কাটিং , এগুলো কাঁটার মতো খচ খচ করে না বিধলে হয়তো সে লজ্জার কথা বেমালুম গিলেই ফেলা যেত । কাঁধ ঝাকিয়ে বলা যেত এমন তো কতই হয় । ভুল সব মানুষই করে , তা সংশোধন করার পৌরুষ সব জাতির থাকেনা । তাই বাঙ্গালোরের বিজ্ঞানের আসরে সুভাষ সম্মানিত হন , কিন্তু নিরব বাংলার বিজ্ঞান মহল । এই hypocrisy বাঙালীর মজ্জাগত । ১৯৮১ সালে যখন ঈর্ষাম্বিত ডাক্তার, দাম্ভিক আমলা আর স্বার্থান্বেষী সংবাদ মাধ্যম শাসরুদ্ধ করে মেরেছে সুভাষকে তখন কলকাতার নানা নাট্যমঞ্চে রমরম করে চলছিল গ্যালীওর জীবন। অথচ বাঙালি বলে কী ভীষণ গর্ব ছিল সুভাষের । আড্ডাবাজ মানুষটি বন্ধুদের কাছে বলতেন ক্লাব অফ রোমের মতো ক্লাব অফ কলকাতা তৈরি করতে হবে । পৃথিবীর প্রথম সারির কিছু চিন্তাবিদ নিয়মিত রোম বৈঠক করেন পৃথিবীর ভবিষ্যতের চিন্তাভাবনা করতে , বিশেষত খাদ্য ও জনসংখা নিরিখে । কলকাতাই বা তেমন কেন্দ্র হবেন কেন ? এ কেবল কথার কথা নয় , গভীর আত্ন্যবিশ্বাস থেকেই সুভাষের ঐ চিন্তা উঠে এসেছিল ।
তার southern avenue ছোট ফ্লাট ছিল তার ল্যাবরেটরি ।ফ্রীজটাও দখল করে নিয়েছিল ওষুদের ভায়াল । সেই ক্ষুদ্র ফ্ল্যাটের ক্ষুদ্রতর এক ঘরে যে কাজ তিনি করেছিলেন তা আমেরিকা ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ার তাবড় তাবড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝকঝকে ল্যবরেটরিতে করে উঠতে আরও চার পাঁচ বছর লেগে গিয়েছিল । সুভাষের প্রদর্শিত পথে তার অনুপ্রেরণাতেই গত দুই দশকে কলকাতার চিকিত্সাবিজ্ঞানীরা হাজার খানেক test tube বেবীর জন্ম দিয়েছেন । কিন্তু সেদিন ঝাঁক বেঁধেছিল অবিশ্বাস । এত সামান্য উপকরণে এত বড় কাজ করা যেতে পারে? করতে পারে বাঁকুড়া সম্মিলনির ফিজইলজির শিক্ষক? ইংল্যান্ডে বিশ্বের প্রথম টৈস্ট টিউব বেবী ভূমিষ্ঠ হবার মাত্র ৬৭ দিন পরে? আজ এই ৩৪ বছর পরে সেই সময়ের দিকে ফিরে তাকালে প্রশ্ন চিহ্ন স্থান বদল করে চলে আসে ঠিক বিপরীত বিন্দুতে । কেন অবিশ্বাস? কেন এই অনাস্থা? ভাঙ্গা ল্যবরেটরি নড়বড়ে যন্ত্রপাতি নিয়ে , কিম্বা স্রেফ কাগজ - কলম সম্বল করে বাঙালীর বিজ্ঞান সাধনাতো নতুন কোনও ঘটনা ছিলনা । ১৮৯৬ সালে প্রফুল্ল চন্দ্র রায় নতুন যৌগ মার্কেউরাস নাইট্রেট তৈরি করেছিলেন তার কলকাতার বাড়িতে । জগদীশ চন্দ্র বসু প্রায় একই সময়ে বেতার উদ্ভাবন করলেন নিজস্ব পদ্ধতিতে । রেসোনেট রেকর্ডার তৈরি করে গাছের অনুভুতি ক্ষমতা প্রমাণ করলেন ১৯০০ সালে । বিশের দশকে কোয়ান্টাম সুত্রে কাজের জন্য সত্যেন বসুর নাম জুড়ল আইষ্টইনের সঙ্গে । মেঘনাদ সাহার আয়োনাইজেশন ফর্মুলা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেল । ১৮৯০ থেকে ১৯৩০ ঐ সময় কালে কলকাতা বিশ্বের বিজ্ঞান মানচিত্রে একটি চিহ্ন হয়ে উঠেছিল । তাহলে পঞ্চাশ বছরের ব্যবধানে কেন কলকাতায় বিজ্ঞানের নতুন দিকদর্শন অবিশ্বাস্য হয় উঠল ?কেন অবিশ্বাস সুভাষ কে ? টৈস্ট টিউব বেবী উত্পাদনের জন্য যে ধরনের গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রয়োজন তা কী সুভাষের ছিলনা ? ফিজইলজিতে অনার্স নিয়ে বি এসসি , একই সঙ্গে এম বি বি এস ১৯৫৫ সালে । গাইনকলজি তে প্রথম হয়ে পেয়েছেন হেমাঙ্গিনী পদক । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রীপ্রোডাকটিভ ফিজইলজিতে পি এইচ ডি এডিনবারা থেকে দ্বিতীয় ডক্টরেট । গনডোট্রপিক হরমোন , যা মানব শরীরে যৌন গ্রন্থি গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে , তার ওপর ছিল তার কাজ । এই কাজের ভিত্তিতেই পরে দুর্গার সৃষ্টিশৈলীর ধাপ তিনি রচনা করেছেন তা তার অতীত গবেষনার বিবরণ মিলিয়ে দেখলে বোঝা কঠিন নয় । অথচ ১৯৭৮ সালে সুভাষকে বেনিফিট অফ ডাউট দিতেও রাজি ছিলনা কলকাতা । কলকাতা কারণ কলকাতার বাইরে নানা বিজ্ঞান সম্মেলনে সুভাষ যখন তার কাজের কথা বলেছেন তখন অবিশ্বাসের দেওয়াল সব দিক আগলে দাঁড়ায়নি । ১৯৭৯ জানুয়ারিতে হায়দ্রাবাদে সায়েন্স কংগ্রেসের রিপোর্টে পি টি আই লিখেছে সুভাষের বক্তৃতা শোনার জন্য পেক্ষাগৃহ ছিল কানায় কানায় পূর্ণ । সুভাষ এক্স রে দেখিয়ে প্রমাণ করেন বেলা আগরবালের ( দুর্গার মা) স্বাভাবিক প্রজননের কোনও সম্ভাবনা ছিল না । তিনি নানা গ্রাফ ও চিত্রের মাধ্যমে তার বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণ করেন । কলকাতার চিত্র ভিন্ন । কিছু প্রভাবশালী চিকিত্সকের চাপে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সুভাষের কাজের সত্যতা যাচাই করতে তদন্ত কমিটি করল । যেন বিজ্ঞানী নতুন আবিষ্কার করে অপরাধ করে ফেলেছেন । সেই টিমের নেতৃত্বে ছিলেন এক রেডিও ফিজিসিষ্ট। দুর্জনে বলে তিনি নাকি সুভাষের থেকে বই ধার করে সুভাষের গবেষণার সত্যতা যাচাই করেছিলেন । কমিটি রায় দিল সুভাষের দাবি নেহাত মিথ্যা । দুর্গার যে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় জন্ম হইনি , তার কোনও প্রমাণ নেই । মিডিয়ার কাছে কমিটির সদস্যরা বললেন ওরা যেসব পদ্ধতিতে কাজ করেছে বলছে এমন পদ্ধতিতে কেউ কখনো কাজ করেনি । হক কথা । সুভাষকে মানুষ ভারতের প্রথম বিশ্বের দ্বিতীয় টেস্ট টিউব বেবীর শ্রষ্ঠা বলে জানে । কিন্তু এত বাহ্য । আজ যে সত্য প্রকাশিত তা হল সুভাষ অন্তত তিনটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিলেন । যেগুলি এখন সারা বিশ্বে কৃত্রিম প্রজননে ব্যবহৃত হচ্ছে । সেই দৃষ্টিতে দেখলে সুভাষ আছেন প্রথম উদ্ভাবকের আসনেই । প্রথম টেস্ট টিউব বেবী লুইজি ব্রাউনের স্রস্টা ফিজিয়লজিস্ট রবার্ট এডওয়ার্ডস এবং গাইনকলজিস্ট প্যাট্রিক স্টেপটো রোগিনীরশরীর থেকে ডিম্বাণু বার করতে ব্যবহার করেছিলেন ল্যাপ্রস্কোপ। পেটে একটা ছিদ্র করে ল্যাপ্রস্কোপ ঢুকিয়ে ঘন্টার পর ঘণ্টা নজর রেখে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় ডিম্বাণু উত্পন্ন হতে দেখেন এবং আর একটি ছিদ্রপথে তা তুলে আনেন । কাচের ডিশে ( টৈস্ট টিউব স্রেফ কথার কথা ) সেই ডিম্বাণু ও পিতার শুক্রানু নিষিক্ত হয়ে ভ্রূণকোষ তৈরি হলে তাকে আবার গর্ভে সংস্থাপন করেন। সুভাষ তার উদ্ভাবনী পদ্ধতিতে আরও সাহসী , এবং আরও সহজ ।
এক তিনি যৌন হরমোন প্রয়োগে একই মাসে একসঙ্গে একাধিক ডিম্বাণু সংগ্রহ করে ভ্রূণকোষ তৈরি করে সেগুলোকে গর্ভে সংস্থাপণ করেন । এর ফলে গর্ভসঞ্চারে সাফল্যর সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায় । সুভাষের এই আবিস্কারের কৃতিত্ব কয়েক বছর পরে পেলেন আমেরিকার হাওয়ার্ড জোন্স ।
দুই, পেটে ল্যাপ্রস্কোপ না ঢুকিয়ে সুভাষ যোনিপথে একটা ছোট অপারেশনের মাধ্যমে ডিম্বাণু সংগ্রহ করার সহজতর পদ্ধতি বার করেন । যা এখন সবাই অনুসরণ করছে ।
তিন, ভ্রূণকোষ কে সঙ্গে সঙ্গেই গর্ভে সংস্থাপিত না করে তাকে হিময়িত করেন সুভাষ ।
এ কাজে তাকে সাহায্য করেন বায়োকেমিক্যাল ইন্জিনিয়ার অধ্যাপক সুনীত মুখোপাধ্যায় । যে মাসিক চক্রে হরমোন ইঞ্জেক্সেনের প্রভাবে একাধিক ডিম্বাণু উত্পাদন করেছে শরীর , সেই মাসে জরায়ুর প্রকৃতি স্বাভাবিক থাকার সম্ভাবনা কম । তাই পরবর্তি স্বাভাবিক মাসিক চক্রে ভ্রূণটি সংস্থাপন করা হয় । সুভাষ-সুনীত পাঁচটি ভ্রূণ তরল নাইট্রোজেনে ৫৩ দিন হিমায়িত রেখেছিলেন। ১৯৭৮ সালের ১৮,১৯,এবং ২০ জানুয়ারী পরপর তিনদিন তিনটি ভ্রূণ দুর্গার মা বেলা আগরবালের গর্ভে সংস্থাপিত করেন গাইনকলজিস্ট সরোজ ভট্টাচার্যা। গর্ভে আসে একটিই সন্তান । অক্টোবরের তিন তারিখ সিজারিয়ান অপারেশনে জন্ম হয় দুর্গার । বিয়ের ১৬ বছর পরে সন্তান কোলে পেলেন প্রভাত ও বেলা আগরবাল । কিন্তু হিমায়িত ভ্রূণ সংস্থাপনের কৃতিত্ব সুভাষ সুনীত পাননি । বিজ্ঞানের ইতিহাসে এই আবিস্কারের দাবিদার অস্ট্রেলিয়ার ট্রাঔনসন , যিনি কাজ করেছিলেন সুভাষের মৃত্যুর পর। সুভাষ তার সহ-চিকিত্সকদের থেকে যে ঈর্ষা - তিক্ত বিরোধীতা পেয়েছিলেন তা ধরা আছে এক ডক্টর কী মওত ছবিতে । সুনীতের মতে এ ছবি more than correct । তবে ঐ বিরোধীতা অপ্রত্যাশিত নয় । ১৯৭২ সালে আমেরিকার ম্যানহাটন হাসপাতালে ল্যংড্রাম সাটল তার রোগিনী ডোরিশের গর্ভে ভ্রূণ সংস্থাপন করার ব্যবস্থা করেছিলেন । হাসপাতাল কতৃপক্ষের বাধায় তাকে আদালতে ছুটটে হয় । ক্যাথলিক চার্চের আপত্তিতে অনেক বিজ্ঞানী গবেষণা বন্ধ করতে বাধ্য হন । স্টেপটো এবং এডওয়ার্ড্স অন্য বিজ্ঞানীদের কাছে অপদস্থ হয়েছিলেন , তাদের রিসার্চের অনুদান আটকে দেওয়া হয়েছিল । এসব কথা সুভাষের অজানা ছিল না । বন্ধু সুনিতকে বলেছিলেন আমরা বাঘের লেজ ধরে রয়েছি । বিতর্কের ঝড়ের মুখেও সুভাষ আস্থা হারাননি ।
১৯৮০ সালের জানুয়ারিতে ইন্ডিয়া টুডের সাংবাদিক কে বলেছিলেন আমার কাজ নিয়ে বিতর্ক উঠেছে because it is great . তার দেড় বছর পর জুন মাসের এক সন্ধায় শিক্ষিকা স্ত্রী নমিতা স্কুল থেকে ঘরে ফিরে দেখলেন সুভাষের ঝুলন্ত দেহ । একি সুভাষের হতাশা ,অভিমান ? আশি সালে হার্ট অ্যাটাক কী মাত্র ৫০ বছর বয়সে তার জীবনী শক্তি কেড়ে নিয়েছিল ?হইতো শুধু তায় নয় । কাজ পাগল বিজ্ঞানী টৈস্ট টিউব বেবী সৃষ্টির নেশায় যার নিজের ঘরে শিশুর কলধ্বনি শোনা হয়ে ওঠেনি হইতো বুঝেছিলেন যে তার গবেষণার সুযোগ আর মিলবে না । মৃত্যুর ৪৪ দিন আগে এসেছিল বদলির চিঠি । নতুন পোস্টিং মেডিকেল কলেজের চক্ষু বিভাগে । হরমোন গ্রন্থি নিয়ে সুভাষের সারা জীবনের কাজ । চোখে হরমোন গ্রন্থিই নেই , ফলে সুভাষের গবেষণার কোনও ভূমিকাই নেই । তার বিভাগটি ছিল লিফ্ঠহীন এক ভবনের চার তলায় । আর জি কর কলেজে সিড়ি ভেঙে দোতলায় উঠতে অসুবিধা হচ্ছিল বলে বদলির আবেদন করেছিলেন সুভাষ । সেই মানুষকে চারতলায় বদলি করার নিষ্ঠুর প্রহসন সরকারী আমলাই করতে পারে । আজ ও একটা প্রশ্ন শোনা যায়। সুভাষ কী তার কাজের বিজ্ঞান সম্মত প্রমাণ দিতে পেরেছিলেন ? তার গবেষনার রিপোর্ট বেরোয়নি কোনও আন্তর্জাতিক জরনালে । এডওয়ার্ড স্টেপটোর মতো তিনি প্রতীটি পর্যায়ে ফটো তুলে রাখেননি তথ্যের খুটিনাটি লিখে রাখেননি । এই যুক্তি দেখিয়েই মুম্বাইয়ের ডাক্তার হিন্দুজা বরাবর দাবি করেছেন তিনি প্রথম সায়েনটিফিকালী ডকুমেণ্টেড টৈস্ট টিউব বেবী হর্ষর (১৯৮৬ ) শ্রষ্ঠা । সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে সুভাষের কাজের সাক্ষ প্রমাণ নিয়ে সুনীতি মুখোপাধ্যায় দুই দশক নানা কতৃপক্ষের কাছে দরবার করেছেন। সে ছিল বন্ধ দরজায় মাথা কোটা । সেই দরজা খুললেন অন্ধ্রবাসী এক বৈজ্ঞানিক টি সি আনন্দ কুমার । তার সামনে বাঙ্গালীকে মাথা নত করতে হয় শুধু লজ্জায় নয় শ্রধ্যায় । বৈজ্ঞানিকের ঔদার্যর সত্যপরায়নতার রূপ কী , তার প্রমাণ আনন্দ কুমার । ফিজইলজিস্ট আনন্দ কুমার ছিলেন হর্ষর প্রকৃত রূপকার । ইন্দিরা হিন্দুজা তারই ছাত্রী । বিজ্ঞানীমহলে ভারতের প্রথম টৈস্ট টিউব বেবী সৃষ্টির কৃতিত্ব্য দিয়ে এসেছে আনন্দ কুমারকেই । ১৯৯৭ সালে সুভাষের ঘনিষ্ঠ বন্ধু চিকিত্সক বিজ্ঞানী বৈদ্যনাথ চক্রবর্তীর আহবানে আনন্দ কুমার এসেছিলেন কলকাতায় সুভাষ মুখোপাধ্যায় কে স্মারক বক্তৃতা দিতে । তখন তার আগ্রহেই তার হাতে সুভাষের গবেষণা সংক্রান্ত সমস্ত্ত কাগজপত্র তুলে দেওয়া হয় । আগরবাল দম্পতির সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। সব খতিয়ে দেখে আনন্দ কুমার নীঃসন্দেহ হন, সুভাষ বাস্তবিক টৈস্ট টিউব বেবীর জনক । বক্তৃতায় তিনি সে কথা ঘোষণা করেন ,প্রবন্ধ লেখেন কারেন্ট সায়েন্স জার্নালে । প্রধানত তার উদ্যোগেই ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকাল রিসার্চের কৃত্রিম প্রজনন বিষয়ক এক নথিতে সুভাষ মুখোপাধ্যায় কে প্রথম টেস্টে টিউব শিশুর রূপকার হিসাবে উল্লেখ করা হল । ২০০২ সালে প্রকাশিত ঐ নথিই সরকারীভাবে সুভাষ বাবুর প্রথম স্বীকৃতি । এ বছর ভারতে কৃত্রিম প্রজননের ২৫ বছর বলে দুর্গার জন্মত্সবও আনন্দকুমারের উদ্যোগে । বলতে গেলে নিজের মাথা থেকে বিজ্ঞানের বরমাল্য খুলে সুভাষের ছবিতে পরিয়ে দিয়েছেন সহস্র ক্ষুদ্রের মাঝে মহতো মহীয়ান ঐ বৈজ্ঞানিক । তাহলে সমকালীনদের কেন সন্তুষ্ট করতে পারেননি সুভাষ ?সুভাষ ও তার সহযোগীরা তাদের পদ্ধতির একটি বিবরণ জমা দিয়েছিলেন স্বাস্থ্য দফতর কে কিন্তু আর বিশদ ব্যাখা চায় তদন্ত কমিটি । সুভাষ বলেন কোনও বৈজ্ঞানিক জর্নালে তার গবেষণা প্রকাশিত না হওয়া অবদি তিনি বিস্তারিত তথ্য দেবেন না । মনে রাখতে হবে প্রথম টৈস্ট টিউব বেবী বেবী লুইসি ব্রাউনের জন্মের পর স্টেপটো এবং এডওয়ার্ড প্রবল চাপ সত্ত্বেও তথ্য প্রকাশ করেছিলেন প্রায় ছয় মাস পরে , লণ্ডনের royal collage of obstructive and gynecologist দের সামনে । একই ভাবে সুভাষ তার বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রকাশ করেন ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেসে । জাপানে কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয় খরচ দিয়ে সুভাষকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল । সেখানে সিকৃতি পেলে হইতো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নিয়ে এত কথা উঠতো না । সরকার বিদেশ যাত্রার অনুমতি দেয়নি । দুর্গার জন্মের এক্সপেরিমেন্ট আবার করে দেখিয়ে দিতে চেয়েছিলেন , সে সুযোগও পাননি ।
সরকারী কর্তাদের সঙ্গে সহ চিকিত্সকদের সঙ্গে সুভাষের ঐ বিরোধের আর এক কারণ ছিল সুভাষের স্পষ্টবাদিতা, তার নো-ননসেন্স মনোভাব । তদন্ত কমিটির সদস্য এক gynecologist বলতে শুরু করেন ডিম্বাণুগুলো তো নেগেটিভ চার্জ বহন করে ... সুভাষ তাকে থামিয়ে বলেন আপনি কোনদিন ডিম্বাণু দেখেছেন? ডাক্তার স্বীকার করেন তিনি দেখেননি । সুভাষ বলেন then don't talk about it. ডাক্তার কে মুখ ধোয়ার ছল করে উঠে যেতে হয়েছিল । এফ আর সি এস ডিগ্রী কে কার্পেণ্টার্স টেষ্টিমনিয়াল বলতে বাধেনি সুভাষের , ঘনিষ্টমহলে এক লাখী গাইনি কে এক কথায় গ্লোরিফয়েড দাই বলে উড়িয়ে দিয়েছেন । এমন মানুষের শত্রুর অভাব হয়না । তবু । তবু শুধু ব্যক্তিগত বিদ্বেষে বাঙালির কাঁকড়া মনোভাবে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের জীবন ও কৃতিত্বের রাহুগ্রাসের ব্যাখা হয়না । কিছু বিদ্বিষ্ট মানুষ সর্বত্র সর্বকালে থাকেন । তাদের ছাপিয়ে উঠেই বিজ্ঞান সাহিত্য ললিতকলার নব উন্মেষ হয়ে থাকে । পরাধীন ভারতে বাঙালীর প্রতিভার স্ফুরণ হল , সত্তরের কলকাতায় কেন হলনা ? হয়তো তার কারণ এই যে বিজ্ঞানের আবিষ্কার শাশ্বত হলেও বিজ্ঞানী তার সমকালের উর্ধে নন । পরাধীন ভারতে সম্রাজ্যবাদের মোকাবিলায় মস্তিষ্ক মূলধন করেছিল বাঙালি । বিজ্ঞানচর্চা তখন স্বাদেশিকতার অঙ্গ । পঞ্চাশ ষাটের দশকে ছিল নেশান বিল্ডিংগের নেশা । বিদেশে যা কিছু প্রযুক্তি বৈজ্ঞানিক উত্কর্ষ টা আনতে হবে ভারতে এই প্রেরণা কাজ করেছে । সত্তর দশকে চিত্র ভিন্ন । সদ্যসৃষ্ট বাংলাদেশ থেকে উদ্বাস্তুর ঢল ইমারজেন্সীর সাঁড়াশি চাপ প্রবল আর্থিক মন্দা একটা গোটা প্রজন্মের নতুন সমাজ ব্যবস্থার সপ্ন ছিন্নভিন্ন । বিশের দশকের কলকাতা জাতীয় জীবনেও ব্যাকওয়াটার । সপ্ন দেখা মানুষেরা সেদিন সমাজের ঝুকি মাঝারিয়ানায় সমাজের স্বস্তি । সেই সময়ে সুভাষ অকস্মাত্ নতুন নক্ষত্রের মতো জলে উঠেছিল । তাই তার চারিদিকে অন্ধকার আরও ঘন হয়েছিল । এও মনে রাখতে হবে সত্তর ছিল গর্ভনিরোধক নিয়ে গবেষনার দশক । বিশ্বে তখন কণ্টরাসেপ্টিভ গবেষনায় কোটি কোটি ডলার খরচ হচ্ছে , আর ভারতে হাজার হাজার দরিদ্র পুরুষ মহিলাকে বন্ধ্যাকরনে বাধ্য করছে সরকার । সেই সময়ে গরীব মেয়ের সন্তান ধারণের সপ্ন সফল করতে চায় যে বিজ্ঞানী সে গণশত্রু ছাড়া আর কী ? তায় এত গোপনীয়তা , এত সাবধানতায় কাজ করেছিলেন সুভাষ । কোনও সরকারী অর্থসাহায্যে নয় , কোনও রিসার্চইন্সটিটুটের দাক্ষিন্যে নয় , এমনকি কোনও হাসপাতলের পরিকাঠামতেও নয় । দলহীন সমর্থহীন মানুষটিকে ব্রাত্য করা তাই সহজ হয়েছিল । তার সমকাল যে সুভাষকে বুঝে উঠতে পারেনি তা আশ্চর্য নয় । এখন প্রশ্ন এই বর্তমান কাল সুভাষের বহুবিধ বিচিত্র গবেষনায় মূল্যায়ন করে উঠতে পারবে কিনা , তার আসনটি পাতবে কি না বাংলার ভারতের শ্রেষ্ট বিজ্ঞানীদের পাশে ।
I have tried to make a collection of a few links, which would give the interested reader an insight into the life of Dr Subhas Mukherjee. Apart from watching ‘Ek Doctor ki Maut’ by Tapan Sinha and reading 'অভিমন্যু' a novel by রমাপদ চৌধুরী, one could follow the given articles:
1) The Story of Dr Subhash Mukhopadhyay - Who Created India's First Test Tube Baby - Only To Have The System Fail Him
https://www.indiatimes.com/…/the-story-of-dr-subhash-mukhop…
2) Beautiful Mind: The story of Dr. Subhas Mukherjee creator of India's first test-tube baby - Times of India
https://www.dur.ac.uk/asian.infertilities/news/?itemno=8158
3) The forgotten hero of IVF by Anindita Ghose
https://www.livemint.com/…/d…/The-forgotten-hero-of-IVF.html
4) The Great Scientist Dr.Subhas Mukhopadhyay
https://drsubhasmukhopadhyay.blogspot.com/
5) A lifetime in solitude after husband denied recognition
https://indianexpress.com/…/a-lifetime-in-solitude-after-h…/
6) Dr. Subhash Mukhopadhyay, The Medical Wizard Who Committed Suicide Because Of Everyone’s Negligence
https://topyaps.com/subhash-mukhopadhyay-first-test-tube-ba…
7) Is an “Indian Crab Syndrome” Impeding Indian Science? By Beryl Benderly
http://blogs.sciencemag.org/sciencec…/…/the-award-of-th.html
8) The Indian IVF saga: a contested history by AdityaBharadwaj (this exceptional article has a Pandora’s Box of associated links)
https://www.sciencedirect.com/…/artic…/pii/S2405661816300120
ভালো থাকুন


সুমন বনাম তসলিমা




    সুমন বনাম তসলিমা


     শেয়ার করেছেন           প্রণব কুমার কুণ্ডু



রজত দাস     ফেসবুক থেকে


সুমনকে যেমন চিনেছি : তসলিমা নাসরিন

আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু ভাস্কর সেন নিয়ে এসেছিলেন সুমন চট্টোপাধ্যায়কে আমার কাছে। তখন দু'হাজার সালের শুরু। সে রাতে সবাইকে নিয়ে আহেলিতে গিয়েছিলাম বাঙালি খাবার খেতে। অনেকক্ষণ গল্প হয়েছিল সুমনের সঙ্গে।

সুমন বলেছিলেন, তিনি হিন্দুদের ভিড়ে মুসলমান হতে আর মুসলমানের ভিড়ে হিন্দু হতে পছন্দ করেন।

এভাবেই তিনি তাঁর সেকুলারিজমের লড়াই করেন।

বলেছিলাম,এখানে হিন্দু ওখানে মুসলমান হওয়ার দরকার কী, সবখানে মানববাদী হলেই তো হয়!

আমি যেমন! হিন্দু আর মুসলমানের বিরুদ্ধে যা কিছু বৈষম্য, মানবতাবাদী হিসেবে আমি তার প্রতিবাদ করি!

শেষ পর্যন্ত দেখলাম, সুমনের পদ্ধতিটাই সুমনের পছন্দ।

যাবার সময় সুমন বলেছিলেন, 'সেকুলারিজমের কসম, এই কলকাতায় আপনার নিরাপত্তার জন্য আমি যা কিছু করার করবো'।

কী যে মিথ্যে ছিল সেই প্রমিস !

এর কয়েক বছর পরেই সুমন চট্টোপাধ্যায় তখন কবীর সুমন, নিজেই ফতোয়া দিলেন আমার বিরুদ্ধে।

সত্যি কথা বলতে কী, মৌলবাদিদের অত ভয়ংকর ফতোয়াকেও আমি অত বেশি ভয়ংকর মনে করিনি, যত করেছি সুমনের ফতোয়াকে।

টিভিতে আমার 'দ্বিখণ্ডিত' বইটি খুলে পয়গম্বর মুহম্মদকে অসম্মান করে কোথায় কী লিখেছি তা শুধু পড়েই শোনাননি, দেখিয়েছেনও। ক্যামেরায় বইয়ের সেই পৃষ্ঠাগুলো ধরে রেখেছেন, যেন সবাই পড়তে পারে। লক্ষ লক্ষ মুসলমান 'তারা টিভি'-র 'মতামত' অনুষ্ঠান দেখছে তখন, পড়ছে সুমন যা পড়তে বলছেন।

 কোনও জঙ্গি মুসলমান সে রাতে আমাকে খুন করতে পারতো।

নির্ঘাত পারতো।

আমি থাকতাম মুসলিম অধ্যুষিত পার্ক সার্কাসের কাছেই রওডন স্ট্রিটে।

সে রাতে ভয়ে আমার গা কেঁপেছে। সে রাতেই আমি প্রথম জানালা দরজাগুলো ভালো করে লাগানো হয়েছে কিনা পরখ করে শুয়েছি।

সে রাতে আমি সারারাত ঘুমোতে পারিনি।

মৌলবাদীরা কোনোদিনই স্পষ্ট করে বলতে পারেনি ইসলাম সম্পর্কে কোথায় আমি ঠিক কী লিখেছি, প্রমাণ দেখাতে পারেনি আমার ইসলাম-নিন্দার।

কিন্তু সুমন সেই কঠিন কাজটা একটা বদ উদ্দেশ্যে সহজ করে দিয়েছেলেন সে রাতে।

আমার বিরুদ্ধে এমন চরম শত্রুতা করলেন সাংস্কৃতিক জগতের নামি দামি এক শিল্পী! অবিশ্বাস্য লাগে সবকিছু। কেমন যেন শ্বাস কষ্ট হতে থাকে। যেন সুস্থ স্নিগ্ধ খোলা হাওয়া নেই আর কোথাও।

সুমন বলেছেন আমার বিরুদ্ধে মৌলবাদীদের জারি করা ফতোয়াকে তিনি সমর্থন করেন।

এমনিতে নব্য-মুসলিমদের সম্পর্কে বলাই হয় যে তারা মৌলবাদীদের চেয়েও দু-কাঠি বেশি মৌলবাদী।

সুমন মুসলিম হয়েছেন বললেও মনে প্রাণে মুসলিম হয়েছেন বলে কিন্তু আমার কখনই মনে হতো না।

ভাবতাম বোধহয় নিজের হিন্দু নাম ঝেড়ে ফেলে হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে একধরণের প্রতিবাদ করেছেন।

মৌলবাদী বলে ওঁকে ভাবার তো প্রশ্ন ওঠে না।

কিন্তু 'তারা' টিভির অনুষ্ঠানটি আমাকে বিস্মিত করে, নিজের চোখকে, কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।

টিভিতে বারবারই সুমন বলেছেন, তার পয়গম্বর সম্পর্কে আমি জঘন্য কথা লিখেছি, আমার শাস্তি প্রাপ্য।

 যে সুমনকে এতকাল নাস্তিক বলেই আমরা জানতাম, গানও লিখেছেন ভগবানকে কটাক্ষ করে, তিনি কিনা সমর্থন করছেন ধর্মীয় মৌলবাদীদের জারি করা ফতোয়া, আমার বিরুদ্ধে ধার্য করা মাথার মূল্য!!

শুরু থেকেই সুমন আমার বই নিষেধাজ্ঞার পক্ষে।
কলকাতা হাইকোর্ট আমার বইটির ওপর থেকে একসময় নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিল।

এটি মুক্তচিন্তার মানুষদের কাছে সুখবর হলেও সুমনের কাছে সুখবর ছিল না।

কলকাতা বইমেলাতেও মুসলিম মৌলবাদীদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের পক্ষ নিয়ে আমার অনুরাগী পাঠকদের গালিগালাজ করেছেন সুমন।

 কেউ কেউ বলে, মৌলাবাদীদের কাছ থেকে নানান সুযোগ সুবিধে পান তিনি।

আমি জানিনা কী সেই সুযোগ সুবিধে যার জন্য তিনি বাক স্বাধীনতার বিপক্ষে যান, মুসলিম সন্ত্রাসীদের পক্ষে তর্ক করেন।

আমার বিশ্বাস হয় না সুমন সত্যিই মুহম্মদকে পয়গম্বর মানেন, বা ইসলামে সত্যিই বিশ্বাস করেন।

যখন যেটা তার প্রয়োজন, সেটায় বিশ্বাস করেন।

বামপন্থীদের বিরুদ্ধে গান বেঁধেছেন, যখন ডানপন্থীদের আশ্রয় তাঁর দরকার।

মুসলিম মৌলবাদীদের সব সরকারই পেন্নাম করে।

সুতরাং ওই মৌলবাদী দলে ভিড়লে তাঁর লাভ বৈ ক্ষতি হবে না, সম্ভবত জানতেন।

সুমনের গানের কথাগুলো খুব ভালো। সেসব কথা বাংলার লক্ষ মানুষ বিশ্বাস করলেও সুমন বিশ্বাস করেন বলে মনে হয় না। গানে উদারতার কথা বললেও বাস্তবে তাঁকে হিংসুক আর ক্ষুদ্র মনের মানুষ হিসেবে দেখেছি।

একবার উত্তম মঞ্চে নন্দিগ্রামের গান গাইছিলেন, আমি ছিলাম দর্শকের সারিতে। দর্শকদের মধ্য থেকে কে একজন মনে নেই কী মন্তব্য করেছিলো, সুমন এমনই ক্রুদ্ধ হলেন, এমনই ক্রুদ্ধ হলেন, যে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বিচ্ছিরি গালি দিতে লাগলেন। লোকটা বেরিয়ে না গেলে তিনি হয়তো তাকে মঞ্চে টেনে এনে মারতেন।

সুমন বলেছেন তিনি পলিগ্যামাস লোক।

বহুনারীর সঙ্গে সম্পর্ক তাঁর।

সে থাক, কিন্তু তিনি যে বড্ড নারীবিরোধী লোক। তাঁর জার্মান বউ মারিয়াকে তিনি শুধু মানসিক ভাবে নয়, শারীরিক ভাবেও নির্যাতন করতেন। মারিয়া মামলা করেছিলেন সুমনের বিরুদ্ধে। পুলিশ সুমনকে গ্রেফতার করেছিলো ১৯৯৯ সালে। বধুনির্যাতন মামলায় সহজে কেউ জামিন পায় না, কিন্তু সুমন পেয়েছিলেন। শুনেছি ক্ষমতার লোকেরা তাঁকে জামিন পেতে সাহায্য করেছিলেন। মারিয়ার ফ্ল্যাট, জিনিসপত্র -- কিছুই নাকি সুমন তাঁকে ফেরত দেননি। মারিয়া শেষ পর্যন্ত খালি হাতে জার্মানিতে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন।

পশ্চিমবঙ্গে তাঁর জনপ্রিয়তা খানিকটা কমতে শুরু করলে তিনি ঘন ঘন বাংলাদেশে যেতে থাকেন। বাংলাদেশে জনপ্রিয় হতে গেলে শুধু রুদ্রর গান গাইলেই চলে না, ভীষণ রকম তসলিমা বিরোধী হতে হয়,সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আর সমরেশ মজুমদারের মতো এই তথ্যটি সুমনও জেনেছিলেন। আর,হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করলে তো আর কথাই নেই। সংখ্যাগুরু বাঙালি মুসলমান মাথায় তুলে নাচবে।এই সেদিন বর্ধমানে মুসলিম মৌলবাদীদের বোমা হামলার পরিকল্পনা ধরা পড়ার পর সুমন একে বিজেপির কীর্তি বলেছেন, লোকে বলে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সুদৃষ্টি পাওয়ার আশায় এটি করেছেন। ক্ষমতার বড় লোভ সুমনের।টাকা পয়সারও লোভ প্রচণ্ড। অথচ কী ভীষণ আদর্শবাদী বলে ভাবতাম মানুষটাকে। এখনও অবশ্য প্রচুর লোককে বোকা বানিয়ে চলছেন। অভিনয় ভালো জানেন বলে এটি সম্ভব হচ্ছে!

সৌজন্যেঃ অন্যজগত অন্যপথ




মা কামাখ্যা



       মা কামাখ্যা



Rupok Roy   ফেসবুক থেকে   শেয়ার করেছেন    প্রণব কুমার কুণ্ডু


কামাখ্যার যোনি পূজা আসলে কী ?

পৌরাণিক কাহিনী মতে, বাপের বাড়িতে স্বামী মহাদেবের অপমান হলে, মহাদেবের স্ত্রী ‘সতী’ সেই অপমান সইতে না পেরে দেহত্যাগ করে অর্থাৎ মৃত্যুবরণ করে। এই ঘটনার ফলে মহাদেব শিব ক্ষিপ্ত হয়ে সতীর মৃতদেহ ঘাড়ে নিয়ে তাণ্ডব নৃত্য শুরু করলে পৃথিবী ধ্বংসের উপক্রম হয়, এই পরিস্থিতিতে পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য বিষ্ণু তার চক্র দিয়ে সতীর দেহকে খণ্ড বিখণ্ড করে এবং এরপর সেই খণ্ডগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে, ফলে মহাদেবের তাণ্ডব নৃত্য বন্ধ হয়।

বাস্তব পৃথিবীতে এই ঘটনা না ঘটলেও, যেহেতু, পুরাণের মাধ্যমে লিখিত হয়ে এই ঘটনা পৃথিবীতে প্রচলিত হয়েছে এবং পুরানে এই কথাও লিখা হয়েছে যে, সতীর দেহের কোন খণ্ড কোথায় পতিত হয়েছে, সেই সূত্রে সেই সব স্থানে ছোট হোক বা বড় হোক একটি করে পীঠ বা তীর্থ স্থান গড়ে উঠেছে; এমনই একটি স্থান হলো ভারতের আসাম প্রদেশের কামরূপ কামাখ্যা; বিশ্বাস করা হয়, এখানে পতিত হয়েছিলো, সতীর কর্তিত যোনী। পুরাণ মতে, সতীর দেহ ৫১ খণ্ডে বিভক্ত হয়ে পৃথিবীর যে ৫১ জায়গায় পড়েছিলো, সেই সব জায়গা বর্তমানে হিন্দুদের জন্য এক একটি তীর্থস্থান, এমনই একটি তীর্থস্থান হলো বাংলাদের চট্টগ্রামের চন্দ্রনাথ পাহাড়, যেখানে পড়েছিলো সতীর ডান হাত।

বেশ কয়েক বছর আগে, সম্ভবত ২০১১/১২ সালে, শ্রীলঙ্কার ৯/১০ জন মন্ত্রী এসেছিলো বাংলাদেশের চট্টগ্রামের এক বৌদ্ধমন্দিরে; কারণ, সেই মন্দিরে গৌতম বুদ্ধের মাথার কিছু চুল সংরক্ষণ করা ছিলো। বৌদ্ধধর্মের গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে সেই চুল ছিলো তাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূরর্ণ, তাই তারা তা এত গুরুত্ব দিয়ে নিতে এসেছিলো। আর বাংলাদেশ সরকার, সেই চুলকে বাল অর্থাৎ অপ্রয়োজনীয় মনে ক’রে বিনা শর্তে, সেই চুল শ্রীলঙ্কাকে দিয়ে দিয়েছিলো; কারণ, বাংলাদেশ সরকারের তো এই ইচ্ছা যে যত দ্রুত সম্ভব এই মুসলিম দেশ থেকে কাফের মুরতাদদের স্মৃতিচিহ্ন দূর হোক, যাতে বাংলাদেশ হান্ড্রেড পার্সেন্ট মুসলমানের দেশ অর্থাৎ দার-উল-ইসলাম হতে পারে। কিন্তু এই চুলের কারণেই প্রতি বছর শ্রীলঙ্কা যে লক্ষ লক্ষ ডলারের পর্যটন ব্যবসা করবে- কারণ, সারা পৃথিবীর বৌদ্ধরা সেই চুল দেখার জন্য শ্রীলঙ্কা যাবে- এটা বাংলাদেশের মুসলমান সরকার বোঝেই নি; বুঝলে তারা সেই চুল শ্রীলঙ্কাকে দিতো না, বাংলাদেশে রেখেই সারা পৃথিবীর বৌদ্ধ পর্যটক আকর্ষণ করে লক্ষ ডলারের ব্যবসা করতো। কারণ, গৌতম বুদ্ধের এই চুল যেখানে থাকবে, সেই জায়গা ই বৌদ্ধদের কাছে একটা পবিত্র তীর্থস্থানে পরিণত হবে।

গৌতম বুদ্ধের পুরো মূর্তি থাকতে, বুদ্ধ ভক্তদের কাছে বুদ্ধের এই সামা্ন্য চুলের এত কদরের কারণ কী ? গৌতম বুদ্ধের মাথায় তো কোনোদিন চুলই ছিলো না, তার সেই আদর্শকে ধারণ করেই বৌদ্ধ ভিক্ষুরা সব সময় ন্যাড়া মাথায় থাকে, তাহলে এই চুল কি তার যৌনাঙ্গের ? এটাই হওয়া সম্ভব। না হলে এত বড় চুল, যা আড়াই হাজার বছর ধরে টিকে আছে, তা এলো কোথা থেকে ? তাহলে এটা প্রমান হলো যে, বৌদ্ধরা গৌতম বুদ্ধের যৌনাঙ্গের চুলকেও রেসপেক্ট করে, সম্মান করে।
বর্তমানে, পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে কাশ্মিরের শ্রীনগরে ‘হযরত বাল মসজিদ’ নামে একটা মসজিদ আছে। এই মসজিদের এই রকম নামকরণের কারণ হলো, বলা হয়, হযরত মুহম্মদের দাড়ির একটি চুল নাকি এই মসজিদে সংরক্ষণ করা আছে; বছরে ১ দিন তা সকলের দেখার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়; একবার সেটা নাকি চুরিও হয়ে গিয়েছিলো। তাছাড়া এই মসজিদে নাকি দুই দুইটি AK-47 দ্বারা পাহারা বসানো আছে, কারণ আর কিছুই নয়, কে যে কখন ‘আল্লা হু আকবর’ বলে মসজিদের নামাজরত মুসলমানদেরে উপর গুলি করা শুরু করে তার তো কোনো ঠিক নেই, আল্লার ঘর মসজিদে আল্লার বান্দাদের বাঁচানোর জন্যই তাই কাফেরদের তৈরি এই অস্ত্রের ব্যবহার।

যা হোক, দাড়ির চুল হোক বা মাথার চুল হোক বা হোক অন্য কিছুর, চুলের হিন্দি বা উর্দু নাম যেহেতু বাল, সেহেতু এই মসজিদের নাম হয়েছে ‘হযরত বাল মসজিদ’ অর্থাৎ হযরতের বালের মসজিদ। মুসলমানের কাছে এই মসজিদ খুবই সম্মানজনক; কারণ আরবের বাইরে শুধু এই মসজিদেই নবীর দেহের কোনো স্মৃতিচিহ্ন আছে। যে চুল কাটলে ব্যথা লাগে না, যে চুল প্রতিমাসেই কেটে ফেলে দিতে হয়, যে চুল বলতে গেলে মানব শরীরের একটা আগাছা, সেই চুল নিয়ে বৌদ্ধ ও মুসলমানদের এত আবেগের কারণ কী ? নিশ্চয় আবেগ এই জন্য যে, সেটা তাদের ধর্মগুরুর একটা বিশেষ স্মৃতিচিহ্ন ?

এছাড়াও আরবের মদীনায় এখনও সংরক্ষণ করা আছে, নবীর ব্যবহৃত জিনিস পত্র- পাগড়ি, বদনা, লাঠি, পোষাক, মানুষ খুন করার একাধিক তলোয়ার, এমনকি মুহম্মদের লিঙ্গও; মুহম্মদের মৃত্যুর পরও যে লিঙ্গ নাকি আকাশের দিকে খাড়া হয়ে ছিলো, কিছুতেই নিস্তেজ হচ্ছিলো না, শেষ পর্যন্ত আলী নাকি সেই লিঙ্গ কেটে রেখে দেয় এবং তারপর মুহম্মদকে কবর দেওয়া হয়, এই লিঙ্গকে মুসলমানরা আদর করে বলে ‘লিঙ্গদণ্ড মোবারক’, যেটাকে মুসলমানরা মমীর মতো করে সংরক্ষণ করে রেখে দিয়েছে। মুহম্মদ, হজরে আসোয়াদ নামের কালো পাথরের উপর পা রেখে কাবার কিছু কাজ করেছিলো ব’লে, মুসলমানরা হজ করতে গিয়ে যেভাবে সেই কালো পাথরকে চুমু খেয়ে খেয়ে থুতুতে ভরিয়ে তুলে, এই লিঙ্গ যদি তারা কাছে পেতো বা তাকে স্পর্শ করার সুযোগ বা অনুমতি পেতো, তাহলে তা মুখে নিয়ে যে কিভাবে চুষতো, সেটা তো অনুমান ই বলে দিচ্ছে।
মুহম্মদের চুল, বাল, লিঙ্গ নিয়ে মুসলমানরা যদি এত স্পর্শকাতর বা এত আবেগ আপ্লুত হতে পারে, তাহলে- মহাদেব শিব, যিনি হিন্দুদের একজন আদি দেবতা, তার স্ত্রী বলে যাকে কল্পনা করা হয়, সেই সতীর দেহের একটি অংশ যেখানে আছে বলে বিশ্বাস করা হয়, সেই স্থানে দেহের সেই অংশের প্রতীক বানিয়ে যদি তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে পূজা করা হয়, তাহলে সেটা কি খুব দোষের ?

মুসলমানরা কামাখ্যার যোনি পূজা বলতেই অশ্লীল কিছু বুঝিয়ে থাকে, যেন সেখানে গিয়ে হিন্দুরা শুধু কামলীলাতেই মগ্ন থাকে; হিন্দুরা এমন কামুক ও নোংরা মনমানসিকতা সম্পন্ন হলে, সারা পৃথিবীর সব হিন্দুরা, শুধু আসামের কাম্যাখ্যাতে গিয়েই যোনি পূজা করতো, আর সতীর দেহের অন্যান্য অংশের স্মৃতিচহ্ন স্বরূপ যে জায়গাগুলোতে সতীপীঠ বা তীর্থস্থান গড়ে উঠেছে সে জায়গাগুলোর মাহাত্ম্য বা আড়ম্বর বিলুপ্ত হয়ে যেতো।

কিন্তু তা হয় নি, ৫১ টা পীঠ এখনও স্বমহিমায় জাগ্রত আছে, প্রতিটি জায়গাতেই প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ সমাগম হয়; এমনকি যেখানে হাতের একটি আঙ্গুল পড়েছিলো, সে জায়গাও যেমন বিখ্যাত, তেমনি যে জায়গায় পায়ের একটি আঙ্গুল পড়েছিলো, সে জায়গায়ও বিখ্যাত। এই সব ঘটনা এটা প্রমান করে যে, কামে বিভোর হয়ে হিন্দুরা কামাখ্যাতে যোনী পূজা করে না বা করতে যায় না, যায় সতীর দেহের একটি অংশ সেই জায়গায় আছে বলে, সেই অংশের মাধ্যমে সতীকে স্মরণ করতে, স্বামীর অপমান সইতে না পারা এক মেয়ের আত্ম বলিদানকে শ্রদ্ধা জানাতে এবং এই সব স্মরণের মাধ্যমে এমন এক দেবতাকে স্মরণ করতে, যিনি নিজের স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার জন্য পৃথিবীকে ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন।

এখানে ধ্বংসটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা। স্বামী-স্ত্রীর এই প্রেমকে স্মরণ করতে, হিন্দুরা প্রেম রূপ কামকে পূজা করে সতীর ঐ যোনী প্রতীকের মাধ্যমে। এতে খারাপটা কী ? কোন পুরুষ তার স্ত্রীর যোনীর পূজা করে না ? সবাই করে। যোনী পূজার জন্যই তো বিবাহের উৎপত্তি এবং নারী পুরুষের দৈহিক মিলনের ব্যবস্থা। পুরুষ, নারীর যোনীর পূজা করে বলেই তো সৃষ্টি টিকে আছে। যে মূর্খ মুসলমানরা এই সব নিয়ে সমালোচনা করে, তারা কি জানে না যে- তার বাপ, তার মায়ের যোনির পূজা করেছিলো বলেই তার জন্ম সম্ভব হয়েছে ?

মুসলমানরা যখন হজ করতে গিয়ে যোনী সদৃশ হজরে আসোয়াদ নামক পাথরে চুমু খায়, আর নবীর স্মৃতিচিহ্নকে স্মরণ করার জন্য পরম সম্মানের সাথে বলে নবীর ‘লিঙ্গ দণ্ড মোবারক’, তখন সেটা যোনী বা লিঙ্গ পূজা হয় না; আর যখন হিন্দুরা এমন কিছু করে তখন সেটা হয় অশ্লীল, তাই না ? ভণ্ড আর কাকে বলে ?

হিন্দুরা, মুসলমানদের মতো শুধু নিজের মাকে মা, আর অন্য সব মহিলাদেরকে যৌন সামগ্রী মনে করে না, সব নারীকেই তারা মাতৃতুল্য বিবেচনা করে, তাই আসামে গিয়ে যার যোনি পূজা করে, তাকেও বলে ‘মা কামাখ্যা’। যোনি পূজার সময় মনে অশ্লীল চিন্তা এলে কাউকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করা যায় না; তখন সে হয় স্ত্রী না হয় পতিতালয়ের বেশ্যা; কিন্তু হিন্দুরা, কামরূপ কামাখ্যার দেবী, যাকে যোনি রূপে পূজা করা হয়, তাকে মা বলেই সম্বোধন করে এবং মা ই মনে করে।

জয় হিন্দ।

From: Krishna kumar das

💜 জয় হোক সনাতনের 💜