শাস্ত্রের ধারণায়, ঈশ্বর 'জন্মরহিত' !
ঈশ্বর যদি জন্মরহিত হন, তাহলে ঈশ্বর 'স্বয়ম্ভূ' হতে পারেন না ! তিনি 'স্বয়ংসৃষ্ট' হতে পারেন না !
কেননা সেটাও, অর্থাৎ স্বয়ংসৃষ্টও হওয়া, বা স্বয়ম্ভূ হওয়াও, তো জন্ম !
শাস্ত্রের ধারণায়, ঈশ্বরের শক্তি, 'মায়া' !
মায়াকে কে সৃষ্টি করল ?
মায়াকে কি ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন ?
কিন্তু তখনও তো সৃষ্টি প্রক্রিয়া শুরুই হয় নি !
তার আগেই মায়ার প্রাদুর্ভাব হল কি করে ?
তাহলে কি মায়া ঈশ্বরের প্রথম সৃষ্টি ?
আসলে, হিন্দু শাস্ত্রে, অনেক জায়গায় দেখবেন, শাস্ত্রের বক্তব্য আছে, কিন্তু তার পে্ছনে প্রকৃত যুক্তি, বিচার, বিশ্লেষণ নেই !
ঈশ্বরের নিজের দ্বারা, সৃষ্টি প্রক্রিয়াকে বলে 'সর্গ'। এটা কিন্তু 'স্বর্গ' নয় !
ঈশ্বরের নিজের দ্বারা, সৃষ্টি প্রক্রিয়াকে বলে 'সর্গ'।
সুতরাং ঈশ্বর যে সৃষ্টি করেন না, একথা ঠিক নয় !
'সর্গ' প্রক্রিয়া, সেটা, চর-অচর সৃষ্টির আগে চলেছিল ! যুগ যুগ বছর আগে ! বহুযুগ আগে ! বহুযুগ ধরে !
প্রাণীগোষ্ঠী এবং উদ্ভিদগোষ্ঠী একসাথে চর-অচর।
চর, অর্থাৎ, যারা চলাচল করতে পারে। চর-এর movement আছে।
কিন্তু, অচর-এর movement নেই । অচর থিতু।
যুক্তি-তর্কের খাতিরে, ধরে নিন, তখন শুধু এক ঈশ্বর আছেন !
'ব্রহ্মাণ্ড' বলে কিছু নেই !
ঈশ্বর, প্রথমে, 'সূক্ষ্ম কারণ ব্রহ্মাণ্ড' তৈরি করবেন ! অর্থাৎ, 'তত্ত্বে', ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা, চালাবেন ! এটা , purely theoretical., অর্থাৎ, পরিপূর্ণভাবে তত্ত্বীয়। বাদীয়। ধারণাগত !
'কারণ'-এর, ধারণার আগেও, 'কারণাতীত', একটা পর্যায় থাকে। 'কারণ', হচ্ছে, হেতু, মূল ! 'কারণাতীত', 'কারণ' পর্যায়েরও, আগের পর্যায় ! তখন বলা যেতে পারে, সেটা 'শূন্য' পর্যায় ! 'নিরঞ্জন' পর্যায় ! 'ঈশ্বর' পর্যায় ! 'পরব্রহ্ম' পর্যায় !
আমি কিছু ব্যাখ্যা দেবার চেষ্টা করছি মাত্র !
ঈশ্বর বৈজ্ঞানিক ছিলেন ! বিরাট বড়, অতি বড়, বিজ্ঞানী !
পরে ঈশ্বর, 'সূক্ষ্ম করণ ব্রহ্মাণ্ড' তৈরি করবেন !
' করণ', 'কারণ'-এর সহায়ক কাজের প্রধান সহায়ক ! করণে, সূক্ষ্ম material সৃষ্টি ! সেটা, বস্তুগত। পদার্থগত । বাস্তব ! প্রথমে পরমাণু সৃষ্টি। বিভিন্ন মৌল পদার্থের পরমাণু। পরে মৌলিক পদার্থের মৌলিক অণু । এরপরে যুগ্ম অণু। তারপরে, chemical compound. যৌগ পদার্থ। সংশ্লেষে সংশ্লেষে, বিভিন্ন পদার্থের অণুর সমবায় গড়ে উঠল ! যৌগ অণু। যৌগিক অণু। মিশ্র অণু্। জটিল অণু। ইত্যাদি।
এগুলো সবই রসায়নবিদ্যার ব্যাপার ! ঈশ্বর এক বিরাট বড় রসায়নবিদ ছিলেন !
এরপরে, 'সূক্ষ্ম ব্রহ্মাণ্ড' তৈরি !
এগুলোর সব এক-একটা পর্যায় ঘটতে, যুগ যুগ বছর কেটে যায় !
তারপর শুরু হয়, ব্রহ্মাণ্ড তৈরির কাজ ! ধীরে ধীরে স্থূল সৃষ্টি। ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি !
এগুলো সবই, যুগ যুগ বছরের ধাক্কা !
এখানে, ঈশ্বর আবার পদার্থবিদ !
'ব্রহ্মাণ্ড' তৈরির এই ব্যবস্থা, 'সর্গ' !
আমি এই ব্যবস্থাকে বলব 'মহাসর্গ' ! কেননা তার আগে তো ব্রহ্মাণ্ডই ছিল না ! ব্রহ্মাণ্ড হলে তো , তবে, তখন একটা দাঁড়াবার জায়গা থাকবে !
ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি, বাস্তবিক, জড়বাদ ! তাহলে তো, ঈশ্বর, জড়বাদীও ছিলেন !
শাস্ত্রের ধারণায়, 'জড়বাদ', খুব ভয়ংকর রকম বাজে মতবাদ ! কিন্তু, তা নয় ! ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টিতে, জড়বাদ, একান্তভাবে, আবশ্যিক ছিল !
শুধু 'ব্রহ্মাণ্ড' সৃষ্টি নয়, এরপরে এসে গেল 'তত্ত্ব' ব্যবস্থা সৃষ্টির !
তখন এসে গেল 'মায়া' !
এর আগে 'মায়া' কি ঈশ্বরের সাথে ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিলেন ? মায়া কি ঈশ্বরের শরীরের অংশ ? ঈশ্বরের তো শরীরই নেই ! মায়া কি ক্রমে ক্রমে ঈশ্বরের থেকে আলাদা হলেন ? এসব জটিল প্রস্ন ! উত্তর ধোঁয়াশা । বা উত্তর নেই ! যাইহোক মায়া তো ঈশ্বরের 'শক্তি'-তে রূপান্তরিত হল !
মায়ার সাহায্য নিয়ে, ঈশ্বর, কি 'তত্ত্ব' খাড়া করলেন ?
ঈশ্বরের শক্তিরূপা মায়াশক্তি ! মায়া, সূচনায়, ছিলেন, 'সত্ত্ব' 'রজঃ' 'তমঃ ' এই তিন বিশেষ গুণের কারণভূতা !
পরবর্তীতে, ঐ ত্রিগুণ, পৃথিবী সৃষ্টি হওয়ার পর, পৃথিবীর ওপরও ন্যস্ত, অর্থাৎ, আরোপিত করা হয়েছে !
ঈশ্বর সেই মায়াশক্তিরূপা মায়াযোনির মধ্যে,
১। 'সর্বজ্ঞ মহৎতত্ত্বরূপ'
২। 'চিদাভাসরূপ'
৩। 'সমষ্টিজীবনশক্তিরূপ'
এই, 'ত্রি-বীর্য'রূপ 'আধান' নিক্ষেপ করেছেন !
মায়া ঐ 'ত্রি-বীর্য'শক্তিরূপ আধানত্রয়কে, যুগ যুগ ধরে, তাঁর 'সৃষ্টিকারক মহৎযোনি'-র মধ্যে 'নরচার' (nurture) এবং 'কালচার' (culture) করেছেন !*
* সূত্র ঃ প্রণব কুমার কুণ্ডু'র কবিতা, 'ঈশ্বরতত্ব এবং মায়া'। দেখতে পারেন, pranabk.blogspot.com
মায়া কি স্বয়ংভূতা ? মায়ার তো শরীর নেই ! তাহলে মায়া 'ভূত' গোত্রে পড়বেন না ! মায়া ইন্দ্রিয়-গ্রাহ্য 'বস্তু'সমূহের মধ্যে পড়বেন না ! মায়া কি তাহলে সত্যি সত্যি শক্তি ? তাহলে তো সব বিশ্ববন্দিত শক্তিতত্ত্ব, মায়ার মধ্যে গ্রহণীয় হবে !
কিন্তু ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির আগে, 'ভর', অর্থাৎ, mass, কোথা থেকে আসবে ?
mass-energy equivalence, is a concept, formulated by, Albert Einstein !
though, purely theoretical !
E =mc2
পদার্থের 'ভর', এবং তার সঙ্গে সম্পর্কিত শক্তি-সৃষ্টির তুল্যমূল্যতা, হচ্ছে একটা ধারণা, যে ধারণাটা দিয়েছেন, বিশিষ্ট বিজ্ঞানী, অ্যালবার্ট আইনস্টাইন।
যদিও, ধারণাটা, সম্ভবত, পরিপূর্ণভাবে তাত্ত্বিক, এবং কেবল ধারণাগত হিসাবেই থেকে গেছে !
সত্ত্ব, রজঃ, তমঃ, এই তিন গুণের পরিমাণের পারস্পরিক ratio, অর্থাৎ, অনুপাত-এর মানের পরিবর্তন বশত, গুণত্রয়ের নিজেদের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দানা বাঁধে ! সৃষ্টিতত্ত্বের অনুকম্পায়, তখন কম্পন, vibration, শুরু হয়ে যায় ! যার ফলে, resonance, অর্থাৎ অনুরণন সৃষ্টি হয় ! অনুরণন থেকে সৃষ্টি হয়, অনুনাদ !
অনুনাদ। হতে পারে প্রতিধ্বনি। বা আগের অনুরণন। আপাত সদৃশ শব্দ বা সদৃশ থেকে ভিন্নতর 'অনু' শব্দ ! হতে পারে, একসাথে শব্দিত শব্দও !
'অনু' নিজে উপসর্গ ! কাজেই 'সর্গ' রচনায় 'অনু'-র ডাক পড়েছে, শব্দগুলো গ্রথিত করতে !
অনুরণন, কম্পনের ধ্বনির অনুবর্তী ক্রমশ বিলীয়মান ধ্বনি। হতে পারে প্রতিধ্বনি। হতে পারে আরো মৃদু প্রতিধ্বনি জাত ক্ষীণতর ধ্বনিসমুূহ ! বা তুলনামূলকভাবে অনুনাদ ধ্বনি !
কিন্তু, ধ্বনি propagation, প্রবহ হতে গেলে, তো চাই, ধ্বনিপ্রবহের মাধ্যম। তখন কি ধ্বনি প্রবহের মাধ্যম ছিল ? প্রতিধ্বনি সৃষ্টি হবার জন্য, কোন 'দেয়াল' ছিল ? মাধ্যম ছাড়া 'অনুনাদ' কি ভাবে সঞ্চারিত হবে ? এসব জটিল কূট প্রশ্ন !
তার ফলে বলা হয়, ঈশ্বর করেছেন ! কিন্তু এগুলি প্রাকৃতিক ক্রিয়া ! ঈশ্বরের ব্যাপার নয় ! ধ্বনি প্রবহের ক্ষেত্রে, বাতাস একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং অন্যতম মাধ্যম। তখন বাতাস অর্থাৎ 'বায়ু' ছিল না। বায়ু তো তখন সৃষ্টিই হয় নি ! বাতাস না থাকলে 'কম্পন'ও হবে না !
গুণত্রয়ের potential difference, বিভব পার্থক্যের পরিবর্তনের বৈচিত্রের জন্য, এই কম্পন, অনুনাদের সৃষ্টি হয় !
সত্ত্ব রজঃ তমঃ, এই তিন গুণ কিন্তু এক নয় ! তাদের মধ্যে গুণবিভাগ দারুণভাবে প্রকট !
তাদের মধ্যে, গুরু অনুপাত ( পারস্পরিক greater inequality ratio ), লঘু অনুপাত ( পারস্পরিক lesser inequality ratio ) থাকে ! এতে ত্রিগুণের কার্য-কারণে ভীষণভাবে প্রভাব ফেলে ।
ত্রিগুণের ক্ষোভ, বিক্ষোভ, তারপর কম্পন, অনুনাদের ফলে, সৃষ্টি প্রক্রিয়া শুরু হয়, 'পঞ্চমহাভূতের'।
বলা হয়, সত্ত্ব, রজঃ, তমঃ, এই ত্রিগুণ, আসলে হচ্ছে, 'জগৎকারণ'। কারণ হচ্ছে নিমিত্ত।
নিমিত্ত হচ্ছে, হেতু, কারণ। উদ্দেশ্য, উপলক্ষ্য, প্রয়োজন। যে বা যারা, কর্মসাধন করে, কিন্তু, তাতে, তার বা তাদের, কোন দায়-দায়িত্ব, এবং অথবা, কর্তৃত্ববোধ থাকে না !
সেগুলো কি ?
সেগুলো, যথাক্রমে পঞ্চভূতের কারণাতীত, কারণ এবং করণ অবস্থা ! এরপরে, সূক্ষ্ম পঞ্চভূত ! তারপরে স্থূল পঞ্চভূত !
পঞ্চভূতগুলো কি ?
ওগুলোর নাম
১। 'ক্ষিতি', মানে পৃথিবী, এমন কি পৃথিবীর মতো, অন্যান্য গ্রহ, উপগ্রহ, পৃথিবীর চাঁদ, এমন কি, সূর্যও ! ক্ষিতি মানে, মাটি, ভূমি,পর্বত ইত্যাদিও !
২। 'অপ্', মানে জল। কারণতোয় বা কারণতোয়বারি, কারণভূত জল ! সৃষ্টির আগে মূলভূত প্রথম জলরাশি ! primeval water !
৩। 'তেজঃ', মানে, জ্যোতি, দীপ্তি, প্রভা, আলোক, তাপ, আগুন। এর মধ্যে সূর্যের 'তেজ'-ও পড়বে ! তেজ আসলে শক্তি ! ' রুপ'ও ! 'তেজে কিছুটা অহংকার্'ও থাকে ! তেজ 'রজোগুণ'-এর আধার ! তৃতীয় মহাভূত ! তেজ আবার চৈতন্যাত্মক জ্যোতি ! সত্ত্ব গুণজাত লিঙ্গদেহ !
৪ । 'মরুৎ', বায়ু, বাতাস। পরবর্তীতে উনপঞ্চাশ পবনসমবায়, প্রাণবায়ুসমবায়।
৫ । 'ব্যোম', আকাশ, শূন্য, মহাশূন্য।
এই 'পঞ্চভূতের'ও, 'কারণাতীত', 'কারণ' এবং 'করণ' অবস্থা থাকে ! সূক্ষ্ম তত্ত্ব থাকে ! পরে স্থূল তত্ত্বে পর্যবসিত হয় ! স্থূল 'পঞ্চভূত' উৎপন্ন হয় !
এই পর্যায় পর্যন্ত, আমি, অর্থাৎ, লেখক, 'সূর্যমণ্ডল'-এর কথাই লিখছি !
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন