বিন্দুজ নাদজ
পৃথিবীতে দুই ধরণের 'প্রজা' আছে ! প্রজা, এখানে, মনুষ্য ! অর্থাৎ, মানুষ !
এক ধরণের প্রজা, স্ত্রী-পুরুষের সংযোগ-সম্পর্কে, যাদের জন্ম !
শাস্ত্রে, এদের বলা হয় 'বিন্দুজ' ! কেননা,শাস্ত্রে, 'শুক্র'কে বলা হয়, 'বিন্দু' ! বিন্দু অর্থে ফোঁটা। যেমন, বীর্য বিন্দু ! সেই 'বিন্দু' থেকে জন্ম বলে, 'বিন্দুজ' ! 'জ', বিণ., সমাসের পরপদে থাকলে, অর্থ, জাত, উৎপন্ন, যেমন, জলজ, পঙ্কজ, সরোজ, ইত্যাদি ! এখানে, সেই হিসাবে, মানুষ 'বিন্দুজ' !
আমাদের দুই' ভ্রূ'-এর মধ্যে 'আজ্ঞাচক্র' থাকে। সেই আজ্ঞাচক্রকেও বলে বিন্দু ! ওখানে, আমার নামে নাম, প্রণবরূপ অন্তরাত্মার অবস্থান ! প্রণববিন্দু হেতু, ভ্রুমধ্য, বিন্দু !
বিন্দু, রূপক অর্থে, প্রকৃতি। আবার বিন্দু, বীজবিশেষ-ও !
নায়িকার ওষ্ঠে, নায়কের কৃত, দন্তক্ষত-ও বিন্দু !
বিন্দুপাতে সন্তানের জন্ম !
বীর্যবিন্দুর একটি শুক্রাণু , যেহেতু ডিম্বাণুকে ভেদ করে, তাই বিন্দু বেদনশীল এবং সেই শুক্রাণু বেদনশীলতার-ও জ্ঞাতা !
শুক্রাণু, প্রাণশক্তি সম্পন্ন !
বেদন। বোধ। অনুভূতি।
বেদন। জ্ঞান। জ্ঞাপন।
বেদন। ব্যথা। বেদনা।
প্রজা আবার সৃষ্টি হয়, শব্দ অর্থৎ 'নাদ' থেকে ! নাদ, ধ্বনিবিশেষ !
এখানে, প্রজা বলতে মানুষ !
'প্রজাপতি' শব্দ থেকে, 'প্রজা' শব্দ এসেছে !
আমাদের দেশে এখন প্রজা, ভারতরাষ্ট্রের এবং প্রাদেশিক রাজ্যের, যেমন পশ্চিমবঙ্গের, লোকজন !
একসময়ে 'প্রজাপতিরা' ছিলেন, মনুষ্যকুলের স্রষ্টা বা প্রধান পালক। যেমন 'বিধাতা' !
'প্রজাপতি নির্বন্ধ' কথাটা এখানে সাযুজ্যপূর্ণ ! নির্বন্ধ, অর্থাৎ, বিধান, নিয়ম, ব্যবস্থা। যেমন, 'বিধি নির্বন্ধ"। 'দৈবের নির্বন্ধ'। ইত্যাদি !
শুরুতে, বিধাতা ছাড়াও, ব্রহ্মা ছিলেন 'প্রজাপতি' !
এরপরে অন্য প্রজাপতিরা এসে গেলেন, যেমন
১। মরীচি
২। অত্রি
৩। নারদ
৪। অঙ্গিরা
৫। পুলস্ত্য
৬। পুলহ
৭। ক্রতু
৮।দক্ষ
৯। বশিষ্ঠ
১০। ভৃগু
এই দশ জন সকলেই ব্র্হ্মার 'মানস পুত্র' ছিলেন !
'নাদ' থেকেও, 'প্রজা' সৃষ্টি !
সেই প্রজাসৃষ্টি সংঘটিত হয়, 'দীক্ষা' 'মন্ত্র' 'উপদেশ' 'পরামর্শ' ইত্যাদির দ্বারা !
দীক্ষা।
দীক্ষা, ইষ্টমন্ত্রদান, ইষ্টমন্ত্র গ্রহণ, গুরুর কাছ থেকে প্রাপ্ত মন্ত্র বা উপদেস গ্রহণ। নিয়ম পালন। সংস্কার সাধন। ব্রত পালন। ইত্যাদি।
মন্ত্র।
মন্ত্র হচ্ছে, পবিত্র শব্দ বা শব্দ সমষ্টি বা পবিত্র বাক্য, বা বাক্য সমষ্টি, যা সঠিক ভাবে আন্তরিকতার সাথে স্পষ্ট উচ্চারণ করে, দেব-দেবীর পূজা করা হয় !
মন্ত্র উচ্চারণে, ত্রাণ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে ! ত্রাণ, বিপদ পাপ প্র্ভৃতি থেকে, উদ্ধার রক্ষা নিষ্কৃতি মুক্তি !
মন্ত্র সংস্কৃতে লেখা এবং মন্ত্র, বৈদিক সাহিত্যের অংশবিশেষ !
মন্ত্রতন্ত্র বলতে বোঝায়, বিবিধ মন্ত্র ও সেই অনুযায়ী বিভিন্ন প্রক্রিয়া !
মন্ত্র দ্বারা পবিত্রকৃত করা যায়, একে বলে মন্ত্রপুত করা !
মন্ত্রের আবার শক্তি বা জোর থাকে, একে বলে মন্ত্রশক্তি !
মন্ত্রদ্বারা আবার কাউকে বশীভূতও করা যায় !
মন্ত্রশিষ্য, কোন ব্যক্তি কর্তৃক দীক্ষিত শিষ্য !
অনেকে আবার মন্ত্রের সাহায্যে কর্মসাধনও করে থাকেন, তাঁরা মন্ত্রসাধক !
মন্ত্রের দ্বারা সিদ্ধিলাভের প্রয়াস করা যায়।
মন্ত্র জপ দ্বারা সিদ্ধিপ্রাপ্ত হলে, তাঁকে বলা হয়, মন্ত্রসিদ্ধ।
উপদেশ/পরামর্শ
উপদেশ হচ্ছে, পরামর্শ। সৎ পরামর্শ !
উপদেশ কখনও বা অনুশাসন ! কখনো শিক্ষা।
গুরু বা শিক্ষক বা কোন ভালো উপদেশক বা সেই ধরণের অন্য কেউ, উপদেষ্টা হতে পারেন !
পরামর্শ,
পরামর্শ, সাধারণত, পরস্পর আলোচনা সাপেক্ষে, দিঙ্নির্ণয় করা বা করানো ! স্থির সিদ্ধান্তে পোঁছানো !
পরামর্শে, যুক্তি থাকে, মন্ত্রণাও থাকতে পারে। পরামর্শ অভিমতও। কখনো, 'বুদ্ধি' দেওয়া !
নিবৃত্তিপরায়ণ সাধু-মহাপুরুষরা, যাঁরা একসময়ে ছিলেন,
নিবৃত্তিপরায়ণ সাধু-মহাত্মারা, যাঁরা এখন আছেন,
এবং নিবৃত্তিপরায়ণ সাধু-সন্ন্যাসিরা যাঁরা আগামী ভবিষ্যতে হবেন,
তাঁরা, যাদের মন্ত্রদীক্ষা দেবেন, সেই দীক্ষিত সন্তানেরা, তাঁদের 'নাদজ প্রজা' !
যুক্তি-তর্কের খাতিরে, ধরে নিন, 'সপ্ত ঋষি', এবং 'চতুর্দশ মনু', বিবাহিত ছিলেন। তাঁদের থেকে জন্মপ্রাপ্ত সন্তানেরা, 'প্রাথমিক ভাবে' 'বিন্দুজ প্রজা' !
সেই সন্তানেরা যদি কোন 'গুরুদেব'-এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন, তবে তাঁরা, সেই গুরুদেব-এর 'নাদজ প্রজা' !
এখানে একটু পৌরাণিক গল্প বলে নিই !
চতুঃসন,
ভগবানের যে অবতারে, চারজন 'সন', অর্থাৎ, সনক, সনন্দন বা সনন্দ, সনাতন, সনৎকুমার ছিলেন, তাঁরা সবাই ছিলেন, 'কৌমার' ব্রতধারী ! এঁদের কাছ থেকে, যারা, 'নির্দেশনা', 'উপদেশ' ইত্যাদি পেয়েছিলেন, তারা সবাই ছিলেন ঐ 'চতুঃসন'-এর 'নাদজ প্রজা' !
বর্তমান যুগে, গুরু-শিষ্যের পরম্পরায়, শিষ্যরা, পুরনো ভাবধারায় 'প্রজা' !
এখন অনের ধর্মীয় সংগঠনও, সংগঠনের কোন কোন ব্যক্তিবিশেষের নামে, দাপিয়ে গুরুগিরি চালায় !
সংগঠনের আয়-উন্নতি তাতে ভালোই হয় ! তাদের শিষ্যরাও, সেই সংগঠনের 'নাদজ প্রজা' ! সেই 'প্রজারা' সংগঠনকে অর্থনৈতিকভাবে অনেক শক্তিশালী করে তোলে !
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন