সোমবার, ৯ জানুয়ারী, ২০১৭

গুচ্ছ ছবি


Image may contain: 1 person, standing and eyeglasses
Image may contain: 1 person, sunglasses and closeup

Image may contain: 1 person, standing and eyeglasses
Image may contain: 1 person, standing and eyeglasses
প্রণব কুমার কুণ্ডু'র গুচ্ছ
         ফোটো।
কোলে মেয়ের তরফের
           নাতি।  
Image may contain: 2 people, eyeglasses and closeup

রবিবার, ৮ জানুয়ারী, ২০১৭

সাধনা ( গদ্যরচনা )



লিমেরিক-ছড়াকার   প্রণব কুমার কুণ্ডু




সাধনা  ( গদ্যরচনা )
সাধনা ( গদ্যরচনা)
সাধনা।

এখানে সাধনা, সাধন পদ্ধতি।
ঈপ্সিত বস্তু লাভের জন্য প্রযত্ন।
উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য, প্রযত্ন।

প্রযত্ন। বারবার চেষ্টা। সম্যক চেষ্টা।
প্রযত্ন। অধ্যাবসায়।

সাধনার বহিরঙ্গ আছে।
বহিরঙ্গ হচ্ছে, বাহ্য অঙ্গ।

সাধনার অন্তরঙ্গতা আছে।
'অন্তরঙ্গতা', 'অন্তরঙ্গ', এই বিশেষণ পদটির, বিশেষ্য পদ হিসাবে এখানে ব্যবহার করেছি।
'অন্তরঙ্গ' পদটির অর্থ এখানে, 'ভিতরের বা আভ্যন্তরের অঙ্গ।

যম নিয়ম আসন প্রাণায়াম প্রত্যাহার এগুলো বহিরঙ্গ সাধনা।
এই বহিরঙ্গ সাধনায় সিদ্ধ না হলে, সিদ্ধি না এলে, অন্তরঙ্গ সাধনার সান্নিধ্যে আসা দুষ্কর।

ধারণা ধ্যান ও সমাধি হচ্ছে অন্তরঙ্গ সাধনা।
সমাধির পরিপূর্ণতা আসে অধ্যাত্মপ্রসাদে।

'অধ্যাত্ম', হচ্ছে, 'ক্ষেত্রজ্ঞবিষয়ক', পরমাত্মসম্পর্কীয়। ব্রহ্মবিষয়ক। spiritual.। হতে পারে, আত্মবিষয়ক, চিত্তবিষয়কও।

প্রসাদ। প্রসন্নতা। অনুগ্রহ। অনুগ্রহের ফল।প্রসন্নভাব।সদয়ভাব।

আর সমাধির পরিপক্কতা আসে ঋতম্ভরা প্রজ্ঞায়।
ঋত। সত্য। পরম সত্য। পরব্রহ্ম।
ঋতম্ভর। সত্যপালক। সত্যনিষ্ঠ।
ঋতম্ভরা। সত্যনিষ্ঠা। সত্যজ্ঞানরূপ চিত্তবৃত্তি।

প্রজ্ঞা। উৎকৃষ্ট বোধশক্তি। সাত্ত্বিক বুদ্ধি। তত্ত্বজ্ঞান। যেগুলো অর্জন করলে, প্রজ্ঞাবান হওয়া যায়।
প্রজ্ঞাপারমিতা। জ্ঞানের পরাকাষ্ঠা।জ্ঞানের চরম উৎকর্ষতা।এখানে ঈশ্বরজ্ঞানের চরমসীমায় পৌঁছে যাওয়া। ঈশ্বরবিদ্যার চূড়ান্ত স্থানে পৌঁছে যাওয়া। পুরোপুরিভাবে ঈশ্বরকে জানা। ঈশ্বরকে পাওয়া। ঈশ্বরকে জানলে আর কিছু জানার বাকি থাকে না। ঈশ্বরকে পেলে আর কিছু পাওয়ার বাকি থাকে না। তখন সব জানা, সব পাওয়া হয়ে যায়। মন নিত্য আনন্দে থাকে। তখন সাধক কেবল, তাঁর দেহ আর আত্মার, আবরণের পঞ্চকোষের আনন্দময়কোষে নিত্য বিরাজমান।

সাধনা সফল। সফল সাধনা।




*  সূত্র  'পাতঞ্জল যোগদর্শন', পৃষ্ঠা ৬৯, ২৯ প্রভৃতি। গীতা প্রেস।

দ্বৈতবাদ অদ্বৈতবাদ ( গদ্যরচনা )





                                                                  লেখক প্রণব কুমার কুণ্ডু

দ্বৈতবাদ অদ্বৈতবাদ  ( গদ্যরচনা )


আমাদের অহংকার দূর না ্হলে, ধর্মকর্মের ব্যাপারে কিছুই হবে না।

 অহংকার দূর হ্ওয়ার আগে, দ্বৈতবাদ, আসলে ভয়ংকর ভাবে, আসক্তি বন্ধনের জন্য।

অহংকার দূর ্হয়ে গেলে, দ্বৈতবাদ, প্রেমবন্ধনের জন্য।

আমাদের সাত্ত্বিক জ্ঞানের উন্মুখতায়, দ্বৈতবাদ অদ্বৈতবাদে পরিণত হয়।

মানুষ যখন অনুভবে, ব্রহ্মের সাথে এক হয়ে যায়, তখন মানুষের ব্রহ্মজ্ঞান হয়।

ব্রহ্মের কাছে ভক্ত, অনুভবে আলাদা থেকে, আলাদা ভাবে অনুভবশীল হয়ে বিদ্যমান থাকলে, তখন দ্বৈতবাদ হয়।

শনিবার, ৭ জানুয়ারী, ২০১৭

অসিধারা ব্রত ( গদ্যরচনা )


অসিধারা ব্রত  ( গদ্যরচনা )



অসিধারা ব্রত। সুকঠিন ব্রত।

একই শয্যায় শায়িতা রমণীকে, উপভোগ করা নিষেধ।

ঐ একই উপলব্ধ, রমণীর পক্ষেও প্রযোজ্য।

ব্রত।
এখানে ব্রত বলতে, পুণ্যলাভ, ইষ্টলাভ, পাপক্ষয় ইত্যাদি বোঝাচ্ছে না।
তবে এই ব্রত, অনুষ্ঠেয় ধর্মকার্য তো বটেই।
কারণ, সনাতন হিন্দুধর্মে, জীবনধারণের প্রণালীই তো ধর্ম।
Hinduism is a way of life.

এটা একটা তপস্যা হতে পারে !

তবে আমাদের ধারণায়, তপস্যা বলতে যা বোঝায়, এটা সে ধরণের তপস্যা নয়।

তবে এই ব্রতপালন, এক সৃজনশীল মানসিক তপস্যা।

এই ব্রত সংযম পালনের ব্রত। ব্র্‌হ্মচর্য পালনের ব্রত।

এই ব্রতপালনের ব্রত প্রযোজ্য,নারী-পুরুয, উভয়েরই।

এই ব্রতধারীকে  ব্রতধারিনীকে, মানসিক এবং সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক সংযমের পরীক্ষা, নিজের কাছেই, নিজেকে দিতে হয়।

অসি।
খড়্গ বা তরোয়াল।

অসিধারা।
খড়্গ বা তরোয়ালের তীক্ষ্ণ অগ্রভাগ।
তরোয়ালের ধার।

অসিধারা ব্রতে, ব্রতপালনের দিনক্ষণ নেই।
রাতদিন নেই।
দিনরাত নেই।
ব্রতপালনের নির্দিষ্ট সময় নেই।
ঘড়ি দেখতে হবে না।
পাঁজি দেখতে লাগবে না।
ঘন্টা-মিনিটের ব্যাপার নেই।
অমাবস্যার-পূর্ণিমার বাঁধ-বাঁধন নেই।
তিথির কোন ব্যাপার নেই।
তবু  সে এক কঠিন ব্রত।

এই ব্রতে,  একই শয্যায় শায়িত স্বামী-স্ত্রীর,  প্রেমিক-প্রেমিকার,  নর-নারীর,  যুবক-যুবতির,  রমণ-রমণীর,  বৃদ্ধ-বৃদ্ধার,  ভোগ-উপভোগ,  পুরোপুরি নিষেধ।
দেহপুলক-যৌনপুলক পরিহারে, সংযমে, সঙ্গম নিষেধে, অনন্ত কালাতিপাত।

অসি এখানে রূপক।কেউ চাইলে, বিছানার তলায় রাখতে পারেন,  কেউ রাখতে পারেন,  দুজনার মাঝখানে, পাশবালিশের জায়গায়।

এই ব্রতে, স্ত্রী-পুরুযের ব্রহ্মচর্যপালনপূর্বক অবস্থান।

এই ব্রত, যুবক-যুবতির অবিকৃতচিত্তে, একত্রে অবস্থান রূপ ব্রত।

দু'হাজারি নোট, গান্ধিজি, নেতাজি, শ্যামাপ্রসাদ, প্যাটেল, জওহরলাল এবং আমি


দু'হাজারি নোট, গান্ধিজি, নেতাজি, শ্যামাপ্রসাদ, প্যাটেল, জওহরলাল, এবং আমি


দু'হাজার টাকার নোট, unimpressive note.

গান্ধিজিকে, কে বা কারা 'মহাত্মা' বানিয়েছেন, আমি জানি না।

কেউ জানলে জানাতে পারেন !

দু'হাজার টাকার নোটের, সামনের দিকে, গান্ধিজির ছবি, অন্য দিকে,  গান্ধিজির একটি চশমা !

গান্ধিজির চশমায়, কেন্দ্রীয় সরকার, তাদের, স্বচ্ছ ভারত মিশন-এর  বিজ্ঞাপন দিয়েছেন !

দু'হাজার টাকার নোট, ভাঙ্গাতে পারছি না !

শুধু শুধু, ব্যাঙ্ক ঐ নোটগুলো গছিয়ে দিল !


কেউ চাইলে, তিনি তাঁর শোবার ঘরে, বসবার ঘরে, বারান্দায়, রান্না ঘরে, বাথরুমে, গান্ধিজির ছবি রাখতেই পারেন !

কিন্তু টাকার ওপর ?

গান্ধিজির পরিচিতি আমি জানি।

গান্ধিজি ছিলেন, pro-muslim, anti Patel, anti Subash, anti Shamaprosad.

অল্প বয়সি মেয়ে/মেয়েদের নিয়ে,গান্ধিজির experiment-এর কথা, আমরা জানি !

গান্ধিজিকে এখনো অত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কেন ?

উনি তো কোথাও গেলে, মহিলাদের কাঁধে হাত রেখে চলতেন !

ছাগলের দুধ খেতেন !

তিনি তো ছিলেন, জওহরলালের, উষ্ণ সমর্থক !

Mr. Patel-কে, প্রধানমন্ত্রী হতে না দেওয়া !

প্রধানমন্ত্রীত্বের প্রশ্নে, জওহরলালকে সমর্থন করা !

                                                                        লেখক
     














পঞ্চত্ব ( গদ্যরচনা )



পঞ্চত্ব ( গদ্যরচনা )


পঞ্চত্ব ! পাঁচের ভাব। পঞ্চভূতে পরিণতি। ওটা মৃত্যু। [ পঞ্চন্ শব্দ + ত্ব ভাবার্থে। সং ; ক্লী। ]।
আমাদের শরীর ক্ষিতি আপ্ তেজঃ মরুৎ ব্যোম, এই পঞ্চভূতে ভেঙ্গে যাওয়া।
পঞ্চত্বপ্রাপ্ত। পঞ্চত্বকে প্রাপ্ত। মৃত।
পঞ্চত্বপ্রাপ্তি। মৃত্যু।
পরে আরো সূক্ষ্মতায় তা পঞ্চ তন্মাত্রে পরিণত হবে।
সেগুলো শব্দ স্পর্শ রূপ রস গন্ধ।
তারপরে?
তারপরে ঐগুলি কারণের করণসত্তায় গৃহীত হবে ।
ফের পুনর্জন্মে ঐগুলি প্রস্ফুটিত হবে।

লেখক

তত্ত্বকথা

তত্ত্বকথা



তত্ত্ব আসলে বস্তুর জ্ঞান।বস্তুর স্বরূপ ! ঈশ্বরের ব্যাপারে আসলে 'অদ্বয় জ্ঞান'। তত্ত্ব বলতে 'ব্রহ্ম'-কে বোঝায়। তত্ত্ব বলতে 'পরমাত্মা'-কে বোঝায়। তত্ত্ব বলতে 'ভগবান'-কে। তত্ত্ব বলতে 'পরমেশ্বর'-কে বোঝায়। ইত্যাদি।

তত্ত্ব আবার বীজ। বিশ্বসৃষ্টির বীজ।

তত্ত্ব কারণ। বিশ্বসৃষ্টির কারণ।

সাংখ্য মতে, তত্ত্ব, চব্বিশটি 'মূল'  'পদার্থ' * । যেগুলো, প্রকৃতি বা মূলা প্রকৃতি,  অর্থাথ  মূল প্রকৃতি, মহৎ, অহঙ্কার, পঞ্চতন্মাত্র, ও, ষোড়শ বিকার ! ষোড়শ বিকারের মধ্যে পড়ছে, পঞ্চমহাভূত, পঞ্চজ্ঞানেন্দ্রিয়, পঞ্চকর্মেন্দ্রিয়, ও  মন।

বিকার।
বিকার হচ্ছে, স্বাভাবিক অবস্থার অন্যথা। স্বাভাবিক অবস্থার বিকৃতি। বা বৈগুণ্য।
 বিকার, অস্বাভাবিক অবস্থায় রূপান্তর,  বা, রূপান্তরের ভাব। রুপান্তরের চেষ্টা।
বিকারের জন্য, বিকৃতি, অবস্থান্তর, এবং পরিবর্তনশীল পরিবর্তনের ফলে, উৎপন্ন অন্য বস্তু।
বিকার চিত্তবিক্ষেপ। বিকৃতচেষ্টিত !

তত্ত্ব

প্রকৃতি
মহৎ
অহঙ্কার
পঞ্চতন্মাত্র
ও ষোড়শ বিকার।

ষোড়শ বিকার

পঞ্চমহাভূত
পঞ্চজ্ঞানেন্দ্রিয়
পঞ্চকর্মেন্দ্রিয়
ও মন।

পঞ্চমহাভুত বা পঞ্চভূত। ক্ষিতি অপ্ তে্জঃ মরুৎ ও ব্যোম।

পঞ্চজ্ঞানেন্দ্রিয়। যে ইন্দ্রিয়ের দ্বারা বাহ্যবিষয়ের জ্ঞান লাভ করা যায় অর্থাৎ চক্ষু কর্ণ নাসিকা জিহ্বা ও ত্বক এই পঞ্চেন্দ্রিয়।

পঞ্চকর্মেন্দ্রিয়। যে সমস্ত ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে কর্ম সম্পাদন করা হয়, যেমন, বাক্ পাণি পাদ পায়ু উপস্থ।



প্রকৃতি।
প্রকৃতি বাহ্য জগৎ। জগতের অ-কৃত্রিম পদার্থের নাম ও রূপ,  'নিসর্গ' !
প্রকৃতি সৃষ্টির মূলকারণ বা আদিকারণ !
প্রকৃতিই আদ্যাশক্তি। প্রকৃতিই মহামায়া !
প্রকৃতি, সত্ত্ব রজঃ তমঃ, এই তিন গুণের সাম্য অবস্থা !
প্রকৃতি, সাংখ্যমতে, নির্গুণ চৈতন্যময় পুরুষের বিপরীতে ত্রিগুণাত্মক জড় তত্ত্ব !
প্রকৃতি নারী। স্মরণ করুন, 'পুরুষ ও প্রকৃতি' !
প্রকৃতি আবার অবিদ্যা !
প্রকৃতি মায়া !

মহৎ।
মহৎ ভাব ! মহতের ভাব ! মহত্তত্ত্ব। সাংখ্যমতে চতুর্বিংশতি তত্ত্বের আন্তর্গত দ্বিতীব তত্ত্ব। যেটি, বুদ্ধিস্বরূপ। বুদ্ধি তত্ত্ব !
সাংখ্যে,  মহতত্ত্ব সত্ত্বপ্রধান !

অহঙ্কার
নিজের সম্পর্কে বড়াই বা গর্ব। অ্হমিকা। আত্মম্ভরিতা।
অহং বা অহম্। আমি। অস্মদ্ শব্দের প্রথমার এক বচন !
অহঙ্কার আত্মাভিমান। অভিমান। নিজের ব্যক্তিত্বজ্ঞান ! নিজের ব্যক্তিসত্ত্বার জ্ঞান ! এটা অভিমানিত্মিকা বৃত্তি ! সেটা অন্তঃকরণের প্রবৃত্তি !  'অহম্-কৃ+ঘঞ্'  ভাব।
আমিই বড় এইরূপ জ্ঞান বা সেইরূপ অভিমান !
অহঙ্কার, 'আমি'র করণ বা বোধ। 'আমি' এই অভিমান। এটা একটা মনোবৃত্তি বিশেষ।
'আমি কর্তা', 'আমার ইহা', ইত্যাদি অভিনিবেশ। আত্মসম্ভাবনা। হয়তো আত্মবিড়ম্বনা !
'আত্মোৎকর্ষ হেতু অভিমান, মহাজ্ঞানমহঙ্কারঃ' !
সাংখ্যে,  অহঙ্কার,  মহত্তত্ত্বের জন্য, অভিমানবৃত্তিক তন্মাত্রাদির কারণ তত্ত্ববিশেষ !
আসলে, মহৎ হলে, অহঙ্কারী হতে হয় ! কারণ, 'মহতের পুত্র হৈল নাম, অহঙ্কার' !

অহঙ্কার তত্ত্বের সৃচ্টির নাম 'সর্গ' ! সম্ভবত, ওটা, 'ঈশ্বরের অহঙ্কার !

পঞ্চতন্মাত্র।
বা, পঞ্চতন্মাত্রা ( স্ত্রী লিঙ্গে )।
সাংখ্য দর্শনে, 'ক্ষিতি অপ্ তেজঃ মরুৎ ব্যোম', এই পঞ্চভূতগুলির, 'সূক্ষ্ম' 'অমিশ্র',  একেবারে মূল অবস্থান্তর-এর  ( fundamental stage )  অবস্থাক্রম , ( বা, অনুভবেও হতে পারে, ),  ঐ পঞ্চভূতগুলির  'তন্মাত্রা' ! ওটা 'কোলনবিদ্যার'  ( calculus-এর )  সীমান্ত স্থান'-এর ( limiting value-এর ) অবস্থা !
এই 'সূক্ষ্ম'-এর আর সূক্ষ্মতর সূক্ষ্মতম হয় না !
তন্মাত্র/তন্মাত্রা, 'কেবল সেইটুকুই', 'যেটুকু, না হলেই নয়' !
শব্দ স্পর্শ রূপ রস গন্ধ, এগুলি, পঞ্চভূতের পঞ্চতন্মাত্রার গুণ !
'পঞ্চতন্মাত্রা' নিয়ে, যে অনুভব আমার কাছে এসেছে, তা হল,
১। পঞ্চভুতের নিজস্ব 'পঞ্চতন্মাত্রা' !
                       আর,
২। পঞ্চভূতের গুণগুলির নিজস্ব 'পঞ্চতন্মাত্রা' !
সাংখ্যদর্শন মতে, প্রকৃতির 'তৃতীয়' সৃষ্টি, 'পঞ্চ' তন্মাত্র/তন্মাত্রা !
এই দুই ধরণের, পঞ্চতন্মাত্র/পঞ্চতন্মাত্রা,
'গুণ' 'তন্মাত্রাগুলি', আবার,  'ভূত' 'তন্মাত্রাগুলির'র সাথে, যথাক্রমে, সমবায় সম্পর্কে সম্পর্কিত !
পঞ্চতন্মাত্র বলতে, পঞ্চসংখ্যক সূক্ষ্মমহাভূত বোঝায়, আবার, সূক্ষ্মমহাভূতগুলির, সূক্ষ্মগুণগুলি, যেমন সূক্ষ্মশব্দ, সূক্ষ্মস্পর্শ, সুক্ষ্মরূপ, সূক্ষ্মরস, সূক্ষ্মগন্ধ, এই পঞ্চকেও বোঝায় !

মন


মন। চিত্ত, অন্তর, অন্তকরণ।
মন। বুদ্ধি। প্রবৃত্তি। সন্তোষ। তৃপ্তি।
মন। ( বোধ করা ) + অস্ ণ । সং ক্লী।
মন। বিবেচনা, ধারণা, বোধ।
মন। স্মৃতি, স্মরণ।
মন। প্রবৃত্তি, ইচ্ছা।
মন। মনোযোগ, অভিনিবেশ।
মন। নিষ্ঠা, আন্তরিকতা।
মন। সংকল্প। ইত্যাদি !
মন। মনঃ ( মনস্ ) শব্দের অপভ্রংশ।মননসাধন। চিত্ত, হৃদয়, মানস, অন্তকরণ।
মন। দর্শনে, সংকল্প-বিকল্পাত্মক অন্তঃকরণবৃত্তি ! (  বেদান্তসার )। এইটি, লিঙ্গশরীরের অবয়ববিশেষ। পঞ্চকর্মেন্দ্রিয়ের           সাথে, মন মিলিত  হলে, সেটি, 'মনোময়'কোষ।
মন। নিজেই, অন্তরিন্দ্রিয় !
মনঃস্থ/মনস্থ। মনে স্থিত। সংকল্পিত। স্থিরীকৃত !
মনঃকল্পিত। মানসিক চিন্তাজাত। মনে মনে যার, কল্পনা করা হয়েছে, এমন।
মনঃকষ্ট। মানসিক ক্লেশ। মনোদুঃখ ।
মনঃপীড়া। মনের ব্যথা !
মনঃপূত।মনে মনে স্বীকৃত। মনোনীত। মনের দ্বারা পবিত্রীকৃত।
মনঃপ্রাণ। মন ও প্রাণ। সমুদায় অন্তকরণ।
মনঃসংযোগ। মনোনিবেশ। মনোযোগ।
মনন। চিন্তা। ধারণা। অনুমান। অভিপ্রায়।সংকল্প। মন্ ( বোধ করা )  অনট্ ভা।
মনপবন।মনরূপ প্রাণবায়ু।
মনমোহন। চিত্তের মোহ বা বিহ্বলতা।বি.
                 চিত্তমোহজনক, পরমসুন্দর। বিণ.।
মনঃ ( মনস্ )
আত্মা ও বাহ্য বস্তুর সংযোগ  হলে, একই সময়ে, সকল ইন্দ্রিয়ের জন্য জ্ঞান উৎপন্ন ্হয় না ! কেবল ইন্দ্রিয়বিশেষের জন্য জ্ঞান উৎপন্ন ্হয় ! অন্য ইন্দ্রিয়গুলির জন্য , জ্ঞান উৎপন্ন ্হয় না ! সে জ্ঞান অনুৎপন্ন থাকে ! এইভাবে, ইন্দ্রিয়ের জন্য জ্ঞানের 'ভাবএবংঅভাব'-এর সংযোগ এবং অসংযোগ, ঘটে থাকে !
এইব্যাপারটা 'কণাদ' অনুভব করেন। এই 'তত্ত্ব'-ই, কণাদের মতে, 'মনঃ'।


সৃষ্টিতত্ত্ব।


ঈশ্বরের শক্তিতে, 'কাল' থেকে, গুণত্রয়ের ক্ষোভ জন্মায় !
'কাল' অর্থাৎ, 'সময়' না হলে কিছুই হয় না ! সময় অনুকূল না হলেও কিছুই হবে না !

স্বভাব থেকে গুণত্রয়ের পরিণাম রূপান্তরিত হয় !
কার স্বভাব ?
স্বভাবতই 'গুণত্রয়ের' স্বভাব !

সেই পরিণাম থেকে, কর্মপ্রবণতা জন্মে !

কর্ম অদৃষ্ট ! কর্মফলও সর্বদাই অদৃষ্ট !

সেই অদৃষ্ট কর্মফল থেকে, 'মহত্তত্ত্ব'র জন্ম ্হয় !

রজোগুণ ও সত্ত্বগুণ বর্ধিত,  বিকারপ্রাপ্ত ( ক্ষোভিত ) মহত্তত্ত্ব থেকে,  জ্ঞানক্রিয়া  ও  দ্রব্যরূপ তমঃপ্রধান বিকার জন্মায় !

সেই তমঃপ্রধান বিকারই 'অহঙ্কার !

অহঙ্কার আবার বিকারপ্রাপ্ত হয়ে  তিন ভাগে ভাগ হয়ে যায় !

১। বৈকারিক। অর্থাৎ, সাত্ত্বিক। বৈকারিক থেকে, জ্ঞানশক্তির উদ্ভব।

২। তৈজস। অর্থাৎ, রাজস। রাজস থেকে,  ক্রিয়াশক্তির উদ্ভব।

৩। তামস। তমোগুণপ্রধান। তমোগুণযুক্ত। তামস দ্রব্যশক্তিতে পরিণত হয় !

ঈশ্বরের ইচ্ছায়, 'তামস' অহঙ্কার থেকে, 'আকাশ' আবির্ভূত হয় !

'শব্দ' এই আকাশের 'তন্মাত্রা' !
সেই তন্মাত্রার সূক্ষ্মরূপ, এবং সেই  তন্মাত্রার অসাধারণ ধর্ম ! শব্দ হচ্ছে আকাশের তন্মাত্রা, এবং সেই আকাশের তন্মাত্রার, ধর্মগুণও হল 'শব্দ' !
এই শব্দ নিজেই উত্থিত হয়েছে,  কোন কম্পন  বা মাধ্যমেরও  দরকার পড়েনি ! এই শব্দ নিজেই নিজের স্রষ্টা, এবং নিজেই নিজের কাছে 'অনুভবনীয়' ! তাই যদি লিখি, তবে 'শব্দের'-ও  'অনুভব' শক্তি আছে ? কি জানি,  সঠিক জানি না !

এরপর আবার ঈশ্বরের ইচ্ছায়, 'আকাশ'  'বিকারপ্রাপ্ত' হল ! এবং সেই বিকারপ্রাপ্ত আকাশ থেকে, স্পর্ণগুণ বিশিষ্ট বায়ু উৎপন্ন হল !

কারণরূপে বায়ুতে আকাশের সম্বন্ধ থাকে  বলে, সেই বায়ু  'শব্দগুণ' বিশিষ্টও হয়ে  থাকে !

সেই বায়ুই অবস্থান্তরবিশিষ্ট হলে,

১। দেহ ধারণের হেতু 'প্রাণ'

২। ইন্দ্রিয়শক্তির হেতু 'ওজঃ'

৩। মনঃশক্তির হেতু 'প্রাণশক্তি'

৪। শারীরিকশক্তির হেতু 'বল'
      ইত্যাদি নামে 'কথিত' হয় !

'কাল' 'কর্ম' ও 'বায়ু'র স্বভাবের পরিবর্তনের ফলে, বায়ুতেও বিকার হলে, সেই বিকারগ্রস্থ বায়ু থেকে, 'রূপবিশিষ্ট  তেজ',  ( অগ্নি ), উৎপন্ন হল !

কারণরূপে, 'তেজে', আকাশ এবং বায়ুর সম্বন্ধ আছে বলে, সেই 'তেজ', 'স্পর্শ ও শব্দগুণযুক্ত' হল !

বিকারপ্রাপ্ত 'তেজ' থেকে, 'রসবিশিষ্ট', 'জলের' উৎপত্তি হল !

কারণরূপে জলে, তেজ বায়ু ও আকাশের সম্বন্ধ আছে বলে, সেই জল, 'রূপ স্পর্শ ও শব্দগুণযুক্ত' হয়।

বিকারপ্রাপ্ত জল থেকে গন্ধগুণযুক্ত পৃথিবীর উৎপত্তি হল !

কার্যের মধ্যে কারণের গুণ অভিব্যক্ত হওয়ায়, 'শব্দ স্পর্শ  রূপ ও রস' যুক্ত,  পৃথিবীর উৎপত্তি হল !

বৈকারিক অর্থাৎ সাত্ত্বিক অহঙ্কার থেকে মন এবং ইন্দ্রিয়ের অধিষ্ঠাত্রী দশদেবতার ও প্রজাপতির উৎপত্তি হল !


সাংখ্যদর্শন।

সাংখ্য, সাংখদর্শন, মহর্ষি কপিলকৃত দর্শনশাস্ত্র।
সাংখ্য মতে, সাংখ্য তত্ত্বে, চব্বিশটি 'মূল' পদার্থ।*

তার বাইরে, প্রকৃতিবিকৃতি-ভিন্ন 'পুরুষ'।*

কাজেই সাংখ্যে, সবশুদ্ধ 'পঞ্চবিংশতি' ( ২৫ ) তত্ত্ব !*

সাংখ্যে, আত্মবিষয়ক বিবেকজ্ঞান হয়।

সাংখ্যে, প্রকৃতি-পুরুষ ভেদজ্ঞানও হয় !

জ্ঞানযোগই সাংখ্য !

জ্ঞানঅন্তরঙ্গসাধন হেতু, সাংখ্যদর্শন, 'সন্ন্যাস'।

অনেক সন্ন্যাসিরা এই সাধনে ব্যস্ত এবং মগ্ন থাকেন।

সাংখ্যযোগিরা জ্ঞাননিষ্ঠ সন্ন্যাসী। জ্ঞাননিষ্ঠ যোগী।

সাংখ্যে, প্রকৃতি-পুরুষ তত্ত্ব সমৃদ্ধ, সর্বমোট পঞ্চবিংশতি তত্ত্ব। যেখানে, 'পুরুষ', আলাদা ভাবে রয়েছেন।*
'সাংখ্য' শব্দটা এসেছে, 'সংখ্যা' শব্দ থেকে।যেহেতু, সংখ্যা গুনে তত্ত্বটি  establish করা হয়েছিল, তাই !


পতঞ্জলি/পতঞ্জল।
ইনি, 'পাতঞ্জল যোগদর্শন'-এর জন্য বিখ্যাত। পাণিনীসূত্রের ভাষ্যকার। কথিত, ইনি 'অনন্তদেব-এর অবতার। সেইজন্য, পতঞ্জলির ভাষ্যগ্রন্থ, 'ফণিভাষ্য' বলেও পরিচিত।


পুরুষ।*
পুরুষ দেহে,  জীবরূপে' শায়ী। পুরুষ, ক্ষেত্রজ্ঞ । পুরুয, আত্মা । পুরুষ, আদিত্যদের মধ্যে, 'হিরণ্যগর্ভ। হিরণ্যগর্ভ আবার সকল  দেবতাদের আত্মা।
পুরুষ, সুর্যমণ্ডলের আওতাভুক্ত 'বিরাট'।
'সহস্রশীর্ষা পুরুষঃ'। দেখতে পারেন,  'পুরুষসূক্ত', শুক্লযজুর্বেদ  ৩১ . ১। আবার পুরুষসূক্ত রয়েছে, ঋগ্বেদীয় সূক্তে।
যত অবতার, সব, পুরুষের কলা অংশ।
সাংখ্যদর্শনে, প্রকৃতিবিকারবর্হিভূত, পঞ্চবিংশতি তত্ত্ব।
যিনি পুরুষপদবাচ্য, তিনি বিজ্ঞানঘন।

প্রাণ।
প্রাণ হচ্ছে জীবন। জীবনসাধনও প্রাণের ক্রিয়া !
প্রাণ হচ্ছে, বায়ু। তখন তাকে বলে, 'প্রাণবায়ু' !
দেহের ভিন্ ভিন্ন স্থান এবং ক্রিয়া হেতু
১। হৃদয়ের বায়ু, 'প্রাণ'। কাজ। অন্নপ্রবেশন ইত্যাদি।
২। গুহ্যস্থ বায়ু, 'অপান'। কাজ। মলমূত্র, পুরুষের ক্ষেত্রে বীর্য, ইত্যাদি ত্যাগ।
৩। নাভির বায়ু, 'সমান'। কাজ। খাবার হজম ইত্যাদি।
৪। কণ্ঠের বায়ু, 'উদান'। কাজ। কথা বলা ইত্যাদি।
৫। সর্বশরীরের বায়ু, 'ব্যান'। কাজ। নিমেষ ফেলা ইত্যাদি। ওপরের চারপ্রস্থ কাজগুলি বাদ দিয়ে, অন্যসব কাজ।
এই পঞ্চপ্রাণের বাইরে, 'নাগ' 'কূর্ম' 'কৃকর' 'দেবদত্ত' 'ধনঞ্জয়', এই পঞ্চ গৌণ বায়ুও  রয়েছে বলে বলা হয়।

প্রাণ বলতে আবার, 'সমষ্টিউপহিত চৈতন্য', 'সূত্রাত্মা',  'হিরণ্যগর্ভ', এঁদেরও বোঝায়। এগুলো ঠিকমতো বুঝে ওঠা একটু কষ্ট সাধ্য ব্যাপার !
প্রাণপুরুষ। জীবাত্মা।
প্রাণশরীর। প্রাণস্বরূপপরমাত্মা।
প্রাণসংযম। প্রাণায়াম।


পঞ্চতত্ত্ব।
তন্ত্রমতে। পঞ্চ 'ম'কার। 'মদ্য মাংস  মৎস্য মুদ্রা মৈথুন'।
বৈষ্ণবমতে।
১। গুরুতত্ত্ব
২। মন্ত্রতত্ত্ব
৩। মনস্তত্ত্ব
৪।দেবতত্ত্ব
৫।ধ্যানতত্ত্ব

সাংখ্যমতে।'ক্ষিতি অপ্ তেজঃ মরুৎ ব্যোম' এই পাঁচটি পঞ্চতত্ত্ব।


লেখকের নিবেদন।
'তত্ত্ব' দম্বন্ধে, আপাতত এইটুকুই নিখলাম।
লিখলাম, আমার অনুভবে এবং 'তথ্য' বিশ্লেষণে !
এর বাইরে,  ভবিষ্যতে যদি কোন  modification/correction দরকার পড়ে, পরে আমি তা করে নেব।




* তথ্যসূত্র  তত্ত্ব-বিবেচনী, গীতা প্রেস। বঙ্গীব শব্দকোশ। প্রচলিত বাংলা অভিধান। যোগবলে রোগ অরোগ্য। প্র্ভৃতি।


                                                   প্রবন্ধকার ও কবি  প্রণব কুমার কুণ্ডু


                                                 প্রবন্ধকার ও কবি  প্রণব কুমার কুণ্ডু