মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৭

জাত ধর্ম বর্ণ







জাত ধর্ম বর্ণ




Prasanta Kumar Mondal-এর পোস্ট শেয়ার করেছেন                  প্রণব কুমার কুণ্ডু।

ড.অরুপ হালদার,
অরুপবাবু,

গান্ধিজিসহ অন্যদের মতো ডঃ আম্বেদকর যদি বর্ণব্যবস্থার মধ্যে বিজ্ঞান দর্শন করতেন,  তাহলে ভারত মনুসংহিতার যুগেই পড়ে থাকতো।

আপনার তিনপাতার বক্তব্য আলোচনার আগে আমি জাত আর বর্ণের ধোকাবাজি সম্পর্কে কিছু বলতে চাই।
আপনি যদি যুক্তিবাদী মন নিয়ে বেদ,উপনিষদ,গীতা,স্মৃতিশাস্ত্র,রামায়ণ,মহাভারত,পুরাণ প্রভৃতি পাঠ করেন,  তাহলে দেখবেন,  জাত আর বর্ণ অভিন্ন। কেবল শব্দের কারসাজি।ব্রাহ্মণ্যবাদী চালাকি।

মানুষকে ছুঁতে না দিয়ে,  এঁরা গ্রন্থগুলি এতবার সংযোজন ও বিয়োজন করেছেন,  যে, গ্রন্থগুলির মধ্যে কোনটা আগে , আর কোনটা পরে জন্মেছে, তা,  বোঝা মুশকিল।
বেদের পুরুষসূক্ত-- চারবর্ণ সৃষ্টির কাল্পনিক জঘন্য সৃষ্টিতত্ব খাড়া করেছেন।আর সারা ঋকবেদ জুড়ে প্রাগার্য বা অনার্য তথা শূদ্রদের ধ্বংস কামনা করেছেন।

যে উপনিষদ মানুষকে অমৃতের পুত্র বলেছেন,  আবার সেই উপনিষদ ব্রাক্ষন আর ক্ষত্রিয়কে ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ সন্তান বলেছে আর চন্ডালকে পশুতুল্য করেছে।
পুরাণে মানুষের বিভিন্ন জাত সৃষ্টির ব্যাখা আছে।তা আবার ভগবান কর্তৃক।গীতা বর্ণপ্রথার নামে জাতব্যবস্থাকে আড়াল করার চেষ্টা করেছেন।কিন্তু পারেননি।যারা বলেন,  বংশগতজাত আর গীতার বর্ণ এক নয়,আমার মনে হয়  তাঁরা গীতা পড়েননি।
কৃষ্ণকে দিয়ে অর্জুনের বংশগত ক্ষত্রিয়ধর্মের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে,  গীতার লেখক,  বর্ণ আর জাতের মধ্যে ভেদাভেদ ঘুচিয়ে দিয়েছেন।অর্থাৎ গীতাই প্রমাণ করেছেন,  যে,  বর্ণ আর জাত অভিন্ন।

জাত আর বর্ণ যদি আলাদা কিছু হতো তাহলে জাতিভেদ বিরোধিতার জন্য জ্ঞানদাস,তুকারাম,কবীর,শ্রীচৈতন্য
খুন হতেন না।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর “শূদ্রধর্ম” প্রবন্ধে গীতার বর্ণপ্রথা ও স্ব-ধর্মের সমালোচনা করেছেন।

বিবেকানন্দ বলেছেন, “জাতিভেদ আছে বলে ৩০কোটি মানুষ আজ একটুকরো রুটি পাচ্ছে”।

গান্ধী বলেছেন “বর্ণবাদ খুবই বিজ্ঞানসন্মত।মানুষের পেশা নিয়ে কোনো সমস্যা থাকবে না”।অর্থাৎ মুচির ছেলে এম.এ পাশ করলেও পিতার জুতো সেলাইয়ের কাজ করবে।একি ন্যায় বিচার?একি জাতব্যবস্থা নয়?

১ম পাতাঃ-...................................
অরুপবাবু,
পৃথিবীর কোনদেশে Biotechnology Engineering আর Sperm Bank উন্নত মানব প্রজাতি সৃষ্টিতে নিয়োজিত হয়েছে জানালে বাধিত হব।এগুলি ব্যবহার করে পৃথিবীর কোথায় কতগুলি উন্নত মানব জাতি সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে জানালে উপকৃত হব।

আর অনুলোম, প্রতিলোম বিবাহ,  পাশ্চাত্যকে প্রভাবিত করেছে,  এমন তথ্য দিলে ভালো হয়।

ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়,বৈশ্য,শূদ্র সৃষ্টির উৎস্য ভগবানের মুখ,বাহু,উরু ও পা এর যে অর্থ আপনি করেছেন তা একান্তভাবে জঘন্য ব্রাহ্মণ্যবাদকে বাঁচানোর জন্য প্রচারিত সূত্র।হিন্দুধর্ম তো জাতব্যবস্হার বালির স্তূপের উপর দাঁড়িয়ে আছে।জাত তথা বর্ণপ্রথার বিরুদ্ধে যাওয়া মানে,  হিন্দুধর্মের বিরুদ্ধে যাওয়া।তাই বিষাক্ত সাপকে দড়ি বলে চালিয়ে দেবার চেষ্টা করেছেন বাবাজিরা।
আপনি বলেছেন যে অনুকূলচন্দ্র ব্রাহ্মণের পরিবর্তে শূদ্রকে উপরে স্থান দিয়েছেন।আগে কিন্তু আপনি বলেছেন যে উঁচু্‌,নিচু্‌, জাতি বর্ণ,  কেবল শব্দের অপব্যাখা।তাই যদি হয় তাহলে অনুকূলচন্দ্র কেন শূদ্রকে উপরে স্থান দেবেন?
শূদ্রই তো জাতির চাকা
বৈশ্য জোগায় টাকা
ক্ষত্রিয়রা রাজার জাত
ব্রাহ্মণ সবার মাথা।

অরুপবাবু্‌,
কৃষ্ণের সাথে ঠাকুরের তুলনা অবান্তর বলছেন?ঠাকুর নিজেই কিন্তু বলেছেন আমাকে ঠাকুর বা ভগবান না বলে,  কৃষ্ণ বললে ভালো হয়।এই অবান্তর তুলনা কে করেছেন?
(আলোচনা প্রসঙ্গে-১৪,পৃঃ৩৩)

২য় পাতাঃ-.............................................
অরুপবাবু্‌,
প্রথমেই বলি,আমার উদ্দেশ্য নয় কাউকে আঘাত দেওয়া।আমার উদ্দেশ্য হল,  জাত তথা বর্ণপ্রথাকে আঘাত করা।
রক্ত বা বংশ নহে‌, গুণ ও কর্ম অনুসারে বর্ণ ধারনাটির সৃষ্টি।এমন আপনার অভিমত।আমি বলব এইমত আপনার স্বতন্ত্র নয়।এ ব্রাহ্মণ্যবাদের প্রভাব।জাত আর বর্ণের মধ্যে ততটাই তফাৎ,  যতটা তফাৎ,  মল আর বিষ্ঠার মধ্যে।বর্ণ সৃষ্টির কারিগর গীতার ব্রাহ্মণ লেখক।গীতার লেখক কিন্তু জাত আর বর্ণের মধ্যে বিভেদ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।যুদ্ধ না করার সিদ্ধান্তের জন্য অর্জুনকে তার বংশগত ক্ষত্রিয় ধর্মের তিরস্কার করে,  গীতা প্রমাণ করেছেন,  যে জাত আর বর্ণ অভিন্ন।

অরুপবাবু্‌,
আপনি বলেছেন যে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ব্রাত্য জনেরাই ঋত্বিক।আমার প্রশ্ন হল,  এই ঋত্বিকদের দ্বারা দক্ষিণ ২৪ পরগনার ব্রাত্যজনের কি উন্নতি সাধিত হয়েছে?
ঠিকই বলেছেন যে ব্রাহ্মণ আর ব্রাহ্মণ্যবাদ এক নয়।কিন্তু এটি ভুললে চলবে না যে, ব্রাহ্মণ্যবাদের কারিগর হল ব্রাহ্মণ।ব্রাহ্মণের জন্যই ব্রাহ্মণ্যবাদ।ব্রাহ্মণ্যবাদের পিতা ব্রাহ্মণ।ব্রাহ্মণ্যবাদের মাথায় ব্রাহ্মণ।ব্রাহ্মণ্যবাদে মানুষ কেবলই ব্রাহ্মণ ।ব্রাহ্মণের স্বার্থেই ব্রাহ্মণ্যবাদ।
আপনি কাল্পনিক রামায়ণের,  ব্রাহ্মণ রাবণের অধঃপতনের কথা বলেছেন।কিন্তু বাস্তবে কোনো মহান গুণ সম্পন্ন অব্রাহ্মণ শংকরাচার্যের আসন পেয়েছে কি?কাল্পনিক ব্রাহ্মণ্যবাদী ধর্মশাস্ত্র নয়,  বাস্তবে দেখুন, সারা ভারতে কটা শূদ্র ব্রাহ্মণ হয়েছেন ? ব্রাহ্মণ শাস্ত্রকাররা শূদ্রকে মানুষ জ্ঞান না করে পরজন্মে তাদের ব্রাহ্মণ হওয়ার লোভ দেখিয়েছে।কিন্তু ব্রাহ্মণের মহিমা প্রচারে তারা মাত্রা ছাড়িয়েছেন।ভগবানকে দিয়ে ব্রাহ্মণের পা ধুইয়েছেন,  আবার ব্রাহ্মণকে দিয়ে ভগবানের বুকে লাথি মারিয়েছেন।তাই এদের লেখা গ্রন্থের চরিত্রের সাথে বাস্তবকে মেলাতে গেলে বোকামি হবে।

“Each man is created equal
With the same blood
But different characteristics”.

বাস্তবে কি প্রতিটি মানুষ equally created? কি করে equal হয়? কেউ বিকলাঙ্গ,কেউ অন্ধ,কেউ বোবা,কেউ কালা তো কেউ যুক্ত অঙ্গ বিশিষ্ট।তাহলে equal কোথায়? Same blood ? Blood তো চার প্রকার।Same blood কিভাবে?
বিবাহের পূর্বে বর্ণের হিসাব মানে জাতিভেদ নয়? তো কি? ব্রাহ্মণ সন্তানের পিতা কি জেলেপাড়ায় গিয়ে দেখে তার ছেলের যোগ্য পাত্রী খোঁজেন? না বাগদি পাড়ার সুন্দরী কন্যার পিতা ব্রাহ্মণ পাড়ায় গিয়ে তাঁর মেয়ের জন্য যোগ্য পাত্র খোঁজেন?এসব জঘন্য জাতিভেদকে, আড়াল করার ব্রাহ্মণ্যবাদী চক্রান্ত ছাড়া কিছুই নয়।

উৎকৃষ্ট বীজ,নিম্ন অর্থাৎ অধিকতর কম উৎকৃষ্ট ক্ষেত্রে ভালো ফল দেয়।এই বক্তব্যের কি কোনো বৈজ্ঞানীক সত্যতা আছে?উৎকৃষ্ট বীজের জন্য উৎকৃষ্ট জমিই তো দরকার।আবার উৎকৃষ্ট মাটিতে নিম্নমানের বীজ সুপ্রজননের অন্তরায়।নিম্নমানের বীজ যেকোনো মাটিতে নিম্নমানের উদ্ভিদ দেবে ।উৎকৃষ্ট মাটি বলার প্রয়োজন কোথায়?
এই বীজ সংগ্রহ কিভাবে করেন? যে দোকানে উৎকৃষ্ট বীজ পাওয়া যায় সেই দোকানে যান ? না ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্য-শূদ্র-মুচি-মেথর-চণ্ডাল,  সবার দোকান যাচাই করেন? সব দোকান ঘুরে দেখে যাচাই করেন কি? যাচাই কজন করে ? তারমান সবাই জাত খোঁজে,  বর্ণ নয়।

৩য় পাতাঃ-..........................................
এব্যাপারে আমি আপনার সাথে একমত যে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দানে মহান কাজ হয়।সেই কাজ যদি দাতারা দেখতে পায়,  তাহলে তারা তৃপ্তি পায়।বিহারের বাইরের ভক্তদের সেই বোধ সেই সুযোগ নেই।

তবে অরুপবাবু,
আমি মনে প্রাণে দৃঢ় বিশ্বাস করি যে জঘন্য জাতব্যবস্থা,  তথা বর্ণপ্রথা,  মানবতার শত্রু, দেশের শত্রু।ভারতকে অধঃপতিত করেছে এই জাত তথা বর্ণব্যবস্থা।আমি চরম ঘৃণা করি এই ব্যবস্থার স্রষ্টাদের, আর তাদেরকে যারা বর্ণব্যবস্থার নামে,  জাতব্যবস্থাকে বাঁচাতে মরিয়া।জাতিভেদের ঊর্বর জমিতে অবতার আর মহাপুরুষদের ছড়াছড়ি।এরা কিন্তু সবাই প্রায় ব্রাহ্মণ।এরা ভক্তদের কাছে অসীম ক্ষমতার অধিকারী।

জাতিভেদের কবল মুক্ত করে,  ছত্রভঙ্গ মানুষকে নিয়ে,  একটি শক্তিশালী মানব সমাজ গঠনের ক্ষমতা এদের হয়নি।এরা ব্রাহ্মণ্যবাদী ভেদাভেদের সূত্র প্রয়োগ করে  নিজেরাই আলাদা প্রতিষ্ঠান খুলে বসে পড়েছে।যেহেতু এরা পৈতেধারী ব্রাহ্মণ, তাই নিজেদের ব্রাহ্মণ সমাজের স্বার্থে,  জঘন্য ব্রাহ্মণ্যবাদী কু-রীতিনীতিকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রচার করেছেন।ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রকে বাঁচাতে জাতব্যবস্থা,  তথা,  বর্ণব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধা বাড়ানো এদের উদ্দেশ্য।
Intercaste marriage ছাড়া শক্তশালী সমাজ কখনোই সম্ভব নয়।ব্রাহ্মণ্যবাদী অবতার ব্রাহ্মণরা কখনোই চায়নি intercaste marriage হোক,মানুষ বৃহৎ আত্মীয়তা অনুভব করুক,  এবং মানুষ সঙ্গবদ্ধ হোক, শক্তিশালী হোক।ব্রাহ্মণঅবতার মহাপুরুষরা শুধুই নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষ্যার জন্য এমন শক্তিশালী সমাজ গঠনের বিরোধী ।

PRASANTA KUMAR MONDAL
Prasanta2032.blogspot.com

Pranab Kumar Kundu
Pranab Kumar Kundu         ভালো লেখা ! সারবর্তা আছে ! তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে 'রেফারেন্স' দিতে পারলে ভালো হোত !

Pranab Kumar Kundu

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন