রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭

ভূপেন্দ্র কুমার দত্ত


    ভূপেন্দ্র কুমার দত্ত


    শেয়ার করেছেন                                প্রণব কুমার কুণ্ডু।

স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী
ভূপেন্দ্র কুমার দত্ত (জন্মঃ- ৮ অক্টোবর, ১৮৯৪ - মৃত্যুঃ- ২৯ ডিসেম্বর, ১৯৭৯)

১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তিনি বিপ্লবী দলের অন্যতম নেতারূপে জার্মাণ অস্ত্রের সাহায্যে ভারতে অভ্যুত্থান ঘটানোর জন্য আত্মনিয়োগ করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ১৯১৭ সালে তিনি ধরা পড়ে যান। ঐ বছরের শেষে ভারত সচিব মন্টেগু সাহেব ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিচার বিবেচনা করার জন্য আগমন করলে রাজবন্দীরা একযোগে অনশন ধর্মঘট করেন। তখন ভূপেন্দ্র কুমার বিলাশপুরে প্রেরিত হয়েছিলেন। সেখানে আটাত্তর দিন নিঃসঙ্গ অবস্থায় অনশন করেন। তাকে দেশের মধ্যে রাখা বিপজ্জনক মনে করে কিছুদিনের মধ্যে তাকে বার্মার ইনসিন জেলে স্থানান্তরিত করা হয়। ১৯২০ সালে ছাড়া পাবার পরে দলের সিদ্ধান্ত অনুসারে গান্ধীজির অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। সংগঠনের ভিত্তি দৃঢ় ও প্রসারিত করার উদ্দেশ্যে বিপ্লবী কিরণ মুখার্জীর সঙ্গে দৌলতপুরে সত্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। খুলনা সেনহাটের রবি রায় ও রসিক দাস এবং সেই সাথে চারু ঘোষ, কুন্তল চক্রবর্তী প্রমুখেরা সেই আশ্রমে যোগ দেন।
১৯২৩ সালে আবার তারা গ্রেফতার হন। ৫বছর পরে ১৯২৮ সালে মুক্তি পান। মুক্তি পাওয়ার পরে সবাই কলকাতা কংগ্রেসের বিরাট অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। ১৯৩০ এর এপ্রিলে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের সাথে সাথে পুলিশ তৎপর হয়ে ওঠে এবং অন্যান্যদের সাথে ভূপেন্দ্র কুমার দত্তকে,  রাজশাহী কনফারেন্স থেকে ফেরার পথে গ্রেফতার করে। আবার দীর্ঘ আট বছর কারাবাসের পর ১৯৩৮ সালে মুক্তি পান। পুনরায় ১৯৪২ সালে ভারত ছাড় আন্দোলনের সময় ধরা পড়েন এবং ১৯৪৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত কারাবাস করেন।

পাকিস্তানে অতিবাহিত সময়
দেশ বিভাগের পরে পূর্ব পাকিস্তানে বাস করেন। দেশে এম.এল.এ ও পরে এম.পি হন। কিন্তু দেশে থাকা তার পক্ষে বেশীদিন আর সম্ভব হয়নি। কলকাতায় চলে যান।
ভারতে ফিরে আসা
কংগ্রেসের কাজে ও পড়াশুনা নিয়ে জীবনের শেষ কয়েকটি দিন কাটিয়ে দেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো যে, বৃটিশ সরকার তার বিরুদ্ধে কখনো কোন মামলা দায়ের করেনি। তবু তাকে জীবনের ২৫ বছর বিনা বিচারে জেল খানায় কাটাতে হয়। কারণ বৃটিশ সরকার তাকে ভয়ঙ্কর বিপদজনক মনে করে বাইরে রাখতে ভয় পেত। 
এক সময় তিনি সাপ্তাহিক স্বাধীনতা পত্রিকা সম্পাদনা করেন।
জন্ম
তিনি বাংলাদেশের যশোর জেলার ঠাকুরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা কৈলাশ চন্দ্র দত্ত পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর জেলার ম্যানেজার ছিলেন। তার মাতা বিমলাসুন্দরী একজন দানশীল মহিলা ছিলেন। কমলিনী, যদুগোপাল, স্নেহলতা, সুপ্রভা নামে তার চার সহদোর ছিল।
একবার রামায়ণ পড়ার সময় সে লক্ষণের বীরত্বের কাহিনী জানতে পারে এবং ব্রহ্মচর্যে তার দখল সম্পর্কে পড়ে। এরপরে সে তার মার কাছ থেকে ব্রহ্মচর্য সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে,  নিজে সেই পথ অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নেন। ফরিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে থাকাকালীন সময়ে তিনি অনুশীলন সমিতিতে যোগ দেন এবং পরবর্তীতে  বিভিন্ন মানবিক কার্যক্রম এবং ১৯০৫ সালের দেশ বিভাগের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। 
উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য প্রথমে কলকাতায় স্কটিশ চার্চ কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু ১৯১৩ সালে দৌলতপুর হিন্দু একাডেমী কলেজ (পরবর্তীতে বি এল কলেজ)-এ চলে আসেন। এখানেই দেশ প্রেমিক অধ্যাপক শশীভূষণ রায় তাকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করেন। ভূপেন্দ্র কুমার শরীরচর্চা এবং নানা রকম সেবা মূলক কাজের মাধ্যমে নিজেকে অত্যান্ত জনপ্রিয় করে তোলেন। শীঘ্রই তিনি বিপ্লবী দল গঠনে তৎপর হন। ঐ সময় বাঘা যতীন যশোর-ঝিনাইদহ রেললাইন নির্মাণের ঠিকাদারী কর্মসূত্রে যশোরে থাকার সময় মাঝে মাঝে তার বন্ধু দৌলতপুর কলেজের অধ্যাপক শশীভূষণ রায় ও শৈলেন মৌলিকদের সাথে দেখা করতে আসতেন। সেই সময় তার সাথে ভূপেন্দ্রের পরিচয় হয়। ঐ আমলে বিপ্লবী দলভূক্ত সতীশ সেনগুপ্ত অধ্যাপক হিসাবে এবং যশোর বনগাঁ নিবাসী ডাঃ অমুল্য চরণ উকিল ডাক্তার হিসাবে এই কলেজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
ইতহিাসে তার অবদান
তার আত্মজীবনী মূলক লেখা -বিপ্লবের পদচিহ্ন।
Indian Revolution and the Constructive Programme 




শনিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৭

আব্বাস্‌উদ্দীন



আব্বাস্উদ্দীন

শেয়ার করেছেন                 প্রণব কুমার কুণ্ডু।

পল্লীগীতি এবং লোকসঙ্গীত শিল্পী
আব্বাসউদ্দীন আহমদ (জন্মঃ- ২৭ অক্টোবর, ১৯০১ - মৃত্যুঃ- ৩০ ডিসেম্বর, ১৯৫৯)
(আমার শিল্পী জীবনের কথা- আব্বাসউদ্দীন আহমদ-সৃষ্টি প্রকাশনী অনুযায়ী)

তিনি প্রথমে ছিলেন পল্লীগায়ের একজন গায়ক। বিভিন্ন গ্রাম্য অনুষ্ঠানে গান শুনে তিনি গানের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন এবং নিজ চেষ্টায় গান গাওয়া রপ্ত করেন। এরপর কিছু সময়ের জন্য তিনি ওস্তাদ জমিরউদ্দীন খাঁর নিকট উচ্চাঙ্গ সংগীত শিখেছিলেন। রংপুর ও কুচবিহার অঞ্চলের ভাওয়াইয়া, ক্ষীরোল চটকা গেয়ে আব্বাস উদ্দীন প্রথমে সুনাম অর্জন করেন। তারপর জারি, সারি, ভাটিয়ালি , মুর্শিদি, বিচ্ছেদি, দেহতত্ত্ব, মর্সিয়া, পালা গান ইত্যাদি গান গেয়ে জনপ্রিয় হন। তিনি তার দরদভরা সুরেলা কণ্ঠে পল্লি গানের সুর যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন তা আজও অদ্বিতীয়। তিনি কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্দীন, গোলাম মোস্তফা প্রমুখের রচিত গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন। আব্বাস উদ্দিন এইচ এম ভি থেকে গানের রেকর্ড বের করতেন। আব্বাসউদ্দীনের প্রথম রেকর্ডে ছিল ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ ও ‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে’ গান দুটি। তার গাওয়া উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে- ও আমার দরদী আগে জানলে, ওকি ও বন্ধু কাজল ভ্রমরারে, মাঝি বাইয়া যাওরে, সোনাবন্ধুরে কোন দোষেতে যাইবা ছাড়িয়া, আমার হাড় কালা করলা মরে, আল্লাহ মেঘ দে পানি দে, নদীর কূল নাই কিনার নাইরে, আমায় এত রাতে কেনে ডাক দিলি, আমায় ভাসাইলিরে আমায় ডুবাইলিরে, থাকতে পারঘাটাতে তুমি পারের নাইয়া প্রভৃতি। এ ছাড়া কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত গান ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ তার কণ্ঠে প্রথম রেকর্ড করা হয়। আব্বাস উদ্দীন ১৯৩১ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত কলকাতায় বসবাস করেন। প্রথমে তিনি রাইটার্স বিল্ডিংয়ে ডিপিআই অফিসে অস্থায়ী পদে এবং পরে কৃষি দপ্তরে স্থায়ী পদে কেরানির চাকরি করেন। এ কে ফজলুল হকের মন্ত্রীত্বের সময় তিনি রেকর্ডিং এক্সপার্ট হিসেবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করেন। দেশ বিভাগের পর (১৯৪৭ সালে) ঢাকায় এসে তিনি সরকারের প্রচার দপ্তরে এডিশনাল সং অর্গানাইজার হিসেবে চাকরি করেন। দেশের প্রতিনিধি হিসেবে ১৯৫৫ সালে ম্যানিলায় দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় সংগীত সম্মেলন, ১৯৫৬ সালে জার্মানিতে আন্তার্জাতিক লোকসংগীত সম্মেলন এবং ১৯৫৭ সালে রেঙ্গুনে প্রবাসী বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনে তিনি যোগদান করেন।
আব্বাস উদ্দিন সম্পর্কে ফরহাদ মজহার বলেনঃ আব্বাস উদ্দিন কেবল গায়ক ছিলেন না, এই প্রজন্মের গায়করা যদি ভাবেন আব্বাস উদ্দিন শুধু গান গেয়ে এদেশের মানুষের মন জয় করেছেন তাহলে তা মস্ত বড় ভুল হবে। আব্বাস তাঁর সময়কালের আকাঙ্খা ও সংগ্রামকে ধারণ করেছিলেন,সঙ্গে ছিলেন কাজী নজরুল এবং আরো অনেকে।” তাঁর সন্তান ফেরদৌসী রহমান এবং মুস্তাফা জামান আব্বাসীও গান গেয়ে খ্যাতি লাভ করেছেন।
জন্ম
বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী আব্বাস উদ্দীন আহমদ পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ মহকুমার বলরামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা জাফর আলী আহমদ ছিলেন তুফানগঞ্জ মহকুমা আদালতের উকিল। বলরামপুর স্কুলে আব্বাসউদ্দীনের শিক্ষা জীবন শুরু হয়। ১৯১৯ সালে তুফানগঞ্জ স্কুল থেকে তিনি প্রবেশিকা এবং ১৯২১ সালে কুচবিহার কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। এখান থেকে বিএ পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হয়ে তিনি সংগীত জগতে প্রবেশ করেন।
চলচ্চিত্রে অভিনয়
আব্বাসউদ্দিন আহমেদ মোট ৪টি বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।এই ৪টি সিনেমা হলো 'বিষ্ণুমায়া' (১৯৩২),'মহানিশা' (১৯৩৬), 'একটি কথা' ও 'ঠিকাদার'(১৯৪০)। ঠিকাদার সিনেমাতে আব্বাস উদ্দিন একজন কুলির ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। ধারণা করা হয় যে তিনি এর চেয়ে বেশি সংখ্যক চলচ্চিত্রে অভিনয় করলেও তা উল্লেখ করেন নি। কারণ সেই চরিত্রগুলো তেমন উল্লেখযোগ্য ছিল না। এসব সিনেমাতে তিনি গানও করেছিলেন।
গ্রন্থ ও পুরস্কার
আমার শিল্পীজীবনের কথা (১৯৬০) আব্বাস উদ্দীনের রচিত একমাত্র গ্রন্থ। সংগীতে অবদানের জন্য তিনি মরণোত্তর প্রাইড অব পারফরমেন্স (১৯৬০), শিল্পকলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৭৯) এবং স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারে (১৯৮১) ভূষিত হন।
মৃত্যু
১৯৫৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর পল্লীগানের এই মহান সম্রাট মৃত্যুবরণ করেন।
আব্বাসউদ্দীন
(একটি ছোটো স্মৃতিচারণা)
মোহাম্মদ মাহ্ফুজউল্লাহ্
শৈশবে গ্রামোফোন রেকর্ডে গান শুনেই তার নামের সাথে প্রথম পরিচয়। আব্বাসউদ্দীনের গান ছাড়া তখন কোনো ‘কলের গানের আসর’ জমতো না। গ্রামোফোনের রেকর্ডের গানকেই সে সময় বলা হতো ‘কলের গান’। গ্রামে কারো বাড়িতে ‘কলের গান’ শুরু হলে আমরা দৌড়ে গিয়ে ভিড় জমাতাম, সেই গানের আসরে আমাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যেত। কত রাত জেগে যে ‘কলের গান’ শুনেছি, সে কথা ভাবলে আজও বিস্ময় লাগে।
আমাদের শৈশব-কৈশোরে গ্রামোফোন রেকর্ডে কত নামকরা কণ্ঠশিল্পীর গানই না শুনেছি। কিন্তু আব্বাসউদ্দীনের গান বেশি শুনতে না পারলে আমাদের মন ভরতো না। তাই ‘কলের গানের আসরে’ গেলেই আমাদের ফরমাশ হতো আব্বাসউদ্দীনের গানের জন্যে। গানের ভালোমন্দ তখন কিছুই বুঝতাম না; গানের গায়কী, গলার কাজ, সুরের মাধুর্য, রচনার উৎকর্ষ ইত্যাদি কাকে বলে তাও ছিল অজানা। তবুও, সুকণ্ঠ গায়কের গান ভালো লাগতো, আব্বাসউদ্দীনের রেকর্ড বাজলে আমরা তন্ময় হয়ে শুনতাম।
আব্বাসউদ্দীন কৈশোরেই আমাদের মন হরণ করেছিলেন। পল্লীগীতির প্রতি আমার আকর্ষণ আশৈশব। ভাটিয়ালী, বাউল, মুর্শিদী, মারফতি প্রভৃতি সুকণ্ঠে গীত হলে আজও আমি তন্ময় হয়ে শুনি। আব্বাসউদ্দীনের গাওয়া ইসলামী গান, ভাটিয়ালী, বাউল, মুর্শিদী, মারফতি গান আমার শোনার আগ্রহকে সেই কৈশোরেই বাড়িয়ে দিয়েছিল। তার গান যখন শুনতাম, যেন মনে হতো গায়ককেই চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি।
আব্বাসউদ্দীনের ছবি দেখেছিলাম পত্র-পত্রিকার পৃষ্ঠায়, গ্রামোফোন রেকর্ডের বিজ্ঞাপনে। কিন্তু কৈশোরেই তাকে নিজের চোখে দেখার সাধ জেগেছিল। আর সৌভাগ্যক্রমে, আমার স্কুল জীবনেই আব্বাসউদ্দীনকে দেখেছিলাম এক বিশাল জনসভায়। সেই জনসভায় বক্তৃতা দিয়েছিলেন জননেতা হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দী, আর গান গেয়েছিলেন আব্বাসউদ্দীন আহমদ ও তার সঙ্গীরা। হাজার হাজার শ্রোতাকে তারা সেদিন মাতিয়ে দিয়েছিলেন গান গেয়ে। আব্বাসউদ্দীনের গানে আগে থেকেই মুগ্ধ ছিলাম, সেদিন তাকে দেখেও মুগ্ধ হলাম।
মঞ্চের উপর হারমোনিয়াম নিয়ে বসেছিলেন শিল্পী আব্বাসউদ্দীন, তার চারপাশে সহশিল্পীবৃন্দ। ফর্সা সুন্দর চেহারা ও বাবড়ি চুলওয়ালা আব্বাসউদ্দীনের পরনে ছিল সাদা ধবধবে পায়জামা-পাঞ্জাবী, গলায় চাদর। দূর থেকে মনে হচ্ছিল যেন একজন তন্ময় সাধক ও মরমী ধ্যানস্থ হয়ে বসে আছেন। গান শুরু করার আগে তিনি শুদ্ধ ভাষায় চমৎকার উচ্চারণে দু’একটি কথা বললেন তারপর আঙুল চালালেন হারমোনিয়ামের রিডে। সেদিন তিনি গান গাওয়ার আগে কী কথা বলেছিলেন, এতকাল পর তা আর মনে নেই। যদিও প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর আগেকার সেই গানের আসরের স্মৃতি আমার মনে জীবন্ত হয়ে আছে।
পরবর্তীকালে অনেক জলসায় আব্বাসউদ্দীনের গান শোনার, তার সান্নিধ্যে আসার সুযোগ হওয়ায় লক্ষ্য করেছি, তিনি গান শুরু করার আগে প্রায়ই কিছু কথা বলতেন এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গানের কথার মর্ম শ্রোতাদের বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করতেন। তার বাসভবনে ঘরোয়া আসরেও অন্তরঙ্গ পরিবেশে যখন শিল্পীকণ্ঠে গান শুনেছি, তখনও এর ব্যতিক্রম চোখে পড়েনি। সেই অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে আব্বাসউদ্দীনের ইন্তেকালের পর এক নিবন্ধে আমি লিখেছিলাম, ‘ঘরোয়া মজলিসে যারা তার গান শোনার সৌভাগ্য লাভ করেছেন, তারা অবশ্যই লক্ষ করেছেন যে, গীতি-কাব্যের উৎকর্ষ অপকর্ষ সম্পর্কে প্রায়ই তিনি আবেগমুখর হয়ে উঠতেন এবং যে-কোনো সঙ্গীত পরিবেশনের আগে সঙ্গীতের বাণীটি সম্পর্কে তিনি শ্রোতার মনে আকর্ষণ ও আবেগ সৃষ্টির প্রয়াস পেতেন। গান গাইতে গাইতে তিনি মাঝে মাঝে এমন আবেগ-উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠতেন যে, তা সমবেত শ্রোতাদের মনে সংক্রামকের মতো প্রভাব বিস্তার করতো।’
কৈশোরের স্মৃতি মনে সঞ্জীবিত ছিল বলেই আব্বাসউদ্দীনকে খুব কাছ থেকে দেখার সাধ মনে মনে পোষণ করেছিলাম। পঞ্চাশ সালের দিকে ঢাকা আসার পর অনেক খ্যাতনামা শিল্পী সাহিত্যিকের সাথেই পরিচয়ের সুযোগ হয়। কিন্তু আব্বাসউদ্দীনের সাথে সাক্ষাৎ পরিচয়ের কিংবা তার সান্নিধ্যে যাওয়ার সুযোগ তখনো হয়নি। ঢাকা কলেজে প্রথম বর্ষে অধ্যয়নকালেই শুনেছিলাম পুরানা পল্টনে আব্বাসউদ্দীনের একটি বাড়ি আছে। তাকে দেখার বাসনা নিয়েই একদিন খুঁজে খুঁজে ঐ বাড়িতে গিয়ে হাজির হলাম। কিন্তু গিয়ে শুনলাম, এই বাড়িতে আব্বাসউদ্দীন থাকেন না, সেখানে কেন্দ্রীয় প্রকাশনা-দফতর ও ‘মাহে-নও’ পত্রিকার অফিস।
আব্বাসউদ্দীনের এই বাড়িটির নাম ‘হীরামন মঞ্জিল’। জিপিও-র পেছনে ‘মুক্তাঙ্গনের’ পাশে একটু অভ্যন্তরে ‘হীরামন মঞ্জিল’ অবস্থিত। আব্বাসউদ্দীনের স্মৃতিধন্য এই বাড়িতে এখনও তার পরিবার-পরিজন বাস করেন। আমাদের অনেক স্মৃতিই এই বাড়ির সাথে জড়িয়ে আছে। প্রথম এই বাড়িটি দেখতে গিয়ে শুনেছিলাম, পুরানা পল্টনের এই বাড়ির সঙ্গে আব্বাসউদ্দীন তার কুচবিহারের পৈতৃক বাড়ি ‘হীরামন মঞ্জিল’ বদল করেছেন। শিল্পীর মা মরহুমা হীরামন নেসার নামেই বাড়ির নাম ‘হীরামন মঞ্জিল’ রাখা হয়েছিল। সেই স্মৃতি সঞ্জীবিত রাখার জন্যে তিনি এই বাড়িটিরও নাম রেখেছেন ‘হীরামন মঞ্জিল’।
‘হীরামন মঞ্জিলে’ গিয়ে সেদিন শিল্পী আব্বাসউদ্দীনকে পাইনি। কিন্তু পেলাম কয়েকজন খ্যাতনামা কবি-সাহিত্যিককে। মনে পড়ে, কবি তালিম হোসেন, কবি আশরাফ সিদ্দিকী, কবি আবদুল রশীদ খান প্রমুখের সাথে ‘হীরামন মঞ্জিলের’ ‘মাহে-নও’ অফিসেই আমার প্রথম পরিচয় ঘটে। ‘মাহে-নও’-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ছিলেন তখন জনাব এম. এ. নান্না। তার আসল নাম আলী আহমদ হলেও তিনি এম. এ. নান্না নামেই পরিচিত ছিলেন। কুমিল্লার অধিবাসী জনাব এ নান্না চমৎকার ইংরেজি লিখতেন। ইংরেজিতে তার এতখানি দখল ছিল যে তিনি কোনো ড্রাফট না করেই টাইপরাইটারে অবলীলায় বড় বড় প্রবন্ধ তৈরি করে ফেলতেন। সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ে লেখা তার অনেক প্রবন্ধ ডন, পাকিস্তান টাইমস, পাকিস্তান অবজারভার ও অন্যান্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাও তিনি লিখতেন, তবে বাংলা ভাষার ওপর তার তেমন দখল ছিল না। তাছাড়া তিনি তার বাংলা রচনায় আরবি-ফারসি শব্দ খুব বেশি ব্যবহার করতেন, কিন্তু তা সর্বত্র সুপ্রযুক্ত হতো না বলে উপভোগ্য আনন্দের স্বাদ দিতো না। এম. এ. নান্না লোকান্তরিত হয়েছেন কয়েক বছর আগে, সে সময়ে তিনি সম্ভবত রাজশাহী বেতার কেন্দ্রে কর্মরত ছিলেন। তার মৃত্যু-সংবাদ পত্রিকায়ও প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু কোনো শিল্পী-সাহিত্যিকই এই অমায়িক সদাহাস্যমুখ ও সাহিত্যপ্রাণ ব্যক্তিটিকে স্মরণ করেন নি। এম. এ. নান্নাই ‘হীরামন মঞ্জিলে’ আমাকে কবি তালিম হোসেন ও অন্যান্য অনেক কবি-সাহিত্যিকের সঙ্গে প্রথম পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। কবি তালিম হোসেন ছিলেন তার সহকর্মী ‘মাহে-নও’-এর সহসম্পাদক। পরবর্তীকালে আমিও তাদের সহকর্মী হয়েছিলাম। ঐ ‘হীরামন মঞ্জিলেই’ অধ্যাপক মুহম্মদ মনসুরউদ্দীনের সঙ্গে আমি প্রথম পরিচিত হই। তিনি ছিলেন তখন ‘মাহে-নও’ পত্রিকার সম্পাদক। পরে তার জায়গায় কবি আবদুল কাদির ‘মাহে-নও’-এর সম্পাদক হয়ে আসেন এবং ‘মাহে-নও’ অফিসও পরবর্তীকালে ৬নং পুরানা পল্টনে স্থানান্তরিত হয়ে যায়।
‘হীরামন মঞ্জিলের’ পাশের ঠিক উল্টোদিকেই ছিল ব্রিটিশ ইনফরমেশন অফিস ও লাইব্রেরি। এই সমৃদ্ধ লাইব্রেরিটিও ছিল আমাদের অন্যতম আকর্ষণ। সময় পেলেই আমরা এই তথ্যকেন্দ্র ও লাইব্রেরিতে বই পড়ার জন্যে যেতাম। সেখানে গেলেই ‘হীরামন মঞ্জিলে’ ও ‘মাহে-নও’ অফিসেও যাওয়া হতো, দেখা-সাক্ষাৎ হতো কবি-সাহিত্যিকদের সঙ্গে। তরুণ কবি ও কুমিল্লার অধিবাসী হিসেবে নান্না সাহেব আমাকে বেশ স্নেহের দৃষ্টিতে দেখতেন। সম্ভবত চুয়ান্ন কী পঞ্চান্ন সালের দিকে ‘মাহে-নও’ অফিস ৬নং পুরানা পল্টনে স্থানান্তরিত হয়। আর ব্রিটিশ ইনফরমেশন অফিসের লাইব্রেরিটিও পরবর্তীকালে এক অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হয়ে যায়। এর পেছনে অবশ্য একটি আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ঘটনা এবং জনতার রোষবহ্নি ছিল। ১৯৫৬ সালে মিসরের ওপর ব্রিটেনের হামলার প্রতিবাদে ঢাকায় এক বিরাট মিছিল হয় এবং মিছিলকারীরা এক পর্যায়ে ব্রিটিশ ইনফরমেশন অফিসের এই লাইব্ররিতে অগ্নিসংযোগ করে। সেই আগুনে কাঠের তৈরি এই বাঙলো বাড়িটি পুড়ে যায়।
‘মাহে-নও’ অফিস স্থানান্তরিত হয়ে গেলেও, ‘হীরামন মঞ্জিল’-এর আকর্ষণ আমাদের জন্যে এতটুকুও কমেনি। শিল্পী আব্বাসউদ্দীনই ছিলেন সেই আকর্ষণের উৎস। তিনি তখন পরিবার-পরিজন নিয়ে ‘হীরামন মঞ্জিলে’ স্থায়ীভাবে বাস করছেন। তার বাসভবনে প্রায়ই সাহিত্যসভা, সঙ্গীতের আসর বসেছে, তাতে অংশ নিয়েছেন খ্যাতনামা শিল্পী-সাহিত্যিক ও গায়করা। তরুণ লেখক শিল্পী-সঙ্গীতের অনুরাগী হিসেবে আমরাও মাঝে-মাঝে যোগ দিয়েছি সে-সব আসরে, কখনো আমন্ত্রিত হয়ে, কখনো বা বিনা আমন্ত্রণেই। আব্বাসউদ্দীন তখন সরকারি প্রচার-বিভাগে ‘সং-পাবলিসিটি’র অর্গানাইজার। তার সহকর্মী তারই হাতে-গড়া অনেক খ্যাতনামা গায়ক-শিল্পী, তারাও অনেকেই আসেন সে-সব সাহিত্যসভা ও সঙ্গীতের আসরে। কথায়, কবিতায়, গানে-গল্পে প্রতিটি আসরই জমজমাট হয়ে ওঠে।
আব্বাসউদ্দীন শুধু সুকণ্ঠ শিল্পীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন সুরসিক, সদা হাস্যালাপী। গানে যেমন, তেমনি কথায়ও তিনি মাতিয়ে তুলতেন। গান গাওয়া তখন তিনি অনেকটা ছেড়ে দিয়েছেন, তবুও তিনি ছিলেন আসরের মধ্যমণি। তাকে ঘিরে কবি-সাহিত্যিক-গায়কদের আসর বসতো। এসব আসরেই বেদারউদ্দিন আহমদ, মমতাজ আলী খান, সোহরাব হোসেন, আবদুল লতিফ, ওসমান খান, আবদুল আলীম, গোলাম মোস্তফা, শমশের আলী, শামসুদ্দোহা এবং আরো অনেক শিল্পীর গান খুব কাছ থেকে শোনার সুযোগ হয়। আর ফেরদৌসী বেগম ও মোস্তফা জামান আব্বাসীর গান কত যে শুনেছি, তার তো ইয়াত্তাই নেই। এরা দু’জনই তখন খুব ছোট, গুণীপিতার সযতেœ লালনে অশেষ সম্ভাবনা আর প্রতিশ্রুতি নিয়ে বড় হয়ে উঠছেন। তখনই তাদের গানে শ্রোতারা মুগ্ধ।
মনে পড়ে, সাহিত্যের আসর ও গানের জলসা বসতো ‘হীরামন মঞ্জিল’-এর পশ্চিম দিকের একটি প্রশস্ত কামরায়। কার্পেট বিছানো, সাদা চাদরে ঢাকা কামরায় আমরা বসতাম জমাট হয়ে, ক্রমে লোকে ঘর ভরে যেতো, তারপর এক সময় শুরু হতো সাহিত্যসভা, কী গানের আসর। সন্ধ্যা পেরিয়ে অনেক সময়ই বেশ রাত হয়ে যেতো, কিন্তু আসর সহজে ভাঙতো না। ফেরদৌসী যেদিন কাসিক্যাল, কী পল্লীগীতি, ভাটিয়ালী-ভাওয়াইয়া গাইতেন কিংবা ওদের দুই ভাইবোনের দ্বৈত-সঙ্গীত হতো, সেদিন আসর চলতো অনেক রাত অবধি। শিল্পী ও সমঝদার পিতা পুত্র-কন্যাকে নিজেই ফরমাশ দিতেন বিশেষ বিশেষ গান গাওয়ার জন্যে। ট্র্যাজিক ও করুণামিশ্রিত গানের প্রতি শিল্পী আব্বাসউদ্দীনের ছিল অনেকটা সহজাত টান। মনে পড়ে, তিনি ফেরদৌসী ও আব্বাসীকে প্রায়ই ফরমাশ করতেন ঐ ধরনের কিছু গান পরিবেশনের জন্য। প্রায় আসরেই তার ফরমাশে ওদের গাইতে হতো ‘ও গাড়িয়াল ভাই’, ‘ফান্দে পড়িয়া বগা’, ‘আবো নওদাড়ীটা মরিয়া’, ‘প্রেম জানেনা রসিক কালা চান্দ’, ‘এত রাত্রে কেন ডাক দিলে’ ইত্যাদি অনেক গান। আব্বাসউদ্দীন নিজে তখন গান গাওয়া একরূপ ছেড়ে দিলেও অনুরাগীদের অনুরোধে তাকেও মাঝে মাঝে গাইতে হতো। তিনি তখন প্রায়ই গাইতেন, ‘দিনার দিন দিন ফুরাইল শুকনাতে তরুণী’। তার কণ্ঠে এই গান শুনে আমাদের চোখও অশ্রুসজল হয়ে উঠতো।
আব্বাসউদ্দীনের আরও ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে যাওয়ার সুযোগ হয় চুয়ান্ন-পঞ্চান্ন সালের দিকে। সে-সময়ে আমরা ‘পাকিস্তান মজলিস’ নামে একটি সাহিত্য-সংস্কৃতি সংস্থা গঠন করেছিলাম। কবি গোলাম মোস্তফা, আবুল কালাম শামসুদ্দীন, কবি মঈনুদ্দীন, মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ, ইব্রাহীম খাঁ, মুজিবুর রহমান খাঁ, ফররুখ আহমদ, তালিম হোসেন, সৈয়দ আলী আশরাফ আরও অনেক শিল্পী-সাহিত্যিকই ছিলেন এই সংস্থার সাথে জড়িত। শিল্পী আব্বাসউদ্দীনেরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল এই সংস্থার সাথে। তার বাসভবন ‘হীরামন মঞ্জিল’-এ পাকিস্তান মজলিসের বৈঠক একাধিক বারই অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্ভবত এই সাহিত্য-সংস্কৃতি সংস্থা গঠিতও হয় সেখানে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকেই। পাকিস্তান মজলিসের উদ্যোগে আয়োজিত এক সেমিনারে শিল্পী আব্বাসউদ্দীন সঙ্গীত বিষয়ে একটি প্রবন্ধও পাঠ করেন। আব্বাসউদ্দীনের বাসভবনে সে-সময়ে প্রায়ই সাহিত্য-সভা বসতো।
মনে পড়ে এমনি এক সাহিত্য-সভায় শিল্পীর জ্যেষ্ঠপুত্র জনাব মোস্তফা কামাল আমার লেখা ‘মেঘ-রৌদ্রের খেলা’ শীর্ষক একটি কবিতার ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। মোস্তফা কামাল মেধাবী ছাত্র, সুবক্তা এবং সুলেখক হিসেবে ছিলেন তখনই বিশেষ পরিচিত। তার মুখে সেদিন আমার কবিতাটির সূক্ষ্ম বিচার-বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা শুনে আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।
মোস্তফা কামাল এখন খ্যাতনামা ব্যারিস্টার। এককালে প্রচুর প্রবন্ধ লিখলেও, এখন আর লেখেন না বললেই চলে। অন্তত তার লেখা পত্রিকায় তেমন দেখা যায় না। তাদের বাসভবন ‘হীরামন মঞ্জিলে’ সাহিত্য সভা তো হতোই, নববর্ষ, পহেলা বৈশাখ ইত্যাদি পর্ব উপলক্ষেও আয়োজিত হতো সাহিত্যসভা, বসতো গানের আসর। আব্বাসউদ্দীন অসুস্থ হয়েছেন, তবু তিনি তাতে শরিক হয়েছেন। ‘হীরামন মঞ্জিলের’ প্রাঙ্গণে-ফুলবাগানের শোভায় বিমণ্ডিত পরিবেশে আয়োজিত অনেক বৈকালিক অনুষ্ঠান আজও আমাদের স্মৃতি হয়ে আছে। আব্বাসউদ্দীনের অসুস্থতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্য সঙ্গীতের আসরও ক্রমে ক্রমে কমতে থাকে। কিন্তু সেই সদাহাস্যমুখ, সুরসিক ও সঙ্গীত পিপাসু শিল্পীর মনে ও অবয়বে অসুস্থতার কোনো ছায়া ফেলতে পারেনি। যখনই কোনো শিল্পী-সাহিত্যিক, বন্ধু-বান্ধব তার কাছে গিয়েছেন, সবাইকে তিনি হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন।
আব্বাসউদ্দীন যখন একেবারে বিছানা নিয়েছেন তখন তার কাছে অনেকবারই গিয়েছি। কবি আবদুল কাদির, কবি তালিম হোসেন, ইজাবউদ্দীন আহমদ, কবি আজিজুর রহমান এবং আরও অনেকের সঙ্গেই সে সময়ে তার সান্নিধ্যে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। এদের সাথে ছিল তার দীর্ঘকালের পরিচয় ও সৌহার্দ্যরে সম্পর্ক। তার কাছে গেলে সেই অসুস্থতার সময়েও তিনি উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠতেন। মনে পড়ে অসুস্থ আব্বাসউদ্দীন তার আত্মজীবনীমূলক রচনা ‘আমার শিল্পী জীবনের কথা’র অংশবিশেষ আমাদের পড়ে শুনিয়েছিলেন। তার পরিচ্ছন্ন ও চমৎকার হাতের লেখা দেখে সেদিন মুগ্ধ হয়েছিলাম। আমরা বসে থাকতে থাকতেই তার এক অনুরাগী অসুস্থ শিল্পীর জন্যে কিছু ‘দাওয়াই’ নিয়ে এলেন। শিল্পীর মুখেই শুনলাম, তার ভক্ত অনুরক্তদের অনেকেই দূর-দূরান্তর থেকে ওষুধপত্র, লতাপাতা, তাগা-তাবিজ, পানিপড়া ইত্যাদি পাঠিয়ে থাকেন। অনেকে চিঠি লিখে শিল্পীর অসুস্থতায় তাদের মনোবেদনা প্রকাশ করেন, সেই চিঠিতে থাকে তার আশু রোগনিরাময়ের জন্যে আন্তরিক ও আকূল প্রার্থনার ভাষা। দু’একটি চিঠি পড়ে আমরাও অভিভূত হয়েছিলাম।
কিন্তু কারো ওষুধে আন্তরিক প্রার্থনায়ও কোনো ফল হলো না। আব্বাসউদ্দীনের স্বাস্থ্যের অবনতিই হতে লাগলো। লক্ষ করলাম তার একটি পা শুকিয়ে তখনই একরূপ কাঠ হয়ে গেছে, যদিও শিল্পীর মুখের সেই অনিন্দ্য হাসিটি একেবারে ম্লান হয়নি। কিন্তু ক্রমে তার জীবনশক্তি কমে এল, তিনিও অসুস্থতার কাছে আত্মসমর্পণ করতে লাগলেন। তারপর একদিন বিদায় নিলেন এই রৌদ্র-ছায়াময় পৃথিবী থেকে। ‘খাঁচার ভেতর যে অচিন পাখি’ আসা-যাওয়া করত সে চলে গেল কোন মহাশূন্যে এক অচেনা জগতে। কিন্তু গানের পাখি উড়ে গেলেও, তার স্মৃতি পড়ে রইল, পড়ে রইল সেই সুর সেই কণ্ঠ।
আজও যখন গ্রামোফোন রেকর্ডে, বেতারে তার গাওয়া গান শুনি, মুহূর্তেই তন্ময় হয়ে যাই, কৈশোরের-যৌবনের অনেক স্মৃতির ছবিই মনে ভেসে ওঠে, চেতনায় গুঞ্জরিত হয় সেই মরমী কণ্ঠস্বর, ‘দিনার দিন দিন ফুরাইল শুকনাতে তরণী/বইসারে দিন গুনি।’


তিতুমীর


তিতুমীর

শেয়ার করেছেন                                প্রণব কুমার কুণ্ডু ।




এই বাংলার মাটিতে তিতুমীর কে আমাদের কে স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসাবে প্রতিপন্ন করেই পরীক্ষায় পাশ করতে বাধ্য করা হয়েছে ।
মাধ্যমিকের সিলেবাসে আমাদের সমাজের ছাত্র/ছাত্রীরা পড়ছে,  তিতুমীর ওয়াহাবী আন্দোলনের জনক।
১৬/১১/১৮৩৯ খ্রীষ্টাব্দে এই তিতুমীর বাদুড়িয়া থানার রামচন্দ্র পুর গ্রামের ব্রাক্ষ্মণ দের হিন্দু কন্যাদের ধরে ধরে মুসলমানদের সঙ্গে নিকা দিয়েছিল, তাদের পরিবারের লোকজনদেরর মুসলমান হতে বাধ্য করে সেই ব্রাক্ষ্মণ দের মুখে জোর করে গরুর মাংস দিয়ে ইসলামী শান্তি বিস্তার করে, তৎকালীন বসিরহাট থানার দারোগা রামরাম চক্রবর্তীকে ইসলাম গ্রহণের নির্দশ দেয়, তিনি তা ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করলে,  বাঁশের কেল্লার নিকটবর্তী বুরুজ গ্রামের ইছামতী নদীর তীরে নিয়ে জবাই করে। 
যদি ইতিহাস জিহাদী তিতুমীরকে স্বাধীনতা সংগ্রামীর তকমা দিতে পারে ----তবে নাথুরাম গডসের অপরাধ কি????

(তথ্য সংগ্রহ --- বাংলার মাটিতে ইসলামের উদয়। ডঃ রূদ্রপ্রতাপ চট্টোপাধ্যায়)

শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৭

গান্ধিহত্যা


গান্ধিহত্যা


শেয়ার করেছেন           প্রণব কুমার কুণ্ডু,                    যদিও অনেক বিষয়ে  "বিজয়'-এর সাথে মতবিরোধ আছে !



Bi Joy

আমি গান্ধীকে কেনো বধ করেছি -নাথুরাম গডসে !
____________________________________________
মহাত্মা গান্ধী'র হত্যাকারী উগ্রবাদী নাথুরাম গডসে'র সেই ঐতিহাসিক জবানবন্দী ( ইতিহাসের একটি জঘন্য অধ্যায়) ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১:৪৬ মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী হত্যাকাণ্ড উপমহাদেশের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। গান্ধীর হত্যাকারী ছিলেন তার মতোই একজন উচ্চশ্রেণীর ব্রাহ্মণ। তার নাম নাথুরাম গডসে।। গান্ধী হত্যাকাণ্ডে গডসের যে যুক্তি ছিল তা তার একার ছিল না। হিন্দুদের একটি বিরাট অংশ গডসের যুক্তি সঠিক বলে মনে করতো। গডসের ফাঁসি হয়েছে একথা ঠিক। তবে তিনি যে চিন্তায় আলোড়িত হতেন সে চিন্তার মৃত্যু হয়নি। এখনো ভারতের কট্টরপন্থি এবং উগ্রবাদী হিন্দু গডসের চিন্তা ও চেতনায় আলোড়িত হয়। তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। আদালতে দেওয়া তার জবানবন্দির আলোকে নাটক মঞ্চস্থ করে। নাথুরাম গডসে হত্যাকারী হলেও তিনি অল্পশিক্ষিত ছিলেন না। গডসে ছিলেন তার সময়ের শিক্ষিত লোকদের একজন। হিন্দু ইতিহাস ও হিন্দু শাস্ত্র এবং তদানীন্তন ভারতীয় রাজনীতি সম্পর্কে ছিল তার গভীর জ্ঞান। হিন্দু মন-মানসিকতা ও চেতনার আলোকে তার কাছে মনে হয়েছিল, গান্ধী পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় সায় দিয়ে, হিন্দুদের পুণ্যভূমিকে দ্বিখণ্ডিত করেছেন। গডসে বিশ্বাস করতেন, গান্ধী মুসলিম লীগ ও মুসলমানদের রাজনৈতিক ছাড় দিয়েছেন। হিন্দু স্বার্থের চেয়ে তিনি মুসলিম স্বার্থকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। জিন্নাহর প্রতি নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করছেন। এছাড়া, গান্ধী রাষ্ট্রভাষা হিসাবে হিন্দির দাবিকে অগ্রাহ্য করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় গান্ধীর ভূমিকাকে নাথুরাম গডসে সমর্থন করলেও ভারতীয় রাজনীতিতে তার ভূমিকাকে পুরোটাই অন্যায় বলে বিবেচনা করেছেন। গান্ধীর অহিংস বাণী ও সত্যাগ্রহ ছিল তার দৃষ্টিতে হিন্দু ইতিহাসের পরিপন্থি। তিনি তাকে ব্রিটিশ রাজের অনুগত ব্যক্তি ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারেননি। তিনি মনে করতেন, অষ্টাদশ শতাব্দীতে মোগলদের বিরুদ্ধে মারাঠা দস্যু শিবাজি, রাজা রাবণের বিরুদ্ধে ভগবান রাম ও পৌরাণিক কংসের বিরুদ্ধে শ্রীকৃষ্ণ ভগবানের মতো কিছু হিন্দু বীরদের সহিংস লড়াইয়ের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে অহিংস পথ অবলম্বন করে গান্ধী হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করেছেন। তাই তাকে হত্যা করা পুণ্যের কাজ। গডসে এ সিদ্ধান্তে আসেন যে, জাগতিক বিচারে তার পরিণাম যাই হোক, পরজন্মে তিনি মুক্তি পাবেন। শুধু তাই নয়, গান্ধী হত্যাকাণ্ড সফল হলে তার স্বধর্মের অনুসারী ভারতের ৩০ কোটি হিন্দুও অবিচারের হাত থেকে নিষ্কৃতি পাবে। গান্ধী হত্যাকাণ্ডে এগুলোই ছিল নাথুরাম গডসের যুক্তি। ১৯৩৪ সালের জুলাই থেকে ১৯৪৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ছয় বার গান্ধীকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়। নাথুরাম গডসে ১৯৪৬ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথমবার গান্ধীকে হত্যার চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হয়ে তিনি আবার ১৯৪৮ সালের ২০ জানুয়ারি একই চেষ্টা চালান। পরপর দু'বার ব্যর্থ হয়ে তৃতীয়বার ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি তিনি সফল হন। সেদিন গান্ধী দিল্লিতে বিড়লা হাউসে এক প্রার্থনা সভায় যোগদান করেছিলেন। সেখানেই নাথুরাম গডসের গুলিতে তিনি নিহত হন। গান্ধীকে হত্যা করার জন্য গডসের কোনো অনুতাপ ছিল না। তিনি প্রাণভিক্ষাও চাননি। প্রাণদণ্ডের জন্য তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। সাধারণত মানুষ মৃত্যু চিন্তায় অধীর হয়। কিন্তু গডসের মধ্যে সে ধরনের অধীরতা দেখা যায়নি। মৃত্যুকে তিনি হাসিমুখে আলিঙ্গন করেছেন। কিন্তু কেন? এই 'কেন'র জবাবও রয়েছে। গডসে নিজের জবানিতে সব বলে গেছেন। গডসে এ জবানবন্দি দিয়েছিলেন আদালতে। তার জবানবন্দি একটি ঐতিহাসিক দলিল। এটি পাঠ করলে বহু জিজ্ঞাসার জবাব পাওয়া যাবে। জানা যাবে গান্ধী হত্যাকাণ্ডে গডসের কেন কোনো অনুশোচনা ছিল না। শুধু যে ব্যক্তি গডসের ক্ষোভ ও যন্ত্রণার নাগাল পাওয়া যাবে তাই নয়, জানা যাবে হিন্দুদের একটি অংশের উগ্রবাদী মানসিকতা ও ভারতীয় রাজনীতির আরেকটি পরিচয়। গডসের সেই জবানবন্দির বর্ণনা দেওয়া হলোঃ 'একটি নিবেদিতপ্রাণ ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম নেওয়ায় আমি স্বাভাবিকভাবে হিন্দু ধর্ম, হিন্দু ইতিহাস ও হিন্দু সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ি। হিন্দুত্বের প্রতি আমার গভীর মমত্ববোধ জেগে উঠে। বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমার মধ্যে কুসংস্কার ও ধর্মীয় গোড়ামিমুক্ত স্বাধীন চিন্তার বিকাশ ঘটে। যে জন্য আমি অচ্ছুত প্রথা ও জন্মগত বর্ণভেদ উচ্ছেদে নিজেকে নিয়োজিত করি। আমি খোলাখুলি জাতপাত বিরোধী আন্দোলনে যোগদান করি এবং বিশ্বাস করতে শুরু করি, সামাজিক ও ধর্মীয় অধিকারের প্রশ্নে প্রতিটি হিন্দুর মর্যাদা সমান। শুধু যোগ্যতার ভিত্তিতেই উচ্চ-নিচ ভেদাভেদ হতে পারে। এ ভেদাভেদ জন্মগতভাবে কোনো বিশেষ বর্ণের বা পেশার কারণে হতে পারে না। আমি প্রকাশ্যে বর্ণবাদ বিরোধী ভোজে অংশ নিই। এসব ভোজে হাজার হাজার হিন্দু ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, কায়স্থ, বৈশ্য, চামার ও বাঙ্গি যোগ দেয়। আমরা বর্ণভেদ প্রথা ভেঙ্গে দিই এবং একে অপরের সঙ্গে খাবার খাই। 'আমি প্রাচীন ও আধুনিক ভারতের ইতিহাস পাঠ করেছি। ইংল্যান্ড, আমেরিকা ও রাশিয়ার মতো কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ সম্পর্কেও পড়াশোনা করেছি। তাছাড়া, দাদাভাই নওরোজি, স্বামী বিবেকানন্দ, গোখলে ও তিলকরত্নের লেখা বই-পুস্তক ও বক্তৃতাও প্রচুর পাঠ করেছি। শুধু তাই নয়, আমি সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদের মূল বিষয়বস্তুও পাঠ করেছি। তবে আমি বিশেষভাবে পাঠ করেছি বীর সাভারকার ও গান্ধীজীর লেখা বই-পুস্তক ও তাদের বক্তৃতা। আমি বিশ্বাস করি, বিগত ত্রিশ বছর যাবৎ এ দু'ব্যক্তির চিন্তা ও কার্যকলাপ ভারতীয়দের যতদূর প্রভাবিত করেছে অন্য কোনো ব্যক্তির চিন্তা ও আদর্শ ততটুকু প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়নি। এসব পড়াশোনা ও চিন্তা-ভাবনা থেকে আমি ভাবতে শুরু করি, একজন দেশপ্রেমিক ও বিশ্ব নাগরিক হিসাবে হিন্দুরাজ ও হিন্দুত্ব প্রতিষ্ঠা করাই আমার প্রথম কাজ। ৩০ কোটি হিন্দুর ন্যায়সঙ্গত স্বার্থরক্ষা এবং তাদের স্বাধীনতা নিশ্চিত হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মানবজাতির এক-পঞ্চমাংশের স্বাধীনতা ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠিত হবে। এ বিশ্বাস আমাকে হিন্দু সনাতনী আদর্শ ও কর্মসূচির প্রতি আত্মনিয়োগে অনুপ্রাণিত করে। আমি আরো বিশ্বাস করতে শুরু করি, হিন্দু সনাতন আদর্শই কেবল আমার মাতৃভূমি হিন্দুস্তানের জাতীয় স্বাধীনতা অর্জন ও সংরক্ষণ করতে পারে।১৯২০ সালে লোকমান্য তিলকের মৃত্যুর পর থেকে প্রথমবার কংগ্রেসে গান্ধীজীর প্রভাব বৃদ্ধি পায় এবং পরে কংগ্রেসে তার প্রভাব নিরংকুশ হয়ে দাঁড়ায়। জনগণকে সচেতন করে তোলার জন্য গান্ধী যে ভূমিকা পালন করেছেন, তা ছিল তাদের কাছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। গান্ধীর অহিংস ও সত্যাগ্রহ শ্লোগানের ফলে জনগণের মধ্যে তার প্রভাব আরো বৃদ্ধি পায়। কোনো সচেতন ও শিক্ষিত লোক এ শ্লোগানের বিরোধিতা করেনি। এসব শ্লোগানে কোনো নতুনত্ব ছিল না। যে কোনো গণআন্দোলনেই এসব শ্লোগান দেওয়া হয়। তবে কখনো কখনো দেশ আমাদেরকে অহিংসার পথ অগ্রাহ্য করতে এবং শক্তি প্রয়োগে বাধ্য করে। আমি কখনো এ কথা চিন্তা করিনি যে, আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ অন্যায়। আমি আগ্রাসী শত্রুকে শক্তি প্রয়োগে পরাভূত করা এবং প্রতিরোধ করা আমার ধর্মীয় ও নৈতিক কর্তব্য বলে মনে করেছি। রামায়ণের বর্ণনা অনুযায়ী রাম সীতাকে উদ্ধারে রাজা রাবণের সঙ্গে লড়াই করেছিলেন। মহাভারতের বর্ণনানুযায়ী কৃষ্ণ কংসের পাপাচারের অবসান ঘটাতে তাকে হত্যা করেছিলেন এবং অর্জুনকে তার আত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে লড়াই করে তাদেরকে হত্যা করতে হয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, রাম, কৃষ্ণ ও অর্জনকে সহিংসতার অবতার হিসাবে অভিযুক্ত করে মহাত্মা গান্ধী মানুষের স্বাভাবিক আচরণের প্রতি চরম অজ্ঞতা প্রদর্শন করেছেন।নিকট অতীতে ছত্রপতি শিবাজিই প্রথম মুসলিম আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বীরোচিত প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এবং ভারতে মুসলিম উৎপীড়নের মূলোৎপাটন করেন। আগ্রাসী আফজাল খানকে হত্যা করা ছিল শিবাজির জন্য অবশ্য কর্তব্য। নয়তো তিনি নিজেই নিহত হতেন। শিবাজি, রানা প্রতাপ ও গুরু গোবিন্দের মতো ঐতিহাসিক বীর যোদ্ধাদের বিপথগামী দেশপ্রেমিক হিসাবে নিন্দা করে গান্ধীজী নিজের আত্মম্ভরিতা প্রকাশ করেছেন। গান্ধীজী অহিংস ও সত্যাগ্রহ নীতির নামে দেশে অবর্ণনীয় দুর্দশা ডেকে এনেছেন। পক্ষান্তরে, রানা প্রতাপ, শিবাজি ও গুরুগোবিন্দ তাদের জাতিকে যে মুক্তি এনে দিয়েছিলেন সেজন্য তারা জাতির হূদয়ে চিরজাগরুক হয়ে থাকবেন।'গান্ধীজী বিগত ৩২ বছর ধরে যে বাগাড়ম্বর করেছেন সেটা তার মুসলিমপন্থি আমরণ অনশনে পূর্ণতা লাভ করে। গান্ধীর এ অনশন আমাকে এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে যে, দ্রুত তার অস্তিত্ব নাশ করতে হবে। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয়দের অধিকার ও কল্যাণে যথেষ্ট অবদান রেখেছেন। কিন্তু ভারতে প্রত্যাবর্তন করার পর তার মধ্যে রাজানুগত্যের একটি মনোভাব জন্ম নেয়। তিনি এমন এক পরিস্থিতিতে কাজ করতে থাকেন যেখানে তার কাজকর্মের ভালোমন্দের বিচার করতেন শুধু তিনি নিজে। দেশ যদি তার নেতৃত্ব চেয়ে থাকে তাহলে দেশকে তার অভ্রান্ততাও গ্রহণ করতে হবে। আর যদি তা না হয়ে থাকে তাহলে তাকে কংগ্রেস থেকে দূরে সরে যেতে হবে এবং নিজের পথে চলতে হবে। এ অবস্থায় কোনো মাঝামাঝি পথ নেই। হয়তো কংগ্রেসকে তার পাগলামি, খামখেয়ালি ও পুরনো ধ্যানধারণা গ্রহণ করতে হবে নয়তো কংগ্রেসকে গান্ধীকে বাদ দিয়ে চলতে হবে। অসহযোগ আন্দোলন হচ্ছে গান্ধীর মস্তিষ্কপ্রসূত চিন্তা। এ আন্দোলনের কৌশল কারো জানা ছিল না। কখন আন্দোলন শুরু করতে হবে এবং এ আন্দোলনে বিরতি দিতে হবে সবই ছিল গান্ধীর একক সিদ্ধান্ত। এ আন্দোলন ব্যর্থ কিংবা সফল হোক, রাজনৈতিক পরিস্থিতি যাই দাঁড়াক তাতে গান্ধীর কিছুই আসতো যেতো না। তার ইচ্ছাই ছিল চূড়ান্ত। 'একজন সত্যাগ্রহী কখনো ব্যর্থ হতে পারে না' এটাই ছিল তার মূলমন্ত্র। কিন্তু সত্যাগ্রহ বলতে কি বুঝায় তিনি ছাড়া তা আর কারো জানা ছিল না। এভাবে গান্ধী নিজেই নিজের কাজকর্মের বিচারক ও জুরি দু'টিই হয়ে দাঁড়ান। কঠোর কৃচ্ছ্রতা, নিরবচ্ছিন্ন কাজ ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ চরিত্রের সঙ্গে উন্মত্ততা ও ছেলেমানুষীর সংমিশ্রণে গান্ধী এক অপ্রতিরোধ্য ও অপরিবর্তনযোগ্য নেতায় পরিণত হন। অনেকেই মনে করতেন, তার রাজনীতি ভুল। কিন্তু এদেরকে হয়তো কংগ্রেস ছাড়তে হয়েছে নয়তো তার খামখেয়ালির কাছে নিজেদের বিবেক বুদ্ধিকে জলাঞ্জলি দিতে হয়েছে। চরম দায়িত্বহীনতার একটি পর্যায়ে গান্ধী একটির পর একটি ভুল করে গেছেন। একটির পর একটি ব্যর্থতা তাকে গ্রাস করছিল। তার নেতৃত্বে উপর্যুপরি দুর্যোগ আসছিল। 'গান্ধীর মুসলিম প্রীতির পরিচয় ফুটে উঠে ভারতের জাতীয় ভাষার প্রশ্নে তার বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গিতে। এটা সর্বজনবিদিত যে, জাতীয় ভাষা হিসাবে হিন্দির দাবি ছিল সর্বাগ্রে। ভারতে তার ক্যারিয়ারের শুরুতে গান্ধী হিন্দির প্রতি অতীব গুরুত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু যখন তিনি দেখতে পেলেন, মুসলমানরা হিন্দি পছন্দ করে না তখন তিনি হিন্দুস্তানী ভাষা হিসাবে আখ্যায়িত অন্য একটি ভাষার প্রবক্তা সাজেন। ভারতের প্রত্যেকেই এ কথা জানে, হিন্দুস্তানী নামে কোনো ভাষা নেই। এ ভাষার কোনো ব্যাকরণ অথবা কোনো শব্দ ভাণ্ডারও নেই। হিন্দুস্তানী ভাষা হচ্ছে একটি কথ্য ভাষা। তবে লিখিত ভাষা নয়। এটা হচ্ছে হিন্দি ও উর্দুর সংমিশ্রণে একটি জারজ ভাষা। গান্ধীর প্রচারণা সত্ত্বেও এটি জনপ্রিয় হতে পারেনি। তিনি মুসলমানদের তুষ্ট করার জন্য বলেছিলেন, হিন্দুস্তানী হবে ভারতের জাতীয় ভাষা। তার অন্ধ অনুসারীরা তাকে অনুসরণ করে এবং তথাকথিত এ ভাষা ব্যবহার করতে শুরু করে। মুসলমানদের সন্তুষ্ট করার জন্য হিন্দি ভাষার সৌকর্য ও মাধুর্য বিসর্জন দেওয়া হয়। গান্ধী এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিলেন হিন্দু স্বার্থকে বলি দিয়ে।'১৯৪৬ সালের আগস্ট থেকে মুসলিম ভাড়াটিয়া বাহিনী হিন্দু নিধনে মেতে উঠে। তদানীন্তন লর্ড ওয়াভেল এসব ঘটনায় মর্মাহত হলেও তিনি ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন অনুযায়ী ধর্ষণ, হত্যা ও অগ্নিকান্ড বন্ধে তার কতৃত্ব প্রয়োগ করেননি। বাংলা থেকে করাচি পর্যন্ত হিন্দুর রক্তে রঞ্জিত হয়। কোথাও কোথাও হিন্দুরা প্রতিশোধ গ্রহণে হামলা চালায়।(প্রকৃতপক্ষে ১৯৪৬ সালের হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার জন্য দু পক্ষই দোষী কিন্তু খেয়াল করুন উগ্রবাদী মানসিকতার জন্য একটি নিদিষ্ট পক্ষের দোষ তার চোখেই পরলো না) ১৯৪৬ সালের সেপ্টেম্বরে অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়। কিন্তু শুরু থেকে এ সরকারের মুসলিম সদস্যরা সরকারের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতে লিপ্ত হয়। মুসলমানরা যে সরকারের অংশ ছিল সে সরকারের বিরুদ্ধে তারা যত বেশি আনুগত্যহীন ও উদ্ধত হয়ে উঠছিল, গান্ধী তত বেশি তাদের প্রতি মোহাবিষ্ট হচ্ছিলেন। সংকট নিষ্পত্তিতে ব্যর্থ হয়ে লর্ড ওয়াভেল পদত্যাগ করেন এবং লর্ড মাউন্টব্যাটেন তার স্থলাভিষিক্ত হন।'কংগ্রেস জাতীয়তা ও সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করতো। কিন্তু তারা বেয়নেটের মুখে গোপনে পাকিস্তান দাবি মেনে নেয় এবং জিন্নাহর কাছে নির্লজ্জভাবে আত্মসর্মপণ করে। ভারত বিভক্ত হয় এবং ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ভারতের ভূখণ্ড আমাদের কাছে বিদেশী ভূখণ্ড হিসাবে পরিগণিত হয়। লর্ড মাউন্টব্যাটেন কংগ্রেস সার্কেলে ভারতের শ্রেষ্ঠতম ভাইসরয় ও গভর্নর জেনারেল হিসাবে বিবেচিত হচ্ছিলেন। ১৯৪৮ সালের ৩০ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ঘোষিত সময়ের ১০ মাস আগে মাউন্টব্যাটেন আমাদেরকে একটি খণ্ডিত ভারত উপহার দেন। এটা ছিল গান্ধীর ৩০ বছরের একনায়কতান্ত্রিক নেতৃত্বের ফসল এবং কংগ্রেস এটাকে বলছে স্বাধীনতা ও ক্ষমতা হস্তান্তর। অবশেষে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের ফানুস এক সময় ফেটে যায় এবং নেহরু ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের সম্মতিতে ধর্মভিত্তিক একটি রাষ্ট্র কায়েম হয়। নেহরু ও তার দোসররা তাদের ত্যাগের এই ফসলকে স্বাধীনতা হিসাবে আখ্যায়িত করেন। কার ত্যাগ? গান্ধীর সম্মতিতে যখন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ দেশকে বিভক্ত করে ফেলে তখন আমার মন ভয়ানক ক্রোধে ফেটে পড়তে থাকে। 'দিল্লির কয়েকটি মসজিদ হিন্দুরা দখল করে নিলে গান্ধী আমরণ অনশন শুরু করেন। তিনি শর্ত দেন, এসব মসজিদ খালি করে দেওয়া না হলে তিনি অনশন ভঙ্গ করবেন না। কিন্তু যখন পাকিস্তানে হিন্দুদের উপর ভয়াবহ হামলা চালানো হয় সে সময় গান্ধী টু শব্দটি পর্যন্ত উচ্চারণ করেননি এবং তিনি নিন্দাও করেননি। গান্ধী খুব ধূর্ত। তিনি পাকিস্তানি মুসলমানদের উপর কোনো শর্ত আরোপ করেননি। তিনি জানতেন, অনশন করে মরে গেলেও কোনো পাকিস্তানি মুসলমান তার জন্য দুঃখ পাবে না। এ কারণে তিনি পাকিস্তানি মুসলমানদের উপর কোনো শর্ত আরোপ করেননি। অভিজ্ঞতা থেকে তিনি জানতেন, জিন্নাহ তার অনশনে বিচলিত হবেন না এবং মুসলিম লিগ তার অন্তরাত্মার প্রতি খুব কমই গুরুত্ব আরোপ করে।'গান্ধীকে জাতির পিতা হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। যদি তাই হয় তাহলে বিশ্বাসঘাতকতা করে দেশকে ভাঙ্গার সম্মতি দিয়ে তিনি তার পিতৃসুলভ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, গান্ধী তার কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি নিজেকে পাকিস্তানের জাতির পিতা হিসাবে প্রমাণ করেছেন। জিন্নাহর কঠিন ইচ্ছাশক্তির কাছে তার অন্তরাত্মা, আধ্যাত্মিক শক্তি ও অহিংস মতবাদ সবই পরাজিত এবং ক্ষমতাহীন বলে প্রমাণিত হয়েছে।'সংক্ষেপে বলতে গেলে আমি আপন মনে ভেবেছি এবং দেখতে পেয়েছি, আমি পুরোপুরি নিঃশেষ হয়ে গেছি। গান্ধীকে হত্যা করলে আমি জনগণের কাছ থেকে ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই আশা করতে পারি না এবং আমাকে আমার সকল সম্মান হারাতে হবে। তবে আমি একই সঙ্গে এ কথাও ভেবেছি, গান্ধীর অবর্তমানে ভারতের রাজনীতি নিঃসন্দেহে বাস্তবভিত্তিক বলে প্রমাণিত হবে, প্রতিশোধ গ্রহণের যোগ্য হবে এবং সশস্ত্র বাহিনীর মাধ্যমে শক্তিশালী হবে। কোনো সন্দেহ নেই, আমার ভবিষ্যৎ হবে পুরোপুরি ধ্বংস। তবে জাতি পাকিস্তানি আগ্রাসন থেকে নিরাপদ হবে। মানুষ আমাকে বোকা কিংবা মাথামোটা বলে উপহাস করতে পারে। তবে জাতি যুক্তির পথ খুঁজে পাবে যা একটি স্বাধীন ও বলিষ্ঠ জাতি গঠনের জন্য অপরিহার্য বলে মনে করি। এসব বিষয় চিন্তা করে গান্ধীকে হত্যার জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। কিন্তু এ কথা আমি কারো কাছে প্রকাশ করিনি। আমি আমার দু'হাতে শক্তি সঞ্চয় করি এবং ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি বিড়লা হাউসে প্রার্থনা সভায় গান্ধীকে গুলি করি।'আমি বলতে চাই যে, আমি এমন এক ব্যক্তির প্রতি গুলিবর্ষণ করেছি যার নীতি ও কার্যকলাপ কোটি কোটি হিন্দুর দুঃখ, দুর্দশা ও ধ্বংস ডেকে এনেছে। দেশে এমন কোনো আইন নেই যার আওতায় এমন এক অপরাধীর বিচার হতে পারে। তাই আমি তার প্রতি মৃত্যুবান নিক্ষেপ করেছি।'ব্যক্তিগতভাবে কারো প্রতি আমার কোনো বিদ্বেষ নেই। তবে আমি বলতে চাই, এ সরকারের নীতির কারণে তাদের প্রতি আমার কোনো শ্রদ্ধা নেই। এ সরকারের নীতি হচ্ছে দৃষ্টিকটুভাবে মুসলিম ঘেঁষা। একই সঙ্গে আমি বিশ্বাস করি, সরকারের এ মুসলিম ঘেঁষা নীতির মূলে রয়েছে গান্ধীর উপস্থিতি। আমাকে দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী নেহরু পুরোপুরি অনবহিত যে, তিনি প্রায়ই যখন ভারতকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসাবে উল্লেখ করেন তখন তার কথা ও কাজের গরমিল স্পষ্ট ধরা পড়ে। এটা উল্লেখ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, ধর্মভিত্তিক পাকিস্তান রাষ্ট্র কায়েমে নেহরু নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং গান্ধীর মুসলিম তোষণ নীতির কারণে তার কাজ সহজতর হয়ে গিয়েছিল।'আমি যা করেছি তার দায়-দায়িত্ব আমার। তাই আমি আমার দায়ের পরিণতি গ্রহণ করার জন্য আদালতে দাঁড়িয়েছি এবং বিচারক আমার প্রাপ্য শাস্তি আমাকে দেবেন। আমি আরো বলতে চাই, করুণার জন্য আমি প্রার্থনা করছি না। আমি এটাও চাই না কেউ আমার পক্ষ থেকে করুণা ভিক্ষা করুক। আমি যা করেছি সে জন্য সকল মহল থেকে আমাকে ভর্ৎসনা করা হচ্ছে। এতে আমার আস্থায় বিন্দুমাত্র ফাটল ধরেনি। আমার এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই, সৎ ইতিহাসবিদগণ আমার কাজের যথাযথ মূল্যায়ন করবেন এবং ভবিষ্যতে একদিন প্রকৃত সত্যের মূল্য দেবেন।'মোট কথা মহাত্মা গান্ধী হিন্দু হয়েও একমাত্র এবং শুধুমাত্র হিন্দু সম্প্রদায়ের 'সাম্প্রদায়িক নেতা' না হয়ে থেকে তাদের স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি সকল দল ও মতের স্বার্থ রক্ষা করে একটি সুন্দর বসবাসযোগ্য এবং অসাম্প্রদায়িক ভারত রাস্ট্র গড়তে চেস্টা করাটাই তার জন্য কাল হল। আর এও শোনা যায় দেশ ভাগের পর পাকিস্থান ভারতের কাছে ৫২ কোটি টাকা পেত। ভারতও ঐ টাকা ইনস্টলমেন্টে শোধ করে আসছিলো। কিন্তু হঠাৎ নেহেরু ও প্যাটেল সরকার টাকা দেবেনা বলে সিন্ধান্ত নেয়। এতে গান্ধী অনশনে যান ... দাবী পাকিস্থানি ভাইয়ের টাকা শোধ করতে হবে। বাধ্য হয়ে নেহেরু/প্যাটেল এসে বলেন যে আপনি অনশন ভঙ্গ করুন, আমরা টাকা শোধ করে দেব। ঐ অনশন থেকে ফিরে নিজের বাড়ির প্রার্থনা সভাতে যোগ দিয়েছিলেন গান্ধী (কোনো জনসভাতে নয়)। সেখানেই তাকে মারা হয় এবং তাকে হত্যা করতে নাথুরাম গডসের কট্টর মুসলিম বিরোধিকে কাজে লাগানো হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, এটা গান্ধীকে মারার ৬ষ্ঠ প্রচেষ্ঠা ছিল। এর আগে ৫ বার ব্যর্থ হলেও এবার তাঁর উপর নেহেরু/প্যাটেল সরকার অসন্তুষ্ট ছিল... তাই হত্যা প্রচেষ্ঠা সফল হয়েছিল।

অস্ত্র ২

जिष्नु गुप्ता এতে 💥ALL BENGAL RSS💥রাস্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ  


অস্ত্র ২                     শেয়ার করেছেন         প্রণব কুমার কুণ্ডু





💥

🔴🔴🔴#শান্তির_প্রতিষ্ঠায়_অস্ত্রের_প্রয়োজনীতা🔴🔴🔴
প্রাচীন ভারতে মুসলিমরা #আল_তাকিয়া/#মুদারাৎ বা, #ইসলামি_শঠতা প্রয়োগ করে বারংবার অন্যায় যুদ্ধে হিন্দুদের পরাজিত করেছে। দশটি শতাব্দী পেরিয়ে যাওয়ার পরেও হিন্দুরা ইসলামের প্রকৃত চরিত্র সম্পর্কে জানতে একটুকু ও আগ্রহী হয়নি।
#ইসলামি_মিল্লাত#কুফর#দার_উল_ইসলাম#দার_উল_হারব#জেহাদ#কিতাল#কাফের#মুমিন এই ইসলামিক শব্দ গুলির মানে কি এটাই সংখ্যা গরিষ্ঠ হিন্দুরা এখনো জানে না। তারপরও এই সেকুলার মূর্খেরা, ইসলামের হয়ে উকালতি করতে আসে।
#কেউ_লজিক দিয়ে বোঝাবেন একজন ধর্ম প্রচারকের এত গুলি #অস্ত্র কিসের জন্য?? যেখানে মরুভূমিতে কোন জংলি জীবজন্তুর ভয় নেই????

বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৭

অস্ত্র


অস্ত্র

শেয়ার করে্ছেন                                                     প্রণব কুমার কুণ্ডূ ।


🔴🔴🔴#শান্তির_প্রতিষ্ঠায়_অস্ত্রের_প্রয়োজনীতা🔴🔴🔴
প্রাচীন ভারতে মুসলিমরা #আল_তাকিয়া/#মুদারাৎ বা, #ইসলামি_শঠতা প্রয়োগ করে বারংবার অন্যায় যুদ্ধে হিন্দুদের পরাজিত করেছে। দশটি শতাব্দী পেরিয়ে যাওয়ার পরেও হিন্দুরা ইসলামের প্রকৃত চরিত্র সম্পর্কে জানতে একটুকুও আগ্রহী হয়নি। 

#ইসলামি_মিল্লাত#কুফর#দার_উল_ইসলাম#দার_উল_হারব#জেহাদ#কিতাল#কাফের#মুমিন এই ইসলামিক শব্দ গুলির মানে কি এটাই সংখ্যা গরিষ্ঠ হিন্দুরা এখনো জানে না। তারপরও এই সেকুলার মূর্খেরা ইসলামের হয়ে উকালতি করতে আসে।

#কেউ_লজিক দিয়ে বোঝাবেন একজন ধর্ম প্রচারকের এত গুলি #অস্ত্র কিসের জন্য?? যেখানে মরুভূমিতে কোন জংলি জীবজন্তুর ভয় নেই????
🔴🔴🔴#শান্তির_প্রতিষ্ঠায়_অস্ত্রের_প্রয়োজনীতা🔴🔴🔴
প্রাচীন ভারতে মুসলিমরা #আল_তাকিয়া/#মুদারাৎ বা, #ইসলামি_শঠতা প্রয়োগ করে বারংবার অন্যায় যুদ্ধে হিন্দুদের পরাজিত করেছে। দশটি শতাব্দী পেরিয়ে যাওয়ার পরেও হিন্দুরা ইসলামের প্রকৃত চরিত্র সম্পর্কে জানতে একটুকু ও আগ্রহী হয়নি।
#ইসলামি_মিল্লাত#কুফর#দার_উল_ইসলাম#দার_উল_হারব#জেহাদ#কিতাল#কাফের#মুমিন এই ইসলামিক শব্দ গুলির মানে কি এটাই সংখ্যা গরিষ্ঠ হিন্দুরা এখনো জানে না। তারপরও এই সেকুলার মূর্খেরা ইসলামের হয়ে উকালতি করতে আসে।
#কেউ_লজিক দিয়ে বোঝাবেন একজন ধর্ম প্রচারকের এত গুলি #অস্ত্র কিসের জন্য?? যেখানে মরুভূমিতে কোন জংলি জীবজন্তুর ভয় নেই????