লেখক প্রণব কুমার কুণ্ডু
প্রাণশক্তি ইচ্ছাশক্তি ( গদ্যরচনা )
আমাদের 'প্রাণশক্তি' বা, 'জীবনীশক্তি'র দরুণ, নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের কাজ চলে।
নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য মানুষ বেঁচে থাকে।
মানুষ বেঁচে থাকে, বাতাসের অক্সিজেনের প্রভাবে। তার জন্য, শরীরে metabolism-এর ( বিপাকের ) কাজ, প্রাথমিক ভাবে চালু থাকে।
আমাদের 'ইচ্ছাশক্তি'র দ্বারা, মনের 'ইচ্ছেগুলো' জেগে ওঠে। ভোগ-আকাঙক্ষা, কামনা-বাসনা, কাজ করবার ইচ্ছা ইত্যাদি জন্মায়।
ইচ্ছাশক্তি, মূলত, মনের দ্বারা পরিচালিত হয়।
শাস্ত্রের ধারণায়, 'প্রাণশক্তি' কর্মফল দ্বারা প্রাপ্ত। সেই 'প্রাপ্ত'র প্রাপ্তি, বেঁচে থাকা। বেঁচে থেকে, 'জীবন্ত' থাকা। life full এবং cheerful থাকা।
যেহেতু, 'প্রাণশক্তি', কর্মফল দ্বারা প্রাপ্ত, তাই, প্রারব্ধের ক্রিয়ায় আটকিয়ে গিয়ে, সাধারণভাবে, 'প্রাণশক্তি'র স্থিতি অপরিবর্তনীয় !
'ইচ্ছাশক্তি'র ফলশ্রুতি কিন্তু 'পুরুষকার'। এই 'পুরুষকার' গুণ কিন্তু, 'পরিবর্তনশীল'।
সেটা 'পুরুষকার'-এর দৌলতে, 'পুরুযকার'-এর জন্য উদ্যোগ-উদ্যমে, উন্নতশীল পরিবর্তনের, 'পুরস্কার'।
'পুরুষকার', পরিবর্তন করা যায়। পরিবর্তন করাও হয়। পরিবর্তন, করা যেতেও পারে !
'পুরুষকার', পৌরুষ। দৈব নিরপেক্ষ প্রযত্ন বা প্রচেষ্টা।
'প্রাণশক্তি', ধীরে ধীরে, নিত্যক্ষয়প্রাপ্ত হয়। ক্ষয় হতে হতে, একসময় একদম ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে গেলে, মৃত্যু আসে !
সত্যি সত্যি যারা 'জীবন্মৃত', তাদের 'ইচ্ছাশক্তি', একদম 'নষ্ট' হয়ে যায় !
অন্যদের ক্ষেত্রে, 'ইচ্ছাশক্তি' জাগ্রত থাকে।
'প্রাণশক্তি' বজাব থাকতে থাকতে, যদি 'ইচ্ছাশক্তি' দূর হয়ে যায়, তবে সেই ব্যক্তি, 'জীবনমুক্ত' !
বেঁচে থাকাকালীন এই 'মুক্তঅবস্থা', ( 'মুক্ত'-তা ), নয় পুরোপুরি মুক্ত ! শুধু 'ইচ্ছা' মুক্ত !
আর 'প্রাণশক্তি' শেষ হলেও, যদি ইচ্ছাশক্তি থেকে যায়, তবে সেই ইচ্ছাশক্তির 'ইচ্ছা'র প্রভাবে, মানুষ নাকি 'ফের' জন্মগ্রহণ করে ! ইচ্ছাশক্তি প্রবল থাকলে, ফের জন্মগ্রহণ করাই নাকি 'নিয়তি' !
কাজেই মৃত্যুর পরে, 'চূড়ান্ত' মুক্ত সে হতে পারে না !
'মুক্ত-তা' তাঁকে, 'শুচিস্মান' করে না !
পুনর্জন্মে বা নবজন্মে, নতুন শরীরে, নতুন মনে, নতুন বুদ্ধিতে, পুরনো 'ইচ্ছাশক্তি' সংস্কার রূপে নিয়ত বজায় থাকে এবং তার প্রভাব বিস্তার করে !
তবে , পুনর্জন্মে, 'প্রাণশক্তি' নতুন করে লাভ হয় !
* সূত্র 'গীতা রসামৃত', পৃষ্ঠা ৪৫৩, গীতা প্রেস।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন