শুক্রবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৭

নেতাজি


নেতাজি




মাননীয় মিন্টু ঘোষ-এর সংগ্রহ          শেয়ার করেছেন      শ্রী প্রণব কুমার কুণ্ডু



Mintu Ghosh

ঐতিহাসিক নিলাম
======================

1944 সালের 26 শে জানুয়ারী। রেঙ্গুনের মিউনিসিপ্যাল বিল্ডিং প্রাঙ্গনে নেতাজীর সম্মানে আয়োজিত হয়েছিল এক বিশেষ সভা। বর্মায় এটি প্রথম জনসভা। গণ্যমান্য ব্যক্তি থেকে সাধারণ মানুষের মিলনে সভা তখন জনসমুদ্র। নেতাজী নামের এমন জাদু।

সভার প্রথমে বর্মার অধিবাসীদের তরফ থেকে নেতাজীকে একটি মালা পরানো হয়। তারপর নেতাজী প্রায় দু ঘণ্টা বলে গেলেন। কখন যে এতটা সময় কেটে গেছে কেউ টের পায়নি। শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ।

এবার নেতাজী মালাখানি নিয়ে উদাত্ত কণ্ঠে বল্লেন --এই মালাখানি সমস্ত বর্মাবাসী মানুষের শুভেচ্ছার প্রতীক হিসাবে অমূল্য। কালে এটি শুকিয়ে হয়ে যাবে মূল্যহীন। তাই এই মুহূর্তে এর যথার্থ মূল্যায়নের জন্যে আমি এটি নিলাম করতে চাই। যে অর্থ পাওয়া যাবে তা দিয়ে রেঙ্গুনে খোলা হবে আজাদ হিন্দ সংগ্রহশালা।

সর্বপ্রথম আকুল কণ্ঠে চিৎকার করল এক শিখ যুবক হরগোবিন্দ সিং -- 'নেতাজী,ঐ মালা আমি কিনতে চাই,এক লাখ ডলার মূল্য দেব'।

স্হানীয় বিখ্যাত ব্যবসায়ী ব্রিজলাল হরগোবিন্দ কে পিছনে ফেলে বলেন --'আমি চাই ঐ মালা,দাম দু লাখ ডলার'।

আর একজন হেঁকে ওঠেন --আড়াই লাখ।

ব্রিজলাল গলা চড়ান --তিন লাখ ডলার--- তিন লাখ দশ হাজার.....।

মালার মূল্য ক্রমশ ঊর্ধমুখি ,হরগোবিন্দ নাছোড়বান্দা। চিৎকার করেন --চার লাখ।

সভার জনতা হরগোবিন্দকে সমর্থন করে।

ব্রিজলাল এসেছেন ব্যবসায়ী ও অহংকারী মনে, তিনি এটাকে পরাজয় মনে করে বলেন--'তব পাঁচলাখ এক হাজার....।


হরগোবিন্দ বুঝলেন তাঁর আশা পূর্ণ হবার নয়, প্রায় সর্বস্ব পণ করেও পারলেন না ঐ পরম সম্পদের মালিক হতে।

নিলাম চলতে থাকে দুই ধনকুবেরের মধ্যে, শেষে দাম উঠলো সাত লক্ষ ডলার।

দিয়েছেন ব্রিজলাল। ব্রিজলাল এগিয়ে চলেছেন সম্পদটি নিতে।

নেতাজী আসছেন সমর্পন করতে।

ঠিক সেই মুহূর্তে আর্তকন্ঠে চিৎকার করে উঠলেন হরগোবিন্দ----- 'নে---তা---জী' ......।


ব্রিজলাল বললে -নেতাজীকে ডেকে কি হবে? ক্ষমতা থাকে তো দাম বাড়াও।

হরগোবিন্দ বলল -তোমার সঙ্গে আমার কথা নেই। যা বলার নেতাজীকে বলব।


নেতাজী বললেন--বলো ,কি বলতে চাও?

হরগোবিন্দর চোখে তখন জল আর আগুন--- 'ভিক্ষা করার ভঙ্গীতে বললেন, "নেতাজী,সিঙ্গাপুরে আমার কখানা বাড়ী আছে। গ্যারাজে আটখানা ট্রাক আছে। তিনচার লক্ষ ডলার আছে। আরও হয়ত কিছু আছে--জানিনা সব যোগ করলে সাত লক্ষ ডলার ছাড়িয়ে যাবে কিনা ! তবে এই নিলামে আমার শেষ ডাক। যেখানে আমার যা কিছু আছে, শেষ কপর্দক পর্যন্ত--সব আমি আজাদ হিন্দ ফান্ডে লিখে দিচ্ছি। বিনিময়ে ঐ মালাখানি আমার চাই"।


হরগোবিন্দর দুচেখে বর্ষার ধারা। দেহ কাঁপছে।

নেতাজীর চোখে আনন্দ। মঞ্চ থেকে নেমে এলেন। বুকে জড়িয়ে ধরলেন হরগোবিন্দকে। মালাখানি পরিয়ে দিতে গেলে হরগোবিন্দ বললেন, "আপনার গলার মালা কি আমি গলায় পরতে পারি নেতাজী? আমার মাথায় রাখুন"।


ব্রিজলাল ছাড়তে চান না তার অধিকার।

তাকে নেতাজী শান্ত করেন। বলেন---" ওহ তো নঙ্গা ফকির বন চুকা। ওর সঙ্গে তোমার আর লড়াই চলে না ভাই। টাকা দিয়ে ভিখিরিকে ডিঙোনো যায় না "।


এবার হরগোবিন্দ একটি আর্জি পেশ করল। নেতাজী ," আর একটি ভিক্ষা"।

 "বলো হরগোবিন্দ", আশ্বাস দিলেন নেতাজী।

হরগোবিন্দ বললেন-- এখন গাছতলা ছাড়া আমার তো আর দাঁড়াবার স্হান রইল না। দিনে দু মুঠো গমও তো চাই জীবন ধারনের জন্য। তাই আপনি আমাকে আশ্রয় দিন। আজাদ হিন্দ ফৌজে ভর্তি করে নিন দয়া করে"।


অভিভূত নেতাজী বুকে টেনে নিলেন এই সর্বস্ব ত্যাগী যুবককে।


এমন দৃশ্য, এমন ইতিহাস আর কেউ কি কোন ও দিনও গড়তে পারবে !!!!!


# কৃতজ্ঞতা --- মিঃ বরুন দত্ত।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন