শনিবার, ২৩ মার্চ, ২০১৯

কর্মব্যবস্থায় সংরক্ষণ ( এক )



কর্মব্যবস্থায় সংরক্ষণ ( এক )




Pranab Kumar Kundu একটি প্রোফাইল শেয়ার করেছেন।
কর্মব্যবস্থায় সংরক্ষণ ( এক )
শেয়ার করেছেন প্রণব কুমার কুণ্ডু



Jayanta Ray
জাতিবর্ণ ব্যবস্থা (Caste System) বলতে কী বোঝায়? [ PART 1]
জাতিবর্ণ ব্যবস্থা ভারতীয় অঞ্চলের একটি বিশেষ সামাজিক সম্পর্ক। জাতিবর্ণ ব্যবস্থা হল এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে সমাজের সদস্যদের পেশার ভিত্তিতে নানা গোষ্ঠীতে ভাগ করা হয়েছে। তবে বিষয়টি এমন নয় যে কোন একটি সময়ে হটাৎ করে এটি শুরু হয়েছে। এরও একটি নির্দিষ্ট ইতিহাস আছে। বলা যায় সমাজে প্রাথমিকভাবে শ্রেণি বিভাজন দেখা দেবার পর কয়েকশ বছরের বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে ভারতীয় অঞ্চলে জাতিবর্ণ প্রথার ভিত্তিতে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার উদ্ভব হয়েছিল। আর্য সভ্যতার কোন একটি ঐতিহাসিক পর্যায়ে বর্ণ প্রথার উদ্ভব হয়। বর্ণ প্রথায় সমাজের সদস্যদের সামাজিক কাজের ভিত্তিতে চারভাগে ভাগ করা হয়; যথা ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র। ব্রাহ্মণদের কাজ হল যাগ যজ্ঞ করা, ক্ষত্রিয়দের কাজ হল সমাজকে বহিঃশত্রুর হাত থেকে রক্ষা করা বা যুদ্ধ করে রাজ্যের বিস্তার ঘটানো, বৈশ্যদের কাজ হল ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা করা এবং শূদ্রদের কাজ হল এই তিন বর্ণের সেবা করা।
প্রাথমিকভাবে খ্রীষ্টপূর্ব ১৫০০ শতক থেকে বর্ণ ব্যবস্থার যে বীজ দেখা দেয় তা আর্য অনার্য গোষ্ঠীগুলির মধ্যে সংগ্রাম ও আত্তীকরণের মধ্যে দিয়ে নানা ভাঙন ও গঠনের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলে। ফলে এমন উদাহরণও পাওয়া যায় যেখানে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিম্ন বর্ণের সদস্য উচ্চবর্ণে উন্নীত হয়েছে আবার তার উল্টোটাও ঘটেছে। তবে এই প্রথাকে দৃঢ় করবার লক্ষ্যে (নির্দিষ্ট বর্ণে) জন্মের ভিত্তিতে পেশা নির্ধারণ ও অসবর্ণ বিবাহ বন্ধ করবার একটি প্রচেষ্টা উচ্চবর্ণের (তৎকালীন সময়ের শোষকশ্রেণির) দিক থেকে বরাবরই চালু ছিল এবং বিভিন্ন শাস্ত্র ও সংস্কৃতিতেও তার প্রকাশ ঘটেছে। যাইহোক আরোও পরবর্তী সময়ে বিশেষতঃ চতুর্থ শতক থেকে যে জাতিবর্ণ ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটে সেটি সপ্তম শতক নাগাদ একটি কঠোর সামাজিক বিভাজনের রূপ নেয়। জাতিবর্ণ ব্যবস্থায় বর্ণগুলিকে বিশেষতঃ শূদ্রবর্ণকে পেশার ভিত্তিতে আবার বহু জাতিতে (caste) ভাগ করা হয়েছে যেমন কামার, কুমোর, তাঁতী, জেলে, গোয়ালা ইত্যাদি। এই ব্যবস্থার বিশেষ বৈশিষ্টগুলি হল;
১) প্রতিটি জাতির জন্য পেশা নির্দিষ্ট।
২) জাতির বাইরে বিবাহ নিষিদ্ধ।
৩) জাতি পরিচয় ঠিক হয় জন্ম দিয়ে।
এই প্রথায় শূদ্রজাতির নীচে থাকে আর একটি বিরাট জনসমষ্টি যাদের অতিশূদ্র আখ্যা দেওয়া হয়। সমাজে এদের স্থান থাকে প্রায় দাসের স্তরে, ধর্মীয় আইনে এরা কোন ধরনের সম্পত্তির মালিক হতে পারে না, এদের দায়িত্ব হল গোটা গ্রামের সেবায় সবচেয়ে কষ্টকর কাজগুলি করা এবং একইসাথে অস্পৃশ্য বলে গ্রামের বাইরে বাস করা। বর্তমানে এরাই দলিত বলে পরিচিত। তাই জাতিবর্ণ ব্যবস্থার যে বিশেষ বৈশিষ্টটি মনোযোগ দিয়ে বোঝা দরকার তা হল যে এই সমাজে একজন কাপড় বোনে সেই কারণে তার পরিচয় তাঁতী নয়, সে তাঁতী এই কারণে যে সে তাঁতী জাতির ঘরে জন্ম নিয়েছে এবং সেই কারণে জন্মের মধ্যে দিয়ে তার পেশাও নির্দিষ্ট হয়ে গেছে। এই ব্যবস্থায় ব্রাহ্মণ সন্তান বিদ্যাচর্চায় অনুৎসাহী হলেও সে ব্রাহ্মণই থাকে এবং সে কখনই কৃষিকাজ সহ শূদ্রদের জন্য নির্দিষ্ট পেশার কাজে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তেমনি এই ব্যবস্থায় শূদ্র ও অতিশূদ্র জাতিগুলির বিদ্যাচর্চার কোন অধিকার নেই।
জাতিবর্ণ ব্যবস্থা ও শ্রেণি ব্যবস্থার সম্পর্কটি কেমন?***********
মানব সমাজের ইতিহাসে দেখা যায় যে কোন সমাজের মানুষের উৎপাদন করার ক্ষমতা একটি নির্দিষ্ট স্তরে পৌছনোর পর সেইসব সমাজে একটি পর্যায়ে শ্রেণি বিভাজন দেখা যায়। শ্রেণি বিভক্ত সমাজ বলতে বোঝায় এমন একটি সমাজ ব্যবস্থা যেখানে সমাজের সমস্ত সদস্যরা একইভাবে সামাজিক উৎপাদনে যুক্ত থাকে না, ভিন্ন ভিন্ন অংশ ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে সামাজিক উৎপাদনে যুক্ত থাকে।
শ্রেণি বলতে বোঝায় একই সমাজের এক একটি গোষ্ঠী যাদের মধ্যেকার পার্থক্য বোঝা যায় নিম্নোক্ত বৈশিষ্টগুলি দিয়ে;
১) ঐতিহাসিকভাবে নির্ধারিত সামাজিক উৎপাদন ব্যবস্থায় তাদের অবস্থান,
২) উৎপাদনের উপায় তথা জমি ও উৎপাদন চালানোর যন্ত্রপাতির সাথে তাদের সম্পর্ক (মালিকানা বা মালিকাহীনতা),
৩) সমাজের উৎপাদিত সম্পদের উপর ভোগ দখলের পরিমাণ,
৪) যে উপায়ে সেই ভোগ দখল ঘটে থাকে।
শ্রেণি সমাজের বৈশিষ্ট হল যে সমাজের প্রতিটি সদস্য কোন একটি শ্রেণির অন্তর্ভূক্ত হয়েই জীবন ধারণ করতে পারে। শ্রেণি ব্যবস্থার অন্তর্বস্তু হল এমন একটি অপেক্ষাকৃত স্থায়ী ব্যবস্থা যেখানে সমাজের এক বা একাধিক গোষ্ঠী সামাজিক উৎপাদনে তাদের অবস্থানের ভিত্তিতে বা উৎপাদন উপায়ের সাথে সম্পর্কের ভিত্তিতে অপর এক বা একাধিক গোষ্ঠীর তৈরী করা উদ্বৃত্ত নিয়মিতভাবে আত্মসাৎ করে থাকে।
শ্রেণি ব্যবস্থার এই সংজ্ঞার দিকে তাকিয়ে বলা যায় যে জাতিবর্ণ ব্যবস্থা নিঃসন্দেহে প্রাক্‌ পুঁজিবাদী যুগের একটি শ্রেণি ব্যবস্থা যেখানে উচ্চবর্ণের মানুষেরা অর্থনীতি বহির্ভূত নিয়মে (Extra economic coercion), অর্থাৎ কোন বিনিময়ের নিয়ম ছাড়াই শূদ্র ও অতিশূদ্র জাতিগুলির সদস্যদের শ্রমের ফসল আত্মসাৎ করে থাকে। কিন্তু যদি উল্টো প্রশ্ন করা যায় যে প্রাক্‌ পুঁজিবাদী যুগে এই ধরনের শ্রমের আত্মসাতের জন্য জাতিবর্ণ প্রথা কী আবশ্যিক। তার উত্তরে বলা যায় যে বিশ্বের সমস্ত জায়গায় শ্রেণি ব্যবস্থা দেখা দিলেও আর কোথাও সেটি জাতিবর্ণ প্রথার রূপ নিয়ে হাজির হয় নি। জাতিবর্ণ ব্যবস্থার মৌলিক বৈশিষ্ট তথা বংশানুক্রমিকভাবে পেশা নির্দিষ্ট হওয়ার এই নিয়ম কেবল এই উপমহাদেশের বিশেষ বৈশিষ্ট।
হিন্দু শাস্ত্রে কী জাতিবর্ণ ব্যবস্থা অনুমোদিত?
হিন্দু ধর্মে যেসব গ্রন্থগুলি মৌলিক হিসাবে বিবেচনা করা হয় সেগুলিতে জাতিবর্ণ ব্যবস্থা কেবল অনুমোদিতই নয়, বলা যায় সেগুলিতে এই ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করবার জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। উপনিষদেই প্রথম বর্ণপ্রথার উল্লেখ পাওয়া গেছে। মনু সংহিতা, গীতা এগুলিতে সরাসরি জাতিবর্ণ প্রথাকে মহিমান্বিত করা হয়েছে। উপনিষদে বর্ণ ব্যবস্থাকে যুক্তিসিদ্ধ করতে আনা হয়েছে জন্মান্তরবাদ ও কর্মফলের তত্ত্ব। মনু সংহিতাতে ব্রাহ্মণ্যবাদকে শক্তিশালীভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। দ্বিজদের দাসত্ব করানোর লক্ষ্যে শূদ্রদের জন্য নানা ধরনের শাস্তির বিধান আছে। আরোও বলা হয়েছে যে শূদ্ররা কখনই ধন সম্পদ সঞ্চয়ের অধিকারী হবে না কারণ ধনসঞ্চয়কারী শূদ্ররা ব্রাহ্মণদের পীড়ন করে।
আবার গীতায় ভগবানের মূল বক্তব্য হচ্ছে ধর্মশাস্ত্রে সমর্থিত চতুর্বর্ণ প্রথাকে নিজের সৃষ্টি হিসাবে দেখিয়ে সেগুলিকে মহিমান্বিত করা। গীতার প্রধান ভাষ্যকার শংকরাচার্য তার গীতাভাষ্যের উপক্রমণিকাতে বলেছেন যে বিপন্ন চাতুর্বর্ণের পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্যই শ্রীভগবান অবতার রূপে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন।
উৎপাদন শক্তি ও সমাজের বিকাশে জাতি-বর্ণ প্রথার ভূমিকা কেমন?
আমরা আগেই বলেছি যে জাতিবর্ণ প্রথা ভারতীয় অঞ্চলের একটি নির্দিষ্ট শ্রেণি ব্যবস্থা আর শ্রেণি ব্যবস্থার উদ্ভব হয় সামাজিক উৎপাদনের বিকাশ একটি নির্দিষ্ট স্তরে যাবার পর বিশেষতঃ উদ্বৃত্ত উৎপাদন করার ক্ষমতা অর্জনের পর। সামাজিক উৎপাদন বিকাশের দৃষ্টিকোণ থেকে আদিম সাম্যবাদী সমাজের তুলনায় শ্রেণি ব্যবস্থা যে বৈশিষ্টমূলক ভূমিকাগুলি পালন করে তা হল;
১) সামাজিক শ্রমবিভাগের ভিত্তিতে উৎপাদনের বিকাশ,
২) উদ্বৃত্ত উৎপাদনের অপেক্ষাকৃত স্থায়ী ব্যবস্থা,
৩) সমাজের অনেক সদস্যের তৈরী উদ্বৃত্ত এক জায়গায় (ব্যক্তি বা রাষ্ট্রের হাতে) জড়ো হওয়া যা উৎপাদন বিকাশের ক্ষেত্রে বড় ধরনের উদ্যোগের সম্ভাবনা তৈরী করে। বিশেষতঃ এই কারণে প্রাচীন ভারতে মগধ রাষ্ট্র লৌহ শিল্পের বিকাশ ও জঙ্গল কেটে কৃষির বিস্তারের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়।
বর্ণ ব্যবস্থা যেহেতু অন্তর্বস্তুতে একটি শ্রেণি ব্যবস্থা তাই বিকাশের নির্দিষ্ট স্তরে এই বিভাজন তৎকালীন সময়ে সামাজিক উৎপাদনের বিকাশে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পরবর্তী বিকাশের ক্ষেত্রে জাতিবর্ণ ব্যবস্থার অন্যান্য বৈশিষ্টগুলি যেভাবে প্রতিক্রিয়াশীল ভূমিকা পালন করে তা হল;
ক) এক বিরাট সংখ্যক গোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্ত মানুষের ব্যক্তিগত দক্ষতা বিকাশের ক্ষেত্রে বাধা তৈরী করে যেহেতু এই ব্যবস্থায় জন্মের ভিত্তিতে পেশা নির্দিষ্ট হয়ে যায়,
খ) এই ব্যবস্থার ফলে একটি অপেক্ষাকৃত ছোট অঞ্চল যেমন একটি গ্রাম স্বয়ং সম্পূর্ণ হয়ে উঠতে পারে কারণ উচ্চ জাতিগুলির জীবন ধারণের জন্য সমস্ত প্রয়োজনীয় উপাদান (তা সে ভোগ্যবস্তুই হোক বা পরিষেবা হোক) বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত নিম্ন জাতিবর্ণের সদস্যরা সরবরাহ করে থাকে। এর ফলে স্বতস্ফূর্তভাবে পণ্য বিনিময় প্রথার বিকাশ ও পণ্য বিনিময় প্রথার গতিশীল চরিত্রের মধ্যে দিয়ে সামাজিক উৎপাদনের বিকাশ ব্যাহত হয় এবং এই সামাজিক স্থবিরতা দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারে।
অতীতে ভারতীয় অঞ্চলে এমন সময় গেছে যখন পণ্য উৎপাদন, ব্যবসা বাণিজ্য খুব উচুস্তরে পৌছেচে আবার পরবর্তীতে জাতিবর্ণ প্রথা দৃড় হওয়াতে এমন সময় এসেছে যখন সেই বিকাশ থমকে গেছে, সমাজ অপেক্ষাকৃত স্থবির হয়ে গেছে এবং গ্রামগুলি অপেক্ষাকৃত স্বয়ং সম্পূর্ণ হয়ে ওঠায় পণ্য উৎপাদন ও ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে উৎপাদন ও প্রযুক্তির বিকাশ অবরুদ্ধ হয়েছে। ফলে কঠোর জাতিবর্ণ ব্যবস্থা ও ব্রাহ্মণ্যবাদী মতাদর্শের ভিত্তিতে যে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা এই উপমহাদেশে গড়ে উঠেছে তার মধ্যে সামাজিক গতিশীলতার উপাদানগুলি সহজে ক্রিয়াশীল হয়ে উঠতে পারে নি। দৈহিক কাজের পেশাগুলিকে ঘৃণার চোখে দেখা ও নিম্ন জাতিবর্ণের মানুষের জ্ঞান চর্চার সুযোগ না থাকার ফলে সমাজের এক বিশাল অংশের মানুষের নানা ধরনের দক্ষতা ও সৃষ্টিশীলতার অপচয় ঘটেছে। বিশেষতঃ এই জাতিবর্ণ ব্যবস্থা পণ্য উৎপাদন ও পণ্য বিনিময় প্রথা তথা ব্যবসা বাণিজ্য বিস্তারের পথে বাধা তৈরী করে সমাজের পরবর্তী বিকাশে বিশেষতঃ সামন্ত ব্যবস্থা থেকে পুঁজিবাদী সমাজে পৌছনোর ক্ষেত্রে বিশেষ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।
জাতিবর্ণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রাচীনকালে কী সংগ্রাম হয়েছে?
যে কোন সমাজেই যে পরিমাণে শ্রেণি বিভাজন ঘটতে থাকে তার সাথে সাথে শ্রেণি সংগ্রামেরও আবির্ভাব ঘটে। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই ভারতীয় অঞ্চলের জাতিবর্ণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধেও প্রাচীনকাল থেকেই নানা ধরনের সংগ্রাম জারী ছিল। খ্রীষ্টপূর্ব পঞ্চম শতক থেকে সমাজের কারিগর ও ব্যবসায়ী শ্রেণিগুলি ব্রাহ্মণ্যতন্ত্র, অপ্রয়োজনীয় যাগযজ্ঞ ও কৃষির বিকাশের পক্ষে ক্ষতিকর পশু নিধন প্রথার বিরোধিতা করতে শুরু করে। এর প্রকাশ ঘটে বৌদ্ধ, জৈন ও লোকায়ত ধর্মের মধ্যে দিয়ে। পরবর্তীতে মগধ রাষ্ট্র গড়ে ওঠার মধ্যে দিয়ে মূলতঃ শূদ্র শ্রম ব্যবহার করে উৎপাদনের বিকাশ ঘটে। লোহার ব্যবহার প্রচলিত হওয়াতে জঙ্গল কেটে কৃষিকার্যের বিস্তার ঘটে। বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মও জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং তা ব্রাহ্মণ্যধর্মের প্রতিযোগী হয়ে ওঠে। এর প্রভাবে পরবর্তীতে ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রেরও কিছু সংস্কার ঘটে। অন্যান্য ধর্ম থেকে কিছু কিছু উপাদান গ্রহণের ফলে যাগযজ্ঞ, দান ও পশুনিধন অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বের অবস্থানে চলে যায়। ব্রাহ্মণরাও কৃষির বিস্তার ও পরাজিত উপজাতিদের মূলতঃ শূদ্র হিসাবে (কিছু কিছু ক্ষেত্রে অল্প সংখ্যক সদস্যকে ব্রাহ্মণ বা ক্ষত্রিয় মর্যাদা প্রদান ও কিছু দেব-দেবীকে হিন্দু দেবতা হিসাবে গ্রহণ) আত্তীকরণ করে উৎপাদন বিকাশে কিছুটা সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
জাতিবর্ণ ব্যবস্থা পোক্ত হয়ে ওঠার পর সংগ্রামের একটি দিক ছিল বিভিন্ন নিম্ন জাতির জাত ব্যবস্থায় উপরের স্তরে ওঠার সংগ্রাম যেহেতু এই ব্যবস্থায় ব্যক্তি তার দক্ষতার ভিত্তিতে উপরে উঠতে পারে না। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল গোটা জাতিবর্ণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নিম্ন জাতিবর্ণের শ্রমজীবি মানুষ বিশেষতঃ কারিগর ও ব্যবসায়ীশ্রেণির সংগ্রাম। তৎকালীন সময়ে এই ধরনের সংগ্রাম ধর্মীয় আকারেই গড়ে উঠতে পারত। ১২০০ সাল থেকে ১৭০০ সাল জুড়ে যে ভক্তি আন্দোলনের বিকাশ ঘটে তা আসলে ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় বিদ্রোহ। ভক্তি আন্দোলনে নেতৃত্ব যাদের মধ্যে থেকে উঠে আসে তারা হল মূলতঃ কামার, ছুতোর, তাঁতী জাতিভূক্ত। রবিদাসের মত অস্পৃশ্য জাতির মধ্যে থেকেও এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ ছিল। ছিল কিছু ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের প্রতিবাদী মানুষও। এই আন্দোলনের অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী ধারার নেতৃত্বে ছিল তুকারাম, নামদেব, কবীর ও গুরুনানক যারা প্রকাশ্যে ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। অপরদিকে রামানুজ, চৈতন্যের মত নরমপন্থীরাও ঈশ্বরের কাছে সবাই সমান এরকম ধারণা সামনে এনে জাতিবর্ণের মতাদর্শকে আক্রমণ করে্ন। এই আন্দোলনের ভাবধারা বিভিন্ন অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষায় প্রচারিত হওয়াতে অনেক জায়গাতেই আঞ্চলিক ভাষায় সাহিত্য সংস্কৃতির প্রভূত বিকাশ ঘটে যা আবার পরবর্তীতে বিভিন্ন জাতি গঠনের প্রক্রিয়ার সহায়ক হয়। তবে জাতিবর্ণ প্রথার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হলেও ঐ ব্যবস্থাকে ভেঙে নতুন ব্যবস্থা গড়বার কোন তত্ত্ব ভক্তি আন্দোলনকারীদের হাতে ছিল না এবং তার ফলে এই আন্দোলন পরবর্তীতে তার ব্যাপ্তি হারিয়ে ফেলে এবং একটি পর্যায়ে তার মধ্যেও নানা রক্ষণশীলতার আবির্ভাব ঘটে।
ব্রিটিশ আমলে কী জাতিবর্ণ প্রথা বিলুপ্ত হয় নি?
ব্রিটিশরা এদেশে আসার আগে বাইরে থেকে আসা যেসব শক্তি ভারতে শাসন চালিয়েছে তারা কোন নতুন উৎপাদন সম্পর্কের প্রতিনিধি ছিল না এবং ধীরে ধীরে তারা ভারতীয় অঞ্চলেরই অধিবাসী হয়ে উঠেছে। তারা সবাই (যেমন পাঠান, মোগল, তুর্কী) জাতিবর্ণ ব্যবস্থার অন্তর্ভূক্ত না হলেও সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতিনিধি ছিল। তাই তারা এই ব্যবস্থাকে ভাঙার কোন তাগিদ অনুভব করে নি, কেবল তাই নয় উদ্বৃত্ত তথা খাজনা আদায় করবার পক্ষে বিশেষ সুবিধাজনক ব্যবস্থা হিসাবে এটিকে তারা নানাভাবে রক্ষা করেছে, ব্রাহ্মণ, রাজপুত সহ সমাজের উচ্চবর্ণের সাথে নানা ধরনের সম্পর্ক তৈরী করে নিয়েছে এবং প্রয়োজনে তাদের আঞ্চলিক রাজা ও রাজ কর্মচারী হিসাবে নিয়োগ করেছে।
ব্রিটিশ শাসকরা ছিল এমন একটি শক্তি যারা অন্য ধরনের উৎপাদন তথা পুঁজিবাদী উৎপাদন সম্পর্কের প্রতিনিধি যেখানে কিনা সামন্তপ্রথার ধ্বংসস্তুপের উপর পুঁজিবাদী ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই তারা এখানকার অধিবাসী হয়ে ওঠেনি এবং তাদের মূল লক্ষ্য ছিল এদেশে তৈরী হওয়া উদ্বৃত্ত তাদের নিজের দেশে পাঠানো যা তাদের দেশের শিল্পের বিকাশে পুঁজির যোগান দিতে পারে। মজার ব্যাপার হল ব্রিটিশ শক্তি তাদের এই উদ্দেশ্য সফল করার জন্য জাতিবর্ণ ভিত্তিক সামন্ততন্ত্রকে ধ্বংস নয়, তার রূপটির কেবল একটু অদল বদল করে নিয়ে সযত্নে রক্ষা করল।
ফলে সমাজের যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব একটি পর্যায়ে নিশ্চয়ই এই জাতিবর্ণ প্রথাকে ভেঙে চুরমার করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পত্তন ঘটাতে পারতো, সেই বিকাশের পথ অবরুদ্ধ হয়ে গেল যখন ব্রিটিশ শক্তি এখানে তার উপনিবেশ গড়ে তুললো। নিম্নবর্ণভূক্ত যেসব কারিগর-কৃষক-ব্যবসায়ী শ্রেণি জাতিবর্ণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অতীতে ভক্তি আন্দোলনের মত সংগ্রাম গড়ে তুলেছিল এবং ভবিষ্যতে আরও বিকশিত সংগ্রাম গড়ে তোলার পর্যায়ে ছিল তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হল চরম শোষণ ও নিপীড়ণ। আর এই প্রক্রিয়াতে ব্রিটিশ শক্তি যাদের পাশে পেল তারা মূলগতভাবে উচ্চবর্ণভূক্ত সম্প্রদায়ের মানুষ এবং মাড়োয়ারী, গুজরাটী ও পার্সী সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকে উঠে আসা একগুচ্ছ দালাল ব্যবসায়ী শ্রেণি। ফলে বলা যায় যে ব্রিটিশ শাসনে যেমন একদিকে প্রতিক্রিয়াশীল ব্রাহ্মণ্যবাদী শক্তি নতুনভাবে প্রাণ ফিরে পেল তেমনি ব্রিটিশ শক্তিও তার পাশে পেয়ে গেল তাদের স্বার্থরক্ষাকারী বেশ কয়েকটি সামাজিক শক্তিকে।
ব্রিটিশ শক্তি এখানে শাসন চালানোর জন্য সেই ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর আমল থেকেই বিভিন্ন হিন্দুশাস্ত্র পড়াশোনা করে জাতিবর্ণ ব্যবস্থাটিকে বুঝে নেয় এবং বিভাজনের ভিত্তিতে শাসন চালানোর ক্ষেত্রে সেটিকে ব্যবহার করে। বিচারব্যবস্থা, আইন সহ বিভিন্ন সরকারী ক্ষেত্রে তারা এই জাতিবর্ণের বিভাজনটিকে যত্ন সহকারে রক্ষা করে। যেমন মন্দিরে শূদ্র ও অতিশূদ্রদের প্রবেশের নিষেধাজ্ঞার উপর তারা কোন হস্তক্ষেপ করেনি। গ্রামীণ ক্ষেত্রে তারা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত, রাতওয়ারী ইত্যাদি ব্যবস্থা চালু করে এবং এইভাবে আগে আইনী মালিকানার অস্তিত্ব না থাকলেও জমির সাথে কৃষকের যে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক ছিল, তার ছেদ ঘটায় এবং বিপুল পরিমাণে খাজনা আদায়ের উদ্দেশ্যে জমির মালিকানা তুলে দেয় সেইসব মানুষের হাতে যারা আগে ছিল হয় কেবল উদ্বৃত্ত আদায়কারী অথবা যারা কৃষিকার্যের সাথে সম্পর্কহীন উচ্চবর্ণীয় সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত। এছাড়াও উচ্চবর্ণের মধ্যে থেকে সুদখোর মহাজন সহ নানা মধ্যবর্তী স্তরের শোষকদের উদ্ভব হয় যারা ব্রিটিশ শক্তির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিল। এইভাবে কৃষিকাজের সাথে যুক্ত নিম্ন জাতিবর্ণের এক বিশাল সংখ্যক মানুষকে ভূমিহীন দরিদ্র কৃষক বা ভাগচাষীতে রূপান্তরিত করা হয়। ফলে ব্রিটিশ ভারতে জমিদার, জোতদার, চা বাগানের মালিক, আমলা, কেরানী, স্কুল কলেজের শিক্ষক – এই অংশগুলি মূলতঃ তৈরী হয়েছে উচ্চবর্ণ থেকে আগত মানুষদের নিয়ে। নিম্নবর্ণের কারিগরশ্রেণির একটি অংশকে কারখানার সাধারণ শ্রমিকে রূপান্তরিত করা হয়। আর অতিশূদ্র তথা দলিতদের একটি বড় অংশকে রেল, সেনাবাহিনী, সহরের রাস্তা নির্মাণ, কারখানার অদক্ষ শ্রমিক হিসাবে নিয়োগ করা হয়। খনি ও চা বাগান ইত্যাদি ক্ষেত্রে দলিত ও আদিবাসীদের নিয়োগ করা হয়। এরাই পরবর্তীতে হয়ে ওঠে সমাজের আধুনিক শ্রমিকশ্রেণি।
এইভাবে ব্রিটিশ আমলে কিছু অদল বদল ঘটিয়ে মূলগতভাবে জাতিবর্ণ ব্যবস্থাটির মৌলিক কাঠামোটিকে অক্ষুণ্ণ রাখা হয়। আবার পরিবর্তন বলতে যা বোঝায় তা হল; পুরাতন সমাজে বিভিন্ন নিম্ন জাতিবর্ণের জন্য যে পেশা নির্দিষ্ট ছিল তা হয়তো অন্যান্য পেশার আবির্ভাবের কারণে পরিবর্তিত হয়েছে, কিন্তু নিম্ন জাতিবর্ণের জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা মূলতঃ এক ধরনের কায়িক শ্রম থেকে অন্য ধরনের কায়িক শ্রমে যুক্ত হওয়া বোঝায়। যেমন কোথাও জেলেরা ক্ষেতমজুরে, তাঁতীরা নির্মান কর্মীতে, দলিতরা হাসপাতাল বা বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী অফিসের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীতে, আদিবাসীরা চা বাগানের শ্রমিকে রূপান্তরিত হয়েছে। তবে ব্রিটিশরা যে জমিদারী ব্যবস্থা গড়ে তোলে সেখানে জমিদার, জোতদার, তালুকদার ইত্যাদি শ্রেণিগুলির বড় অংশ উচ্চবর্ণের হলেও ছোট জমিদার, নানা ধরনের মধ্যস্বত্তভোগী শ্রেণি ও ধনী কৃষকদের একটি অংশ গড়ে ওঠে তৎকালীন শূদ্রজাতির মধ্যে থেকে।
ব্রিটিশ শাসনকালে এবং বিশেষতঃ ব্রিটিশের প্রত্যক্ষ শাসন শেষ হওয়ার পরে জাতিবর্ণ প্রথা মূলগতভাবে বজায় থাকলেও জাতিপ্রথা ও শ্রেণি সম্পর্কের বেশ কিছু তারতম্য ঘটেছে যার ফলে শূদ্রজাতির মধ্যে থেকেও একগুচ্ছ শোষকশ্রেণির আবির্ভাব হয়েছে। গ্রামাঞ্চলের সামন্ত শোষকশ্রেণি আজ আর কেবল উচ্চবর্ণজাত ব্রাহ্মণ, রাজপুত, ভূমিহার সম্প্রদায়ভূক্ত নয়, বিভিন্ন রাজ্যে পতিদার, প্যাটেল, মারাঠা, জাট, যাদব, কুর্মী, ভোক্কালিগা, লিঙ্গায়েত, কাম্মা, রেড্ডি ইত্যাদি নিম্ন জাতিবর্ণের একটি অংশও আজ গ্রামাঞ্চলের শাসক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। অনেক গ্রামাঞ্চলে শূদ্রবর্ণ থেকে আগত এই অংশই দলিত ও অতিশূদ্র মানুষের প্রধান নিপীড়ক হয়ে উঠেছে আর তার ফলে এই জাতিগুলির মধ্যে শ্রেণি বিভাজন ঘটেছে। তাই আজকের দিনে কেবলমাত্র নিম্ন জাতিবর্ণের মানুষের ঐক্যের আহ্বান শ্রেণি সমঝোতার পথ তৈরী করে কারণ এতে নিম্ন জাতিবর্ণের শোষিত নিপীড়িত শ্রমজীবি মানুষের নেতা হয়ে ওঠে নিম্ন জাতিবর্ণের শোষক ও শাসকেরা। কোথাও কোথাও নিম্ন জাতিবর্ণের এই অংশগুলি কেবল শোষণই চালায় না, জাতিবর্ণ প্রথার সমর্থনকারী শাসক হিসাবেও সুপ্রতিষ্ঠিত।
জাতিবর্ণ প্রথার বিরুদ্ধে সংগ্রামের কথা উঠলেই গান্ধী ও বিবেকানন্দর নাম সামনে আসে। এরা কী সত্যিই এই প্রথার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিলেন?
সবাই একথা জানেন যে জাতির পিতা গান্ধীজী অন্তত মুখে অস্পৃশ্যতার বিরোধিতা করেছিলেন কিন্তু একথা খুব কম মানুষই জানার সুযোগ পান যে গান্ধীজী জাতি-বর্ণ ব্যবস্থার একজন উগ্র সমর্থক ছিলেন। একদিকে গান্ধীজী যেমন এই ব্যবস্থার সারবস্তুকে বুঝতেন তেমনি একইসাথে গান্ধীজী মনে করতেন যে জাতিবর্ণ ব্যবস্থা ভারতীয় সমাজের অন্তরাত্মা, তাই প্রত্যেকের নিজের নিজের জাতি(Caste)-র জন্য নির্দিষ্ট পেশাতেই যুক্ত থাকা উচিত, না হলে ভারতীয় সমাজ ভেঙে পড়বে। ১৯২১ সালে গুজরাটের ‘নবজীবন’ পত্রিকায় তিনি লিখছেন, “জাতি-বর্ণ ব্যবস্থাকে ভেঙে ইউরোপের মত সমাজ ব্যবস্থা প্রবর্তন করার অর্থ হল হিন্দুদের বংশানুক্রমিক পেশার নীতিটাকেই বিসর্জন দেওয়া যা কিনা জাতিবর্ণ ব্যবস্থার আত্মা। বংশানুক্রমিক পেশার নীতিটি হল একটি সর্বজনীন নীতি। একে বদলানোর অর্থ হল নৈরাজ্য সৃষ্টি করা। যদি প্রতিদিন একজন ব্রাহ্মণ শূদ্রে ও একজন শূদ্র ব্রাহ্মণে রূপান্তরিত হয় তাহলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। জাতিবর্ণ ব্যবস্থা হল সমাজের একটি স্বাভাবিক নিয়ম। যারা জাতিবর্ণ ব্যবস্থা ভাঙতে চান আমি তাদের সবার সর্বৈব বিরোধী।” (আম্বেদকর রচনাবলী, খন্ড-১২, বোম্বে, ১৯৭৯-৯৩)
১৯৩৬ সালে জাতিবর্ণ প্রথা রক্ষায় নিবেদিত প্রাণ গান্ধীজী বলেছিলেন “একজন ভাঙ্গি বা মেথর সমাজের জন্য সেই কাজই করে যা একজন মা তাঁর সন্তানের জন্য করে থাকেন। মা তার সন্তানকে সুস্থ রাখতে তার ‘গু-মুত’ পরিস্কার করেন। একইভাবে একজন মেথরানিও সমাজের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে সকলের পায়খানা সাফ করে…..।” ভাবতে অবাক লাগে যিনি দলিতবর্গের মানুষকে তাদের বংশানুক্রমিক পেশায় যুক্ত থাকার পক্ষে ওকালতি করেছেন তিনিই আবার জাতির পিতা।
এরপর আসে বিবেকানন্দের কথা। তিনি গান্ধীজীর মতো ধূর্ত রাজনীতিবিদ ছিলেন না, জাতিবর্ণ ব্যবস্থার অন্তর্বস্তুকে হয়তো সেভাবে অনুধাবন করতে পারেন নি, এবং তার ফলে নানা সময় নানা উক্তি করেছেন যার মধ্যে অনেক উক্তিকে আপাতভাবে ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের বিরোধী বলে মনে হয়। বাস্তবত জাতিবর্ণ প্রথা নিয়ে বিবেকানন্দ যা বলেছেন তার সাথে সমাজ বিজ্ঞানকে বোঝার তো কোন প্রশ্নই নেই, বাস্তবত এই প্রশ্নে তিনি মূলতঃ ব্রাহ্মণ্যবাদী অবস্থান গ্রহণ করেছেন। জাতিবর্ণ ব্যবস্থা হচ্ছে এই উপমহাদেশের শ্রেণি ব্যবস্থার একটি বিশেষ রূপ যে রূপটি আর কোথাও দেখা যায় নি। বিবেকানন্দ দেশ বিদেশ ঘুরেও বুঝতে পারেননি যে জাতিবর্ণ প্রথা ভারতীয় অঞ্চলের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট। শ্রেণি ও জাতিবর্ণের মধ্যেকার পার্থক্য বিবেচনা না করে তিনি ভেবেছেন যে সারা পৃথিবীতেই চারিবর্ণ অবস্থান করে। বিবেকানন্দর বাণী ও রচনা-র নিম্নোক্ত উদ্ধৃতিটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য; “…জাতি বিভাগ অনন্তকালের জন্য থাকিয়া যাইবে। সমাজের প্রকৃতিই এই বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত হওয়া। …জাতি বিভাগ প্রাকৃতিক নিয়ম। ….জাতি বিভাগ ভালো জিনিস জীবন সমস্যা সমাধানের ইহাই একমাত্র স্বাভাবিক উপায়। লোকে নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণিবিভাগ করিবে; ইহা অতিক্রম করিবার উপায় নাই। যেখানেই যাও, জাতি বিভাগ থাকিবেই।” জাতিবর্ণ ব্যবস্থার মৌলিক বিষয়টি তথা সামাজিক আইন হিসাবে জন্মের ভিত্তিতে কর্ম বা পেশা নির্ধারণ যে শ্রেণি ব্যবস্থার অতিরিক্ত একটি বিষয় এবং তা যে সর্বজনীন নয়, ভারতীয় উপমহাদেশের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট এটি তার বোধগম্য হয় নি।
অপরদিকে বুঝে বা না বুঝে তিনি যে জাতিবর্ণ ব্যবস্থার পক্ষে ছিলেন তা পরিস্কার হয়ে যায় যখন তিনি বলেন, “জ্ঞানোন্মেষ হলেও কুমোর কুমোরই থাকবে, জেলে জেলেই থাকবে, চাষা চাষই করবে। ‘সহজং কর্ম কৌন্তেয় সদোষমপি না ত্যজেৎ’– এইভাবে শিক্ষা পেলে এরা নিজ নিজ বৃত্তি ছাড়বে কেন? জ্ঞানবলে নিজেদের সহজাত কর্ম যাতে আরোও ভালো করতে পারে, সেই চেষ্টা করবে।….”
এখন তো বর্ণাশ্রমের আইন নেই। তাহলে একথা কী বলা যাবে যে আজও জাতিবর্ণ প্রথা টিকে আছে?
এটা ঠিক যে আজ আর রাষ্ট্রীয় আইন করে বর্ণাশ্রম প্রথা চালানো হয় না। কিন্তু জাতিবর্ণ প্রথা টিকে আছে বা নেই এটা বোঝার উপায় হচ্ছে সমাজকে মানসিক শ্রম ও কায়িক শ্রম, সম্পত্তির মালিকানা ও মালিকাহীনতা, ধনী ও দরিদ্র, শিক্ষিত ও অশিক্ষিত – এই ভিত্তিতে ভাগ করলে সেটা মূলগতভাবে উচ্চবর্ণ ও নিম্নবর্ণ এই ভাগের সাথে মিলে যায় কিনা তা পরখ করে দেখা। বর্তমান ভারতীয় সমাজকে বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে এই প্রথা আজও প্রকটভাবে বিদ্যমান। আসলে কয়েক হাজার বছর ধরে নিম্ন জাতিবর্ণের কয়েক পুরুষকে কঠোর কায়িক শ্রম ও সেবামূলক কাজে আবদ্ধ রাখার ফলে খালি সমাজ কাঠামোতেই নয়, এই ধরনের বিভাজন মতাদর্শগতভাবেও একটি স্থায়িত্ব পেয়েছে। এর ফলে উচ্চবর্ণের মানুষেরা যেমন কায়িক শ্রমের কাজকে ঘৃণার চোখে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে তেমনি নিম্ন জাতিবর্ণের বেশিরভাগ মানুষ উচ্চপদে চাকুরী, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক ক্ষেত্রটিকে উচ্চবর্ণীয় মানুষের স্বাভাবিক বিচরণক্ষেত্র বলে মনে করে।
ভারতীয় সমাজ এখনও এতটাই জাতিবর্ণ প্রথায় বিভক্ত যে বিশেষ কোন পরিসংখ্যানের সাহায্য না নিয়েই চোখ বুজে বলে দেওয়া যায়; ক্ষেতমজুর বা ভূমিহীন চাষী নিম্ন জাতিবর্ণের, চায়ের দোকান বা হোটেলের শিশু শ্রমিক নিম্ন জাতিবর্ণের, রিক্সা চালক নিম্ন জাতিবর্ণের, মুটে, রাস্তার ঠেলাওয়ালা বা রেলের কুলী নিম্ন জাতিবর্ণের, পাতাল রেল ও রাস্তা নির্মানকর্মী নিম্ন জাতিবর্ণের, বাড়ীর ঝি বা চাকর নিম্ন জাতিবর্ণের। আবার হাসপাতালের ডাক্তার উচ্চবর্ণের, কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বা গবেষণাগারের বিজ্ঞানী উচ্চবর্ণের, আমলা ও সরকারী বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তি উচ্চবর্ণের, প্রতিষ্ঠিত সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক বা কবি উচ্চবর্ণের। খালি তাই নয় জাতিভেদ প্রথার অস্তিত্ব যে এখনও শক্তিশালীভাবে টিকে আছে যখন দেখা যায় যারা চুল কাটে তারা প্রায় সবাই জাতিগতভাবে নাপিত, যারা জুতো সেলাই করে তারা সবাই প্রায় জাতিগতভাবে মুচী, যারা তাঁত বোনে তারা সবাই প্রায় জাতিগতভাবে তাঁতী, যারা মাটির জিনিস তৈরী করে তারা সবাই প্রায় জাতিগতভাবে কুমোর, যারা শ্মশানের কাজে যুক্ত তারা সবাই প্রায় জাতিগতভাবে ডোম। তবে আজকের অর্থনীতিতে নির্দিষ্ট জাতির সমস্ত সদস্য তাদের জাতিগতভাবে নির্দিষ্ট পেশার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে না। তাই সমস্ত নাপিত চুল কাটে না, বা সমস্ত তাঁতী তাঁত বোনে না ইত্যাদি।
সংরক্ষণ ব্যবস্থা কী?
কোন একটি সমাজ ব্যবস্থায় কোন এক বা একাধিক বিশেষ সামাজিক (ধর্মীয়, জাতিগত, বর্ণগত, সম্প্রদায়গত, লিঙ্গগত) পরিচয় বিশিষ্ট গোষ্ঠী যদি সমাজের আধুনিক পেশা ও সুযোগ সুবিধা (শিক্ষা, চাকুরী, ব্যবসাবাণিজ্য, সম্পত্তির মালিকানা) থেকে নিয়মিতভাবে বঞ্চিত হয় তবে সেই বঞ্চনাকে ব্যক্তির সমস্যা হিসাবে বিবেচনা করা যায় না, সেই বঞ্চনার পেছনে নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক কারণ থাকে। এরকম একটি সমাজে বিভিন্ন সামাজিক সুযোগ সুবিধা অর্জনের ক্ষেত্রে ব্যক্তির সমানাধিকারের নীতি প্রয়োগ করলে ঐতিহাসিক কারণে পিছিয়ে থাকা গোষ্ঠী চিরকালই পিছিয়ে থাকে এবং তা গণতন্ত্র বিকাশের পরিপন্থী। সংরক্ষণ হল এরকম একটি ব্যবস্থা যেখানে এই ধরনের গোষ্ঠীগুলির জন্য বিশেষ সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা যাতে তারা জনসংখ্যার অনুপাতে সমাজের বিভিন্ন পেশাতে প্রতিনিধিত্ব অর্জন করতে পারে। কোন রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে গণতান্ত্রিক হতে হলে এই ধরনের উদ্যোগ তার জরুরী অঙ্গ হতে হবে। না হলে একদিকে যেমন ওই গোষ্ঠীগুলির গণতন্ত্র রক্ষিত হয় না, তেমনি এই ধরনের গোষ্ঠীর সদস্যদের দক্ষতা দেশের উৎপাদনের বিকাশের ক্ষেত্রে অব্যবহৃত থেকে যায়। তাই আমাদের দেশে সংরক্ষণ প্রথাকে ভাবা যেতে পারে যে এটি জাতিবর্ণগত অসাম্য দূর করতে একটি বিশেষ প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ এবং এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী কারণ বর্তমান সমাজ তার সাধারণ গতির মধ্যে দিয়ে এই অসাম্য দূর করতে অক্ষম।
তাই এই ধরনের সংরক্ষণের কর্মসূচী কেবল জাতিবর্ণ ব্যবস্থার জন্যই প্রযোজ্য নয়, ঐতিহাসিক কারণে বঞ্চিত সমাজের নারীজাতির ক্ষেত্রেও এরকম উদ্যোগ গ্রহণ করতে হয়। একই কারণে মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্রে কালো মানুষদের জন্য এরকম উদ্যোগের উদাহরণ আছে এবং তা কিছু কিছু বেসরকারী ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
জাতিবর্ণের ভিত্তিতে সংরক্ষণ কী জাতিবর্ণ ব্যবস্থাকে আরোও শক্তিশালী করে না?
দেশ জুড়ে বিশেষতঃ শাসকদের মধ্যে এরকম একটি শক্তিশালী প্রচার আছে যে সংরক্ষণ প্রথা জাতিবর্ণ ব্যবস্থাকে দুর্বল করার বদলে আরোও শক্তিশালী করে। এটি আসলে অত্যন্ত শক্তিশালী একটি ব্রাহ্মণ্যবাদী প্রচার। মনে রাখতে হবে যে জাতিবর্ণ ব্যবস্থার মৌলিক ভিত্তি হচ্ছে জন্মের ভিত্তিতে পেশা নির্ধারিত হওয়া। জাতিবর্ণ প্রথার টিকে থাকে এই ভিত্তির উপর, সেটা কারোর ব্যক্তিগতভাবে জাতিবর্ণভেদ প্রথা মানা বা না মানার উপর নির্ভর করে না। যে ধরনের নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলে জাতিবর্ণ প্রথা দুর্বল হতে পারে সংরক্ষণ হচ্ছে এই ধরনের নানা উদ্যোগের একটি।
বর্তমানে এমন কিছু তথাকথিত প্রগতিশীল অংশকে দেখা যাচ্ছে যারা বলতে চায় সংরক্ষণ দেওয়ার অর্থই হল জাত পরিচয়ের বিষয়টিকে সামনে আনা যেহেতু সংরক্ষণ দেওয়া হচ্ছে জাত পরিচয়ের ভিত্তিতে। এর ফলে জাত পরিচয় মুছে গিয়ে একটি সমসত্ব সমাজ তৈরী হতে পারছে না। বাস্তবত ভারতীয় সমাজে বিবাহ সহ প্রায় প্রতিটি সামাজিক বিষয়ে জাতিবর্ণের পরিচয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এই সংস্কৃতি টিকে আছে জাতিবর্ণ ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করেই। আর এই সাংস্কৃতিক অসাম্য টিকে রয়েছে জাতিবর্ণ ব্যবস্থার ভিত্তিতে পেশাগত ক্ষেত্রে ও অর্থনীতি্র ক্ষেত্রে যে অসাম্য রয়েছে তার উপর নির্ভর করেই। তাই জন্মের ভিত্তিতে পেশা নির্ধারণ যেমন জাতিবর্ণ ব্যবস্থার অন্তরাত্মা তেমনি এটিকে ধ্বংস করেই একমাত্র এই ব্যবস্থার তার সাথে সাথে এই মতাদর্শের বিলুপ্তি সম্ভব। চাকুরী ও শিক্ষায় সংরক্ষণ এই ধ্বংসের কাজে একটি মাত্রায় এই ভূমিকা পালন করে।

CONTD... IN PART 2


রূপম রূপম


রূপম রূপম

শেয়ার করেছেন                প্রণব কুমার কুণ্ডু


প্রণব কুমার কুণ্ডু











Rupam Rupam


হিন্দু বন্ধুরা, যারা হিন্দুদের কেবল গেরুয়া সন্ত্রাসী বলে তাদের যোগ্য জবাব দেওয়ার জন্য আজকে এই পোস্ট ---সবাই এই কথা গুলো মাথায় ও ডায়েরিতে রাখবেন ---🙏
🚩🚩🛂
পাকিস্তানে মুসলমানদের কে মারছে ?
আফগানিস্তানে মুসলমানদের কে মারছে ?
সিরিয়াতে মুসলমানদের কে মারছে ?
ইয়েমেনে মুসলমানদের কে মারছে ?
ইরাকে মুসলমানদের কে মারছে ?
লিবিয়াতে মুসলমানদের কে মারছে ?
মিশরে মুসলমানদের কে মারছে ?
সোমালিয়াতে মুসলমানদের কে মারছে ?
বালুচিস্তানে মুসলমানদের কে মারছে ?
এখন আমি ভাবছি যে যখন এই দেশগুলো ইসলামিক দেশ... তাহলে শান্তি কোথায় ???
আমি ইসলামের ওপর প্রশ্ন করছি না, কারণ সবাই জানেন যে ইসলাম একটি শান্তিপূর্ণ ধর্ম... কিন্তু শান্তি এখানে রহস্যময় ভাবে নিরুদ্দেশ... !!!
আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন, মিশর, সোমালিয়াকে কি বজরং দল বা হিন্দু মহাসভা বর্বাদ করেছে ? ওখানে দাঙ্গা করানোর জন্য কি আর. এস. এস. এর লোক গিয়েছিল ?
এ এক অদ্ভূত বিড়ম্বনা,
এখানে কিছু দেশদ্রোহীর কাছে,
ইসরত জাহান 'মেয়ে',
কানহাইয়া কুমার 'ছেলে',
দাউদ ইব্রাহিম 'ভাই',
আফজল হল 'গুরু',
কিন্তু,
ভারত 'মাতা' নয় !!!
এমনটা... কেন...... ???
বৌদ্ধ + হিন্দু = কোনো সমস্যা নেই,
হিন্দু + খ্রিস্টান = কোনো সমস্যা নেই,
হিন্দু + ইহুদী = কোনো সমস্যা নেই,
নাস্তিক + হিন্দু = কোনো সমস্যা নেই,
বৌদ্ধ + শিখ = কোনো সমস্যা নেই,
জৈন + হিন্দু = কোনো সমস্যা নেই,
শিখ + জৈন = কোনো সমস্যা নেই,
জৈন + বৌদ্ধ = কোনো সমস্যা নেই,
হিন্দু + শিখ = কোনো সমস্যা নেই,
এবার একটু মন দিন...
মুসলিম + হিন্দু = সমস্যা,
মুসলিম + শিখ = সমস্যা,
মুসলিম + বৌদ্ধ = সমস্যা,
মুসলিম + জৈন = সমস্যা,
মুসলিম + ইহুদী = সমস্যা,
মুসলিম + খ্রিস্টান = সমস্যা,
মুসলিম + নাস্তিক = সমস্যা,
মুসলিম + মুসলিম = খুবই বড় সমস্যা !
উদাহরণ দেখুন, যেখানে যেখানে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ, সেখানে তারা সুখে থাকে না আর অন্যকে থাকতেও দেয় না !
দেখুন...
মুসলিম সুখে নেই গাজাতে,
মুসলিম সুখে নেই মিশরে,
মুসলিম সুখে নেই লিবিয়াতে,
মুসলিম সুখে নেই মরক্কোতে,
মুসলিম সুখে নেই ইরানে,
মুসলিম সুখে নেই ইরাকে,
মুসলিম সুখে নেই ইয়েমেনে,
মুসলিম সুখে নেই আফগানিস্তানে,
মুসলিম সুখে নেই পাকিস্তানে,
মুসলিম সুখে নেই সিরিয়াতে
মুসলিম সুখে নেই লেবাননে,
মুসলিম সুখে নেই নাইজেরিয়াতে
মুসলিম সুখে নেই কেনিয়াতে,
মুসলিম সুখে নেই সুদানে,
এখন দেখুন...
মুসলিম সেখানে সুখে আছে, যেখানে তারা সংখ্যায় কম...
মুসলিম সুখে আছে অস্ট্রেলিয়াতে,
মুসলিম সুখে আছে ইংল্যাণ্ডে,
মুসলিম সুখে আছে বেলজিয়ামে,
মুসলিম সুখে আছে ফ্রান্সে,
মুসলিম সুখে আছে ইতালিতে
মুসলিম সুখে আছে জার্মানিতে
মুসলিম সুখে আছে সুইডেনে,
মুসলিম সুখে আছে আমেরিকাতে,
মুসলিম সুখে আছে কানাডাতে,
মুসলিম সুখে আছে নরওয়েতে,
মুসলিম সুখে আছে ভারতে,
মুসলিম সুখে আছে নেপালে,
মুসলমান সেইসব দেশে সুখে আছে !
যেগুলো ইসলামিক দেশ নয়...
আর দেখুন তারা সেই দেশগুলোকেই দোষী করে যেগুলো ইসলামিক দেশ নয়...!
অথবা যেখানে মুসলিমরা নেতৃত্বে নেই...!
মুসলমানরা সবসময় সেইসব দেশকে দোষী করে যেদেশে তারা সুখে আছে...!
আর মুসলমানরা সেইসব দেশকে বদলাতে চায়... যেখানে তারা সুখে আছে !
আর বদলে সেইসব দেশের মত করতে চায়... যেখানে তারা সুখে নেই...!
আর শেষ পর্যন্ত এর জন্য লড়াই করে...! আর একেই বলে...
*ইসলামিক জিহাদ*
এখন সেইসব সংগঠনগুলোকে দেখুন...!
যার দ্বারা তারা দুনিয়া বদলাতে চায়...!
১. আইসিস = জঙ্গি সংগঠন
২. আল কায়দা = জঙ্গি সংগঠন
৩. তালিবান = জঙ্গি সংগঠন
৪. হামাস = জঙ্গি সংগঠন
৫. হিজবুল মুজাহিদিন = জঙ্গি সংগঠন
৬. বোকো হারাম = জঙ্গি সংগঠন
৭. আল নুসরা = জঙ্গি সংগঠন
৮. আবু সয়াফ = জঙ্গি সংগঠন
৯. আল বদর = জঙ্গি সংগঠন
১০. মুসলিম ব্রাদারহুড = জঙ্গি সংগঠন
১১. লস্কর এ তৈয়বা = জঙ্গি সংগঠন
১২. প্যালেস্টাইন লিবারেশন ফ্রন্ট = জঙ্গি সংগঠন
১৩. হেজবুল্লাহ = জঙ্গি সংগঠন
১৪. জামাত এ ইসলামিয়া = জঙ্গি সংগঠন
১৫. আব্দুল্লা আজম ব্রিগেড = জঙ্গি সংগঠন
ইত্যাদি এবং আরো অনেক ইসলামিক জিহাদি জঙ্গি সংগঠন !
এখন এটুকু তো আপনি অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন যে...
'সন্ত্রাসবাদীর' 'ধর্ম' কী... ???
এবার যদি কেউ হিন্দুকে বদনাম করে......
গেরুয়া সন্ত্রাসের নামে, তাহলে......
তাকে সেখানেই......
এই তথ্যগুলো অবশ্যই শোনান......!
কেবলমাত্র এই ধরনের লোকদের জন্যই ইসলামিক জিহাদের বাড়বাড়ন্ত......!
আশ্চর্য...... ঘোর আশ্চর্য...... ?
অবশেষেও অবশ্যই সেক্যুলারা বলবে "ইসলাম শান্তির ধর্ম"
কৃতজ্ঞতায়,,
শুভ গাঙুলী
জয় শ্রীরাম

Rupam Rupam






শুক্রবার, ২২ মার্চ, ২০১৯

Samarth Tiwari এই গোষ্ঠীটিতে একটি লিঙ্ক শেয়ার করেছেন: Nation wants to know৷


Samarth Tiwari এই গোষ্ঠীটিতে একটি লিঙ্ক শেয়ার করেছেন: Nation wants to know


Shared by Pranab Kumar Kundu



Pranab Kumar Kundu














Samarth Tiwari এই গোষ্ঠীটিতে একটি লিঙ্ক শেয়ার করেছেন: Nation wants to know

Chhotte Sahibzade (ages 7 & 9 Yrs) of Guru Gobind Singh attained martyrdom on 25/26 December 1705 at a very young age. They sacrificed there lives to defend and protect Sikhism & Hinduism. They were murdered by Mughals.

Guru Gobind Singh's two younger sons, Baba Fateh Singh and Baba Zorawar Singh aged 7 and 9 years were bricked alive and later killed in the presence of the Assembly of Shaitans, presided over by Suba Sirhind, Wazir Khan

Let us celebrate 25 Dec as Shaheedi Diwas not Christmas !


গুরু গোবিন্দ সিং

গুরু গোবিন্দ সিং

শেয়ার করেছেন         প্রণব কুমার কুণ্ডু

প্রণব কুমার কুণ্ডু












Biplob Rajbanshi গোষ্ঠীটিতে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন: 💥ALL BENGAL RSS💥রাস্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ💥


Partha Sarathi Mandal এতে বার বার মোদী সরকার

শোক পালন করুন।মেরি ক্রিস্টমাস নয়।

মন্তব্যগুলি

তৈমুর লং এক দিনেই হত্যা করেছিলেন ১ লক্ষ হিন্দু

তৈমুর লং এক দিনেই হত্যা করেছিলেন ১ লক্ষ হিন্দু

শেয়ার করেছেন          প্রণব কুমার কুণ্ডু


প্রণব কুমার কুণ্ডু





তৈমুর লং এক দিনেই হত্যা করেছিলেন ১ লক্ষ হিন্দু




ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম প্রসারের ইতিহাস  (পর্ব-)

এরপর ভারত আক্রমন করলো তৈমুর লঙ । 'দিল্লীর সুলতনগন পৌত্তালিকতার উচ্ছেদ সাধন না করে পৌত্তালিকদের প্রতি উদারতা প্রদর্শন করছে,'  এই অজুহাতে তিনি দিল্লী আক্রমন করলেন । দিল্লী অভিমুখে যাত্রাপথে দীপালপুরভাতনেইর প্রভৃতি স্থান লুন্ঠন  করে এবং অসখ্য নর-নারীর প্রাণ নাশ করে দিল্লীর উপকণ্ঠে এসে উপস্থিত হলেন । সেখানে তিনি প্রায় এক লক্ষ হিন্দু বন্দীকে হত্যা করে এক নারকীয় কান্ড ঘটালেন । এরপর তৈমুর দিল্লী পৌছালে তার সেনাবাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে হিন্দু নাগরিকগন আত্মরক্ষার চেষ্টা করলে এক ব্যপক হত্যাকান্ড শুরু হয় । তৈমুরের দুর্ধষ বাহিনী অগনিত হিন্দু নর নারীর রক্তে দিল্লী নগরী রঞ্জিত করলো । দিল্লী নগরীতে কয়েকদিন ধরে পৈশাচিক হত্যাকান্ড ও লুণ্ঠনের পর তৈমুর সিরিজাহাপনা ও পুরাতন দিল্লী সহ আরো তিনটি শহরে প্রবেশ করে অনুরূপ লুণ্ঠন ও হত্যাকান্ড ঘটান ।
দিল্লী হত্যাকান্ড এমন পৌশাচিক এবং এত পরিমান মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল যে, এই হত্যা কান্ডের পরবর্তী দু'মাস পর্যন্ত দিল্লীর আকাশে কোন পাখি উড়ে নাই ।


ঐতিহাসিকদের মতে তৈমুর মোট ১৭ মিলিয়ন মানুষ হত্যা করেছিলেন যা সেই সময়ের হিসাবে সারা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার৫-৭% ।
তথ্যসুত্রঃ Wiki 
তৈমুর তার আত্ম জীবনীতে লিখেছেন-দিল্লিতে আমি ১৫ দিন ছিলাম। দিনগুলি বেশ সুখে  আনন্দে কাটছিল। দরবার বসিয়েছিবড়বড় ভোজ সভা দিয়েছি। তারপরেই মনে পড়ল কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেই আমার হিন্দুস্থানে আসা। খোদার দয়ায় আমিসর্বত্রই আশাতীত সাফল্য পেয়েছি। লক্ষ লক্ষ কাফের হিন্দু বধ করেছি। তাদের তপ্ত শোনিতে ধৌত হয়েছে ইসলামের পবিত্র তরবারি--------তাই এখন আরাম-আয়েসের সময় নয় বরং কাফেরদের বিরুদ্ধে নিরন্তর যুদ্ধ করা উচিৎ।

এই হত্যকান্ড এত পৈশাচিক হয়েছিল যেবিভিন্ন স্থানে মুসলমান রাজকর্মচারীরা এই খবর প্রচার করে করে হিন্দুদেরকে ইসলাম গ্রহন করতে নির্দেশ দেয়নির্দেশ না মানলে তৈমুরের বাহিনীকে খবর দেবেএই ভয়ও দেখানো হয় । ফলে বিভিন্ন স্থানে ভয়ার্ত মানুষ দলে দলে মুসলমান হতে লাগল । সেজন্য বাংলায় এখনো "শুনে মুসলমানকথাটি প্রচলিত আছে ।

সিকান্দার শাহ ছিলেন অত্যান্ত ধার্মিক মুসলমান । তিনি হিন্দুদের উপর অকথ্য নির্যাতন চালাতেন । তারই আদেশে মথুরার বিখ্যাত হিন্দু মন্দিরটি ধুলিস্যাত করা হয়েছিল । তিনি হিন্দুদের যমুনা নদীতে স্নানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন । জৈনক ব্রাম্মন"হিন্দু ধর্ম ইসলাম ধর্ম অপেক্ষা কোন অংশেই হীন নহে"- এই কথা বলার অপরাধে সুলতানের আদেশে প্রণ হারিয়েছিলেন । তিনি ছিলেন প্রচণ্ড হিন্দু বিদ্বেষী ও ইসলাম ধর্ম মতে পরম ধার্মিক মুসলমান শাসক । তার অত্যাচারে এবং আদেশে কাশ্মীরের হিন্দুগন ইসলাম ধর্ম গ্রহন করতে বাধ্য হয়েছিলেন ।
(সুত্রঃ- ভারত ইতিহাস কথা, ডক্টর কে সি চৌধুরী, পৃ-১৩৭ )




"যদি কোনো গবেষক উপরোক্ত তথ্যাবলীর মধ্যে একটিও ভূল বলে প্রমান করতে পারেনতাহলে আমরা তার কাছে চিরদিনের জন্য কৃতজ্ঞ থাকব।"