রাত্রিদেবী, ঊষাদেবী ও সূর্য প্রণাম !
সন্ধ্যাবেলায় আমরা প্রদীপ জ্বালি। সান্ধ্যদীপ দিই। শাঁখ বাজাই। এটা ধর্মের এবং রীতির সাথে সম্পর্কীয় একটা মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান।
সন্ধ্যার আবছা অন্ধকারে, প্রদীপের আলো, নিশ্চয় মনকে আপ্লুত করে।তবে আজকাল ইলেকট্রিকের জোরালো আলোর ছটায়, ঠাকুরঘরে, সে প্রদীপের আলো, ম্লান হয়ে যায় !
সন্ধ্যা বেলায় আমরা তুলসী তলায়ও প্রদীপ দিই। প্রণাম করি।
মনে পড়ে, হরিদ্বারের সান্ধ্যমেলা ! পাতার ভেলায় প্রদীপ জ্বালিয়ে, ফুল ধূপকাঠি দিয়ে, গঙ্গার ক্যানেলের জলে ভাসানো হচ্ছে ! একসময় ভালো লাগত।তবে এখন 'ফ্লাড' লাইটের ঠ্যালায়, তার মাধুর্য একেবারে ম্লান হয়ে গেছে !
কেউ যদি গঙ্গোত্রীতে যান, গঙ্গোত্রীর গঙ্গামন্দিরে, সন্ধ্যার পরে, গঙ্গার আরাধনা দেখবেন ! অনেকটা হরিদ্বারের ধাঁচে।
লোকজন খুবই কম। হয়তো একশোজন হবে ! ভালো লাগবে ! তবে ওখানে ভাগীরথীতে, 'আলোর নৌকা', সেরকম ভাবে, সাধারণত ভাসানো হয় না ! তবে যদি কেউ ভাসান, সেটা আলাদা কথা।
সন্ধ্যবেলায় প্রদীপ জ্বালিয়ে, শঙ্খ বাজিয়ে, আমরা, বেদোক্ত রাত্রিসূক্তের বর্ণনায়, রাত্রিরূপা দেবীকে আহ্বান করি !
রাত্রিরূপা দেবী অমর। অনাদি কাল থেকে বিদ্যমান ! ভবিষ্যতেও অনন্তকাল তিনি বিদ্যমান থাকবেন ! রাত্রিরূপা দেবী সারা বিশ্বজুড়ে পরিব্যাপ্ত !
রাত্রিরূপা দেবী, ঊষাকালে, ঊষাদেবীকে প্রকাশ করেন !
ঊষা। উষা বানানও হয়। ওটা রাত্রির অবসান বোঝায়। সেটা সূর্যোদয়ের অব্যবহিত পূর্বক্ষণ ! সাধারণভাবে, আমরা বলি, 'ভোরবেলা' !
আমাদের হিন্দুধর্মে, হিন্দুশাস্ত্রে, সবকিছু প্রাকৃতিক ঘটনার পেছনে, এক-একজন দেব বা দেবীর 'কল্পনা' করা হয়েছে !
প্রকৃতিক বা লৌকিক ঘটনার পেছনে, এক-একজন 'অপ্রাকৃতিক' বা 'অলৌকিক' দেব-দেবীর 'কল্পনা' ! কল্পনার তো কোন বাঁধ-বাঁধন নেই ! 'কল্পনায়' সব কিছুই সম্ভব ! এই কল্পনা অবাস্তব ! তবে সেই সব কল্পনার বিষয়বস্তু, oral tradition থেকে, শাস্ত্রে, 'টুকলিফাই' করে, বারবার ঠাকুর-দেবতাদের কথা বলে, সে কথা বলিয়ে বলিয়ে, আমাদের মন, ঠাকুর-দেবতাদের অস্তিস্তের, তাঁদের 'পাইয়ে দেবার তত্ত্বে', বিশ্বাস করিয়েছে ! এ ব্যাপারে শাস্ত্রকারদের এবং ব্রাহ্মণদেরও হাত রয়েছে !
সম্ভবত, ঠাকুর-দেবতাদের তত্ত্বের বাইরে, 'রূপকথা'র গল্পগুলো, আমাদের মনে, অনেক বেশি, আনন্দ সঞ্চার করে !
ঊষাকে শাস্ত্রীয় দৃষ্টিতে বলা হয়, রাত্রিদেবীর অধিষ্ঠাত্রী দেবী !
ঊষাদেবীর অবির্ভাবে, রাতের অন্ধকার দূর হয়।
সকালে আমরা সূর্য প্রণামও করি !
তবে ঊষাদেবীকে আমরা আহ্বানও করি না, প্রণামও করি না !
রাত্রিদেবীরও অাপাত বিদায়, বা আপাত 'বিসর্জন'ও, অন্তত মনে মনে, মানসিকভাবে, করি না !
রাত্রিদেবীর আগমনে, আমরা বাড়িতে সুখে শয়ন করি। ঘুমাই।
স্বামী-স্ত্রীরা, তাঁদের ব্যক্তিগত, শারীরিক ও মানসিক সম্পর্ক-সম্বন্ধ, বজায় রাখেন !
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন