বৃহস্পতিবার, ৯ আগস্ট, ২০১৮

মান্না দের গৃহ বন্দিত্ব



   মান্না দের গৃহ বন্দিত্ব


   ফেসবুক থেকে           শেয়ার করেছেন                প্রণব কুমার কুণ্ডু


শেষ জীবনে মান্না দে...॥
মুম্বাই ছেড়ে যাবার সময় মান্না দে বলেছিলেন,' ছোট মেয়ে সুমিতা বেঙ্গালুরুতে কিছু কাজ-টাজ করতে চায়। তাই আমরাও চলে যাচ্ছি। ওকে তো আমরা একা ছেড়ে দিতে পারিনা'।
তারপর ?
আরতি মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন 'দিনের পর দিন ফোন করেছি। বেজে গেছে শুধু। কেউ ফোন ধরতো না। একজন অত্যন্ত জনপ্রিয় গায়িকা শুনলাম মান্নাদার জন্মদিনে ওর বাড়িতে দেখা করতে গিয়ে শেষমেশ বাড়িতে ঢুকতে না পেরে জানালা থেকে শুভেচ্ছা আর প্রণাম জানিয়ে চলে আসেন'। কেন ??
যে মান্না দে ভোরবেলা রেওয়াজ ছাড়া ভাবতেই পারতেন না শেষ জীবনে তার কাছে একটা হারমোনিয়াম পর্যন্ত ছিলনা !!!!
মান্না দের বহু গানের মিউজিক আরেঞ্জার হিসেবে কাজ করেছেন শান্তনু বসু। স্ত্রী সুলোচনার মৃত্যুর পর মান্না দে একদিন ফোন করলেন তাকে,' সুলুকে উৎসর্গ করে কয়েকটা গান করব ঠিক করেছি। তোমার হেল্প চাই'। তারপরেই বললেন,' দেখো,এই সময় আমার গানতো খরচা করে কেউ করবেনা। তুমি আমাকে বলো,আমি যদি আটটা গান করি,কত খরচ হতে পারে'?
ভাবা যায় ?
শেষ পর্যন্ত অবশ্য মহুয়া লাহিড়ী এগিয়ে এসেছিলেন সেই রেকর্ড করার জন্য। এই রেকর্ডের কাজেই বেঙ্গালুরু পৌঁছে শান্তনু বসু ফোন করলেন মান্নাদেকে, তিনি জিজ্ঞেস করলেন,'কাল তুমি কখন আসবে?' একটু অবাক হয়ে শান্তনু বসু বললেন,'দাদা আমি তো আজই আপনার সঙ্গে গান নিয়ে বসবো বলেই দুপুরে চলে এলাম। আমি যদি পাঁচটা-ছটা নাগাদ যাই'। একটু ইতস্তত হয়ে মান্না দে জবাব দিলেন,'আজ তো চুমু (ছোট মেয়ে সুমিতা) কাজে চলে যাবে। তুমি কাল এসো'।
শান্তনু বসু বললেন,'কাউকে লাগবেনা দাদা। আমি আর আপনি হলেইতো হবে'। তিনি তাও বললেন 'অসুবিধে আছে'। শান্তনু বসু নিশ্চুপ। এবার তিনি নিজেই অস্বস্তির সঙ্গে বললেন 'আমাকে তো তালাবন্ধ করে চাবি নিয়ে ও কাজে চলে যায়। আবার রাত বারোটা সাড়ে বারোটা নাগাদ আসে'। স্তম্ভিত শান্তনু বসু বললেন 'দাদা, এভাবে'!! 'আর বোলো না,আর বোলো না। আমার জীবনটা শেষ হয়ে গেল, আর বাঁচতে ইচ্ছে করেনা '। বলেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন মান্না দে।
ইনি সেই মান্না দে যিনি নিজের সারাটা জীবন উৎসর্গ করেছেন আমাদের গান শোনাতে। ইনি সেই মান্না দে যিনি উপমহাদেশের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ গায়কদের একজন!!
কে জানে শেষ জীবনে কার কি লেখা আছে 

কোরানের নির্দেশ










কোরানের নির্দেশ


কোরআন-এর চারটি বাণী

অজানা তথ্য   তার প্রথম পোস্ট                                        
ফেসবুক থেকে  শেয়ার করেছেন        প্রণব কুমার কুণ্ডু

����জিহাদি গ্রন্থ কোরানের কিছু শান্তির বাণী �����


অমুসলিম বনাম মুসলিম এর প্রতি আল্লার আচার আচরণ ।


সুরা আন নিসা।

4:89)

ﻭَﺩُّﻭﺍْ ﻟَﻮْ ﺗَﻜْﻔُﺮُﻭﻥَ ﻛَﻤَﺎ ﻛَﻔَﺮُﻭﺍْ ﻓَﺘَﻜُﻮﻧُﻮﻥَ ﺳَﻮَﺍﺀ ﻓَﻼَ ﺗَﺘَّﺨِﺬُﻭﺍْ ﻣِﻨْﻬُﻢْ ﺃَﻭْﻟِﻴَﺎﺀ ﺣَﺘَّﻰَ ﻳُﻬَﺎﺟِﺮُﻭﺍْ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠّﻪِ ﻓَﺈِﻥ ﺗَﻮَﻟَّﻮْﺍْ ﻓَﺨُﺬُﻭﻫُﻢْ ﻭَﺍﻗْﺘُﻠُﻮﻫُﻢْ ﺣَﻴْﺚُ
 ﻭَﺟَﺪﺗَّﻤُﻮﻫُﻢْ ﻭَﻻَ ﺗَﺘَّﺨِﺬُﻭﺍْ ﻣِﻨْﻬُﻢْ ﻭَﻟِﻴًّﺎ ﻭَﻻَ ﻧَﺼِﻴﺮًﺍ
তারা চায় যে, তারা যেমন কাফের, তোমরাও তেমনি কাফের হয়ে যাও, যাতে তোমরা এবং তারা সব সমান হয়ে যাও। অতএব, তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর পথে হিজরত করে চলে আসে। অতঃপর যদি তারা বিমুখ হয়, তবে তাদেরকে পাকড়াও কর এবং যেখানে পাও হত্যা কর। তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না এবং সাহায্যকারী বানিও না।


(4:90)

ﺇِﻻَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺼِﻠُﻮﻥَ ﺇِﻟَﻰَ ﻗَﻮْﻡٍ ﺑَﻴْﻨَﻜُﻢْ ﻭَﺑَﻴْﻨَﻬُﻢ ﻣِّﻴﺜَﺎﻕٌ ﺃَﻭْ ﺟَﺂﺅُﻭﻛُﻢْ ﺣَﺼِﺮَﺕْ ﺻُﺪُﻭﺭُﻫُﻢْ ﺃَﻥ ﻳُﻘَﺎﺗِﻠُﻮﻧَﻜُﻢْ ﺃَﻭْ ﻳُﻘَﺎﺗِﻠُﻮﺍْ ﻗَﻮْﻣَﻬُﻢْ ﻭَﻟَﻮْ ﺷَﺎﺀ ﺍﻟﻠّﻪُ ﻟَﺴَﻠَّﻄَﻬُﻢْ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻓَﻠَﻘَﺎﺗَﻠُﻮﻛُﻢْ ﻓَﺈِﻥِ ﺍﻋْﺘَﺰَﻟُﻮﻛُﻢْ ﻓَﻠَﻢْ ﻳُﻘَﺎﺗِﻠُﻮﻛُﻢْ ﻭَﺃَﻟْﻘَﻮْﺍْ ﺇِﻟَﻴْﻜُﻢُ ﺍﻟﺴَّﻠَﻢَ ﻓَﻤَﺎ ﺟَﻌَﻞَ ﺍﻟﻠّﻪُ ﻟَﻜُﻢْ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺳَﺒِﻴﻼً
কিন্তু যারা এমন সম্প্রদায়ের সাথে মিলিত হয় যে, তোমাদের মধ্যে ও তাদের মধ্যে চুক্তি আছে অথবা তোমাদের কাছে এভাবে আসে যে, তাদের অন্তর তোমাদের সাথে এবং স্বজাতির সাথেও যুদ্ধ করতে অনিচ্ছুক। যদি আল্লাহ ইচ্ছে করতেন, তবে তোমাদের উপর তাদেরকে প্রবল করে দিতেন। ফলে তারা অবশ্যই তোমাদের সাথে যুদ্ধ করত। অতঃপর যদি তারা তোমাদের থেকে পৃথক থাকে তোমাদের সাথে যুদ্ধ না করে এবং তোমাদের সাথে সন্ধি করে, তবে আল্লাহ তোমাদের কে তাদের বিরুদ্ধে কোন পথ দেননি।


(4:91)

ﺳَﺘَﺠِﺪُﻭﻥَ ﺁﺧَﺮِﻳﻦَ ﻳُﺮِﻳﺪُﻭﻥَ ﺃَﻥ ﻳَﺄْﻣَﻨُﻮﻛُﻢْ ﻭَﻳَﺄْﻣَﻨُﻮﺍْ ﻗَﻮْﻣَﻬُﻢْ ﻛُﻞَّ ﻣَﺎ ﺭُﺩُّﻭَﺍْ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﻔِﺘْﻨِﺔِ ﺃُﺭْﻛِﺴُﻮﺍْ ﻓِﻴِﻬَﺎ ﻓَﺈِﻥ ﻟَّﻢْ ﻳَﻌْﺘَﺰِﻟُﻮﻛُﻢْ ﻭَﻳُﻠْﻘُﻮﺍْ ﺇِﻟَﻴْﻜُﻢُ ﺍﻟﺴَّﻠَﻢَ ﻭَﻳَﻜُﻔُّﻮَﺍْ ﺃَﻳْﺪِﻳَﻬُﻢْ ﻓَﺨُﺬُﻭﻫُﻢْ ﻭَﺍﻗْﺘُﻠُﻮﻫُﻢْ ﺣَﻴْﺚُ ﺛِﻘِﻔْﺘُﻤُﻮﻫُﻢْ ﻭَﺃُﻭْﻟَـﺌِﻜُﻢْ ﺟَﻌَﻠْﻨَﺎ ﻟَﻜُﻢْ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺳُﻠْﻄَﺎﻧًﺎ ﻣُّﺒِﻴﻨًﺎ
এখন তুমি আরও এক সম্প্রদায়কে পাবে। তারা তোমাদের কাছেও স্বজাতির কাছেও এবং নির্বিঘ্ন হয়ে থাকতে চায়। যখন তাদেরকে ফ্যাসাদের প্রতি মনোনিবেশ করানো হয়, তখন তারা তাতে নিপতিত হয়, অতএব তারা যদি তোমাদের থেকে নিবৃত্ত না হয়, তোমাদের সাথে সন্ধি না রাখে এবং স্বীয় হস্তসমূহকে বিরত না রাখে, তবে তোমরা তাদেরকে পাকড়াও কর এবং যেখানে পাও হত্যা কর। আমি তাদের বিরুদ্ধে তোমাদেরকে প্রকাশ্য যুক্তি-প্রমাণ দান করেছি।


(4:92)

ﻭَﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻟِﻤُﺆْﻣِﻦٍ ﺃَﻥ ﻳَﻘْﺘُﻞَ ﻣُﺆْﻣِﻨًﺎ ﺇِﻻَّ ﺧَﻄَﺌًﺎ ﻭَﻣَﻦ ﻗَﺘَﻞَ ﻣُﺆْﻣِﻨًﺎ ﺧَﻄَﺌًﺎ ﻓَﺘَﺤْﺮِﻳﺮُ ﺭَﻗَﺒَﺔٍ ﻣُّﺆْﻣِﻨَﺔٍ ﻭَﺩِﻳَﺔٌ ﻣُّﺴَﻠَّﻤَﺔٌ ﺇِﻟَﻰ ﺃَﻫْﻠِﻪِ ﺇِﻻَّ ﺃَﻥ ﻳَﺼَّﺪَّﻗُﻮﺍْ ﻓَﺈِﻥ ﻛَﺎﻥَ ﻣِﻦ ﻗَﻮْﻡٍ ﻋَﺪُﻭٍّ ﻟَّﻜُﻢْ ﻭَﻫُﻮَ ﻣْﺆْﻣِﻦٌ ﻓَﺘَﺤْﺮِﻳﺮُ ﺭَﻗَﺒَﺔٍ ﻣُّﺆْﻣِﻨَﺔٍ ﻭَﺇِﻥ ﻛَﺎﻥَ ﻣِﻦ ﻗَﻮْﻡٍ ﺑَﻴْﻨَﻜُﻢْ ﻭَﺑَﻴْﻨَﻬُﻢْ ﻣِّﻴﺜَﺎﻕٌ ﻓَﺪِﻳَﺔٌ ﻣُّﺴَﻠَّﻤَﺔٌ ﺇِﻟَﻰ ﺃَﻫْﻠِﻪِ ﻭَﺗَﺤْﺮِﻳﺮُ ﺭَﻗَﺒَﺔٍ ﻣُّﺆْﻣِﻨَﺔً ﻓَﻤَﻦ ﻟَّﻢْ ﻳَﺠِﺪْ ﻓَﺼِﻴَﺎﻡُ ﺷَﻬْﺮَﻳْﻦِ ﻣُﺘَﺘَﺎﺑِﻌَﻴْﻦِ ﺗَﻮْﺑَﺔً ﻣِّﻦَ ﺍﻟﻠّﻪِ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻠّﻪُ ﻋَﻠِﻴﻤًﺎ ﺣَﻜِﻴﻤًﺎ
মুসলমানের কাজ নয় যে, মুসলমানকে হত্যা করে; কিন্তু ভুলক্রমে। যে ব্যক্তি মুসলমানকে ভূলক্রমে হত্যা করে, সে একজন মুসলমান ক্রীতদাস মুক্ত করবে এবং রক্ত বিনিময় সমর্পন করবে তার স্বজনদেরকে; কিন্তু যদি তারা ক্ষমা করে দেয়। অতঃপর যদি নিহত ব্যক্তি তোমাদের শত্রু সম্প্রদায়ের অন্তর্গত হয়, তবে মুসলমান ক্রীতদাস মুক্ত করবে এবং যদি সে তোমাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ কোন সম্প্রদায়ের অন্তর্গত হয়, তবে রক্ত বিনিময় সমর্পণ করবে তার স্বজনদেরকে এবং একজন মুসলমান ক্রীতদাস মুক্ত করবে। অতঃপর যে ব্যক্তি না পায়, সে আল্লাহর কাছ থেকে গোনাহ মাফ করানোর জন্যে উপর্যুপুরি দুই মাস রোযা রাখবে। আল্লাহ, মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।


মন্তব্যগুলি
Pranab Kumar Kundu
Pranab Kumar Kundu   একটু সরল বাংলা করে বুঝিয়ে বলুন ! আমার বদ্ধ জ্ঞানলোক উন্মিলিত করুন !

বুধবার, ৮ আগস্ট, ২০১৮

মুসলিমদের নবি 'মুহম্মদ' পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, কিন্তু ...



মুসলিমদের নবি 'মুহম্মদ' পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ,   কিন্তু ...


সূত্র : রূপক রায়ের ফেসবুকের প্রবন্ধ থেকে, তারিখ ৭।৮।২০১৮। শেয়ার করেছেন, প্রণব কুমার কুণ্ডু।




কোনো স্বয়ংক্রিয় বিকল্প পাঠ্য উপলব্ধ নেই৷





পদবি সংক্রান্ত



পদবি সংক্রান্ত

ফেসবুক থেকে             শেয়ার করেছেন                  প্রণব কুমার কুণ্ডু
কি ভাবে এলো বাঙালির বংশ পদবী?

এখনকার চালু পদবিগুলি খুব বেশি প্রাচীন নয়। মধ্যযুগে সামন্তবাদী সমাজ ব্যবস্থার ফলে,  পরবর্তীতে বৃটিশ আমলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সমান্তরালে,  বাঙালির পদবীর বিকাশ ঘটেছে বলে মনে করা হয়। অধিকাংশ ব্যক্তি নামের শেষে একটি পদবী নামক পুচ্ছ যুক্ত হয়ে আছে। যেমন উপাধি, উপনাম কিংবা বংশসূচক নামকে সাধারণ ভাবে পদবী বলা হয়।

বাঙালির জমি- জমা বিষয় সংক্রান্ত কিছু পদবী,  যেমন- হালদার, মজুমদার, তালুকদার, পোদ্দার, সরদার, প্রামাণিক, হাজরা, হাজারী, মন্ডল, মোড়ল, মল্লিক, সরকার, বিশ্বাস ইত্যাদি বংশ পদবীর রয়েছে হিন্দু -মুসলমান নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের একান্ত রূপ। বাঙালি মুসলমানের শিক্ষক পেশার পদবী হলো-খন্দকার, আকন্দ, নিয়াজী ইত্যাদি। আর বাঙালি হিন্দুর শিক্ষক পদবী হচ্ছে দ্বিবেদী, ত্রিবেদী, চর্তুবেদী ইত্যাদি।বাংলায় পদবির সংখ‍্যা অনেক।
কিছু পদবি এখানে আলোচিত হোল।
শিকদারঃ সুলতানি আমলে কয়েকটি মহাল নিয়ে গঠিত ছিল এক একটি শিক। আরবি শিক হলো একটি খন্ড এলাকা বা বিভাগ। এর সাথে ফারসি দার যুক্ত হয়ে শিকদার বা সিকদার শব্দের উদ্ভব হয়েছে। এরা ছিলেন রাজস্ব আদায়কারী রাজকর্মচারী। শব্দকোষে যাকে বলা হয়েছে শান্তিরক্ষক কর্মচারী। এরা শিক বন্দুক বা ছড়ি বন্দুক ব্যবহার করতো বলে শিকদার উপাধী পেয়েছিল; সেই থেকে বংশ পরমপরায় শিকদার পদবীর বিকাশ ঘটে।

মীরঃ মির বা মীর শব্দটি এসেছে আরবি থেকে। আরবি শব্দ আমীর’ এর সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে মীর। সেই অর্থে মীর অর্থ দলপতি বা নেতা, প্রধান ব্যক্তি, সরদার ইত্যাদি। জিতে নেয়া বা জয়ী হওয়া অর্থে মীর শব্দের ব্যবহার হতো। তবে মীর বংশীয় লোককে সম্ভ্রান্ত এবং সৈয়দ বংশীয় পদবীধারীর একটি শাখা বলে গাবেষকরা মনে করেন।

চৌধুরীঃ সংস্কৃত চতুধারী শব্দ থেকে এসেছে বাংলা চৌধুরী শব্দ। এর অর্থ চর্তুসীমানার অন্তগর্ত অঞ্চলের শাসক। বাংলাদেশের বেশির ভাগ জমিদারদের পদবী হচ্ছে চৌধুরী। আবার অনেকে মনে করেন চৌথহারী’ যার অর্থ এক চতুথাংশ রাজস্ব আদায়কারী, সেখান থেকে উচ্চারণ পরিবর্তনের মাধ্যমে এসেছে চৌধুরী’। সেদিক থেকে চৌথ আদায়কারী বা রাজস্ব আদায়কারী পদ সৃষ্টি হয়েছিল বাংলার রাষ্ট্র ব্যবস্থার। বঙ্গীয় শব্দকোষ বলছে, চতুর’ যার অর্থ তাকিয়া বা মসনদ, তার সাথে যুক্ত হয়েছে ধর’ (অর্থ ধারক) এবং এই দুয়ে মিলে হয়েছে চৌধরী’ আর তার থেকেই চৌধুরী’। তবে তা মূলত হিন্দী ও মারাঠি শব্দ। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে চৌধুরী বংশ পদবী ব্যবহার করা হয় এদেশে। বৃটিশ-ভারতের প্রায় সর্বত্র এ পদবীর অস্তিত্ব ছিল। কারণ চৌধুরী ছিল সামন্ত রাজার পদবী।

ভূঁইয়াঃ এই বংশ পদবীটি এসেছে খোদ ভূমির মালিকানা অর্থ থেকে। বাঙালি হিন্দু-মুসলিম উভয় এর মধ্যে এ পদবীর প্রচলন আছে। বাঙালি হিন্দু সমাজে যাঁরাই ভৌমিক’ বাঙালি মুসলমান সমাজে তারা ভূঁইয়া’ হিসেবে পদবী ধারণ করেছেন। মূল সংস্কৃত শব্দ ভৌমিক > (প্রাকৃত) ভূমিকা > (বাংলা) ভূঁইয়া > থেকে ভূঁইয়া বা ভূঁঞা এসেছে। প্রাচীন বড় জমিদার বা সামন্ত রাজার উপাধিও ছিল ভূঁইয়া। প্রকৃত পক্ষে কুলীন বংশ পদবীই ছিল তা। আবার যে সব মানুষ আগে স্থান বিশেষে বনজঙ্গল পরিষ্কার করে বসতি ও চাষাবাদের পত্তন করেছে তারা স্থানীয় জমিদার রাজার কাছ থেকে ভূঁইয়া নামে অভিহিত হয়ে ঐসব জমি জমার স্বত্ব লাভ করেছে।

মজুমদারঃ মজুমদার’ পদবী মূল আসলে মজুনদার’। এর মূল ফারসি শব্দ হচ্ছে মজমু আনদার’। রাষ্ট্রের ও জমিদারির দলিল পত্রাদির রক্ষক রাজকর্মচারীর জন্যে এই পদবী সংরক্ষিত ছিল। হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সমগ্র বাংলাদেশে মজুমদার’ পদবীর ব্যবহার লক্ষনীয়।

তরফদারঃ আরবি তরফ’ এবং ফারসি দার’ মিলে তরফদার শব্দের সৃষ্টি। রাজ্যের খাজনা আদায়ের মহালে তদারককারী বা খাজনা আদায়কারীর উপাধী ছিল তরফদার। এই পদবী ব্যবহারকারী গোষ্ঠীর পূর্ব পুরুষরা রাজকার্য পরিচালনার কাজে নিয়োজিত ছিলেন, সেখান থেকেই এই বংশ পদবী উৎপত্তি ও প্রচলন। অন্যমতে তরফদার তরফের রাজস্ব আদায়কারী লোক; তরফের মালিক; পদবী বিশেষ।

তালুকদারঃ আমাদের দেশে পরিচিত একটি বংশ পদবী। বাংলাদেশে জমিদারির পরই তালুক ভূ-সম্পত্তির একটি বিভাগ। মোগল ও বৃটিশ আমলে রাজস্ব ও ভুমি সংক্রান্ত বিষয়াদি থেকে যে সমস্ত পদবীর উৎপত্তি ও বিস্তার তার মধ্যে তালুকদার’ হচ্ছে অন্যতম পদবী। তালুক’ শব্দ থেকেও এই পদবীর মর্মাথ উপলব্ধি করা সম্ভব। আরবি শব্দ তা’ আল্লুক’ যার অর্থ ভূ-সম্পত্তি এবং এর সাথে ফারসি দার’ যুক্ত হয়ে (তা’আল্লুক+দার) তালুকদার’ শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে, যিনি তালুকদার, তিনি জমি ও ক্ষুদ্র ভূ-সম্পত্তি বন্দোবস্ত নিতেন সরকারের কাছ থেকেও যেমন, তেমনি জমিদারের কাছে থেকেও। ফলে তিনি হতেন উপজমিদার সেই অর্থেই এসেছে তালুকদার’।

সরকারঃ সরকার’ শব্দটি ফারসি থেকে আগত। এর অর্থ প্রভূ, মালিক, ভূস্বামী, শাসনকর্তা, রাজা। অর্থ আদায় ও ব্যয় সংক্রান্ত কর্মচারি ও সরকার। মোগল আমলে এদেশের স্থানীয় রাজকর্মচারিদের এ পদবী দেয়া হতো। মোট কথা প্রধান কর্মচারি এবং সম্পত্তি দেখাশুনার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিকে সরকার বলা হতো। বাঙালি হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যেই এ পদবীর ব্যবহার আছে।

মল্লিকঃ আরবি মালিক’ বা মলিক’ শব্দ থেকে এসেছে মল্লিক’ বংশ পদবী। ফারসি মালিক শব্দজাত মল্লিক ভূম্যাধিকারী বা জোতদারের উপাধি। গ্রাম প্রধান বা সমাজের প্রধান ব্যক্তি মালিক। আবার লিপিকুশল রাজকর্মচারিকে মোগল আমলে মল্লিক বা সুলেখক আখ্যা দেয়া হত বলেও আমরা জানতে পারি। হয়তোবা সেই থেকে মল্লিক বংশ পদবী এসেছে।

মন্ডলঃ বাঙালি হিন্দু-মুসলিম সমাজে সমান ভাবে ব্যবহৃত হয় মন্ডল পদবী। বাংলাদেশে অতীত কাল থেকে গ্রামের অনানুষ্ঠানিক এবং সাধারণ ভাবে গ্রাম- প্রধানকে বলা হয় মন্ডল। বাংলা মন্ডলরা আগে অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। মন্ডলীয় কাজ করে তারা অনেক অধিকার ভোগ করতেন। খাজনা আদায়কারী ও রায়তদের মধ্যস্থতা করা কিংবা গ্রামীন বিবাদ আপোস মীমাংসা করতে মন্ডলরা কার্যকরী ভূমিকা পালন করতেন। কোন কোন সময় তাদের অধীনে পাটোয়ারি, তহসিলদার, চৌকিদার ইত্যাদি কর্মচারী কাজ করতেন। সরকার ও রায়তদের মধ্যবর্তী মানুুষ হিসেবে মন্ডলরা অধিক পরিচিত ছিল

ঠাকুরঃ বাংলা শব্দের বিশেষজ্ঞ হরিচরণ বন্দ্যোপধ্যায়ের মতে- ঠাকুর শব্দের মূল হচ্ছে (সংস্কৃত) ঠাক্কুর’ তার থেকে > (প্রকৃত) ঠকুর > (বাংলা) ঠাকুর এসেছে। পদবীগত দিক থেকে তা ব্রাক্ষণের পদবী বিশেষ, এমনকি ক্ষত্রিয়েরও উপাধি এটি। মধ্য যুগের কাব্য চৈতন্য ভাগবত’ উদ্ধৃত করে লেখক বলেছেন, তা বৈঞ্চবেরও উপাধি। যেমন, হরিদাস ঠাকুর। পাচক ব্রাক্ষণও এক প্রকার ঠাকুর বলে পরিচিত। তবে আহমদ শরীফ সম্পাদিত সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান’ বলছে, সংস্কৃত ঠক্কুর থেকে ঠাকুর আসলেও এর মূলে ছিল তুর্কী শব্দ। বাঙালি হিন্দু-মুসলমান উভয়েই এই পদবী ব্যবহার করে।
এরকম শতাধিক বংশ পদবী রয়েছে আমাদের দেশে। বাঙালির পদবীর ইতিহাস বৈচিত্র পথ ও মতের এক অসাধারণ স্মারক হিসেবে চিহিৃত।