প্রফুল্ল ঘোষ
শেয়ার করেছেন প্রণব কুমার কুণ্ডু।
Jayanta Ray
প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ : ১২৬ তম জন্মদিন !!
অখণ্ড বাংলার মালিকান্দায় (ঢাকা) ২৪ ডিসেম্বর ১৮৯১ সালে জন্ম। পিতা পূর্ণচন্দ্র ঘোষ ছিলেন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। স্বাধীন ভারতে পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হন প্রফুল্লচন্দ্র। তার আগে ১.৭.১৯৪৭ সালে তারিখে তাঁর নেতৃত্বে দশজন মন্ত্রী নিয়ে ছায়া মন্ত্রীসভা গঠিত হয়েছিল। ২ জুলাই এই মন্ত্রীসভার সদস্যগণ শপথ গ্রহণ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন বিভাগে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। ১৯১৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিএসসি। অল্পদিন ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। পরে টাঁকশালে ডেপুটি অ্যাসেস মাস্টার নিযুক্ত হন। এই পদে তিনিই প্রথম ভারতীয়। ১৯২১ সালে চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় মোট আট বছর কারারুদ্ধ থাকেন। মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ প্রচারের জন্য ডা: সুরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘অভয় আশ্রম’ গঠন করেন। ঢাকায় ছাত্রাবস্থায় বিপ্লবী দেশকর্মীদের সংস্পর্শে আসেন যাদের মধ্যে পুলিনবিহারী দাস অন্যতম। ১৯২৪ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক রাষ্ট্রীয় সমিতির সম্পাদক, ১৯৩০ সালে লবণ সত্যগ্রহে অংশগ্রহণ ও ১৯৩৯ সালে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য হন। ১৯৪০ সালে যুদ্ধের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত সত্যগ্রহে যোগ দেন। ১৯৪৭ সালে স্বাধীন ভারতে পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হয়ে প্রশাসনিক উৎকর্ষের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ, দুর্নীতি দমনের চেষ্টা এবং দুর্নীতি রোধ অর্ডিনান্স জারী করেছিলেন। প্রাথমিক শিক্ষাবিস্তারের ব্যাপক পরিকল্পনা এবং দুবছরের মধ্যে বাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষা হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে প্রবর্তিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তাঁর উদ্যোগে১৫.১০.৪৭ সালে রাজশেখর বসু, সুনীতি চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ শিক্ষাব্রতীদের নিয়ে বাংলা পরিভাষা কমিটি গঠিত হয়। সুরেশচন্দ্র মজুমদারের উদ্যোগে এবং তাঁর প্রচেষ্টায় রবীন্দ্রনাথের জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িটি রবীন্দ্রভারতী সোসাইটির হাতে অর্পণ করা হয়। কংগ্রেসের ঊর্দ্ধতন মহলের সঙ্গে মতবিরোধের ফলে মন্ত্রীপদ থেকে তাঁকে সরে আসতে হয়। ১৫.১.১৯৪৮ সালে ডা: বিধানচন্দ্র রায় পশ্চিমবঙ্গ ব্যবস্থা পরিষদে কংগ্রেসী দলের নেতা নির্বাচিত হন এবং পরিষদে কংগ্রেসী দলের সভায় তাঁর পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়। কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ তরে ১৯৫০ সালে নবগঠিত ‘কৃষক মজদুর প্রজা পার্টি’র সম্পাদক হন। এই দল পরে সমাজতন্ত্রী দলের সঙ্গে মিলিত হয়ে ‘প্রজাসমাজতন্ত্রী দল’ নাম হয়। ১৯৫৭ সালে মহিষাদল থেকে বিধানসভায় নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ সালে সাধারণ নির্বাচনে তিনি ঝাড়গ্রাম কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হয়ে আবার বিধানসভায় আসেন এবং অজয় মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে প্রথম যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভায় যোগ দিলেও অল্পদিন পরেই ২.১১.১৯৬৭ তারিখে পদত্যাগ করে প্রোগ্রেসিভ ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (পিডিএফ) নামে নতুন একটি ফ্রন্ট গঠন করেন। ২১.১১.১৯৬৭ তারিখে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন রাজ্যপাল তাঁর নেতৃত্বে পিডিএফ মন্ত্রীসভাকে শপথ গ্রহণ করান। যদিও তিন মাস পরেই তাঁর মন্ত্রীসভার পতন ঘটে। আজীবন গান্ধীবাদী অকৃতদার প্রফুল্লচন্দ্রের শেষ জীবন কাটত শ্রীঅরবিন্দচর্চায় এবং নি:সঙ্গ স্মৃতিচারণায়। তাঁর লেখা বাংলায় ‘প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতি’ এবং ইংরেজিতে ‘অবিভক্ত বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাস’ বই দুটি উল্লেযোগ্য। জার্মান, সংস্কৃত, হিন্দী ও গুজরাতি ভাষাও খুব ভাল জানতেন। সারাভারত গ্রামীণ শিল্প পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, কিছুদিন হরিজন সেবক সমিতির সভাপতি এবং গান্ধী সেবাসংঘের কর্মপরিষদের সদস্য ছিলেন। আইনস্টাইন প্রমুখ বহু যুগন্ধর পুরুষের তিনি সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন।
১৮ ডিসেম্বর ১৯৮৩ সালে প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ ইহলোক ত্যাগ করেন। এঁর সম্পর্কে বর্তমানের রাজনৈতিক কেষ্টবিষ্টুরাও বিশেষ কিছু জানেন বলে মনে হয় কি?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন